Thursday, 26 November 2015

নারী নির্যাতনের

সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীর অগ্রগতি বড় ভূমিকা রাখলেও ঘরের মধ্যে নারীর অবস্থা তেমন বদলায়নি। দেশের বিবাহিত নারীদের ৮৭ শতাংশই স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনো সময়ে, কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতন ভোগ করেছেন, ৩৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন, ৮২ শতাংশ মানসিক এবং ৫৩ শতাংশ নারী স্বামীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিস্ময়কর আরও তথ্য হচ্ছে, এসব নারীর ৭৭ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা বিগত এক বছরেও একই ধরনের নির্যাতন ভোগ করেছেন। বড় অংশের নারীকেই তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক গড়তে বাধ্য হতে হয়েছে। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশে প্রথমবারের মতো নারী নির্যাতন নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি জরিপ চালিয়েছে। ‘ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন (ভিএডব্লিউ) সার্ভে ২০১১’ নামের এই জরিপে নারী নির্যাতনের এ ধরনের চিত্রই উঠে এসেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এর আগে দেশে নারী নির্যাতন নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা আলাদাভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিবিএসের এ জরিপ বলেছে, শারীরিক নির্যাতনের শিকার নারীদের মাত্র অর্ধেক চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পান। এক- তৃতীয়াংশ নারীই স্বামীর ভয়ে বা স্বামী সম্মতি না দেওয়ায় চিকিৎসকের কাছ পর্যন্ত যেতেই পারেননি।
আন্তর্জাতিক সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান সালমা খান প্রথম আলোকে বলেন, পারিবারিক নির্যাতন নিয়ে আগে নারীরা মুখ খুলতেন না। ঘরোয়া ব্যাপার বা লজ্জাজনক মনে করতেন। বর্তমানে মুখ খুলছেন। অন্যদিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহুদিন আগে থেকেই কাজ হচ্ছে। কিন্তু নারী নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছেই। এর মূল কারণ হলো, নারী নির্যাতনের
বিষয়টি এখনো জাতীয় বিষয়ে পরিণত হতে পারেনি। চোখের সামনে নির্যাতন দেখলেও সবাই মেনে নিচ্ছে।দুর্বল আইনের শাসনও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। তাই এ ধরনের সংস্কৃতি যত দিন পরিবর্তন না হবে, তত দিননির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
জরিপ: জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় সরকার এ জরিপ করেছে। এ জরিপ প্রকল্পের পরিচালক জাহিদুল হক সরদার প্রথম আলোকে বলেন, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সদস্যরাষ্ট্রগুলোতে নারী নির্যাতনের অবস্থান জানার জন্য জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বিভাগের (ইউএনএসডি) নির্ধারিত মানদণ্ডের আলোকে জরিপ চালানোর আহ্বান জানানো হলে ভিয়েতনামের পরেই বাংলাদেশ এ ধরনের জরিপ চালিয়েছে। নির্ধারিত মানদণ্ডে বিবাহিত নারীদের যৌন নির্যাতনের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু কিছু বিষয়, যেগুলো দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়, তা বাদ দেওয়া হয়েছে। ভিয়েতনামের পরিস্থিতি অবশ্য বাংলাদেশের তুলনায় খানিকটা ভালো। ভিয়েতনামের করা জরিপ অনুযায়ী, সে দেশের ৫৮ শতাংশ নারীই স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হন। অন্যদিকে, উন্নত বিশ্বের নারীরাও পারিবারিক নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। ২০১০ সালের ইউরোপীয় ইউনিয়নের করা এক জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউরোপের প্রতি চারজন নারীর মধ্যে একজন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন। জরিপে বলা হয়েছে, ৭৮ শতাংশই মনে করেন, নারী নির্যাতন খুবই পরিচিত ঘটনা। অন্য একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইসরায়েল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ নারী তাঁদের স্বামী বা ছেলেবন্ধুর হাতে খুন হন।

No comments:

Post a Comment