এই যে আপু,
আপনি যদি সিক্স ডিজিট স্যালারির কোনো সফল পুরুষকে বিয়ে করেন তাহলে শুধু এই প্রাপ্তির জন্যই আপনাকে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হবে। প্রথম ত্যাগ করতে হবে আপনার প্রিয় কিছু স্বপ্নকে।
যে মানুষটা সিক্স ডিজিট স্যালারির লেবেলে পৌঁছেছেন খুব স্বাভাবিকভাবে তার বয়স একটু বেশি হবে। একই সাথে সিক্স ডিজিট স্যালারি ও পঁচিশ বছরের টগবগে যুবককে আপনি কখনোই পাবেন না। এমনটা পেতে চাইলে দুইজনকে বিয়ে করতে হবে। যাদের একজনের স্যালারি সিক্স ডিজিট, অন্যজনের বয়স টুয়েন্টি ফাইভ।
লাখ টাকা বেতন প্রাপ্ত সফল মানুষটাকে ছাত্রাবস্থায় প্রচুর পড়তে হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেবিলে বসে থাকতে হয়েছে। মাসের পর মাস রাত জাগতে হয়েছে। ফলে তার চোখের নিচে থাকবে স্থায়ী কালশিটা, চোখে থাকবে মোটা ফ্রেমের চশমা। মাথার অর্ধেক হবে টাক এবং দেখার মতো একটা ভুঁড়ি থাকবেই থাকবে।
আপনি একই সঙ্গে স্পাইক চুল, সিক্স প্যাক ফিগার, স্টাইলিশ সানগ্লাস আর ডানাকাটা চোখের অধিকারী কোনো সিক্স ডিজিট আর্নড পারসন পাবেন না।
সে ছাত্র জীবনে থিয়েটার, মুভি, স্পোর্টস, ফ্যাশন ও ট্রেন্ডের চেয়ে বেশি সময় দিয়েছে লাইব্রেরি, স্টাডি আর রিসার্চের পেছনে। ফলে টোয়ালাইট মুভির নায়কের নাম জিজ্ঞেস করলে সে হা হয়ে থাকবে। রাফায়েল নাদালের গার্লফ্রেন্ড সংখ্যা তার অজানা। রোল্যাক্স, টাইটানের বাইরে রিস্টওয়াচের ব্রান্ডের নাম সে বলতে পারবে না। ফলে আপনার তাকে ব্যাকডেটেড মনে হবে।
সিক্স ডিজিট আর্নড পুরুষ দারুণ সচেতন হবে। সে কবির সিংয়ের মতো বাইক চালানোর সময় কিংবা গাড়ি চালানোর সময় তিন মিনিটের চুমুর আনন্দের চেয়ে তিন যুগ বেঁচে থাকার আনন্দকে প্রাধান্য দেবে। ফলে আপনার মনে হতে পারে, দুনিয়ার আনরোম্যানটিক মানুষকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন। আপনি ভুল মানুষের সাথে আছেন।
তার অবশ্যই সকালে অফিস থাকবে। ফলে বৃষ্টি দেখে ছাদে চলে যাওয়া কিংবা ব্যালকনিতে বসে পূর্ণিমা উদযাপনের চেয়ে রাতে নিত্যদিনের কাজটা সেরে ফ্রেশ একটা ঘুম দিয়ে রিল্যাক্স মুডে অফিসে যাওয়াটা জরুরি মনে হবে। ফলে আপনার মনে হবে আপনি শুধুই ভোগের বস্তু। উপভোগ বলে কিছু নেই আপনার জীবনে।
লাঞ্চ টাইমে তার মিটিং থাকবে। মিটিং হবে জুনিয়র কিংবা সিনিয়র কলিগদের সাথে। যাদের সামনে তাকে পারসোনালিটি বজায় রাখতে হয়। ফলে দুপুরে ফোন দিয়ে ‘কী খেয়েছো’ জিজ্ঞেস করলে সে চেয়ারে হেলান দিয়ে আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলবে না, কচুর লতি দিয়ে চিংড়ি মাছ খেয়েছি। সে ডানে বামে তাকিয়ে বলবে- রাখো, পরে কথা বলছি। মিটিং শেষে তাকে এমন সব কাজ করতে হবে যে বেশিরভাগ দিন পরে আর কথা বলা হয়ে উঠবে না।
সিক্স ডিজিট স্যালারির পারসনকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সারাদিন এক গাদা স্টাফকে পরিচালনা করতে হয়। কিংবা পরিচালিত হতে হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারা। ফলে বাসায় ফিরবে সে মেজাজ খারাপ নিয়ে। এমন সময়ে তুমি যদি মুনমুন মুখার্জির মতো দুনিয়ার আবেগ তাহেরির মতো ঢেলে দিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা ‘ভালোবাসি ভালোবাসি’ আবৃত্তি শুরু করো, সে গলায় সেক্স অ্যাপিল এনে বলতে পারবে না ‘ভালোবাসি তোওওও ভালোবাসিইইই’। সে একটু বিরক্তই হবে।
শোনেন আপু, আপনি একইসাথে গ্রামের নির্মল বায়ু আর শহরের সুযোগসুবিধা পাবেন না। আপনাকে যে কোনো একটা বেছে নিতে হবে। হয় অর্থ-বিত্ত নয়তো স্বস্তির জীবন। হয় ভোগ নয়তো উপভোগ। আপনি যেটাকে প্রাধান্য দেবে সেটা নিয়ে সুখে থাকেন। অন্যটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে যাবেন না। তাহলে দেখবেন জীবনে মরীচিকা ছাড়া আর কোনো অর্জন নেই।
মেয়ে, ইমোশনালি প্র্যাক্টিক্যাল হইয়ো না, প্র্যাক্টিক্যালি ইমোশনাল হও।