Sunday, 22 May 2011

Terrorism

সন্ত্রাসবাদ শব্দ টির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল “terrorism”। অক্সফোর্ড ডিকশনারি তে ‘terrorism’ এর অর্থ করা হয়েছে— ‘the use of violent action in order to achieve political aims or to force a government to act’। অর্থাৎ কোনও রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন বা সরকার কে কাজ করার জন্য হিংসাত্মক কাজের দ্বারা বলপ্রয়োগ করা । আভিধানিক ভাবে বিচার করলে বলা যায় , যে উদ্দেশ্য তারা পূরণ করতে চায় সেটির জন্য হিংসাত্মক কাজের দ্বারা সরকার ও জনগণের মধ্যে তারা ভয় বা ত্রাসের সৃষ্টি কে তারা উপায় হিসাবে গ্রহন করে । কিন্তু উদ্দেশ্যটি সৎ না অসৎ, তা পরিষ্কার নয় । অর্থাৎ, উভয়ই হতে পারে ।

Sunday, 17 April 2011

ইসলাম ধর্মের ভুল

কোরানে কোনো ভুল নাই–এখানে কোরানের ভুল বলতে কী ধরনের ভুল বুঝানো হয়? যারা ধরেই নেয় কোরান আল্লাহ'র লেখা, আর আল্লাহ'র  লেখা কোরানে কোনো ভুল থাকতে পারে না–হাজারটা ভুল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও তারা ব্যাপারটা মেনে নেবে না। অনুবাদে ভুল আছে, বোঝার ভুল আছে, মূল আরবিতে পড়তে হবে, প্রেক্ষাপট বিচার করতে হবে, সেই সময়ের জন্য প্রযোজ্য–ইত্যাদি কথা বলে সবাই এড়িয়ে যান ভুলগুলো।
প্রচুর বিষয়ে কোরানে একেক জায়গায় একেক কথা বলেছে। একই বিষয়ে দুইয়ের অধিক কথাও আছে কোরানে। যেমন মানুষ সৃষ্টি করছে কিভাবে–এই প্রশ্নের উত্তরে কোরানে বিভিন্ন আয়াতে ৫/৬ রকম উত্তর আছে। এরকম স্ববিরোধিতাকে কি কোরানের ভুল বলা যাবে?
তারপর আছে বিভিন্ন তথ্যগত ভুল। যেমন খ্রিষ্টানদের “ট্রিনিটি” নিয়ে ভুল তথ্য আছে কোরানে। আবার ধরা যাক সম্পত্তি ভাগের হিসাব–সেখানেও একেবারে গাণিতিক ভুল। যদিও আজকাল অনেকে নানান ধরনের গোজামিল দিয়ে সেই অংকটাকে শুদ্ধ করতে যায়। ওদিকে ইসলামে এই ভুলটা বরাবরই সবাই স্বীকার করে নিয়েছিল। আলিকে বাধ্য হয়ে এই হিসাবে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো–কোরানের হিসাবে কোনো ভুল নাই বলেও মুসলমানরা কিন্তু আলির সংশোধিত হিসাবটাই মেনে নেয়।
আবার ধরা যাক চার বিয়ের হিসাবটা। তার আগে যাকাতের বিষয়টা দেখি–যাকাত ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। ধনীরা তাদের সম্পত্তির একটা অংশ গরীবদেরকে দান করবে। এভাবে ইসলামে কম্যুনিজম, মানে সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। এখন কথা হলো, এভাবে যদি দুনিয়ার আর গরীব না থাকে, তখন সবাই যদি একই সাথে ৪টা করে বিয়ে করতে চায়, তখন ইসলামের হিসাব মেনে এই হিসাবটা কিভাবে সম্ভব হবে? অনেকেই বলেন দুনিয়ায় মেয়েদের সংখ্যা বেশি, তাই পুরুষেরা চারটা করে বিয়ে করলেও সমস্যা হবে। আসলেই কি তাই? খোঁজ নিয়ে দেখেন তো নারী-পুরুষের অনুপাত কত?
তারপর ধরা যাক আদম-হাওয়ার বিষয়টা। বলা হয়ে থাকে, আদম-হাওয়া হলো দুনিয়ার প্রথম সৃষ্টি মানব-মানবী। তাদের দুই সন্তান–হাবিল, কাবিল। কোরান-হাদিস বা ইসলামের কোনো নির্ভযোগ্য সোর্স থেকে আদম-হাওয়া হাবিল-কাবিলের কাহিনীটা কেউ দিতে পারবেন? ইসলাম ধর্মের দুই বড় ভাই হলো ইহুদিধর্ম আর খ্রিষ্টানধর্ম। এই তিনটা ধর্মই আব্রাহামিক ধর্ম। ইসলাম আগের দুইটা ধর্মকে বাতিল ঘোষণা করলেও সেসব ধর্মীয় কাহিনীগুলো মেনে চলে। তাই আগের দুইটা ধর্ম থেকেও রেফারেন্স দিতে পারেন। দিয়ে দেখেন তো ইসলাম ধর্মের বিসমিল্যাতেই গলদ আছে কিনা।
আগে নিজের ধর্ম সম্পর্কে জানেন। না জেনে শুধু ক্যানভাসারদের মত ধর্মে কোনো ভুল নাই–এইটাইপের মুখস্ত বুলি আউড়াবেন না। আগে কাহিনী জানেন, তারপর সেই কাহিনীর সূত্র ধরেই বিচার হবে ধর্ম ভুল আছে কিনা।

Monday, 28 March 2011

ধর্মের কী দোষ ! (৩)

কেউ কেউ বলেন, ধর্ম নিয়ে অবিশ্বাসীরা কেনো এতো হৈচৈ করছে? ওটাকে নাড়াচাড়া না করলেই তো হয়! কথা সত্য, চিরদিন তো তাই হয়ে এসেছে, সামান্য কিছু অবিশ্বাসী এর প্রতিবাদ করেছে বটে কিন্তু এতে ধর্মের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ধর্মগুলো নিরাপদে থেকে শুধু পরস্পর পরষ্পরের সাথেই নয়, একই ধর্মালম্বীদের মধ্যেও চিরদিনই অরাজকতা চালিয়ে আসছে। কেউ কারো মতামতকে সামান্য ছাড় দেয়ার মনমানসিকাত ধর্মে আছে বলে মনে হচ্ছে না। ফলে আজো, যখন কোনো অবিশ্বাসী ধর্মের কুসংস্কারসহ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ দেখে প্রতিবাদ করে, তখনই প্রায় সব ধার্মিকরা ফাল দিয়ে ওঠেন, এবং সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধিজীবিসহ রাষ্ট্রনায়কেরা মিউ মিউ শুরু করেন। এই করতে করতেই তো একটার পর একটা আইএস দানব গোষ্ঠিসহ আলকায়দা, আলশাবাব, আনসারুল্লাহ, জেএমবি… সৃষ্টির ফ্যাক্টরির অভাব নেই। যা দমন করতে পৃথিবীর সব রাষ্ট্রেরই কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে (একটা দমন করা গেলে আরেকটার উৎপাত শুরু হয়…)। আর উভয়পক্ষের গোলাগুলি ও দানবীয় কর্মকাণ্ডে মরছে সাধারণ মানুষ (অনুমান ৯০%ই)। আশ্চর্য যে, বুদ্ধিজীবিসহ রাষ্ট্রনায়কগণ নিরাপদে থেকে, বক্তৃতা ও বিবৃতি দিয়েই চলেছেন, অথচ সমস্যার গভীরে হাত দিতে চাইছেন না। এই যদি হয় সভ্য পৃথিবীর ধর্মের অবস্থা। যখন ধর্মদানবদের তাণ্ডবে মানবতা ভুলুণ্ঠিত, তখন এর মূল উৎসগুলো যারা উন্মোচন করে, তাদের দোষারোপ করে, থামিয়ে দিয়ে আপনারা ভুল করছেন। কেননা, একসময় বুমেরাং হয়ে যে আপনাদের ঘাড়ে ওসব ফিরে আসবে না এর নিশ্চয়তা কোথায়! অতএব অনুরোধ, ধর্মসন্ত্রাস বন্ধের জন্য যেখানে সংশোধন অতীব জরুরি, সেখানে অতিসত্ত্বর হাত দিন।
অনেকেই আবার বলেন ও ভাবেন, ওরা কেনো ধর্মের সমালোচনা করছে! বিষয়টি অবশ্যই ধার্মিকদের কাছে শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, কষ্টের বিষয়ও বটে! স্বীকার করছি, যা ভালো তা নিয়ে সমালোচনা বা মন্দ বলা উচিত নয়। যেমন বিজ্ঞান, এ নিয়ে কেউ সমালোচনা করে না, মন্দ বলে না (সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হলেও)। অথচ ধর্ম নিজেই যে সমালোচনার দরজা-জানলাগুলো খুলে রেখেছে, সেসব কেউ কী ভেবে দেখেছেন? না দেখলে, আজ থেকেই ভাবুন। তবে ভাবলেই চলবে না, মনোসংযোগ ও প্রশ্নসহকারে পড়তে ও ভাবতে হবে; অর্থাৎ এর জন্য দায়ী কে বা কারা? এ মূর্খ মনে করে, এর জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী ঈশ্বর, ধর্ম এবং বিশেষ করে ধর্মপ্রবর্তক, পরবর্তীতে গ্রন্থলেখক/বাণী সংরক্ষকরা। কারণ তারা যখন তথাকথিত ঐশ্বীবাণী লিপিবদ্ধ করেছেন, তখন বোধহয় ভাবেননি, কতিপয় আনাড়ি মানুষ (অবিশ্বাসী) তাদের ভুল ধরবে এবং সমালোচনা করবে। ভাবলে বোধকরি ধর্মপুস্তকগুলোর ভাষা, কাহিনী, বাক্য, ব্যাকরণ… ইত্যাদি আরো বাস্তবধর্মী, গ্রহণযোগ্য, সুন্দর, সঠিক, মজবুত ও শুদ্ধ হতো। বিশেষ করে, অবৈজ্ঞানিক ও কুসংস্কারসহ নানারকম ভয়-ভীতি, নরকের জ্বালা-যন্ত্রণার হুমকি-ধামিকগুলোর ব্যাপারে আরো সর্তক থাকতেন। যাহোক, গ্রন্থলেখক বা ধর্মপ্রবর্তকদের তো আর পাওয়া যাবে না, তাই ধর্মজীবিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণকে অনুরোধ, একবার ঠাণ্ডা মাথায় ধর্মপুস্তকগুলো নিয়ে বসুন এবং ভাবুন অবিশ্বাসীরা কেনো, কী কারণে… এর সমালোচনা করছে? দয়া করে, হুট করে ফাল দিয়ে উঠবেন না যেন! মাথা গরম করলে সমাধান তো হবেই না, বরং বাড়বেই (যেমনটা আদিকাল হতেই চলে আসছে)।
অতএব ধর্মকে নিরাপদে রাখার জন্য যারা মরিয়া এবং যেসব বিদ্বান এবং ধর্মজীবিরা অবিশ্বাসীদের সাবধান করছেন, তাদের সকলের প্রতি আহ্বান, ধর্মকে সংস্কার করে, দানব সৃষ্টির পথ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করুন। ধর্মকে যতোটা সম্ভব নমনীয় এবং মানবীয় করে, বিশেষ করে রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ দূরে রেখে… যতোখুশি পালন করুন, কোনো সমালোচনার প্রয়োজন হবে না। বহু ধর্মই এখন কঠিন সমালোচনায়ও ফাল দিয়ে ওঠে না (যা নিয়ে অবিশ্বাসীদের মাথাব্যথা নেই বললেই চলে)। কারণ ওইসব ধর্মের ধর্মজীবিরা মুখে স্বীকার না করলেও, প্রকৃত সত্যটা বুঝতে পেরে সমালোচনাগুলো নিরবে হজম করে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছুদিন যাবৎ পোপের বক্তব্যগুলো লক্ষ্য করুন (আশা করি পরবর্তিতে আলোচনা করবো)। ধর্ম চিরজীবি হোক কিংবা নিপাত যাক, এতে অবিশ্বাসীদের কোনো দুঃখ নেই। দুঃখ, ধর্ম যখন মানবতার শত্রু হয়ে দেখা দেয়; ধর্মে যখন দানব তৈরির মশলা থাকে। সেকারণেই যতোদিন পর্যন্ত ধর্ম একটিও মানবতাবিরোধি কর্মকাণ্ড ঘটাবে, নম্র, ভদ্র, শালীন হতে না শিখবে, অন্য ধর্মকে সহ্য করার শিক্ষা না দিয়ে বরং সমালোচনার ঝড় তুলবে, নিজেকে শ্রেষ্ঠ বানানোর জন্য মরিয়া থাকবে, যতোদিন ধর্ম-ফ্যাক্টরির মধ্যে একটা দানব সৃষ্টিরও মশলা থাকবে… ততোদিন পর্যন্ত ধর্মেকে ছাড় দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। এছাড়াও, অবিশ্বাসী/সমালোচকদের শাস্তি দিতে রাষ্ট্রের আইন আছে কিন্তু এক ধর্ম যখন অন্য ধর্মের সমালোচনা করে তখন তা আইনের আওতায় আসে না কেনো, কেনোই বা রাষ্ট্র তখন চুপ থাকে? প্রমাণ দিতে পারবেন কী, ধর্ম নিজে রাষ্ট্রের আইন মেনে চলছে? চললে, এখনো (হলি আর্টিজমের নৃশংস্য হতাযজ্ঞের পরেও) কীভাবে এক ধর্ম অন্য ধর্মকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করছে? এসব শুনেও যখন রাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তখন অবিশ্বাসীরা কেনো চুপ থাকবে?
পূর্বেও বলেছি, মানুষ যেহেতু না পড়ে, না বুঝে, ভালো-মন্দ বিচার না করেই ধার্মিক হয় (যেন প্রাকৃতিকভাবে বা অভ্যেসবশত), সেহেতু ধার্মিকতায় বহু বিভ্রান্তি থাকে। অতএব ধর্মগ্রন্থ নিজে যেমন পড়তে হবে, অন্যকেও পড়াতে হবে। অথচ প্রায় শতভাগ সাধারণ মানুষসহ বেশিরভাগ উচ্চশিক্ষিতরাই মনে করে, ধর্মগ্রন্থ পড়ার প্রয়োজন নেই। ওসব তো জানি। কিন্তু না! ওসব ‘ঠিকভাবে’ পড়ি না বলেই, ওর মধ্যেকার ভুল, কুসংস্কার, কুকথা, মানবতাবিরোধী নানা হুমকি-ধামকি, লোভ-লালসা… জানতে ও বুঝতে পারি না। বারবার বলেছি, পড়ার (প্রশ্নসহ) কোনোই বিকল্প নেই। পড়ে পণ্ডিত হওয়ারও প্রয়োজন নেই, সত্য জানার মতো করে পড়লেই হলো। কারণ ধর্ম সম্পর্কে আমরা যে দিকটা জানি (ভালো), সেটা ছাড়াও ধর্মপুস্তকেই আরেকটা দিক (খারাপ) আছে, পড়ি না বলে জানি না। যদিও অনেকেই বলছেন, তারা পড়েছেন, কেউ কেউ নাকি বারবার পড়েছেন, তথাপিও খারাপ কিছু পাননি। এ মূর্খের মতে, তারা মনোযোগ দিয়ে এবং প্রশ্নসহ পড়েননি অথবা বিশ্বাসে অন্ধ বলেই খারাপ কিছুই পাননি অথবা ভয়ে লুকিয়ে যাচ্ছেন। কারণ বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করেন, এসব ভুল-ভ্রান্তি, কুংস্কার নিয়ে আলোচনা বা প্রকাশ করা মানেই ধর্মে আঘাত এবং স্বর্গের দ্বার বন্ধ হয়ে যাওয়া। হয়তো তারা ধর্মের নানারূপ অকথ্য শাস্তির হুমকিতে সদা কম্পমান। ভাবছেন, ধর্মের ভুল ধরলে পাপ হবে, ঈশ্বর অভিশাপ দেবে ইত্যাদি এবং এসব জেনেও তারা নিরব থাকেন।
এছাড়াও, কথিত ঐশ্ব বাণীর ভুল-ভ্রান্তি ধর্মপুস্তক থেকে উদ্ধৃতিসহকারে উল্লেখ্য করার পরও ধার্মিকসহ অনেক উচ্চশিক্ষিতরাও বলেন, এর আগে-পিছে পড়তে হবে, দেখতে হবে, কেনো ও কী কারণে এসব বলা/লেখা হয়েছে ইত্যাদি। প্রশ্ন, একটি সম্পূর্ণ বাক্যের আগের ও পরের বাক্য পড়লে কী, ওই বাক্যের ভিন্ন অর্থ হবে? যা মহাপবিত্র(!) তাতে একই বাক্যের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ থাকা কী বাঞ্ছনীয়? যদি থাকে, তাহলে তা কীভাবে মহাসত্য হয়? উদাহরণস্বরূপ পত্রিকার খবর- “আইএস, ইয়াজিদি পুরুষদের হত্যা করে নারীদের যৌনদাসী বানিয়েছে।” এর আগে ও পরের বাক্যগুলো পড়ে মানুষ বিস্তারিত জানতে পারে কিন্তু এ ‘সম্পূর্ণ বাক্য’টির অর্থ কীভাবে পরিবর্তন হবে, এ মূর্খ বুঝে না, আপনারা বোঝেন কী? অনুরূপভাবে, ধর্মপ্রবর্তক বা ঈশ্বর কিংবা ধর্মগ্রন্থ যখন বলে- স্বর্গে এই আছে, ওই আছে কিংবা মহানন্দে-মহাসুখে, পরিশ্রমহীনভাবে অনন্ত জীবন উপভোগ করার জন্য যা যা প্রয়োজন সব আছে। এই করলে বিনাবিচারে অতিসহজে স্বর্গে যাবে, সেখানে বহু লোভনীয় পুরুষ্কার রয়েছে, নরকে গেলে কুখাদ্য ও চরম শাস্তি এবং স্বর্গে গেলে সুখাদ্য, সুন্দরী… ইত্যাদি মিলবে (বিস্তারিত ব্যাখ্যায় তথাকথিত ধর্মানুভূতি নষ্ট হবে)। যাহোক, প্রশ্ন হলো- ধর্মগ্রন্থের এরকম বাক্য/বাণীর আগে বা পরে পড়লে কী বুঝবেন? এতে কী এসব লোভ ও হুমকিমূলক বাক্যগুলোর অর্থের কোনো পরিবর্তন হবে? এ মূর্খ মনে করে, একবিন্দুও পরিবর্তন হবে না। এসবই ধর্মের কথিত মর্যাদা রক্ষার জন্য ভন্ডামী ও ডাহা মিথ্যা। মূলত, ধর্ম সত্য স্বীকার করে নেয়ার মতো মহৎ নয়। জন্মলগ্ন থেকেই ধর্ম, তার মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিগুলোকে বিভিন্ন কৌশলে ঢেকে রাখাতে গিয়ে আরো বেশি মিথ্যাচার করেই যাচ্ছে। তাছাড়া, প্রায় সব ধর্মই বিশ্বাস করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় যে, তাদের ধর্মের বহু শত্রু আছে এবং শত্রুর মোকাবেলায় অবশ্যই সদা প্রস্থত থাকতে হবে। এটি ধর্মের এক মারাত্মক ও জঘন্য শিক্ষা। প্রশ্ন- ধর্মের কেনো শত্রু থাকবে? নাকি ধর্ম নিজে ইচ্ছা করেই (বিধর্মীসহ স্বধর্মী বিভিন্ন গোত্রকেও) নিজের শত্রু বানাচ্ছে? তবে কী ধর্ম নিজেই শত্রু তৈরির ফ্যাক্টরি? কারণ যা মহাসত্য, যা সর্বশ্রেষ্ঠ… তার কেনো এতো শত্রু থাকবে?
সেহেতু মনে হয়, ধর্ম নিজেই আশংকা/আতঙ্ক-রোগে রোগাক্রান্ত। কারণ ধর্ম প্রচারে কমন কিছু বক্তব্য হলো- ওমুকে (ধর্ম) শত্রু, তমুকে এই সর্বনাশ করতে চাচ্ছে, ওদের ব্যাপারে সতর্ক থাকো, ধর্মযুদ্ধের জন্য প্রস্থত থাকো, এই সর্বনাশ-সেই সর্বনাশ করতে পারে, ওমুক (ধর্ম) খুব খারাপ, বিধর্মীরা এই করে-সেই করে, আমাদের ধর্মে এসব নেই, আমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মালম্বী… ইত্যাদি। সত্যি করে বলুন তো, এরূপ বক্তব্য কী মানুষের মনে আশংকার/আতঙ্কের সৃষ্টি করছে না? এর ফলে বিপর্যয়ের সামান্যতম আশংকা দেখলেই কী প্রায় সকল শ্রেণিপেশার মানুষ একত্রে প্রতিবাদ করে উঠছে না? এমন আশংকা থেকেই মাঝেমাঝে কী মহাবিস্ফোরণ ঘটছে না? এমন ধর্মশিক্ষা কী কখনো সামাজিক বা জাতিগত সমপ্রীতি বজায় রাখতে পারে? এরূপ শিক্ষা বহালতবিয়তে আছে বলেই (প্রায় বিনা খরচে) দানব সৃষ্টি সম্ভব, অন্য কোনোকিছু দিয়ে যা সম্ভব নয়।
কথিত আছে, জঙ্গি দমনে সরকার “জিরো টলারেন্স” নীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু বুঝতে পারছি না, ধর্মানুভূতির পারদ ১০০ ডিগ্রির উপরে রেখে “জিরো টলারেন্স”-এ লাভটা কী? কথিত এ অনুভূতি এক’শ ডিগ্রির উপরে রেখে, আর যা-ই হোক জঙ্গি দমন কিংবা টার্গেট কিলিং বন্ধ কোনোভাবেই সম্ভব না। অবশ্যই এটা শূন্য ডিগ্রিতে নামিয়ে আনতে হবে। আর এজন্য সর্বপ্রথমেই ধর্মশিক্ষার উপর কড়াকড়ি ও কার্যকরি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। যদিও এদেশের পরিবেশ ও পরিস্থিতির আলোকে প্রায় অসম্ভব। কারণ কথিত এ ধ্বংসাত্মক অনুভূতির পারদ নিচে নামানোর কোনো চেষ্টাই দেখছি না বরং আরো উপরে ওঠানোর জন্য নানা ফন্দি (যেমন মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে লুটপাট, জ্বালাওপোড়াও ছাড়াও নিরব অত্যাচার…) দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত, অতিচালাক, ফটকাবাজ এবং চালাক রাজনীতিবিদের হাতে ধর্ম মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা মানব সভ্যতাকে প্রচণ্ডরকমের হুমকির মধ্যে ফেলেছে। ধর্ম যদি রাজনীতিবিদের মরণখেলা না হতো, শুধুমাত্র ধর্মীজীবিদের হাতেই থাকতো, তাহলেও বোধকরি ধর্ম এতোটা নৃশংস্য হতো না। এখানেও অবিশ্বাসীদের মাথাব্যথা। কারণ এটা ভিন্নভিন্ন ধর্মালম্বীদের জন্যই কেবল হুকমি নয়, নিজ ধর্মালম্বীদের বিভিন্ন গোষ্ঠির জন্যও হুমকি। অতএব এ হুমকি শূন্য ডিগ্রিতে নামিয়ে এনে ধর্ম পালন করুন, একটা সমালোচনাও হবে না। মতলবাজ, ধূর্ত রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবিদেরও মিথ্যাচার করে ধর্মের সাফাই গাইতে হবে না, মানবতাবাদিদেরও (আপনাদের ভাষায় নাস্তিকদের) ভয় দেখাতে হবে না…। কিন্তু যে পর্যন্ত শূন্য ডিগ্রির উপরে থাকবে, অবিশ্বাসীরা চুপ থাকবে না।
সবশেষে, দেশি-বিদেশী ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং জ্ঞানীগুণি পণ্ডিতদের বলছি- আপনারা যা বলছেন ও করছেন, পক্ষান্তরে তা জঙ্গি তথা ধর্মসন্ত্রাসীদের পক্ষেই যাচ্ছে। আপনার ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন ঠিকই আবার এও বলছেন, সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই, ধর্মের দোষ কী? ধর্ম এশিক্ষা দেয় না, ওশিক্ষা দেয় না… ইত্যাদি। যার ফলে আজীবন এ যুদ্ধ চালিয়ে গেলেও ওদের নির্মূল করতে পারবেন না। কারণ শেকড় এবং বীজ দুটোই রয়ে যাচ্ছে, হয়তো কিছুদিন শুকিয়ে থাকবে কিন্তু আবার গজাবেই। অতএব অনুরোধ, দানব দমনে প্রকৃত সত্য অর্থাৎ জঙ্গিবাদের ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিশ্বকে জঙ্গিমুক্ত করে ইতিহাসের পাতায় চির অমর হয়ে থাকুন।

Saturday, 19 March 2011

ধর্মের কী দোষ ! (২)

প্রচলিত একটি কথা আছে- সম্মান পেতে হলে, সম্মান দিতে হয়। প্রশ্ন- সিত্যই কী এক ধর্ম অন্য ধর্মকে যথেষ্ট সম্মান দেয়? ধর্ম কী কেবলমাত্র ভালো শিক্ষাই দেয়, নাকি খারাপ শিক্ষাও দেয়? যেসব শিক্ষায় মানুষ উগ্র, ধর্মান্ধ, কুসংস্করাচ্ছন্ন, জঙ্গি বা ধর্মসন্ত্রাসী… হচ্ছে (সংখ্যায় কম হলেও) তা কী ধর্মশিক্ষায় নেই? যদিও, কথিত সর্বশ্রেষ্ঠ, মহাসত্য, মঙ্গলময়, চিরসুন্দর, চিরশান্তি ও প্রেমের… ধর্মগুলোর মধ্যে একমাত্র ভালো গুণ ও শিক্ষাই থাকার কথা! কিন্তু আছে কী? যদি থাকতো, তাহলে প্রশ্ন উঠতো না, বিতর্ক কিংবা সমালোচনা হতো না। ধর্মের মধ্যে ভালো কিংবা মন্দ যা-ই থাক, না থাক, সেগুলো নিয়েও সমস্যা হতো না, যদি এর ব্যবহার/প্রয়োগ শুধু ভালোটুকুই হতো এবং ধার্মিকরা এর মন্দ শিক্ষাগুলো স্বীকার করে তা প্রচারে বিরত থাকতো। কিংবা ধর্ম যদি কেবলমাত্র সুশিক্ষাটুকুই দিতো, তাহলে ধর্ম না পড়লেও চলতো। সত্যিই যদি এক ধর্ম অন্য ধর্মকে কিংবা স্বধর্মের বিভিন্ন গোষ্ঠিকে আঘাত না দিয়ে শুধু প্রশংসা করতো, তাহলে প্রকাশ্যে, ধর্মানুষ্ঠানসহ রাস্তাঘাটে এবং ইউটিউবে যা দেখি ও শুনি, তা শুনতে ও দেখতে হতো কী? জানি না, এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিদ্বানগণ এতো নিরব কেনো? যারা এসব শুনতে/দেখতে পান না এবং এর প্রতিবাদ না করে বরং অবিশ্বাসী/সংস্কারবাদিদের সমালোচনা করনে, তাদের করুণা হয়। একটিবার প্রমাণ দিয়ে বলুন তো, কোন ধর্মালম্বীরা এ শিক্ষা দিচ্ছে যে- অন্য ধর্মালম্বীরাও আমাদের ন্যায় শ্রেষ্ঠ না হলেও অন্তত ভালো, তারাও প্রশংসার যোগ্য, তাদের ঈশ্বর ও ধর্মানুষ্ঠান ভালো, তাদের ধর্মানুষ্ঠানে যোগ দেয়া দোষের কিছু নয়…? তাদের ধর্মকে নিজের ধর্মের ন্যায় সম্মান করতে হবে, তাদের প্রতি সহনশীল হতে হবে, অন্যায় আচারণ এবং হুমকি-ধামকি দেয়া যাবে না, ধর্মের মিথ্যা অজুহাতে নির্যাতন করা চলবে না, তাদের ধর্মকেও নিজেদের ধর্মের ন্যায় স্বীকৃতি দিতে হবে… এসব কোন ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে? বরং বলা হয়, যারা বিধর্মীদের প্রশংসা করবে, তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে, তারা নরকে যাবে, তাদের ধর্ম খারিজ হয়ে যাবে…। কারণ (ধর্মের বদ্ধমূল ধারণা) এসব বললে/করলে নিজ ধর্ম, ধর্মাবতার এবং ঈশ্বরকেই ছোট করা হয়, নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব, গর্ব, অহমিকা-অহংকার… বজায় থাকে না (যা ধর্মের অন্যতম কঠিন শিক্ষা)। অথচ অনেক বিজ্ঞজনেরাই এসব শিক্ষা বন্ধ করার কথা না বলে বরং বারবারই অবিশ্বাসীদের উপর খবরদারি চালাচ্ছেন, পক্ষান্তরে যা ধর্মের পক্ষেই সাফাই গাওয়া। যা প্রচণ্ড রকমের ভুল। যে ভুলের কারণেই ধর্মসন্ত্রাস, অসমপ্রীতি, সংখ্যালঘু নিধন (স্বরবে ও নিরবে)… না কমে বরং বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্র তাদের এ বুদ্ধিহীনতার (ধর্ম বিষয়ে) কারণ, ধর্মপুস্তক না পড়ে প্রচলিত ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে নিজেকে এবং কুবিশ্বাসকে নিরাপদে রাখা। যদি (সঠিক ও প্রশ্নসহ) পড়তেন তাহলে, বোধকরি এমন বক্তব্য দিতে পারতেন না। অস্বীকার করার উপায় নেই, ধর্মগুলো মানুষকে কেবল সুপ্ররোচনাই দেয় না, কুপ্ররোচনাও দেয়। যার সামান্য একটু দিয়েই দানব সৃষ্টি করা সহজ। অতএব, এ কুপ্ররোচনা যে পর্যন্ত শূন্যের নিচে নামাতে না পারবেন, সে পর্যন্ত রামু-উখিয়া, নাসিরনগর, সাঁথিয়া, সাঁওতাল নির্যাতন… থেমে থেমে ঘটতেই থাকবে এবং বিশ্বের কোথাও কেউ নিরাপদে থাকতে পারবে না। আর এজন্যই ধর্মপুস্তক পড়ার এবং এর ভুলত্রুটি, কুসংস্কারগুলো প্রকাশ্যে প্রচারের কোনো বিকল্প নেই।
“সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই” এটিও বহুল প্রচারিত বাক্য। এ মূর্খের অনুধাবন, বাক্যটি আংশিক সত্য। কারণ সাধারণ সন্ত্রাসী বা অর্থসন্ত্রাসী সৃষ্টির পেছনে ধর্ম নাও থাকতে পারে কিন্তু ধর্মসন্ত্রাসী বা জঙ্গিবাদের পেছনে অবশ্যই আছে। অর্থাৎ ধর্মসন্ত্রাসী থেকে ধর্মকে আলাদা করার কোনোই সুযোগ নেই। যারা আলাদা করে দেখেন, তারা মিথ্যাবাদী। কারণ ধর্মসন্ত্রাসী এবং অন্যান্য সন্ত্রাসীদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য (যা বুঝতে আইনস্টাইন হওয়ার প্রয়োজন নেই)। ধর্মসন্ত্রাসীরা ধর্মমন্ত্রে উজ্জীবিত ও উম্মাদ, সাধারণ সন্ত্রাসীরা সেরকম নয়। ধর্মসন্ত্রাসীদের ধর্মগুরু থাকে এবং ভাড়ায় খাটে না; সাধারণ সন্ত্রাসীদের থাকে না (নেতা থাকে) এবং ভাড়ায় খাটে। তাছাড়া একমাত্র কট্টোর জাতিয়তাবাদ ব্যতিত আত্মঘাতি বানানো সহজ নয়; কিন্তু বহু ধার্মিককেই অতি সহজেই আত্মঘাতি বানানো সম্ভব। কারণ আত্মঘাতি সৃষ্টির বহু উপাদান/ঐশ্বী প্রলোভন ধর্মমন্ত্রে রয়েছে (লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি…) কিন্তু সাধারণ সন্ত্রাসীদের আত্মঘাতি বানানোর কোনো ঐশ্বী প্রলোভন নেই (সেজন্য এ চেষ্টাও কেউ করে না)। সাধারণ সন্ত্রাসীরা মূলত জাগতিক অর্থ-বিত্তের লোভে (বোধকরি বেশিরভাগই সমাজের লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আর বেকারত্বের কারণে) সন্ত্রাসী হয়। কিন্তু ধর্মসন্ত্রাসীরা বিশেষ একটি কারণেই হয়, অর্থাৎ পরকালের মহাসুখের আশায় (যার উৎস ধর্মপুস্তক), এদের কাছে জাগতিক অর্থ-বিত্ত তুচ্ছ; সাধারণ সন্ত্রাসীদের কাছে যা মূখ্য। আবার সাধারণ সন্ত্রাসীরা নিজেদের নিরাপদ মনে করলেই অপারেশনে যায়, বেশি একটা ঝুকি নেয় না, পালাবার সুযোগ না পেলে আত্মহত্যা করে না। অথচ ধর্মসন্ত্রাসীরা নিজেরা মৃত্যুর জন্য প্রস্থত হয়েই অপারেশনে নামে এবং হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে পালাবার সুযোগ না পেলে আত্মহত্যা করতেই বেশি পছন্দ করে; কারণ অন্যের হাতে মৃত্যুর চেয়ে আত্মহত্যাই বেশি সম্মানের মনে করে। সেজন্যই সাধারণ সন্ত্রাসীদের দিয়ে কাজ করাতে হলে প্রচুর নগদ অর্থ ব্যয় করতে হয়। পক্ষান্তরে ধর্মসন্ত্রাসীদের জন্য নগদ অর্থের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না (প্রায় পুরোটাই বাকিতে, কারণ ওপারে গেলেই নগদে সব মিলবে); শুধু মগজ ধোলইটা ঠিকমত হলেই কেল্লাফতে (প্রমাণস্বরূপ, পত্রিকায় প্রকাশিত সীতাকুন্ডতে ধৃত জঙ্গি দম্পতির বক্তব্য পড়তে পারেন)। আর এ মগজ ধোলইয়ের প্রাথমিক ধর্মশিক্ষা পূর্বেই (শিশুকালে) দেয়া থাকে। অতএব হলফ করেই বলা যায়, ধর্মসন্ত্রাসী বানানোর মূল উপাদানই হচ্ছে- ধর্ম। এরপরও যারা বলেন, “সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই” তারা ডাহা মিথ্যা বলেন। অথবা সমাজের চোখে ভালো মানুষ সেজে কিংবা হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে কেবল লা-লা-লা-লা-লা… করেন এবং সত্য এড়িয়ে যান। মূলত যাদের ধর্ম নেই (অবিশ্বাসীরা) তারা কখনোই ধর্মসন্ত্রাসী তথা দানব হবে না, এ নিশ্চয়তা শতভাগ।

Wednesday, 2 March 2011

ধর্মের কী দোষ ! (১)

পড়ে, বুঝে, প্রশ্নোত্তরসহ যাহা শিখি তাহলো- বিদ্যা। না পড়ে, না বুঝে, প্রশ্নহীনভাবে যাহা শিখি তাহলো- ধর্ম। সম্ভবত ধর্মই একমাত্র বিষয়, যা না পড়ে কিংবা পড়ার বয়স হওয়ার আগে, তথা নিজের অজান্তেই মানুষ শিখে ফেলে বা বিশ্বাস করে। যেহেতু মানুষ ধর্মসম্পর্কিত বিষয়গুলো না পড়ে, না বুঝে, যাচাই-বাছাই না করেই… বংশানুক্রমে বিশ্বাস করে; সেহেতু এতে বিভ্রান্তি থাকবেই। প্রশ্নহীন এ শিক্ষার সুফল থাকলেও কুফল মোটেও কম নয়; যা সমস্ত মানবজাতিকেই ভোগ করতে হচ্ছে।
 অন্যদিকে, ধর্ম ছাড়া প্রায় সব বিষয়গুলোই কষ্ট করে পড়তে হয়, প্রশ্নোত্তর দিতে হয়… এরপর বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসের প্রশ্ন আসে। অথচ যা প্রশ্নোত্তরসহ পড়িনি কিংবা পড়ার প্রয়োজনবোধও করিনি, সেটাকেই খাঁটি ও মহাসত্য বলে মানতে হচ্ছে। তথাপিও প্রশ্নও করি না, যে- ধর্ম নিয়ে সারা পৃথিবীতেই কেনো এতো বিতর্ক, অশান্তি, রক্তপাত, দল-উপদল, হিংসা-বিদ্বেষ, হুমকি-ধামকি, যুদ্ধ-দাঙ্গা, হত্যা, ধর্ষণ…?
ফলে ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটামাত্র, বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিত্বসহ প্রায় সব শ্রেণিপেশার মানুষই সমস্বরে বলতে শুরু করেন, “ধর্মের কী দোষ!” কিংবা “জঙ্গিবাদ/সন্ত্রাসের সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই!” বুঝি না, সম্পর্ক না থাকলে ধর্মসন্ত্রাসী জন্মে কীভাবে? কারণ যাদের সাথে ধর্মের সমপর্ক নেই, সেইসব অবিশ্বাসীরা কখনো ধর্মদানব (জঙ্গি) হয় না, বরং বিশ্বাসীরাই হয়। প্রশ্ন হলো- যা মহাপবিত্র(!), সর্বশ্রেষ্ঠ(!) কঠিন এবং অপরিবর্তিত সত্য, কলঙ্কহীন, বিতর্কহীন, নির্মল, বিশুদ্ধ, খাঁটি, নির্ভেজাল(!)… তার কী দোষ থাকতে পারে? না থাকুক, সেটাই চাই। কিন্তু হায়! চাই বা না চাই- বিতর্ক, বিভ্রান্তি, দলাদলি থেকে হানাহানি, খুনাখুনিসহ নির্মম-নিষ্ঠুরতম ও সম্পূর্ণ ঠাণ্ডামাথার হত্যাযজ্ঞের সিংহভাগই কিন্তু ধর্মের নামেই হচ্ছে (রাজনৈতিক যুদ্ধ বাদে)। ধরে নিলাম, যারা এসব করছে বেশিরভাগ মানুষই তাদেরকে ধার্মিক বলতে নারাজ। কিন্তু এটা স্বীকার করতে অসুবিধা কোথায়, এরাও কোনো না কোনো ধর্মগোষ্ঠি, যারা এ সমাজেরই ধর্মশিক্ষকদের হাতে গড়া। ধার্মিক পিতা-মাতার সন্তান এবং ধর্মশিক্ষার হাতেখড়ি পরিবার, সমাজ, ধর্মালয়ে… যা বংশানুক্রমেই চলে আসছে। অতএব এ শিক্ষার সংশোধন কিংবা সংস্কার না করে জঙ্গিবাদ নির্মূল কীভাবে সম্ভব, বোধগম্য নয়। অথচ অবিশ্বাসীরা সামান্য সমালোচনা করলেই অনেকেই ক্ষেপে ওঠেন। দুঃখ একটাই, অবিশ্বাসীদের উপর দোষ চাপাবেন, তথাপি একটিবারও ধর্মপুস্তক পড়ে দেখবেন না, কোনো ধর্ম নিয়ে তারা সমালোচনা করছে! কারণ যা সত্য, বিশুদ্ধ, খাঁটি, ভুল-ত্রুটিমুক্ত… তা নিয়ে কারো মাথাব্যথার কথা নয়, অবিশ্বাসীদের তো নয়ই। আছে বলেই প্রশ্ন তুলছি।
অনেকেই বলছেন, ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করলে মানুষ আঘাত পায়, আঘাত দিয়ে লেখা উচিত নয়… (আমরাও বুঝি)। প্রশ্ন হলো- মনের আঘাতের চেয়ে কী শারীরিক আঘাত কিংবা হত্যাযজ্ঞ ভালো? আবার রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ধর্ম থাকার পরও বলছেন, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার ইত্যাদি (এটা কী হাস্যষ্কর এবং খলনায়কসুলভ বক্তব্য নয়)। এরকম বক্তব্য শুনে মনে হয়- ধর্মের কুসংস্কারগুলোর সমালোচনায় ধার্মিকদের যতোটা আঘাত লাগে, হত্যাযজ্ঞে ততোটা লাগে না। দেশি-বিদেশি বুদ্ধিজীবিসহ রাষ্ট্রনায়কগণের এসব বক্তব্য শুনতে শুনতে যদিও কান ঝালাপাল। তথাপিও এ মূর্খ মনেপ্রাণে চাইছে, আপনারা যা বলেন, তাই-ই যেন হয়! অর্থাৎ ধর্ম যেন শান্ত থাকে, সুন্দর থাকে, চিরজীবি হয়, এর অনুকরণে, অনুসরণে যেন একটা দানবও সৃষ্টি না হয়…! ধর্মকে যেন একজনও সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার না করে, বিধর্মীই শুধু নয়, স্বধর্মী বিভিন্ন গোষ্ঠির প্রতিও যেন সহশীল থাকে…! (কারণ মানবতার দৃষ্টিতে ধর্ম অপ্রয়োজনীয় হলেও, তৃতীয় বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষই এ ছাড়া বাঁচার কথা কল্পনাই করতে পারে না)। সেহেতু আরো চাই, দানব সৃষ্টির যেসব সুযোগ ধর্ম নিজেই করে রেখেছে, তা যেন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে। যদিও চোরে যেমন শোনে না ধর্মের কাহিনী; ধার্মিকরাও বুঝতে চাইবে না ধর্মের বুজরুকি! তবে বুদ্ধিজীবিসহ রাষ্ট্রনায়কগণ যেভাবে অবিশ্বাসীদের উপর খবরদারি করছেন, এর সিকিভাগও যদি ধর্মের প্রতি করতেন, অর্থাৎ ধর্মশিক্ষার সীমা ও সিলেবাস নির্ধারণ করে দিতেন, বিধর্মী/ভিন্নমতের প্রতি আক্রমণাত্মক কথাবার্তা, আচার-ব্যবহার, উষ্কানি ইত্যাদিতে বাধা দিতেন, অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে ভিন্নধর্মকে আক্রমণ ও সমালোচনার কারণে কঠিন শাস্তি দিতেন…। যদি সব ধর্মের সমালোচনা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হতো, তাহলে হয়তো জঙ্গিবাদ নির্মূল না হলেও অতি দ্রুত কমে আসতো বলে এ মূর্খের ধারণা। যদিও ধর্ম সমালোচকদের বিরুদ্ধে আইন আছে, কিন্তু এর প্রয়োগ স্পষ্টতই একপেশে। কারণ এর প্রয়োগ কেবল দুর্বল বিধর্মী এবং অবিশ্বাসী/নাস্তিকদের বেলায়, ধর্মপ্রচারকদের বেলায় মোটেও নয়। কারণ তারা খোলামেলাভাবেই প্রচণ্ড ধর্মসমালোচক (ভিন্নধর্ম ও মতের)। উৎপাদন ও বিপণন চালু রেখে কেবল উপদেশ দিয়ে যেমন নেশাগ্রস্তদের নেশামুক্ত করা সম্ভব না, তেমনি ধর্মের অপপ্রচার তথা কট্টোর/গোড়ামিপূর্ণ শিক্ষা বন্ধ না করে, কেবলমাত্র আইনের পর আইন করে কিংবা ক্রসফায়ার অথবা যুদ্ধ ঘোষণা করে ওদের নির্মূল করা সম্ভব নয়। অতএব, যে ফ্যাক্টরিতে ধর্মসন্ত্রাসী তথা জঙ্গিদের জন্ম, সেখানে নিয়ন্ত্রণ/নিষিদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।

Saturday, 22 January 2011

‘মডারেট ধার্মিক’

প্রথমেই পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমার ইচ্ছাকৃত কিঞ্চিত অসততার জন্যে। কেননা, এই নিবন্ধটার আরও যথার্থ শিরোনাম হওয়া উচিত ছিল, ‘মডারেট ধার্মিক’। তবে আজ-কালকের বাজারে প্রচার মাধ্যমগুলোর বানিজ্যিক সফলতায় ‘মুসলিম’ শব্দটার গন্ধ থাকাটা এতটাই জরুরী ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে যে, আমি নিজেও শব্দটার ব্যবহারে লোভ সামলাতে পারলাম না। যাহোক, এবার লেখার মূল বক্তব্যে ফিরে আসি। আমার এক বন্ধু কথা প্রসঙ্গে আমাকে একবার বলেছিল, “মডারেট মুসলিম বলে আসলে কারো অস্তিত্ব নেই। এটা মুসলমানদেরকে ডিভাইড করার জন্যে পশ্চিমা দেশগুলোর এক ধরনের চক্রান্ত। কোর’আন একটাই।
 মুসলমানও একরকম। কোর’আন যে মানে, সে মুসলমান; আর যে মানেনা সে না। ব্যাপারটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার। ‘রেডিক্যাল মুসলিম’, ‘মডারেট মুসলিম’ ইত্যাদি গ্রুপে ভাগ করে ওরা মূলত মুসলিম উম্মাহকে ডিভাইড করতে চায় আমাদেরকে দূর্বল করার জন্যে। বুঝলি দোস্ত, এ সবই ঐ শালা পশ্চিমাদের চক্রান্ত”। খুবই জ্ঞানের কথা। বিষয়টা আমাকে রীতিমত ভাবিয়ে তুললো।
‘মডারেট মুসলিম’ বলে সত্যিই কি কারো অস্তিত্ব আছে? শুনে হয়ত আমাদের অনেকের কাছে খারাপ লাগবে, কিন্তু তত্ত্বগতভাবে আসলেই নেই। অন্তত আমার ব্যক্তিগত অভিমত সেটাই। সে অর্থে আমার বন্ধুর দাবী অংশবিশেষে যেমন সত্যি, ঠিক তেমনই সত্যি আক্রমনাত্বক মন্তব্যকারী পাঠকদেরও। তবে কথা একখানা অবশ্য আছে এখানে। আর সে কারনেই আমার আজকের এই লেখার অবতারনা। সত্যি বলতে কি, মুক্তমনায় খানিকটা গালাগালি খেয়েই আমার মাথায় এসেছিল এই সুক্ষ্ণ বিষয়টা নিয়ে নিবন্ধটা লেখার। কাজেই, on a second thought (দ্বিতীয় মতে), গালাগালি সবসময় বোধহয় খারাপ নয়।
কোর’আনে কি বিধর্মীদের হত্যা করার আয়াত আছে? তৎকালীন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অস্তিত্বের লড়াই, ঘটনাচক্রের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা, আগের ও পরের আয়াতসমুহের ব্যাখ্যা, ইত্যাদি যত যুক্তিই আমরা খাঁড়া করিনা কেন, bottom line বা মোদ্দা কথা হলো, ‘আছে’। কেন আছে তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে হাজারো মতভেদ এবং লাখো তর্ক-বিতর্ক থাকলেও সেদিকে যাওয়া আমার আজকের লেখার উদ্দেশ্য নয়। তবে একজন ধর্মে অবিশ্বাসী কিম্বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের জুতায় পা রেখে যদি আমি কোর’আন কে দেখি, তাহলে এককথায় সহজ ও পরিষ্কার উত্তর হলো, ‘আছে’; তা যেভাবেই থাকনা কেন। অনুরূপভাবে, জিউসদের Old Testament বা পুরনো বাইবেলে এবং এবং খ্রীষ্টানদের New Testament বা নতুন বাইবেলেও এমন অনেক ভার্স (আয়াত) আছে যেখানে একইভাবে বিধর্মীদেরকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হত্যা করতে বলা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিককালের ধর্মীয় সন্ত্রাসের উত্থানের পটভূমিতে কোর’আন কেন আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে কিন্তু সেই একই দোষে দূষ্ট হয়েও পুরনো বা নতুন বাইবেল কেন আসেনি, তা অনেক তর্ক-বিতর্কের ব্যাপার এবং সেটাও আমার আজকের লেখার বিষয়বস্তু নয়। সাথে এটাও উল্লেখ্য যে, আব্রাহামিক ধর্মগ্রন্থগুলো ছাড়া সমসাময়িক অন্যান্য ধর্মের (যেমন হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মের) ধর্মগ্রন্থগুলোর ‘কন্‌টেন্ট’ (অন্তর্ভূক্ত বিষয়) সম্পর্কে আমার জ্ঞান প্রায় শূন্যের কোঠায় হওয়ায় সেগুলোর বিষয়ে স্বভাবতই কিছু উল্লেখ করা এখানে সম্ভব হচ্ছেনা।
ধর্মবিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য একটা অংশ হলো ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাস করা এবং সে অর্থে প্রকারান্তরে ধর্মগ্রন্থের সব বিষয়কে মৌলিক অবস্থান থেকে মেনে নেয়া। সে অর্থে শুধু ধর্মে বিশ্বাস করার কারনেই (তা জন্মসুত্রেই হোক কিম্বা স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েই হোক) একজন জিউস, খ্রীষ্টান কিম্বা মুসলমান ‘বাই ডিফল্ট্‌’ (by default) বিধর্মীদের হত্যা করার হিংসাত্বক ভার্সগুলোকে মৌলিক অবস্থান থেকে তত্ত্বগতভাবে মেনে নিচ্ছেন। যদিও ‘মেনে নেয়া’ এবং ‘সমর্থন করা’ ব্যাপার দু’টোর মাঝে মৌলিক একটা সুক্ষ্ণ পার্থক্য আছে, কিন্তু তত্ত্বগত দিক দিয়ে কেউ যদি argue (তর্ক) করেন যে, ধর্মে বিশ্বাসীদের সংগা মূলত একটাই যা ‘ধার্মিক’ কেননা by the end of the day (দিনশেষে) মানুষটা কোনো না কোনো ধর্মীয় পরিচয়ে পরিচিত এবং সেখানে রেডিক্যাল বা মডারেট বলে তত্ত্বগত কোনো বিভাজন নেই, তবে যুক্তি দিয়ে তা খন্ডন করা বেশ কঠিন। কেননা নগন্য কিছু সংখ্যক ধর্মীয় সন্ত্রাসী ধর্মগ্রন্থের হিংসাত্বক ভার্সগুলোর চুড়ান্ত অপপ্রয়োগ করলেও দিনশেষে একজন নিরীহ ধর্মপালনকারীর এবং তেমন একজন সন্ত্রাসীর ধর্মীয় পরিচয় কিন্তু একটাই, তা হলো- সে একজন জিউস, খ্রীষ্টান কিম্বা মুসলমান। এটা একটা প্রচলিত ‘স্কুল অব থট্‌’ (school of thought) এবং ধর্মে সংশয়বাদী বা অবিশ্বাসীদের বড় একটা অংশের argument বা যুক্তি সাধারনত এটাই। পৃথিবীতে কোনো argument-ই যেহেতু চুড়ান্ত বা absolute নয় এবং যে কেউই যে কোনো argument-এর ব্যাপারে দ্বিমত পোষন করতে পারেন, সে কারনে আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গী হলো, প্রতিটা ‘স্কুল অব থট্‌’-এর অস্তিত্বকেই স্বীকার করে নেয়ার মানসিকতা থাকা উচিত এবং দ্বিমত পোষন করলেও সেটাকে একটা ‘স্কুল অব থট্‌’ হিসেবেই সন্মান করতে শেখা উচিত।