Thursday, 17 August 2023

বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছিল।

সাইদীর জানাজায় মানুষের ঢল নামায় আজব এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে পুরা বাংলাদেশে। উনার জন্য ইন্নালিল্লাহি পড়ায় বিতর্কে পরেছেন হুজুর স্কুলের শিক্ষক থেকে আওয়ামী লীগের হাজারো নেতা কর্মীরা । আমিও ক্ষমা করে দোয়া চেয়ে বিরোধের জন্ম দিয়েছি। সবার এখন একটাই প্রশ্ন কেন বঙ্গবন্ধুর জানাজায় সামান্য কিছু মানুষ হয়েছিলো? স্বাধীনতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা বাদ দিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেন নি। বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা এতটাই নীচে নেমে গিয়েছিল যে 'তার নিজের দলের নেতারা মার্কিন দূতাবাসে বারবার গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।' এবার আসি দেশের জনগণের প্রতিবাদ নিয়ে। নিজ দলীয় লোকদের লুটপাট, রাজনৈতিক দলগুলোকে বিলুপ্তকরণের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তার উপর মানুষের একটা ক্ষোভ জন্মায়। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দেশের ইতিহাসে সবথেকে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ হয়েছিল যেখানে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। সারা দেশে শুধু হাহাকার চলতেছিল। দলীয় এবং সরকারি লোকদের কিছু না হলেও এর প্রভাব দেশের সাধারণ জনগণ ভালো করেই টের পেয়েছিল যার ক্ষোভ গিয়ে পড়েছিল বঙ্গবন্ধুর চরম অব্যবস্থাপনার উপরে। এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের লোকেরা যে যুক্তিটি সবথেকে বেশি দাঁড় করায় তা হচ্ছে সারা দেশে কারফিউ জারি ছিল। এটা স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর অজনপ্রিয়তাকে ঢাকতে তা কেবলই একটা প্রোপাগান্ডা মাত্র। তারা এটা ভুলে যাচ্ছেন যে এই অভ্যুন্থান সেনাবাহিনীর মাত্র ২ টি ইউনিটের ৯০০ জন সৈন্য অংশগ্রহণ করেছিল তাও কিছু না বুঝে। বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা এতটাই নীচে নেমে গিয়েছিল যে তার মৃত্যুর পর ঢাকা শহরে একটা প্রতিবাদী মিছিল পযর্ন্ত বের হয় নি। মূলত, তার সুবিধাভোগী ব্যক্তিবর্গরা একটু ভয় পেয়েছিলেন। সেসময়ের কিছু কথা হুবহু তুলে দিলাম। লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) এম এ হামিদ সাহেবের ভাষ্যমতে, " বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পরিদর্শনের পরে) ৩২ নং রোড থেকে ফিরে আমি স্টেশন হেডকোয়ার্টার থেকে জেনারেল শফিউল্লাহকে জানালাম ১৪৪ ধারা জারির কোন দরকার নেই। কোনরকম গন্ডগোলের আশঙ্কা কোথাও নেই। " তিনি আরো লিখেছেন, দুপুরে আমার অফিসে বসে স্টেশন সিকিউরিটি প্লান বানাচ্ছিলাম। এমন সময় জেনারেল শফিউল্লাহর ফোন এলো। তিনি আমাকে তাড়াতাড়ি শহরের অবস্থাটাও দেখে আসতে বললেন। সেই সাথে ৩২ নম্বর রোডের অবস্থাটাও দেখে আসতে বললেন। আমি সিকিউরিটি প্ল্যানের একটা খসড়া দাঁড় করিয়ে আমার স্টাফ অফিসারকে মোসাবিদা করতে বলে জিপ নিয়ে শহরের দিকে ছুটলাম। এয়ারপোর্ট রোড ধরে এগিয়ে আসছিলাম। রাস্তাঘাট ফাঁকা। সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত। মোড়ে মোড়ে জটলা। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে একটি মাত্র জীপই বীরদর্পের সশব্দে এগিয়ে যাচ্ছিল। আওলাদ হোসেন মার্কেট, ফার্মগেট দিয়ে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে আর্মি জিপ দেখে হাত নেড়ে স্লোগান তুললো, আল্লাহু আকবার ! সেনাবাহিনী জিন্দাবাদ ! একদিনেই এত পরিবর্তন ! অথচ গতকালও পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কি অবাক কান্ড ! তবে আমার বুঝতে অসুবিধা রইলো না যে, পরিবর্তিত অবস্থাকে সাধারণ মানুষ মেনে নিয়েছে। কোন বড় রকমের গন্ডগোল হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। আমি ১৪৪ ধারা জারির পক্ষে কোন যুক্তি দেখতে পেলাম না। শুধুমাত্র ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে সৈনিকরা বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছিল। মূলত এই ঘটনায় অনেকেই খুশি ছিলেন, এজন্য প্রতিবাদ করেন নি। অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের ভাষ্যমতে, মুজিবের মৃত্যুর ১০ বছর পরেও আত্মীয়-পরিজনদের মতানৈক্যের জন্য তাদের গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায় মুজিবের সমাধির উপর একটি সুযোগ্য স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করতে পারেননি বলে, তার কন্যা হাসিনা আমাকে জানান। মুজিবের নাকি অনেক জনপ্রিয়তা ছিল জনগণের কাছে, এমনটাই দাবি আওয়ামীলীগের। চিন্তা করেন, যে দলের লোকেরা দশ বছরেও নিজের নেতার একটা স্মৃতিসৌধ তৈরি করতে পারেন নি, তারা প্রতিবাদ করবে কিভাবে? তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পরার কারন কী ছিলো? এজন্য আপনাকে শেখ মুজিব সাহেবের শাসনামল পড়তে হবে। তবে একটা বক্তব্যের মাধ্যমে কিছু একটা ধারনা সবাই পেয়ে যাবেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, Althought he lacked any sophisticated knowledge of running a modern government. For his own part he was content to centralize all powers in his hands and attempted to rule the country like a medieval despot. অনুবাদ : আধুনিক একটা রাষ্ট্র চালানোর যে দক্ষতা থাকা দরকার, শেখ মুজিবের মধ্যে তার ঘাটতি ছিল। তার নিজের অধীনে তিনি সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে সন্তুষ্ট ছিলেন এবং মধ্যযুগীয় স্বৈরশাসকের মতো দেশ শাসন করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এই মধ্যযুগীয় কায়দায় দেশ চালানোই তার জনপ্রিয়তাকে নিচে নামিয়ে দিয়েছিল। দেশের অবস্থা চরম অবনতির পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল সরকারি দলের লুটপাট আর নৈরাজ্যের কারনে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাসের বক্তব্য অনুসারে, দুইশত কোটি ডলার পরিমাণ আন্তর্জাতিক সাহায্য দেশে আসার পরও ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে দেশটি দেউলি হয়ে গেল। আমদানি আর বিতরণ প্রক্রিয়ার প্রত্যেকটি স্তরে দুর্নীতি, কালোবাজারি, চোরাচালানি ইত্যাদির বদৌলতে খাদ্য সরবরাহ অবনতির দিকে দিকে ধাবিত হতে লাগলো। চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেল। তারপরই দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকা প্রলয়ংকারী বন্যায় ডুবিয়ে দিলো। মানুষখেকো বাঘের মতো দুর্ভিক্ষ সদর্পে সারাদেশে ছেয়ে গেল। গ্রামগুলোতে মশা মাছির মতো মানুষ মরতে শুরু করলো। উল্লেখ্য, শেখ মুজিব সাহেব স্বীকার করেছিলেন যে, খেতে না পেয়ে প্রায় ২৭,০০০ লোক মরে গেছে কিন্তু বাস্তবে লক্ষাধিক মানুষ মারা গিয়েছিল। এইরকম মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছিল। রেফারেন্স বই ও তথ্য : ১। Bangladesh: A Legacy Of Blood, Anthony Mascarenhas. অনুবাদক : মোহাম্মদ শাহজাহান ২। তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা, লে. কর্নেল (অব.) এম.এ হামিদ, পিএসসি। ৩। The Killing of Sheikh Mujibur Rahman: New Zealand International Review (September/ October 1976), Page: 18

No comments:

Post a Comment