Saturday, 10 June 2023
ঘৃণা প্রচার পারস্পরিক বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব ও বিভাজন
আর সব কথা বাদ দিই, একটা দেশে ও সমাজে একটানা ঘৃণা প্রচার করতে করতে পারস্পরিক বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব ও বিভাজন কোন্ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন আপনারা, ভেবে দেখুন।
আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি, মুসলমান বনাম হিন্দু, নারী বনাম পুরুষ, সমতলবাসী বনাম পাহাড়ি, সেক্যুলার বনাম ধর্মীয় মূল্যবোধপন্থী, ভারতপ্রেমী বনাম পাকিস্তানপন্থী, মার্কিনভক্ত বনাম চীন-রুশপন্থী, সুফিবাদী বনাম সালাফী, হানাফি বনাম আহলে হাদিস, শিয়া বনাম সুন্নি (আরো আছে তবলিগী, কওমী, দেওবন্দী উপশাখাভিত্তিক বিভক্তি), সামরিক বনাম 'ব্লাডি সিভিলিয়ান', গ্রামীন বনাম শহুরে, পাবলিক ইউনিভার্সিটি বনাম প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, রাজনীতি সক্রিয় বনাম 'আই হেট পলিটিক্স', অনলাইন বনাম অফলাইন .... এ রকম আরো হরেক রকম বিভাজন। শিক্ষিত-অশিক্ষিত ও ধনী-গরীবের ফারাকের কথা না-ই বললাম। এর বাইরে অঞ্চলে অঞ্চলে, জেলায় জেলায় বিরোধ তো আছেই।
বিরোধ-বিভাজন উস্কাতে উস্কাতে আমরা জাতির ঐক্যসূত্রই নষ্ট করে ফেলেছি। জাতীয় সংহতিকে সম্পূর্ণ বিপন্ন অবস্থায় নিয়ে গেছি। এখন একজন আরেকজনের কোনো বিপর্যয়ে, এমনকি মৃত্যুতেও উল্লাস প্রকাশ করে। অনুভূতির দিক থেকে আমরা আর এক জাতি বা সম দেশবাসী আছি কিনা সন্দেহ।
এই ঘৃণাচর্চা আমাদের জাতীয় মানসিকতাকেই সম্পূর্ণ বিকৃত করে ফেলেছে। বিপজ্জনকভাবে বিনষ্ট করে ফেলেছে আমাদের জাতীয় অখণ্ডতাকে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিদেশীরা এসেও যদি আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষকে আঘাত করে, তখন আমরা উল্লাস করে সে আঘাতকে স্বাগতঃ জানাবো।
ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ স্বার্থে যারা এতোকাল ঘৃণা ও বিভাজনকে উস্কে দিয়ে আসছেন আজ তারাই এর সবচেয়ে বড় শিকার হবার সময় চলে এসেছে। সেটা না হয় হলো কিন্তু এতে করে পুরো দেশ ও জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যে অনিশ্চিত আশংকার মুখোমুখি হয়েছে, তার কী হবে?
সংকটের কথাটা তো বললাম, তা'হলে সমধান কী?
ঘৃণাজীবী ও বিভাজনপন্থীরা এখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে আছে। তাদেরকে বহাল রেখে এ সংকটের সমাধান হবে না। দেশ ও সমাজে যারা ঘৃণা-বিভেদের সংস্কৃতির প্রবর্তন করেছে, সব কিছুর আগে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। আমি তাদেরকে সম্পূর্ণ নির্মূল করে ফেলার কথা বলছি না। বলছি ঘৃণাবাদকে পরাস্ত করার কথা। দেশ ও সমাজে বিভাজনের এই রাজনীতি-দর্শন-সংস্কৃতি অবাঞ্ছিত করতে হবে। আমাদের স্বাধীনতার কোর ভ্যালুজ বা মূল্যবোধের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির পাটাতন তৈরি করতে হবে। বৃহত্তর জনসমাজে সঞ্চারিত করতে হবে একাত্মবোধ। সেটা হবে জাতি-রাষ্ট্র-সমাজ গঠন বা পুনর্গঠনের আসল কাজ। এটা যদি আমরা করতে না পারি তা'হলে জাতীয় সার্বভৌমত্ব তো আমরা আগেই খুইয়েছি অনেকখানি, স্বাধীনতা হারাবার শংকাও কিন্তু তৈরি হবে। 🌗
Subscribe to:
Posts (Atom)