Wednesday, 16 August 2023
২১ দিন কী করেছেন তোফায়েল-রাজ্জাক?
◾আওয়ামী লীগের ১৯৭৫ পরবর্তী রাজনীতির বড় পুঁজি হচ্ছে 'মুজিব হত্যা'। 'পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বাকশাল-এর মুজিববাদী সমাজতন্ত্রের বিরোধী গণতন্ত্রপন্থী নেতাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের নেতৃত্বে এক রক্তক্ষয়ী সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। এতে ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটে এবং একদলীয় শাসন উৎখাত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরে আসে। এই রক্তক্ষয়ী পটপরিবর্তনকে আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবুর রহমান ও তার স্বজনদের নিছক খুনের ঘটনা বলে প্রচার করে।
একসময় তারা খুনের বিচার চেয়ে রাজনীতি করতো। পরে খুন দেখিয়ে অভ্যুত্থানে জড়িত মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারদের তারা অধিকাংশের ফাঁসি কার্যকর করে। এরপর সেই রক্তাক্ত ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমান ও স্বাধীনতা-বিরোধীদের দায়ী করে রাজনীতি করতে থাকে। এর পাশাপাশি এবার তারা নিজেরাই আঙুল তুলেছে নিজেদের ঘরের দিকে। শেখ হাসিনা নিজেই এক লেখা লিখে তার দলের লোকদের দিকে সন্দেহের তীর ছুঁড়েছেন। তাদের একটি অনলাইন প্রোপাগান্ডা সাইট, সৈয়দ বোরহান কবিরের 'বাংলা ইনসাইডার' এ নিয়ে এক রচনা প্রচার করেছে। তাতে '৭৫-এর ১৫ আগস্টের অভিযানে আ.লীগের গৃহশত্রু বিভীষণদের ভূমিকা যাচাই করে দেখার জন্য একটি জাতীয় কমিশন গঠনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।
এ রচনা পাঠে আমি আমোদ পেয়েছি। আপনারাও যারা মজা পেতে চান, তারা পড়ে দেখতে পারেন।◾
******************************************************
বাংলা ইনসাইডার-এর রচনা। শিরোনাম :
`````````````````````````
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে। যে কোনো সময় তদন্ত কমিশন গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে- এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির একটি লেখা শোকাবহ আগস্টের আগের দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ‘বেদনায় ভরা দিন’- শিরোনামে এই লেখাটি এখন টক অফ দা টাউন। এই লেখায় তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যর্থতা এবং নির্লিপ্ততা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সেই সময়ের জনপ্রিয় দুই তরুণ নেতার ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রশ্ন তুলেছেন। এদের একজন প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক এবং অন্যজন তোফায়েল আহমেদ। প্রধানমন্ত্রীর লেখায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এই দুই নেতাকে বঙ্গবন্ধু ফোন করেছিলেন, এদের একজন স্বেচ্ছাসেবকদের দায়িত্বে ছিলেন এবং অন্যজন রক্ষী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন।
স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ সভাপতির এই লেখা আওয়ামী লীগের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এই দুই নেতার ব্যাপারে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতির এই লেখাই শেষ বিষয় নয়, আগস্টে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার ভূমিকা নিয়ে যতই গবেষণা করা যায়, ততই নিত্য নতুন তথ্য বের হয়। যে তথ্যগুলোতে সুস্পষ্টভাবে নেতাদের ব্যর্থতা, নির্লিপ্ততা, উদাসীনতা এবং কাপুরুষতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পরই খুনি মোশতাক নতুন সরকার গঠন করে এবং এই নতুন সরকারে আওয়ামী লীগের সব নেতাই যোগ দিয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো- খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় কোন প্রধানমন্ত্রী রাখা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর শেষ মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনসুর আলী। তিনি ১৫ই আগস্টের পর তার বাসায় অবস্থান করছিলেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো- ১৭ই আগস্ট মনসুর আলীর সঙ্গে খুনি মোশতাক সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে কি আলাপ-আলোচনা হয়েছিল, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য সেই সময়ের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। তবে ১৫ই আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত মনসুর আলী, নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, আব্দুস সামাদ আজাদ, কামরুজ্জামান ও কোরবান আলী কেউই গ্রেপ্তার হননি। তারা স্ব স্ব অবস্থানে ছিলেন।
প্রশ্ন হচ্ছে এই ৮ দিন, অর্থাৎ ১৫ আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে তারা কি করলেন? তারা কি একটি প্রতিবাদও করতে পারলেন না? তারা কি ঘর থেকে বের হতে পারলেন না? তারা কি কর্মীদেরকে একটা নির্দেশ দিতে পারলেন না? এতোটুকুই ঝুঁকি যদি রাজনীতিতে কেউ না নেয়, তাহলে সে রাজনীতিকে কি বলা উচিত? জাতীয় চার নেতাসহ অন্যান্যদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২৩শে আগস্ট। তার আগে পর্যন্ত তারা আসলেই যথাযথ ভূমিকা পালন করেছিলেন কিনা?- সে প্রশ্ন ইতিহাসে অমীমাংসিত হয়েই থাকবে। তবে তোফায়েল আহমেদ এবং আব্দুর রাজ্জাকের দায়টি আরও বেশি। তোফয়েল আহমেদ এবং আব্দুর রাজ্জাক, দুজনই গ্রেপ্তার হন ৬ সেপ্টেম্বর। ১৫ই আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর, ২১ দিন। অর্থাৎ তিন সপ্তাহের ব্যবধান।
এই তিন সপ্তাহ তারা গৃহান্তরীণ থাকুক, গৃহবন্দি থাকুক বা যে অবস্থায় থাকুন না কেন, তারা বাড়িতে ছিলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার হননি। এই সময়ে তারা কি করেছেন? তাদের সাথে কি খুনিরা কোনো সমঝোতার চেষ্টা করেছিল? খুনিরা তাদেরকে গ্রেপ্তারে এতো বিলম্ব করল কেন? তোফায়েল আহমেদ বা আব্দুর রাজ্জাকের মত বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ নেতারা-তো সাথে সাথেই খুনিদের চরম টার্গেট হওয়ার কথা, যেভাবে টার্গেট হয়েছিলেন শেখ মনি। সেক্ষেত্রে তোফায়েল আহমেদ আর আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তারে এতো বিলম্ব হলো কেন? তাদের সাথে কি কোনো দরকষাকষির চেষ্টা হয়েছিল?- এই প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রয়োজন। আর এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের জন্যই প্রয়োজন একটি জাতীয় কমিশন গঠন। ⚫
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment