সুইডেনের বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্ট্রম এক সময় জাতিসংঘ মহাসচিবের যৌন সহিংসতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১০ সালে তিনি একবার আফ্রিকার দেশ কঙ্গো সফরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে আসার পর সফরের বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করার সময় ওয়ালস্ট্রম বলেন, বিশ্বে ধর্ষণের রাজধানী হলো আফ্রিকার দেশ কঙ্গো। সেখানে নারীরা অব্যাহতভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তবে এটা এই কারণে নয় যে তাঁদের রক্ষা করার জন্য পর্যাপ্ত আইন নেই। বরং আইন প্রয়োগের অভাবে এসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।
ওয়ালস্ট্রম যখন কঙ্গো সফরে যান তখন দেশটি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত। ১৯৯৮ সালে এ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলেও এর জের ছিল বহুদিন। অর্থাৎ একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সেই সময় প্রতিদিন গড়ে ১১’শ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ অর্থাৎ প্রতি ঘন্টায় ধর্ষিত হয়েছে ৪৮ জন৷ তবে এখন যে পরিস্থিতির খুব উন্নতি হয়েছে , এমন নয়। এখনও সেখানকার মেয়েরা ধর্ষিত হচ্ছে।
আমাদের এই বাংলাদেশে কতজন নারী প্রতিদিন যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের শিকার হন, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে প্রায় প্রতিদিন গণমাধ্যমে যেভাবে মেয়েদের ওপর যৌন নিপীড়নের খবর প্রকাশিত হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে খুব শিগগিরই আমরা এদিক দিয়ে কঙ্গোকে ধরে ফেলব। আবার পেছনেও ফেলে দিতে পারি-এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির দেওয়া এক তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিন হাজার ৯২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পাঠক, আপনারাই হিসাব করুন এই চার বছরে দৈনিক কতজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন এত ধর্ষণ? কঙ্গোয় যেমন নারীদের রক্ষার জন্য অনেক আইন আছে, কিন্তু সেসব আইনের প্রয়োগ নেই। তেমনি মতো আমাদের দেশেও ধর্ষণবিরোধী আইন আছে। কিন্তু আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। ফলে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। ধর্ষকদের জন্য বাংলাদেশ এখন একটি স্বর্গরাজ্য-এটা এখন বলা যেতেই পারে। সব বয়সের নারীকেই ধর্ষণ করা হচ্ছে। গৃহবধূ, শিক্ষিকা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, কলেজ ছাত্রী, স্কুলছাত্রী, এমনকি কোলের শিশুকেও ধর্ষণ করা হচ্ছে। গত বছর গাজীপুরে ধর্ষণ করা হয়েছে আট মাসের এক শিশুকে। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ধর্ষণ করা হয়েছে ৫ বছরের এক শিশুকে। শরিয়তপুরে ৩ বছরের শিশু ধর্ষিত হয়েছ। এ রকম বহু ঘটেছে। এই হিসাব আঙুলের কড়ে গুনে বলা যাবে না।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৩২৫টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এই ৩২৫ শিশুর মধ্যে ৪৮ জন শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে, । এদের মধ্যে ১৫ জন শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৫৪ শিশুকে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৩৫টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এসব হিসাব পড়ে কি পাঠকের মনে হচ্ছে না যে আসলেই বাংলাদেশ ধর্ষকদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে? যার যখন মন চাইছে ধর্ষণ করছে। গত বছরের ঘটনা। গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসেছিল একটি পরিবার। মিরপুরে একটি বাসা ভাড়া করে তাতে উঠেছিল। কিন্তু একদিন না যেতেই স্থানীয় এক সন্ত্রাসী তার সঙ্গী সাথিদের নিয়ে এসে ওই বাড়িতে ঢুকে সব জিনিসপত্র লুটপাট করে। আর যাওয়ার সময় ওই পরিবারের কিশোরী মেয়েটিকে ধর্ষণ করে চলে যায়। পত্রিকার পাতায় এ ধরনের খবর প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসন নির্বিকার। কারও যেন কিছু করার নেই।
এখন বনানীর হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দেশ উত্তাল। এ ঘটনায় ধর্ষকদের বিরুদ্ধে জোরালো জনমত তৈরি হয়েছে। কিন্তু যারা এই দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা বেশ ধনী এবং সমাজে প্রভাব রয়েছ। তাই অনেকের মনে সংশয় আদৌ কি শাস্তি হবে এই ধর্ষকদের। গ্রামে গঞ্জে ধর্ষণ করেও যেখানে ধর্ষকেরা পার পেয়ে যাচ্ছে সেখানে সমাজের প্রভাবশালীদের শাস্তি হবে—চিন্তাটাই একটু কেমন না!
আসল সমস্যা হচ্ছে নারী নির্যাতন, নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ এগুলো এখনো জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হতে পারেনি। ধর্ষণকে লঘু অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। দুই তরুণী ধর্ষণের পর আমার পরিচিত অনেককে বলতে শুনেছি কেন তারা ওই যুবকদের আহ্বানে হোটেলে গেলেন। তাদের বোঝা উচিত ছিল এভাবে যেতে নেই। অর্থাৎ দোষ যা করেছে মেয়েরাই। ছেলেদের কোনো দোষ নেই। ছেলেরাতো ধর্ষণ করবেই। তুমি মেয়ে জেনেশুনে তার কাছে যাও কেন? অনেকে আবার ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করে। জানতে ইচ্ছে করে একটি ছোট শিশুর পরনে কী পোশাক থাকে যা দেখে পুরুষেরা উত্তেজিত হয়ে তাকে ধর্ষণ করে। কোনো সমাজে যদি এইরকম মনোভাবের মানুষ থাকে। তাহলে সে সমাজে ধর্ষকের বিচার না হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবুও আমরা আশাবাদী এই ধর্ষকদের বিচার হবে। তারা দৃষ্টান্তমূলক সাজা পাবে। আমরা চাই না ধর্ষণ করার দিক দিয়ে আমার দেশ কঙ্গোর সমকক্ষ হোক বা কঙ্গোকে ছাড়িয়ে যাক।
ওয়ালস্ট্রম যখন কঙ্গো সফরে যান তখন দেশটি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত। ১৯৯৮ সালে এ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলেও এর জের ছিল বহুদিন। অর্থাৎ একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সেই সময় প্রতিদিন গড়ে ১১’শ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ অর্থাৎ প্রতি ঘন্টায় ধর্ষিত হয়েছে ৪৮ জন৷ তবে এখন যে পরিস্থিতির খুব উন্নতি হয়েছে , এমন নয়। এখনও সেখানকার মেয়েরা ধর্ষিত হচ্ছে।
আমাদের এই বাংলাদেশে কতজন নারী প্রতিদিন যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের শিকার হন, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে প্রায় প্রতিদিন গণমাধ্যমে যেভাবে মেয়েদের ওপর যৌন নিপীড়নের খবর প্রকাশিত হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে খুব শিগগিরই আমরা এদিক দিয়ে কঙ্গোকে ধরে ফেলব। আবার পেছনেও ফেলে দিতে পারি-এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির দেওয়া এক তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিন হাজার ৯২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পাঠক, আপনারাই হিসাব করুন এই চার বছরে দৈনিক কতজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন এত ধর্ষণ? কঙ্গোয় যেমন নারীদের রক্ষার জন্য অনেক আইন আছে, কিন্তু সেসব আইনের প্রয়োগ নেই। তেমনি মতো আমাদের দেশেও ধর্ষণবিরোধী আইন আছে। কিন্তু আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। ফলে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। ধর্ষকদের জন্য বাংলাদেশ এখন একটি স্বর্গরাজ্য-এটা এখন বলা যেতেই পারে। সব বয়সের নারীকেই ধর্ষণ করা হচ্ছে। গৃহবধূ, শিক্ষিকা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, কলেজ ছাত্রী, স্কুলছাত্রী, এমনকি কোলের শিশুকেও ধর্ষণ করা হচ্ছে। গত বছর গাজীপুরে ধর্ষণ করা হয়েছে আট মাসের এক শিশুকে। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ধর্ষণ করা হয়েছে ৫ বছরের এক শিশুকে। শরিয়তপুরে ৩ বছরের শিশু ধর্ষিত হয়েছ। এ রকম বহু ঘটেছে। এই হিসাব আঙুলের কড়ে গুনে বলা যাবে না।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৩২৫টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এই ৩২৫ শিশুর মধ্যে ৪৮ জন শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে, । এদের মধ্যে ১৫ জন শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৫৪ শিশুকে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৩৫টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এসব হিসাব পড়ে কি পাঠকের মনে হচ্ছে না যে আসলেই বাংলাদেশ ধর্ষকদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে? যার যখন মন চাইছে ধর্ষণ করছে। গত বছরের ঘটনা। গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসেছিল একটি পরিবার। মিরপুরে একটি বাসা ভাড়া করে তাতে উঠেছিল। কিন্তু একদিন না যেতেই স্থানীয় এক সন্ত্রাসী তার সঙ্গী সাথিদের নিয়ে এসে ওই বাড়িতে ঢুকে সব জিনিসপত্র লুটপাট করে। আর যাওয়ার সময় ওই পরিবারের কিশোরী মেয়েটিকে ধর্ষণ করে চলে যায়। পত্রিকার পাতায় এ ধরনের খবর প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসন নির্বিকার। কারও যেন কিছু করার নেই।
এখন বনানীর হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দেশ উত্তাল। এ ঘটনায় ধর্ষকদের বিরুদ্ধে জোরালো জনমত তৈরি হয়েছে। কিন্তু যারা এই দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা বেশ ধনী এবং সমাজে প্রভাব রয়েছ। তাই অনেকের মনে সংশয় আদৌ কি শাস্তি হবে এই ধর্ষকদের। গ্রামে গঞ্জে ধর্ষণ করেও যেখানে ধর্ষকেরা পার পেয়ে যাচ্ছে সেখানে সমাজের প্রভাবশালীদের শাস্তি হবে—চিন্তাটাই একটু কেমন না!
আসল সমস্যা হচ্ছে নারী নির্যাতন, নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ এগুলো এখনো জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হতে পারেনি। ধর্ষণকে লঘু অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। দুই তরুণী ধর্ষণের পর আমার পরিচিত অনেককে বলতে শুনেছি কেন তারা ওই যুবকদের আহ্বানে হোটেলে গেলেন। তাদের বোঝা উচিত ছিল এভাবে যেতে নেই। অর্থাৎ দোষ যা করেছে মেয়েরাই। ছেলেদের কোনো দোষ নেই। ছেলেরাতো ধর্ষণ করবেই। তুমি মেয়ে জেনেশুনে তার কাছে যাও কেন? অনেকে আবার ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করে। জানতে ইচ্ছে করে একটি ছোট শিশুর পরনে কী পোশাক থাকে যা দেখে পুরুষেরা উত্তেজিত হয়ে তাকে ধর্ষণ করে। কোনো সমাজে যদি এইরকম মনোভাবের মানুষ থাকে। তাহলে সে সমাজে ধর্ষকের বিচার না হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবুও আমরা আশাবাদী এই ধর্ষকদের বিচার হবে। তারা দৃষ্টান্তমূলক সাজা পাবে। আমরা চাই না ধর্ষণ করার দিক দিয়ে আমার দেশ কঙ্গোর সমকক্ষ হোক বা কঙ্গোকে ছাড়িয়ে যাক।