Monday 25 January 2016

যৌনতা ও জীবনঃ একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা।

‘পাঠক কে অবশ্যই ১৬+ এবং প্রাপ্ত মনস্ক হতে হবে’
লেখার উদ্দেশ্যঃ মানুষ কে তাদের যৌন জীবন ও স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন করে তোলা এবং যৌন শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সহযোগিতা করা।
সেক্স-লাইফ বা যৌন-জীবন, জীবন চক্রের খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া, সন্তান উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট এই প্রক্রিয়া জলবায়ু ভেদে ১২–১৬ বছর বয়স থেকে শুরু করে মেয়েদের জন্য ৩৭-৪২ এবং ছেলে দের জন্য ৪৫-৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত চলতে থাকে।
এই আর্টিকেলে নরমাল সেক্স লাইফ, সেক্সুয়াল এবনরমালিটি, বাংলাদেশে যৌন জীবন, সেক্স লাইফে বিভিন্ন ফ্যাক্টরের প্রভাব, প্রাপ্ত ডাটা থেকে যৌন জীবনে সেক্স ফ্রিকোয়েন্সি (মান্থলি), সফল ফারটিলাইজেশনের জন্য স্পারম কোয়ালিটির উন্নয়ন, স্পারম কাউন্টের বেসিক, স্পারম ভলিউম এবং স্পারম নাম্বার এর সাথে মান্থলি সেক্স ফ্রিকোয়েন্সি এর সম্পর্ক। শরীরে মনের উপরে লং টার্মে ফ্রিকুয়েন্টলি এক্সেসিভ সেক্স এর প্রভাব, এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এবং একটা লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রতিটা মানুষের মানসিকতা কিছুটা হলেও ভিন্ন। আর এই ভিন্নতর মানসিকতার কারনে তার যৌন জীবনেও বেশ বৈচিত্রতা দেখা যায়। কেউ প্রেম, বেটার হাফের সাথে বিয়ে করে, কেউ নিজের লিঙ্গের অন্য কাউকে বেছে নেয়, আবার অনেকে আছেন এগুলোর কোন দিকে না গিয়ে কিছুটা ভিন্ন উপায়ে যৌন জীবন পার করে থাকেন। এর উপরে ভিত্তি করে সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন কে এই আর্টিকেলের মুল বিষয়ের সুবিধার জন্য প্রধান ৩ ভাগে ভাগ করেছি।
১। নরমাল সেক্স লাইফ ২। অনিয়ন্ত্রিত সেক্স লাইফ ৩। বিকৃত রুচির সেক্স লাইফ
লেখার সুবিধায় প্রথমে শেষের টা নিয়েই কথা বলব।
বিকৃত যৌন জীবন (Paraphilia): জীবন, যৌনতা, সমাজে মানুষের আচার-আচরন, এগুলো যেহেতু সম্পূর্ণ এক্স্যাক্ট বায়োলজিক্যাল ফ্যাক্ট না, এগুলোর সাথে যেমন সামাজিক ব্যাপার এবং সাইকোলজিক্যাল ব্যাপারও যুক্ত থাকে, তাই সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা এবং সাইকোলজির উপর ভিত্তি করেই বিকৃত যৌনাচার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এমেরিকান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটির মতানুসারে, বিকৃত যৌনাচার বা প্যারাফিলিয়া হল সমাজের প্রচলিত কালচার বা নিওমের সাথে মেলে না এমন যৌন আচরন। যেমন- শিশু, বৃদ্ধ, পশু/প্রানী, মৃত মানুষ, বস্তু , গাছ ইত্যাদির প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করা।
অনেক ধরনের প্যারাফেলিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ
পেডোফেলিয়া (Pedophilia): এই অসম্ভব বিকৃত রুচিতে যারা আক্রান্ত তারা তাদের সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসি পুরনের জন্য বাচ্চা দেরকে বেঁছে নেয়।
ফেটিজম ( Fetishism): এই ধরনের রুচিতে যারা অভ্যস্ত তারা সাধারনত জড় বস্তুর প্রতি যৌন আকৃষ্ট হয়। যেমন- আন্ডারওয়ার, মেয়েদের পোশাক নিয়ে খেলা(!) করা ইত্যাদি। কিন্তু এটা বিকৃত আচরণ হলেও সমাজের জন্য তেমন ক্ষতিকর না।
ফ্রটারিজম (Frotteurism): এটা পাব্লিক প্লেসেই বেশি হয়। এই ঘৃণ্য রুচিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারনত অপরিচিত মানুষের প্রতি যৌন আকৃষ্ট হয়ে ভিক্টিমের শরীরে অনুমতি বিহীন অশ্লীল ও ইচ্ছেকৃত ভাবে হাত দিয়ে থাকা সহ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়ানো, প্রভৃতি ঘটনার সাথে জড়িত থাকে। পুরুষ দের ক্ষেত্রেই এটাও বেশি দেখা যায়।
এছাড়াও অন্যন্য ধরনের প্যারাফিলিয়ার মধ্যে রয়েছে সেক্সুয়াল স্যাডিজম (অন্যকে শারীরিক কষ্ট দিয়ে আনন্দ লাভ), ভয়েরিজম(পিপিং টম-লুকিয়ে অন্যের সেক্স এক্টিভিটি দেখা), নেক্রফিলিয়া(মৃত দেহের বা কঙ্কালের প্রতি যৌন আকর্ষণ), এলগোলাগনিয়া(নিজের শারীরিক কষ্টে মস্তিষ্কে যৌন সুখ পাওয়া, কিছু মানুষ আছে যারা নিজের কোন ব্যাথা পাওয়া অঙ্গে চাপ দিয়ে আরও বেশি ব্যাথা পেয়ে আনন্দ পেয়ে থাকে), সেলিব্রিফিলিয়া (সেলিব্রেটি নায়ক নায়িকার প্রতি যৌন ফ্যান্টাসি) সহ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্যারাফিলিয়াঃ
কেস স্টাডি-১ : পত্রিকার পাতা থেকে- “জুলাইয়ের ২০ তারিখে রাত ৮:৩০ এর দিকে, ঢাকা-মিরপুর এলাকায় গার্মেন্টস কর্মী মা এবং রিকশা চালক বাবার ১২ বছর বয়সের এক মাত্র মেয়ে টিভি দেখছিল তাদের টিনের চালের ঘরের ভিতরে। মেয়েটির বাবা মা দুজনই কাজের জন্য বাইরে ছিল। এসময় বাড়িওয়ালার ছেলে পলাশ দরজায় নক করে। কি ঘটতে যাচ্ছে মেয়েটি সেসবের কোন কিছু সন্দেহ বা ধারনা না করেই দরজা খুলে দেয়। ৩৫ বছর বয়সি পলাশ এই সাহায্যহীন বাচ্চা মেয়েটিকে রেপ করে যে কিনা এখনো কিশোরী হয়ে উঠেনি। যখন তার মা ফিরে আসে তখন সে মাকে সব বলে দেয়। এবং তার পরিবার মিরপুর মডেল থানায় একটা কেস করে। পুলিশ পলাশ কে সেদিনই ধরতে বাধ্য হয়, কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহ পরই পলাশ জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়।“
কেস স্টাডি-২: পত্রিকার পাতা থেকে – “আগস্টের ২ তারিখ রবিবারে ঢাকাতে আরও ২ জন মেয়ে রেপ হয়।যার মধ্যে একজনের বাড়ি হাজারীবাগ বয়স ৭ এবং আরেক জনের বাড়ি মিরপুর বয়স ৯। পুলিশ হাজারিবাগের রেপিস্ট কে ধরতে সক্ষম হয় কিন্তু মিরপুরের শয়তান এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছে”
৬ আগস্ট, ২০১৫ এর ‘ঢাকা ট্রিবিউনের একটা রিপোর্টে ২০১৫ সালের প্রথম ৬ মাসেই ২৮০ জন চাইল্ড রেপ ভিক্টিমের কথা বলা হয়’।
নিচের ইমেজটা একটা পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে। সেখানে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত চাইল্ড রেপ কি পরিমানে বেড়েছে। ৮৬-২৮০ জন। ভিক্টিম দের মধ্যে ৭-১২ বছর বয়সের ৭৯ জন। এবং সব থেকে ভয়ঙ্কর মাত্র ৬ বছরের নিচেই আছে ৩০ জন।
২০ জন কে রেপ করার পর মেরে ফেলা হয়েছে। ৬১ জন কে দলবল সহ গ্যাং রেপ করা হয়েছে এবং ৪ জন আক্রান্ত হওয়ার পর আত্যহত্যা করেছে।
এবং আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য করার মতন বিষয় হল এটা ঘটেছে মাত্র ৬ মাস সময় সীমার মধ্যে।
কিন্তু এই স্টাটিস্টিক্স যেটা বলছে না তা হল আন-রিপোর্টেড ভিক্টিমের সংখ্যা কত? রেপ হওয়ার পরও সামাজিক মান-সম্মান, লজ্জা এবং পুনরায় নির্যাতিত হওয়ার ভয়ে প্রকৃত ভিক্টিম দের বেশ বড় অংশই এই পরিসংখ্যানের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
sex n life-1 image
এছাড়া জুলাই ২০০৭ – জুন ২০১০ পর্যন্ত No place is safe: sexual abuse of children in rural Bangladesh শিরোনামে BRAC এর করা এক রিপোর্টে বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে ৭১৩টি চাইল্ড রেপ বা রেপের চেষ্টা করা হয়েছে এমন বলা হয়েছে। আরও উল্লেখ করা হয় যে এই ঘটনার বেশিরভাগই (৮৩%) ফ্যামিলি মেম্বার নয় এমন মানুষের দ্বারা ঘটেছে। তাহলে বাকি ১৭% কিন্তু ফ্যামিলি মেম্বারদের দিকেই ইঙ্গিত করে।
কেস স্টাডি-৩: পরিবারের সদস্য বা নিকট প্রতিবেশীদের দ্বারা শিশুদের কে যৌন হয়রানির ঘটনা ব্যাতিক্রম তো নয়ই বরং বেশ কমন। বাচ্চাদের চকলেট বা আইসক্রিমের লোভ দেখিয়ে বা অন্য কোন উপায়ে ভুলিয়ে বিভিন্ন ভাবে যৌন হয়রানি করা হয়ে থাকে। ব্র্যাকের উপরের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ১৭% শিশু যৌন হয়রানীর ঘটনা পরিবারের সদস্য দ্বারাই হয়ে থাকে।
এবং এসকল এভিডেন্স স্পষ্টই নির্দেশ করে যে অফেন্ডার বা রেপিস্ট পেডোফেলিয়া (Pedophilia) আক্রান্ত এবং এদের সংখ্যা বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে।
কেস স্টাডি-৪: বাংলাদেশে প্রায়ই শোনা যায় বাসে বা ট্রেনের ভিড়ে মেয়ে দের গায়ে হাত দেওয়ার ঘটনা বা তাদের সাথে ভিক্টিমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইচ্ছে করে শারিরিক সংস্পর্শে আসার মত ঘটনা (রেফারেন্স সেকশনে এ লিঙ্ক দেওয়া হল)। এটা পেডফেলিয়ার মতন অতটা মারাত্মক না হলেও, যে ভিক্টিম তার কাছে এটা অত্যন্ত অপমানজনক এবং লজ্জার এবং এটা আইনি ভাবে শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এই ধরনের ঘটনা প্রতিদিন অহরহ অসংখ্য বার রাস্তা ঘাটে ঘটছে। এবং এটা এবনরমাল সেক্সুয়ালিটি ফ্রটারিজম (Frotteurism) কে তীব্র ভাবে ইঙ্গিত করে এবং দেশের বেশ বড়সড় একটা জনগোষ্ঠী যে এই এবনরমাল বিহ্যাভিয়ারে আক্রান্ত তারই নির্দেশনা দেয়।
কেস স্টাডি-৫: Northern Illinois University এর স্যাডিস্ট কেস স্ট্যাডি এর একটি রিপোর্ট থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ তুলে ধরছি, তা হল “স্যাডিস্ট কেস স্ট্যাডির জন্য মেজারমেন্ট হিসাবে অফেন্ডারের ব্যক্তিগত জীবন এবং চরিত্র বিশ্লেষণ করা হয়েছে যেখানে মোট ১৬ টা নিয়ামকের সাপেক্ষে অফেন্ডারের চরিত্র বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি এরকম, শিশু বয়সে শারিরিক হয়রানির স্বীকার, উচ্চমাধ্যমিক পাশ না, শিশু বয়সে যৌন হয়রানির স্বীকার, আত্ম্যহত্যা প্রবণতা, ড্রাগ ব্যবহার ইত্যাদি এবং স্যাডিস্টিক কর্মকাণ্ড ঘটানোর সময় ভিক্টিমের সাথে কি ধরনের আচরন করা হয়েছে তার জন্য ও প্রায় ২২ টি নিয়ামকের সাপেক্ষে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, কয়েকটি এরকম, ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করা, ভিক্টিম কে পূর্বে ঠিক করে রাখা যায়গায় নিয়ে যাওয়া, ভিক্টিম কে শারীরিক ভাবে আঘাত করা, মারার সময় ভিক্টিম কে কি বলতে হবে তা বলে দেওয়া(বল তুই এটা করছিলি, বল। এরকম কিছু), নির্যাতনের দৃশ্যের ভিডিও ধারন করা, ফরেইন অবজেক্ট পেনিট্রেশন টু ভিক্টিম” এই কথা গুলো বলা হল কারন বাংলাদেশে পেপার খুললেই গৃহ বধু নির্যাতন এবং হত্যা, কাজের ছেলে/মেয়ে কে শারীরিক নির্যাতনের মতন ঘটনার খবর খুব বেশি বেশি চোখে পড়ে। সেই সাথে এই ধরনের সব থেকে ভয়াবহ ঘটনা দুটি ঘটে গত বছরেই, সিলেটে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন (১৩)হত্যা, এবং খুলনায় কমপ্রেসর মেশিনের হাওয়া পায়ু পথ দিয়ে প্রবেশ করিয়ে শিশু রাকিব কে হত্যা। হত্যা মামলার রায়ও হয়ে গেছে। এর পরে আসি আরেকটি কেসে, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ‘ভোরের কাগজে প্রকাশিত’, টাঙ্গাইলের কালোহাতীতে ছেলে কে দিয়ে মা কে রেপ করানোর চেষ্টা এবং পরে মা কে ধর্ষণ। কিন্তু আমার আলোচ্য বিষয় হল এই ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনার সংখ্যা কিন্তু বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে সেক্সুয়াল স্যাডিজমের উপরে তেমন কোন কাজ হয়েছে কিনা আমি জানি না। উপরের ঘটনা গুলোও ‘সেক্সুয়াল স্যাডিজমের’ বা ‘স্যাডিজমের’ আওতাভুক্ত কিনা আমি নিশ্চিত না। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা যখন বার বার ঘটে তখন এগুলো নিয়ে শীঘ্রই বিস্তর কাজ হওয়া অবশ্যই এখন খুবই আবশ্যক।
দুটি ব্যতিক্রমি কেসঃ প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা হচ্ছে যে, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৫ এর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি সংবাদে বলা হচ্ছে “পার্থ দে নামক এক ভদ্রলোক তার বোন দেবযানীর কঙ্কাল দীর্ঘদিন যাবত নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন পরে পুলিশ তা উদ্ধার করে এবং বর্তমানে পার্থ দে পাভলভ হসপিটাল নামক একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। যার সাথে ‘নেক্রফিলিয়েন্সি’ এর সম্পর্ক খুজে দেখা হচ্ছে।
এছাড়াও ২০০৬ নইডা(noida) সিরিয়াল মার্ডার নামে ইন্ডিয়াতে একটা ক্রাইম সংঘটিত হয়। বলা হয় এটা নাকি ইন্ডিয়ার ইতিহাসে সব থেকে বড় বিকৃত রুচির ক্রাইম। এই কেসে সুরিন্দার কলি (Surinder Koli) নামক এক ব্যক্তি ১৯+ সিরিয়াল কিলিং ঘটায় এবং এখানে একজন বাদে ভিক্টিম দের সবাই ছিল শিশু যার মধ্যে ১১ জনই মেয়ে। সুরিন্দার কলি কে যাবজ্জীবন কারা দণ্ড দেওয়া হয়। এবং এটা সেক্সুয়াল স্যাডিজমের সাথে সম্পর্কিত।
প্যারাফিলিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারনঃ অধিকাংশ প্যারাফিলিয়াই বেশ রেয়ার (পেডফেলিয়া এবং ফ্রটারিজম ব্যতিত) এবং এটা পুরুষ দের ভিতরে মেয়ে দের তুলনায় ২০ গুন বেশি দেখা যায়। যাইহোক প্যারাফিলিয়ার অভ্যাস বা ফ্যান্টাসি থাকা মানেই কিন্তু মেন্টালি অসুস্থ থাকা না। যদিও মানসিক অসুস্থতা একটা কারন হতে পারে। কম মাত্রায় প্যারাফিলিয়া আক্রান্তরা সাধারনত মাস্টারবেশন বা যৌন মিলনের সময় শুধু একটা বিকৃত ফ্যান্টাসির(ভাবনার) ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকে যেটা খুব একটা ক্ষতিকর না। কিন্তু একটা পপুলেশনে যখন রিপিটেডলি ক্রাইম অফেন্স নোট করা হতে থাকে তখন সেটা সত্যি ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যেটা এখন বর্তমান বাংলাদেশে হচ্ছে।
Abnormal Psychology: An Integrative Approach By David Barlow, V. Durand বইতে sexual dysfunction and paraphilia অধ্যায়ে বলা হয়েছে “যদিও কেস-হিস্ট্রিভিত্তিক হাইপোথিসিস বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধানের বিকল্প নয়, তথাপি এই হাইপোথিসিসগুলোর সত্যতা বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায়”।এবং সেখানে প্যারাফিলিক এবনরমালিটির কারন নির্ধারণের জন্য কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
ঘটনা-১: একটি ঘটনা এরকম, ‘রবার্ট (বহিরাগত দের সামনে ‘যৌন অঙ্গ প্রদর্শনের’ দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন, এক্সিবিশনিজম) যে বড় হয় টেক্সাসের একটি ছোট শহরে কঠোর কর্তৃত্ববাদী পিতা ও উদাস মাতার অধীনে, তার পিতা রক্ষণশীল ধর্মে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন, এবং তিনি তার পরিবারকে প্রায়ই যৌন মিলনের ব্যাপারে কড়া ধর্মীও অনুশাসনের কথা শুনাতেন। রবার্ট তার পিতার থেকে যৌন ব্যাপারে শুধু এই শিক্ষাই পায় যে সেটা খারাপ। তাই সে নিজেকে জোর করে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ এবং কোন ধরনের ফ্যান্টাসি থেকে সরিয়ে রাখত এবং সমবয়সী মেয়েদের পাশাপাশি হলে স্বস্তি বোধ করত না। কিন্তু হঠাত করে সে ব্যক্তিগত যৌন আনন্দের উৎস খুজে পায়। সে জানলা দিয়ে সুন্দরী আত্মভোলা মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকতে শুরু করে এবং জীবনের প্রথম মাস্টারবেশনের অভিজ্ঞতা এভাবেই অর্জন করে। কিন্তু রবার্ট ধরা পড়ে যায় এবং অপরিচিত দের সামনে ‘যৌন অঙ্গ প্রদর্শনের’ দায়ে কোর্ট তাকে অল্প সাজা দিলেও তার পিতা কে জনসম্মুখে অপমান করা হয় এবং তাদের পরিবারকে শহর থেকে বের করে দেওয়া হয়”।
ঘটনা-২: “টনি (যিনি নিজ কন্যার সাথে যৌন মিলনের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলন), তার চাইল্ড হিস্ট্রি বেশ ইন্টারেস্টিং, সে একটি ভালবাসা পূর্ণ, সাধারন ক্যাথলিক ফ্যামেলিতে বেড়ে ওঠে। কিন্তু তার এক কাকা ছিলেন যিনি ফ্যামিলির বৈশিষ্ট থেকে আলাদা ছিলেন। ৯-১০ বছর বয়সে টনি তার কাকার দারা উৎসাহিত হয়ে ‘কাকা এবং এক প্রতিবেশীর স্ত্রীর পোকার গেইম(!)’ দেখতে আগ্রহী হয়। সে তার কাকা কে একজন রেস্টুরেন্ট কর্মীর সাথেও দেখে, এবং কাকার দারা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের চেয়ে বয়সে ছোট, মেয়ে কাজিনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে, এবং এভাবেই একটু অল্প বয়সে সে মাস্টারবেশন এবং ছোট মেয়েদের সাথে আনন্দ উপভোগ করতে শেখে। সে যদিও কাকার দারা শারীরিক সংস্পর্শের স্বীকার হয়নি কিন্তু কাকার আচরন ছিল এবিউসিভ, সে ১৩ বছর বয়সে তার বোন এবং গার্লফ্রেন্ড এর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে যা ছিল আনন্দের। পরে সে ১৮ বছর বয়সে একটি পতিতালয়ে যায় এবং যৌন মিলন করে যেটাতে সে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। কারন সে শীঘ্র ইজাকুলেশনের স্বীকার হয়। এটা ছিল তার ছোট বেলার স্পষ্ট স্মৃতি যেটা বাচ্চা মেয়েদের সাথে ছিল সুখের এবং বয়স্ক মেয়েদের সাথে ছিল অসন্তুষ্টির। এরপর সে কাজে যোগ দেওয়ার পর প্রস্টিটিউট দের কে খুজে নিত যারা ১২ বছরের কাছাকাছি বয়স’।
এই দুটি ঘটনা আমাদেরকে এটাই বুঝতে সেখায় যে তাদের দুজনের কেউই ছোট বেলায় সুস্থ মানসিক বিকাশের সুজোগ পায়নি। এছাড়া The Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM) , published by the American Psychiatric Association
এর কাজের ধারা অনুযায়ী প্যারাফিলিয়ার জন্য দায়ি আরও কয়েকটি কারন হল,
১। নিউরোট্রান্সমিটার নামে পরিচিত মস্তিষ্কের কিছু রাসায়নিক উপাদান (যেমন, ডোপামিন (dopamine), সেরোটোনিন (serotonin), নরেপিনফ্রিন (norepinephrine) এর ভারসাম্যহীনতা যা এবনরমাল যৌন আচরনের জন্য কারন হয়ে থাকতে পারে। এগুলো সাধারনত ভাল রাসায়নিক এবং আমাদের মন মানসিকতা নিওন্ত্রন করে।
২। পুরুষ এবং নারীদের দেহে থাকা এন্ড্রজেন নামের সেক্স হরমোন সেক্সুয়াল আকর্ষণ নিওন্ত্রন করে, প্যারাফিলিয়ায় এর ভুমিকা নিয়ে রিসার্চ চলছে।
৩। দীর্ঘ দিন ধরে বার বার আনন্দ দায়ক কোন কিছু করার ফলে তা মস্তিস্কের স্নায়ুতন্ত্রের ঘঠনে পরিবর্তন আনে এবং এটা এক সময় অভ্যাসে পরিনত হয় যা বার বার মানুষ কে একই কাজ করতে প্ররোচিত করে।
প্যারাফিলিয়ার চিকিতসাঃ
১। প্যারাফিলিয়ার চিকিতসায় সাইকোথ্যারাপি, ওষুধ এবং কাউন্সিলিং এক সাথে ব্যবহৃত হয়। হতাশা, বিষণ্ণতা, এলকোহল এবং ড্রাগের প্রভাবও বিবেচনায় রেখে এগুলোর চিকিৎসা করা হয়।
২। রিহ্যাবিলেটেশন সেন্টার গুলতে গ্রুপ তৈরি করে নিজেদের জীবনের গল্প বিনিময় করার মাধ্যমেও এর চিকিৎসা করা হয়।
৩। ব্যবহৃত ওষুধের মধ্যে হতাশা-নিরধোক ঔষধ, এন্টি-এন্ড্রজেন্স (যা অতিরিক্ত যৌন চাহিদা কে নিয়ন্ত্রন করে)। মানসিক স্থিতিশীলতা তৈরির জন্য মুড-স্ট্যাবিলাইজার যেমন লিথিয়াম ও নাল্ট্রেরক্সওন (naltrexone) ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের জন্য করনীয়ঃ
১। রক্ষণশীল বাংলাদেশের অধিকাংশ কিশোরই বেড়ে ওঠার সময় সুস্থ পরিবেশ পায় না। তাই বাবা মা কে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে তার সন্তানের মানসিক বিকাশ ঠিক মতন হচ্ছে কিনা। তার সন্তান কিশোর বয়সে কি ধরনের আচরন করছে। কার সাথে মেলামেশা করছে। এবং তার সাথে যৌন শিক্ষার ব্যাপারে খোলাখুলি বন্ধু সুলভ কথা বলা।
১.১। বাচ্চা বয়সে শিশুদের যৌন শিক্ষা দেওয়াটা উচিত নয় ঠিকি, কিন্তু কিছু ব্যাপারে তাদেরকে সচেতন করে দিতে হবে, যেমন- নিকট আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের কেউ তাদের সঙ্গে সন্দেহজনক কোন আচরণ করছে কিনা। তাদের কে চকলেটের লোভে ভুলিয়ে গায়ের স্পর্শ কাতর যায়গায় কেউ হাত দিচ্ছে কিনা। এবং এধরনের কিছু হলে সে যেন সেখান থেকে দ্রুত চলে আসে এবং বাবা-মা কে জানায়। এবং আপনার সন্তান এধরনের কোন কিছু জানালে কখনই অবহেলা করবেন না। এখানে সতর্কতার নমুনা হিসাবে একটা ভিডিও লিঙ্ক দেওয়া হল।

২। যৌন শিক্ষা এখনো বাংলাদেশে খুবই অপ্রতুল। স্কুল কলেজ গুলোতো অনেক দূরে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত সঠিক যৌন শিক্ষার ব্যাপারে জানে না, এ ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলা অনেকটা যেন অলিখিত নিষেধ। এই বাধা কাটিয়ে উঠতে হবে, স্কুল কলেজের শিক্ষক দের কে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। যৌন শিক্ষার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সাথে নিওমিত সময় নিয়ে কথা বলতে হবে।
৩। কিছু এন.জি.ও এই ব্যাপারটা নিয়ে কাজ করছে যেমন ‘ব্র্যাক’। তারা ক্লাস ৮ এর শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধের ট্রেইনিং ও ক্লাস ৯ এর শিক্ষার্থীদের যৌন শিক্ষার ব্যাপারে বেসিক ট্রেইনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। কিন্তু খুবই অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী (জেলায় ১০-২০ জন) এই ট্রেইনিং এ অংশ নেওয়ার সুজোগ পায়, এই প্রোগ্রাম ও সব সময় চালু থাকে না। তাই সরকারী এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোকে একসাথে হয়ে নিওমিত ট্রেইং এর ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে সকল শিক্ষার্থী তাতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।
৪। সরকারী ভাবে পাঠ্য বইয়ে ক্লাস ৬-৭ থেকে যৌন শিক্ষার জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে চ্যাপ্টার যোগ করতে হবে কিংবা এর জন্য আলাদা একটা বইও যোগ করা যেতে পারে।
৫। সমাজে রেপ, নারীর শ্লীলতাহানি রোধ করার জন্য এবং সুস্থ সমাজ গড়ার জন্য প্যারাফিলিয়া আক্রান্ত দের কে চিহ্নিত করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। রেপ বা চাইল্ড রেপ, নারী ও শিশু হয়রানী সংক্রান্ত আইনের সংস্করণ করা এবং কেস সত্য প্রমানিত হলে দ্রুত বিচারের আওতায় জামিন অযোগ্য যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তির বিধান রাখা।
বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণঃ প্যারাফিলিয়া এবং মানসিক অসুস্থতার উপর বানানো ‘রোটেন টোম্যাটো’ তে ৯৫% এর উপরে রেটিং পাওয়া বেশ কয়েকটি ভাল মুভি আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল, Being There (1979), Best Boy (1979), Bill (1981), Dominick and Eugene (1988), I Stand Alone (1999), Heart Is a Lonely Hunter (1968), Of Mice and Men (1992), Sling Blade (1996), To Kill a Mockingbird (1962), What’s Eating Gilbert Grape (1993.
বিশেষ ধন্যবাদঃ Abuhayat Khan ভাই কে। যিনি আর্টিকেলটা লিখতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
চলবে…
তথ্য সূত্রঃ

https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_paraphilias
http://www.msdmanuals.com/professional/psychiatric-disorders/sexuality,-gender-dysphoria,-and-paraphilias/overview-of-paraphilic-disorders
http://www.psychologistanywhereanytime.com/sexual_problems_pyschologist/psychologist_paraphilias_list.htm
http://www.mdhil.com/paraphilia-causes-symptoms-diagnosis-treatment-prevention/
http://www.niu.edu/user/tj0bjs1/bdsm/Gratzer%20&%20Bradford%20(1995).pdf
http://www.dhakatribune.com/crime/2015/aug/06/280-children-raped-first-six-months-2015
http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/24283542
http://indianexpress.com/article/cities/kolkata/partha-cremates-debjanis-remains/
https://en.wikipedia.org/wiki/2006_Noida_serial_murders
http://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/4838
http://shomoyerkhobor.com/news-detail.php?id=31543
http://www.amadershomoy.net/2015/08/08/%E0%A6%AF%E0%A7%8C%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A6%AE-%E0%A6%B0%E0%A6%A1-%E0%A6%B8%E0%A7%8D.html
http://www.banglanews24.com/fullnews/bn/438987.html
http://www.bhorerkagoj.net/online/2015/09/21/121406.php
http://www.channelionline.com/news/details/%E0%A6%97%E0%A7%83%E0%A6%B9%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%80-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%A8-%E0%A6%93-%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0/10198

আবার আসিব ফিরে…

ধিক্কার তাদের প্রতি যারা এই কাজ টা করলো । তারা যদি মনে করে যে তারা আমার একাউন্ট হ্যাক করে , আমার প্রোফাইল এর ক্লোন তৈরি করে কিম্বা ন্যক্কারজনক ভাবে আমার একাউন্টের উপর সুসংগঠিত ভাবে আক্রমণ করে আমাকে থামাবে , তাহলে ভুল করছে তারা । তারা কি জানে না যে , এভাবে আন্তর্জাতিক জগতে কাউকে ঠেকানো সম্ভব নয় ? তারা কি জানে না, পৃথিবীর কোনও দেশ ঠেকাতে পারেনি ? তারা কি জানে না যে, এই কাজ তাদের সবলতা প্রকাশ করে না ?
কি ঘটেছিলো , অনেকে জানতে চাইছে। বলছে , কি হল ? কেউ কেউ এখনও জানে না যে কেন আমার ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ হয়ে গেলো ! কেউ কেউ ভাবছে যে আমি আজব মানুষ , নিজেই হঠাৎ নিজের ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ করে দিলাম, কাউকে কিছু না জানিয়ে । তাই আমার এই পোস্ট । (কেউ কেউ আবার যারপরনাই আনন্দিত হয়ে পোস্ট দিয়েছে ফেসবুকে । তাই তাদেরও জানানোর জন্য আমার এই পোস্ট ।) আমি জানাতে চাই, ঠিক কি হয়েছিল সেদিন ।
তখন আমি খালার বাড়িতে । অনেকদিন ধরে ফেসবুকে বসা হচ্ছে না ভেবে খারাপ লাগছিল । এই বিষয়ে একটা স্ট্যাটাস ও দিয়েছিলাম সেদিন । আসলে বাস্তবে তো এত জন সমমনা পাওয়া অসম্ভব প্রায় । এখনও আমাদের উপমহাদেশে সেই সামাজিক উন্নতি হয়নি , যেখানে ধর্ম না মানার স্বাধীনতাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয় । তাই ফেসবুকের বন্ধুরা আমার খুব কাছের মনে হয় । তাছাড়া বাংলাদেশ আমার আম্মির দেশ । সেখানে আমার ভাষার মানুষজন । সেই দেশের মানুষদের সাথে কথা বলতে , সেই দেশের মানুষের সাথে ভাব বিনিময় করতেও খুব ভালো লাগে । মনে হয় এরা আমার কত চেনা , কত আপন । অন্যের বাড়িতে বলে সেখানে কম্পিউটার থাকা সত্ত্বেও হাত দিচ্ছিলাম না। একে গ্রাম তারপর সেখানে ইন্টারনেট খুব দুর্বল গতির । শেষমেশ ভাই(খালার বড় ছেলে)-কে বলেই ফেললাম , “ ভাই, একবার তোর কম্পিউটারে ফেসবুক টা খুলবো ?” ভাই তো সঙ্গে সঙ্গে খুব খুশি হয়েই রাজী হয়ে গেলো । গত ১৪ –ই জুলাই সারা রাত আমি কম্পিউটারে বসেছিলাম । ট্রেনে খালার বাড়ি আসতে আসতে যে লেখার ফাইনাল খসড়াটা তৈরি করেছিলাম, সেটা লিখলাম । ১৫ তারিখ সকালে তো দু’ চোখ বুজে আসছে ঘুমে । শেষে এক ফেসবুক বন্ধু , শুভ মাইকেল ডি কস্টা, তাকে অনলাইন পেয়ে বললাম একটু এডিট করে দিতে । সে খুব যত্ন নিয়ে করে দিল কাজ টা । খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন আমার ওই লেখায় বানান ইত্যাদি ভুল নগণ্য । তো আমার লেখা টা “ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ : কিছু নতুন কথা” নামে ১৬ তারিখে মুক্তমনায় বের হওয়ার পর আমি আমার পরিচিত কয়েকটা গ্রুপে লেখা টা শেয়ার করেছিলাম । এবং তারপর অন্য অনেক গুলো ব্লগেও লেখাটা দিলাম । আমার লেখাটা কেমন হয়েছে সেই নিয়ে অনেকে ফিড ব্যাক দিচ্ছিল । কেউ কেউ প্রশ্ন করছিল ফেসবুকে । আমি উত্তর দিচ্ছিলাম । অনেকে দেখলাম লিঙ্ক শেয়ার ও করছে । সারা দিন কম্পিউটারে বসে ফিডব্যাক পেতে ভালই লাগছিল । শেষে, সন্ধ্যা বেলায় শুকতারা গ্রুপে এক ব্যক্তির কমেন্ট পড়ে এত ভালো লেগেছিল যে তাঁকে বন্ধু অনুরোধ পাঠালাম । তিনিও সাদরে গ্রহণ করলেন । কিন্তু সন্ধ্যাবেলায় ভাবছি তাঁর সাথে একটু কথা বলবো, আগে তাঁর কমেন্টের প্রত্যুত্তর দিয়ে নিই। তাই কমেন্ট করা শুরু করলাম । কিছুটা লিখেছি । আচমকা দেখি, লগ আউট হয়ে গেলাম । আমি তো অবাক ! আচমকা কমেন্ট করতে করতে লগ আউট!!?? সে আবার কিভাবে সম্ভব ??
একবার ভাবলাম কম্পিউটারের সমস্যা। একবার মনে হল হয়তো ব্রাউজার বা ফেসবুকের সমস্যা হবে । আমি আবার লগ ইন করতে গিয়ে ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড দিয়ে দেখি কিছুতেই লগ ইন করা যাচ্ছে না । শেষে অন্য একটা ব্রাউজারে লগইন এর চেষ্টা করতে দেখি লগ ইন হল । তখন দেখি আমার দেওয়ালে নোটিফিকেশনের জায়গায় প্রায় ১৩১ দেখাচ্ছে । আমি আবার অবাক । কিছুক্ষণের মধ্যে এত !!
অবাক হওয়ার পালা তখনও শেষ হয় নি । নোটিফিকেশন এর ডিটেল দেখতে গিয়ে দেখি সব গুলোই প্রায় আমার প্রোফাইল এর বিরুদ্ধে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগের-ই নোটিফিকেশন। নোটিফিকেশনের ডিটেল দেখতে দেখতে ই আরও কয়েকটা অভিযোগ পড়লো । তখন সব কিছু জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো আমার কাছে । বুঝলাম সুসংগঠিত ভাবে আমার বিরুদ্ধে খালি রিপোর্ট করা হচ্ছে । হয়তো আমার লেখার বিরুদ্ধে ওদের দেওয়ার মতো কোনও যুক্তি নেই , হয়তো আমার শেষ লেখা তে যে ধরণের মানুষ গুলোর মুখোশ খোলা হয়েছে , সেই ধরণের মানুষগুলোর অভিপ্রায় কি তা প্রকাশ হয়েছে যেভাবে আগে কেউ করে নি এবং তাদের যে শ্রেণীতে ফেলা হয়েছে সেটা তাদের পছন্দ হয়নি । তারা যুক্তিতে না পেরে হেরে গিয়ে শেষে এই কাপুরুষের মতো পন্থার আশ্রয় নিয়েছে । হয়তো কোনও গ্রুপের সদস্যরা অনেকে মিলে রিপোর্ট করেছে ।
এই সব সাত-পাঁচ ভাবছি , হঠাৎ মিনিট দশ এর মধ্যেই আবার আমি লগ আউট হয়ে গেলাম । এবার স্থায়ীভাবে । আর কোনও ভাবেই লগ ইন হল না । কিছুক্ষণের জন্য বিপর্যস্ত লাগছিল নিজেকে । মনে হচ্ছিলো এরকম করলে তো কিছুই করার নেই । অসহায় ভাবে চুপচাপ হতে দেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না । তবে কি আমার লেখার স্বাধীনতার সীমা শেষমেশ ওরা ঠিক করে দেবে ?
যাই হোক, আমি আর আমার ফেসবুক প্রোফাইল এ প্রবেশ করতে পারছিলাম না । কিন্তু তখনও আমার ইমেইল আই ডি তে মেসেজ হিসাবে বন্ধুদের অনেক কথা জানতে পারছিলাম । আমার প্রোফাইল নিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও জানতে পারছিলাম । কিন্তু উত্তর দিতে পারছিলাম না । খুব অসহায় লাগছিল । খানিক টা টিভি তে ভূতের সিনেমায় দেখানো আত্মার মতো । (যদিও ,আত্মা আর ভুত একই না আলাদা সে তো আধিবিদ্যক প্রশ্ন ! সে বিতর্কে না ঢোকাই ভালো !)
আমাকে পাগল বলবেন হয়তো , কিন্তু যতবার-ই দুরবস্থায় পড়ি প্রতিবার-ই আমার বুদ্ধ আমার মনে শক্তি যোগায় । কিভাবে জানি না । কুসংস্কার বলুন ,অন্ধবিশ্বাস বলুন কিম্বা মেয়ে সুলভ আবেগ — যাই বলুন না কেন , বুদ্ধের বাণী কোনোদিন আমাকে হেরে যেতে দেয় নি । আমি কোনও অলৌকিকের কথা বলছি না । অলৌকিকে বিশ্বাস তেমন নেই । কিন্তু ওই মুহূর্তেই কেন জানি না মনে পড়লো বুদ্ধের সেই বাণী— “সব শুরুরই একটা শেষ আছে , সব শেষেরই একটা শুরু আছে ।” মনে অনেক জোর চলে এলো নিজে থেকেই । প্রতিজ্ঞা করলাম , এবার শুরু টা আরও সবল হবে । আবার একটা একাউন্ট খুললাম । ‘কাফির মহসিনা’ নামে । রাতে ঘুম হল না । ১৭ তারিখ সকালেই বাড়ি ফিরে এলাম । একাই । আম্মি এখনও আছে খালার বাড়িতে । এসে কয়েকজনকে নিজের পরিচয়ের প্রমাণ দিলাম আমার নতুন একাউন্ট থেকে । তারা আমার কথা অনেকের কাছে ছড়িয়ে দিল । আবার আমি যেন পায়ের নিচের জমি ফিরে পেলাম । খুব আনন্দ হল । মনে হল , তাহলে আমরাও সংগঠিত । আমরাও লড়তে পারি । তবে আমাদের লড়াই ধ্বংসমূলক নয় , গঠনমূলক লড়াই । বন্ধুদের পাসে আমরা সর্বদাই থাকলে কেউ আমাদের বাকরোধ করতে পারবে না । এত শক্তি কারো নেই যে এই বৌদ্ধিক ও সামাজিক আন্দোলনকে থামিয়ে দেবে ।
এর আগেও তারা আমার একাউন্ট-এর ক্লোন বানিয়ে বিপরীত প্রচার করে আমাকে অসুবিধায় ফেলতে চেয়েছে । তখনও আমার বন্ধুরা আমাকে সাহায্য করেছিল । সেই প্রচেষ্টা অচিরেই ব্যর্থ করে দিয়েছিল তারা । এবার ও তারা প্রচুর সাহায্য করলো । তাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ । বন্ধুদের কাছে আমার একটাই দাবী , শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়, সবার ক্ষেত্রেই আমাদের একে অপরের পাসে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হবে । তবেই পুব আকাশ রাঙ্গা করে একদিন সুদিন আসবে । হবে নতুন সকাল । তবেই পরবর্তী প্রজন্মের মন ও মস্তিষ্কের কালো কালো কুঠুরি গুলোয় আলো পড়বে । সেই আলো ছড়িয়ে পড়বে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে । সেদিন আমরা থাকি না থাকি , শেষের হাসি আমরাই হাসবো। সেই হাসি শিশু কে শৈশব ফিরিয়ে দেওয়ার হাসি, পৃথিবী কে শান্তি ফিরিয়ে দেওয়ার হাসি । সে হাসি ব্যঙ্গের নয় ,পরিতৃপ্তির ।
সবশেষে, যারা আমাদের আটকাতে উদ্যত, যারা সর্বদাই আমাদের প্রোফাইলে নজরদারী করে , তাদের বলি , যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে যুক্তির বদলে যুক্তি দিন, ব্যঙ্গের বদলে ব্যঙ্গ করুন । সামনে থেকে লড়ে দেখান। এরকম নোংরা কাজ আপনাদের হীনতা, হেরে যাওয়া মানসিকতা আর ফ্রাসট্রেশনকেই প্রকাশ করে। আর ফ্রাসট্রেশন দেখানোর জন্যও যদি আপনাদের সংগঠিত হওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে তা আরও হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায় ।