Saturday 1 September 2018

আহমদ ছফা তার বই 'মুজিব হত্যার নীলনকশা'

আহমদ ছফা তার বই 'মুজিব হত্যার নীলনকশা' য় তুলে ধরেনঃ
---------------------------------------------------------------------------

“আমি কোন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিলাম না। আমি শুধু লিখতাম এবং কথা বলতাম, সব সময়ে অসংকোচে কথা বলতাম। আমি রাতে থাকব কোথায়, পরের বেলা খাবার জোটাব কি করে তারও কোন নিশ্চয়তা ছিল না। তবু বিপদে পড়ে গেলাম। কি করে যে প্রচার হয়ে গেছে যে আমি শিক্ষক-সাংবাদিকদের বাকশাল যোগ না দেয়ার জন্য প্রচার কার্য চালাচ্ছি।

এই খবরটা শেখ সাহেবের বড় ছেলে শেখ কামালের কানে যথারীতি পৌঁছায়। শুনতে পেলাম তিনি আমাকে শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। আমার অবস্থা হল ফাঁদে ধরা পশুর মত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন বন্ধু-বান্ধবের বাসায় গিয়ে একটা নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই। একজন তো বলেই দিলেন, ভাই আমরা বউ ছেলে নিয়ে বসবাস করি। তোমাকে বাসায় বসতে দিতে পারব না। তোমার নামে নানা গুজব। তোমার সঙ্গে সম্পর্ক আছে জানলে বিপদে পড়তে পারি।

আমি চৌদ্দই আগস্ট সন্ধেবেলার কথা বলছি। একজন ভগ্নিস্থানীয়া হাউজ টিউটরের বাসায় গিয়ে হাজির হই। আমার বিশ্বাস ছিল তাঁর কিছু উপকার করেছি। আমি খাইনি এবং কিনে খাওয়ার পয়সা নেই। লাজশরমের মাথা খেয়ে তাঁকে কিছু খাবার দিতে বলি। মহিলা পলিথিনের ব্যাগে কিছু মোয়া দিয়ে বললেন, ছফা ভাই, এগুলো পথে হাঁটতে হাঁটতে আপনি খেয়ে নেবেন। আপনাকে বসতে দিতে পারব না।

তাঁর বাসার বাইরে এসে কি ধরনের বিপদে পড়েছি পরিস্থিতিটা আঁচ করতে চেষ্টা করলাম। বলতে ভুলে গেছি কার্জন হলে না কোথায় দুটো বোমা ফুটেছে। আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সে সময়ে আমার বন্ধু অরুণ মৈত্র আমার সঙ্গে ছিলেন। অরুণ ‘ইস্টল্যান্ড’ নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থাতে কাজ করতেন। অরুণের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে বলাকা বিল্ডিংয়ের কাছাকাছি আসি। অরুণ আমাকে বললেন, সময়টা আপনার জন্য অনুকূল নয়। আপনি কোন নিরাপদ জায়গায় চলে যান। পরামর্শটা দিয়ে অরুণ বাসায় চলে গেলেন।

উদ্দেশ্যহীনভাবে আমি বলাকা বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ওমা কিছু দূর যেতেই দেখি একখানা খোলা জিপে সাঙ্গপাঙ্গসহ শেখ কামাল। একজন দীর্ঘদেহী যুবক কামালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, দেখ কামাল ভাই, আহমদ ছফা যাচ্ছে। কামাল নির্দেশ দিলেন, হারামজাদাকে ধরে নিয়ে আয়। আমি প্রাণভয়ে দৌড়ে নিউ মার্কেটের কাঁচা বাজারের ভেতর ঢুকে পড়ি।"

বি দ্রঃ চৌদ্দই আগস্ট সন্ধ্যায় মুজিব পুত্রের হাতে আহমদ ছফা সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু ঐ রাতেই মুজিব পুত্র স্বপরিবারে নিহত হন।
   
সৌজন্য -- Mezbah Uddin Ahmed