Tuesday, 14 May 2019

মুরগির খোপ 2

অতঃপর ছারপোকা নামক রাজাকারের কাছে পরাজিত হয়ে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ খ্যান্ত দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাজ্যের যত ঘুম আমার চোখে। বেলা সাড়ে এগারোটায় ঘুম ভেঙে গেলো চিৎকার চেঁচামেচিতে। চোখ খুলে দেখলাম মুরগি ব্যবসায়ী দেশে কথা বলছে। চিৎকার-চেঁচামেচিতে প্রকম্পিত আমাদের ছোট্ট মুরগির খোপ। আমার প্রতি তার কোনো
ভ্রূক্ষেপ নেই, সগৌরবে কথা বলে চলেছেন, তিনি ফ্রান্সে অমুক দলের শিক্ষা এবং গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক !!! বাংলাদেশের তমুক মন্ত্রীর সাথে ছবি উঠিয়েছেন ফ্রান্সে। তার রাজনৈতিক খিস্তি খেউর আর শেষ হতেই চায়না। "আঁইতো জনাল আজারির স্টাডিং (জয়নাল হাজারীর স্টিয়ারিং )কমিটির সদস্য আছিলাম" মুরগি ব্যবসায়ী ফোনের অপর প্রান্তে থাকা লোকটিকে বললো। আমার আর বুজতে বাকি রইলনা জয়নাল হাজারীর মূর্খ উম্মত প্যারিসেও হাজির। বুজলাম তিনি আকার ইংগিতে আমাকে তার মহান রাজনৈতিক হেডম প্রদর্শন করে চলেছেন। আমার মতো নব্য মুরগি যেন তার মতো "ফ্রান্সের কাগজধারীকে !! " অনেক কিছু মনে করি, সম্মান করি।
মুরগি ডিলারের কথা শেষ হতে না হতেই আরেকজন শুরু করলো কাজিয়া। ঘরের বিবির সাথে কাজিয়া। নব বিবাহিত বধূ বাপের বাড়িতে দুইদিন দিন বেশি থেকেছে বলে শ্বশুর-শাশুড়ির অভিযোগ। অতঃপর এই ঝগড়ার সূত্রপাত। সদ্য বিবাহিত মেয়েটি কিছু বলেনা ফোনের অপর প্রান্তে, আমি ধারণা করি। হয়তো গরীব কিংবা মধ্যবৃত্ত পরিবার থেকে আসা মেয়েটি ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে "তথাকথিত ফ্রান্সের কাগজধারী" জামাইয়ের কথা শুনে। "তোরে আঁই আর রাইকতান্ন" মানে আমি তোকে আর রাখবোনা। ২ ঘন্টার ঝগড়ায় অন্ততঃপক্ষে ২০ বার বিবি তালাক দিলো লোকটি !!!! যেনতেন তালাক নয় একেবারে বাইন তালাক।
মনে মনে চিন্তা করি, আল্লাহ আমাকে কই আনছো !!! মুরগি ডিলার, রাজনীতিবিদ আর "ফ্রান্সের কাগজধারী"দের ভিড়ে আমি এক এতিম অসহায়। কথা আর শেষ হয়না, খালাতো ভাই, মামাতো ভাই, চুদির ভাই। সব ভাইয়ের সাথে কথা বলে সন্ধ্যা ৬ টায় খেমা দিলো। ততক্ষনে আমি বিরক্তির চরম সীমানায়।
বাসা থেকে বের হব বলে উদ্যত হলাম। " ভাই বেশি ঘুরিয়েননা, পুলিশে দৈৱবো" মুরগি ডিলার বললো। ইচ্ছে করছিলো তার পশ্চাৎ দেশে কষিয়ে একটা লাথি দেই। নিজেকে সংযত করে হাসি মুখে বললাম " আইচ্চা ঠিক আছে "
মাসিক ভাতা ৩৬৯ ইউরো কিংবা ৫৩৫ ইউরো সবাইকে সমান করে ফেলেছে। সত্যিই ফরাসি দেশ সাম্যবাদের দেশ। সব উদ্বাস্তু সমান টাকা পায়।
পড়ালেখা ? মাস্টার্স পাশ ? ধুর মিয়া পড়ালেখা দিয়ে কে কি করতে পেরেছে !!! কাগজ না থাকলে কোনো দাম নাই !!! কাগজ থাকলে বুক ফুলাই বাংলাদেশে যাবেন !!!
মুরগির খোপে নিজের পড়াশোনার কথা বলা আর নিজের পায়ে কুঁড়াল মারা একই কথা। খোপের মাঝে বিদ্যান মুরগির অভাব নেই। কেউ আলু তোলা, মুলা তোলা, জালা তোলা এমনকি মুদি দোকানের উপর পিএইচডি করে এসেছে। একেকজন জ্ঞানেৱ জাহাজ, সর্ব বিষয়ে পন্ডিত। তাইতো আমি নিজেকে বলি স্বশিক্ষিত।
বাহিরে ঘন্টা কয়েক থেকে রাত নয়টায় ফিরলাম মুরগির খোপে। বাসায় ঢুকতেই উৎকট এক গন্ধ নাকে ধাক্কা দিলো, দেখলাম মৎস্য ভাজা চলছে, দরজা-জানালা সব বন্ধ। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন সারা ঘর, নিশ্বাস নিতে পারিনা। এ যেন জলে কুমিরের ভয়, আর ডাঙায় বাঘের। ঘন্টা দেড়েক পরে ডাক এলো রোমান্টিক প্যারিসের রোমান্টিক ডিনারের। হস্ত যুগল ধৌত করে বসলাম খেতে।
দুই লোকমা মুখে দিতেই শুনি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের শব্দ !!! আসে পাশে আড় চোখে তাকিয়ে দেখি কিছু দেখা যায় কিনা !!! কিন্তু না কিছু দেখিনা। বাকি তিনজন স্বাভাবিকভাবে ভক্ষণ করে চলছে নীরবে-নিভৃতে। একবার না প্রায় তিনবার শুনলাম এমন বিস্ফোরণের শব্দ। অবশেষে বুজলাম "ইহা পায়ু পথে বায়ু নির্গমনের শব্দ" !!!! বায়ু ত্যাগের শব্দ এত জোরে হতে পারে এবং খাদ্য ভক্ষণরত মানুষ তা শুনবে, এটা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার ঘরটি এত ছোট আর লক্কড় -ঝক্কড় মার্কা, সামান্য কাশি দিলেও বাহিরে শব্দ শোনা যায়।
এরই মাঝে আরেকজন দ্রুত খাবার শেষ করে ঝেড়ে কাশি দিয়ে কফ ফেললো বিনের মধ্যে। ভাত আর নিচের দিকে যায়না। খাওয়া শেষ করার আগেই "ত্যাগী মানুষটা" বীরবিক্রমে বের হলেন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে। তাঁর মুখে ত্যাগের আনন্দ, ত্যাগের মহিমায় তিনি উদ্ভাসিত।
তবুও আমার মোহ ভাঙ্গেনা, আমার বিশ্বাস অটুট থাকে প্যারিসের রোমান্টিকতায়, প্যারিসের সৌন্দর্যে।
রবি ঠাকুরের এক অমর বাণী জপতে জপতে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। সাত কোটি বাঙালির হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি। (চলবে )

No comments:

Post a Comment