Friday, 15 September 2023
শাপলা অভিযান ও অধিকারের সাজা
শাপলা অভিযান ও অধিকারের সাজা
➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖
🌗 ২০১৩ সালের ৫ই মে রাজধানী ঢাকার মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক 'হেফাজতে ইসলাম' নামের সংগঠনের বিশাল জমায়েতে গভীর রাতে চারপাশের সব আলো নিভিয়ে দিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীগুলো "অপারেশন ফ্ল্যাশআউট" ও "সিকিউর শাপলা" নামে যে মিলিত অভিযান চালায় তাতে কতো লোক নিহত হয়েছিল?
🌗 এ বিতর্ক ঘটনার দশ বছর পর ফের উঠছে ঢাকার এক সাইবার আদালত জাতিসংঘের অ্যাফিলিয়েটেড এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশী মানবাধিকার সংস্থা 'অধিকার' এর দু'জন শীর্ষ কর্মকর্তাকে জেল-জরিমানা করার কারণে। এই দণ্ড দেয়া হয়েছে সরকারের আনীত একটা অভিযোগের ভিত্তিতে। সেই অভিযোগটি হচ্ছে, হেফাজতের সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করে তাড়িয়ে দেয়ার দেয়ার অভিযানে ৬১ জন নিহত হয় বলে 'অধিকার' যে পরিসংখ্যান প্রচার করে তা' অতিরঞ্জিত এবং এতে দেশে আরো সহিংসতার উস্কানি দেয়া হয়েছে, আর বিদেশে ক্ষুন্ন করা হয়েছে সরকারের ভাবমূর্তি।
🌗 অর্থাৎ আপত্তি ও বিচার্য বিষয় ছিল ওই অভিযানে নিহতের সংখ্যা এবং এই সংখ্যার বিকৃতিই সাজার কারণ। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এই সরকারের আমলে ন্যায়বিচারের বদলে সরকারি দলের লোকদের মামলা-মোকদ্দমা থেকে অব্যাহতি দেয়া এবং সরকারের অপছন্দের লোকদের সাজা দেয়াকেই তাদের কর্তব্য বলে বেছে নিয়েছে। না হলে প্রশ্ন করা যেতো, মামলার রায় দেয়ার তারিখ পিছিয়ে পার্লামেন্টে পুরনো সাইবার অপরাধ আইনকে নতুন আইন দিয়ে প্রতিস্থাপিত করার পরদিন কেন পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল? প্রশ্ন করা যেতো, নিহতের সংখ্যা 'অধিকার'-এর প্রচারিত ৬১ অতিরঞ্জিত হয়ে থাকলে প্রকৃত সংখ্যা কতো? এই নিহতের প্রকৃত হিসেব কি আদালত নিয়েছে বা চেয়েছে সরকারের কাছে? নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ও পরিচয় নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে নিরূপন না করে কিভাবে আদালত 'অধিকার'-এর প্রচারিত সংখ্যাকে অতিরঞ্জিত বলে নিশ্চিত হয়ে সাজার রায় দেয়?
🌗 বাংলাদেশে ন্যায়বিচার থাকলে আরও অনেক গুরুতর প্রশ্ন তোলা যেতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাপলা চত্বেরের ওই অভিযানের পর পার্লামেন্টে দাবি করেছিলেন, সেদিন একটি গুলিও ছোঁড়া হয়নি এবং একজনও নিহত হয়নি। সকৌতুকে ও সহাস্যে তিনি বলেছিলেন, হেফাজতের লোকেরা রাতের বেলা শাপলা চত্বরে গায়ে লাল রঙ মেখে মৃতের ভান করে শুয়ে ছিল। পুলিস গিয়ে যখন তাদের ধরে তোলার চেষ্টা করে তখন সব লাশ উঠে দৌড় মারে।
🌗 আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অভিযান শুরুর আগে অনতিবিলম্বে শাপলা চত্বর ছেড়ে না গেলে হেফাজতকে 'গর্তে ঢুকিয়ে দেয়ার' হুমকি দেন। ওদিকে হেফাজতের সমাবেশ থেকে বলা হয় যে, তাদের আমির মৌলানা শাহ্ আহমদ শফিকে সমাবেশে আসতে দিলে তারা তাঁর নেতৃত্বে মোনাজাত করে চলে যাবেন। কিন্তু তাদেরকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। মৌলানা শফিকেও আসতে দেওয়া হয়নি সমাবেশস্থলে। মধ্যরাতে সেখানে পুলিস, র্যাব সহ বিভিন্ন নিরাপত্তাবাহিনী সশস্ত্র হামলা চালায়। সেই দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করতে থাকায় দুটি টিভি চ্যানেল - দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভির প্রথমে সম্প্রচার বন্ধ এবং পরে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।
🌗 শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ ছিল মূলতঃ শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের পালটা প্রতিক্রিয়া। হেফাজতের অভিযোগ ছিল যে, নাস্তিক ব্লগারদের উদ্যোগে শাহবাগে যে গণজাগরণ মঞ্চ বসানো হয়েছে তারা আল্লাহ্, রাসুল ও ইসলামের বিরুদ্ধে অশ্লীল প্রচারণায় লিপ্ত। এদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ধর্মদ্রোহ বা ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন সহ ১৩ দফা দাবিতে তারা শাপলায় এ সমাবেশ করে। গণজাগরণ মঞ্চ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ চত্বর ও সড়ক অবরোধ করে শাহবাগে টানা তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে রাতদিন তাদের অবস্থান চালিয়ে গেলেও পুলিস তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ ও শাসক দলের নেতারা তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে জমায়েত শুরু হবার কয়েক ঘন্টার মধ্যে হেফাজতকে শাপলা চত্বর থেকে উৎখাত করে দেয়ার জন্য সরকার বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছে।
🌗 ঘটনার কয়েকদিন পর ১৩ মে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা লাল ব্যানার হেডলাইনে প্রকাশিত এক সংবাদে জানায়, শাপলা চত্বরের ওই অপারেশনে প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ খরচ হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের হিসাবে ৮০ হাজার টিয়ার শেল, ৬০ হাজার রাবার বুলেট, ১৫ হাজার শটগানের গুলি এবং ১২ হাজার সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়। এর বাইরে পিস্তল এবং রিভলবার জাতীয় ক্ষুদ্র অস্ত্রের গুলি খরচ হয়েছে মাত্র সাড়ে ৩০০ রাউন্ড। সরকারের ৫ মের অপারেশনে র্যাবের ১ হাজার ৩০০ সদস্য, পুলিশের ৫ হাজার ৭১২ এবং বিজিবির ৫৭৬ জন সদস্য সরাসরি অংশ নেয়। এর বাইরে বিজিবির ১০ প্লাটুন ছাড়াও র্যাব এবং পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য ‘স্টাইকিং ফোর্স’ হিসেবে তৈরি ছিল। রাত ২টা ৩১ মিনিটে মূল অপারেশন শুরু হলেও রাত ১২টার পর থেকেই মূলত আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তিন দিক থেকে ধীরে-ধীরে শাপলা চত্বরের দিকে এগুতে থাকে।
🌗 হেফাজত শাপলা চত্বরে তাদের অনুমোদিত সমাবেশে আসার পথে বিভিন্ন পয়েন্টে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা তাদের বাধা দেয় এবং এতে বেশ কিছু জায়গায় সংঘর্ষ হয়। ১০ মে সরকারি তথ্যবিবরণীতে বলা হয় যে, পাঁচ মে সারাদিন ধরে হেফাজত সন্ত্রাস চালিয়েছে এবং শাপলা চত্বরে হেফাজতের মঞ্চের পাশে কাফনে মোড়া চারটি লাশ পাওয়া যায়। পুলিসের হিসেবে সেদিন নিহতের সংখ্যা পথচারী ও পুলিস সহ ১১ জন বলে উক্ত তথ্যবিবরীতে উল্লেখ করা হয়।
🌗 স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে জারি করা ওই একই তথ্যবিবরণীতে বলা হয় : "শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের লোকজনকে সরিয়ে দিলে তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে আবারও জমায়েত হতে থাকে। পরদিন ৬ মে ভোর থেকেই তারা রাস্তায় ব্যারিকেড বসায়। সেই সাথে নির্বিচারে রাস্তার পাশে রাখা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। এরই মধ্যে পূর্বনির্দেশ মতো বিএনপি-জামায়াত কর্মীরাও ধ্বংসযজ্ঞে যোগ দেয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর, সাইনবোর্ড, শিমরাইল, সানারপাড়, কুয়েত মার্কেট ও মাদানীনগর এলাকায় উন্মত্ত ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ভয়াবহরূপ ধারণ করে। তারা মাদানীনগর মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে আশপাশের মসজিদের মাইক ব্যবহার করে চরম উত্তেজনাকর গুজব ছড়িয়ে লোক জড়ো করে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের পরিকল্পিত সংঘবদ্ধ আক্রমণ প্রতিরোধ করতে গিয়ে ২ জন পুলিশ, যথাক্রমে নায়েক ফিরোজ ও কনস্টেবল জাকারিয়া এবং ২ জন বিজিবি সদস্য যথাক্রমে শাহআলম ও লাভলু গুরুতর আহত হয়ে লুটিয়ে পড়ে এবং হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে উন্মত্ত সহিংসতার ফলশ্রুতিতে ১৩ জন মৃত্যুবরণ করেছে মর্মে জানা যায়। ঘটনা আরও চরম আকার ধারণ করতে থাকলে অধিকসংখ্যক ফোর্স সমাবেশ ঘটিয়ে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।"
🌗 সরকারের জারি করা তথ্যবিবরণী অনুযায়ী হেফাজত সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় দু'দিনে নিহতের সংখ্যা পুলিশ, বিজিবি, পথচারী সহ ২৪ জন নাকি সব মিলিয়ে ১৩ জন তা বুঝা মুশকিল। দ্বিতীয় দিনে সংঘর্ষে আহত দু'জন পুলিস ও দু'জন বিজিবি সদস্যের চার জনই মারা গেছেন, নাকি দু'জন তাও পরিস্কার নয়। এই চার জনের সংক্ষিপ্ত নামোল্লেখ ছাড়া সরকারি প্রেসনোটে নিহতদের আর কারও নামধাম বা পরিচয় দেয়া হয়নি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সংবাদ-মাধ্যম তাদের নিজস্ব সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নিহতের বিভিন্ন সংখ্যার কথা উল্লেখ করে। তবুও প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা, সরকারী বিভিন্ন কর্মকর্তা ও দলীয় নেতা "কোনও গুলি হয়নি, কেউ নিহত হয়নি" বলে একটানা প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। তথ্যের এই বিকৃতির জন্য আদালত তাদের কাউকে কোনও ভাবে দায়ী করেছেন বা সাজা দিয়েছেন কিনা - এই প্রশ্নও তোলা যেতো দেশের বিচারব্যবস্থা আইন অনুযায়ী চললে।
🌗 শাপলার ঘটনার পর ঢাকা সহ সারা দেশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ এবং বিভিন্ন এলাকায় ঘোষিত-অঘোষিত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সংবাদ-মাধ্যমের জন্যও এক ভীতিপ্রদ অবস্থা তৈরি করা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা সমাবেশে যোগ দিতে এসেছিলেন তাদের ছত্রভঙ্গ করে তাড়িয়ে দেয়ার পর তারা নানা দিকে ছিটকে পড়েন। অনেকে নিজ নিজ মাদরাসা বা বাড়িতে ফেরার বদলে আতঙ্কে নানা জায়গায় আত্মগোপন করে থাকেন। ঢাকার সমাবেশে হামলা ও হতাহতের সংবাদ পেয়ে অনেকের স্বজনেরা ছিলেন উৎকণ্ঠিত। যারা কয়েকদিনেও ফেরেননি সেই নিখোঁজদের স্বজনেরা ধরেই নিয়েছিলেন তারা হয়তো নিহত হয়েছেন।
🌗 এমন পরিস্থিতিতে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপন করে একটি তালিকা তৈরি করা খুবই দুষ্কর ছিল। 'অধিকার' তাদের প্রাথমিক তদন্তের আলোকে নিহতের সংখ্যা ৬১ বলে উল্লেখ করে। এতে ত্রুটি থাকা অসম্ভব নয়। আরো যাচাই বাছাই এবং চেক ও ক্রসচেকের মাধ্যমে এ ব্যাপারে একটা নির্ভুল তালিকায় অবশ্যই পৌঁছা যেতো। কিন্তু সরকারের উদ্দেশ্য তা ছিল না। ৬১ জন নিহতের সংখ্যাকে অতিরঞ্জিত ও উদ্দেশ্যমূলক আখ্যায়িত করে সরকার হামলে পড়ে 'অধিকার' এর উপর।
🌗 শাপলা সমাবেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনীসমূহের উৎখাত অভিযানের পর হেফাজত হাজার হাজার আলেম ও মাদরাসা ছাত্র নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিপুল সংখ্যক লোক নিহত হয়েছে বলে দাবি করে। বিদেশী একাধিক সংবাদ-মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন গোরস্তানে পুলিসের তদারকিতে গোপনে অনেক লাশ দাফনের খবর প্রচারিত হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় বীভৎস সব চিত্র ও তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। সর্বত্র নারকীয় এক হত্যাযজ্ঞের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে 'অধিকার'-এর মতন একটি মানবাধিকার সংস্থা তাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ৬১ নিহতের কথা উল্লেখ করাটা ছিল সরকারের জন্য পরম স্বস্তিদায়ক। এতে গুজবের বাড়াবাড়ি স্তিমিত হয়ে আসে। এই পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ও পরিচয় নিশ্চিত করে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে পারতো। কিন্তু তা না করে তারা উলটো পথে হাঁটা দেয়।
🌗 ১০ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে অধিকার’র কাছে শাপলা চত্বরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের পরিচয়সহ প্রকাশিত তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন চাওয়া হয়। এর জবাবে অধিকার এক চিঠিতে বলে, অবশ্যই তারা এসব তথ্য দিতে সম্মত আছে। তবে ভিকটিম ও সাক্ষীর নিরাপত্তার আইন বাংলাদেশে না থাকায় সরকারকে তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। আর এগুলো নিশ্চিত করলে অধিকার সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
🌗 অধিকার’র শর্ত তিনটি ছিল- ১. নিহতদের তালিকা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে যেসব মানবাধিকার সংগঠন কাজ করছে তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা। ২. তথ্য প্রদানকারী, ভিকটিম, তাদের পরিবার এবং সাক্ষীদের জন্য সুরক্ষার সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়া ও সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৩. এই তথ্য প্রদানকারী, ভিকটিম, তাদের পরিবার এবং সাক্ষীদের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটবে না সেই ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়া।
🌗 অধিকার চিঠিতে বলে, সরকার এসব বিষয়ে নিশ্চিত করলে তারা অবশ্যই সেই কাঙ্ক্ষিত কমিশনের কাছে প্রাসঙ্গিক সকল তথ্য সরবরাহ ও সহযোগিতা করবে। উল্লেখিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে নিশ্চয়তা বিধান ছাড়া নিহতদের নাম, ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা সরবরাহ করা দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহায়তা বলে বিবেচিত হবে। মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে অধিকার’র পক্ষে এই দায় নেয়া সম্ভব নয়।
🌗 অধিকার আরো বলে যে, যদি সরকার কোনো তালিকা করে থাকে তাহলে আমরা পরস্পরের সঙ্গে তালিকা মিলিয়ে দেখতে পারি। সরকার আন্তরিক হলে অধিকার সব রকম সহযোগিতা প্রদানে আগ্রহী।
🌗 অধিকারের চিঠিতে বলা হয়, সরকার বলে আসছে যে, ৫ মে দিবাগত রাতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় নেতৃস্থানীয় সংসদ সদস্য এবং সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য তুলে ধরে 'অধিকার' বলে যে, যেখানে সরকার নিজেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত এবং কোনো প্রাণহানি হয়নি বলে বক্তব্য দিচ্ছে সেই পরিস্থিতিতে এই ঘটনা সম্পর্কে অনুসন্ধান ও নিহতের প্রকৃত সংখ্যা জনগণকে জানানোর বিষয়ে সরকার আন্তরিক নয় বলেই প্রতীয়মান হয়।
🌗 অধিকার তাদের চিঠিতে আরো বলে, নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। গত ৫ মের ঘটনায় অন্তত: ১,৩৩,৫০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করে ২৩টি মামলা দায়ের করেছে সরকার। ভিকটিম পরিবারগুলোর আশঙ্কা তাদের পরিবারের সদস্যদের সরকার হয়রানি করতে পারে এবং এই কারণে তারা জনসমক্ষে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে ভিকটিমদের নিরাপত্তা বিধান আমাদের কর্তব্য। সুতরাং ভিকটিমদের পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে দায়িত্বশীল মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে অধিকার উপরোক্ত শর্তগুলোর নিশ্চয়তা পেলে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে রাজি আছে।
🌗 অধিকার তাদের প্রকাশিত প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধান রিপোর্টের কপি তথ্যমন্ত্রীকে সরবরাহ করে।
🌗 এরপর অধিকারের বিরুদ্ধে মামলা এবং আদিলুর রহমান খান ও নাসিরউদ্দিন এলানের গ্রেফতার ও কারাবাসের ঘটনা ঘটে। অধিকারের বিরুদ্ধে সরকারী প্রোপাগান্ডা অভিযান, নিবন্ধন বাতিলসহ নিবর্তনমূলক নানান ব্যবস্থা চলতে থাকে। অবশেষে দশ বছর পর সরকারি দলের এক্টিভিস্ট হিসেবে তৎপর ব্যক্তির কোর্টে এক চরম বিতর্কিত আইনে আদিল ও এলানের জেল ও জরিমানার রায় দেয়া হয়েছে।
🌗 এই রায়ের বিরুদ্ধে দুনিয়ার সকল মানবাধিকারবাদীরা সোচ্চার হয়েছেন। রাশিয়া, বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, চীন, ইরান সহ বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার আন্দোলনকারীদের জেল-জরিমানা ও সাজার ঘটনা বিরল না হলেও বাংলাদেশে এমন ঘটনা ইতিহাসে প্রথম। দেখা যাক, শেষ অব্দি কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়ায়।◾
Subscribe to:
Posts (Atom)