Saturday, 15 November 2025

দ্যা_মাস্টারপ্ল্যান এবং বাংলাদেশ

#
... ২০০৯ সালের নির্বাচনের আগে ব্রিটেন, আম্রিকা এবং ভারতের তৃপাক্ষীক সমঝোতায় হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা গৃহীত হয়। হাসিনা বরাবরই ভারতের গোলাম। তবে ভারত পশ্চিমাদের আশ্বস্ত করে হাসিনার মাধ্যমে তাদের স্বার্থও পূরন করা হবে। এই চুক্তির আওতায় পশ্চিমা, ভারত যৌথ উদ্দোগে হাসিনা ক্ষমতায় আসে। দুই পক্ষের স্বার্থ বাস্তবায়নে হাসিনার দরকার ছিল ফুল পাওয়ার, সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষমতা, মানে দুই তৃতীয়াংশ সিট। তখন আমাদের বর্তমান উপদেষ্টা এম শাখাওয়াত হোসেন সহ আরো কয়েকজনকে দিয়ে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে এমন ভাবে নির্বাচনী এলাকা সাজানো হয়, যেন হাসিনা দুই-তৃতীয়াংশ সিট পায়। হয়েছিলোও তাই। ক্ষমতায় এসে হাসিনা ফুল পাওয়ার পায়। পিলখানা গনহ'ত্যা, সংবিধান পরিবর্তন এবং বিএনপি, জামায়েত, ইসলামপন্থী নিধন করে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে। এর পাশাপাশি দুই বিদেশি প্রভুর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজও শুরু করে। তবে এখানে এসে পল্টি মারে ভারত। তারা হাসিনাকে দিয়ে ভারতের নিজস্ব স্বার্থ এবং ভারত-পশ্চীমা কমন চাওয়া গুলাও পুরন করালেও আম্রিকার নিজস্ব এক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারত গড়িমসি শুরু করে। তো কি ছিলো আম্রিকার সেই পরিকল্পনা...? ▶️ আম্রিকার মাস্টারপ্ল্যান..: দক্ষিণ এশিয়ার নিজের প্রভাব তৈরি এবং চীনকে কাউন্টারের জন্য আম্রিকার সবসময় এই অঞ্চলে একটা স্থায়ী প্লাটফর্ম প্রয়োজন ছিল। অনেকে মনেকরে সেন্টমার্টিন হলো সেই প্লাটফর্ম। কিন্তু সেন্টমার্টিন কোনো শিলা গঠিত ভুখন্ড নয়। এটি প্রবালে তৈরি ভাসমান, ভঙ্গুর, ছোট এবং অস্থায়ী একটা দ্বীপ। এখানে স্থায়ী সামরিক ঘাটি, রানওয়ে তৈরি করলে ভূতাত্ত্বিক কারনে দ্বীপটি ডুবে যেতে পারে। এখানে বড়জোর অস্থায়ী নৌঘাঁটি তৈরি করা সম্ভব, যা চীনকে কাউন্টারে যথেষ্ট নয়। তাই মার্কিন পরিকল্পনার সেন্টমার্টিন কেবলমাত্র একটা গেটওয়ে মাত্র। আম্রিকার বৃহত্তর পরিকল্পনা হলো - "বাংলাদেশের বান্দরবন, মিয়ানমারের আরাকান এবং চিন রাজ্য, ভারতের মিজোরাম এবং মনিপুর রাজ্য নিয়ে একটা স্বাধীন খ্রিস্টান স্টেট গঠন করা, যেখানে পরবর্তীতে ইহুদিদেরও মাইগ্রেট করা হবে।" আম্রিকা বহু আগে থেকেই এই প্রজেক্টে কাজ করে আসছে। আপনারা হয়তো খবরে শুনেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খ্রিস্টান মিশনারীদের প্রভাবে অনেক মুসলিম ধর্মাবলম্বী খ্রিষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে গেছে গত ১০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ২শ এরও বেশি গির্জা স্থাপন করা হয়েছে। কিছু এলাকায় সবাই খ্রিষ্ঠান হয়ে যাওয়ায় মসজিদকে গির্জায় রুপান্তর করা হয়েছে। খ্রিস্টান মিশনারী গ্রুপ গুলো দারিদ্র্য বিমোচন, চিকিৎসা সহায়তা, জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির আড়ালে দরিদ্র, অশিক্ষিত জনগনকে খ্রিষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করার কার্যক্রম চালাচ্ছে। কেবল চট্টগ্রামই নয়, উত্তরবঙ্গ সহ দেশের আরো অনেক জায়গায় মুসলমানদের খ্রিষ্ঠান বানানো হচ্ছে। সময় মত চট্টগ্রামে ইস'রায়েল স্টাইলে আবাসিক এলাকা তৈরি করে সবাইকে এখানে নিয়ে আসা হবে। এগুলো সব ভবিষ্যৎ খ্রিস্টান রাষ্ট্রের নাগরিক রিক্রুটমেন্ট কার্যক্রম। একই সাথে খ্রিস্টান রাষ্ট্রকে বৈধতা দেবার নাটকের অংশ, যার মাধ্যমে বিশ্বকে দেখানো হতো- "স্থানীয় খ্রিস্টান জনগণ নিজ উদ্দোগে একটি রাষ্ট্র তৈরির সংগ্রাম করছে", তখন আমেরিকা সেই খ্রিস্টানদের রক্ষা করতে ৭ম নৌবহর নিয়ে হাজির হতো। এছাড়া মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় এই অঞ্চলে অনেকগুলো বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রক্সি গ্রুপ ওঠে, যার উদ্দেশ্য এই অঞ্চলের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে নতুন রাষ্ট্র গঠনের পথ সহজ করা। একারণেই দেখবেন, ২০০৯ সালের আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাত্র ২-৩ টা সসস্ত্র গ্রুপ ছিলো, অথচ এখন সেই সংখ্যাটা ডজনের কাছাকাছি। ভারত, মিয়ানমারের অবস্থাও তাই। ▶️ ভারতের পট্টিবাজি: ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেনের কমন কিছু পরিকল্পনা ছিলো, যেমন ইসলাম পন্থিদের দমন, শিক্ষা ব্যাবস্থা ধ্বংস, রাষ্ট্র কাঠামো দুর্বল করা ইত্যাদি। ভারত হাসিনাকে দিয়ে এই কমন স্বার্থগুলো বাস্তবায়ন করালেও খ্রিস্টান রাষ্ট্র ইস্যুতে ছিলো নিরব। কারনটা স্বাভাবিক। ভারত তার দুটি প্রদেশ হারাতে চায়না। তাছাড়া নিজ সীমান্তে আম্রিকার একটা কলোনি রাষ্ট্রও তারা মেনে নিতে পারছিলো না। এছাড়া চট্টগ্রাম নিয়ে ভারতের নিজস্ব মাস্টারপ্ল্যান আছে। চীনারা চিকেন নেক ব্লক করে দিলে সেভেন সিস্টার হাতছাড়া হয়ে যাবে। তাই ব্যাকআপ হিসেবে ভারত সবসময় চট্টগ্রামের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে যাবার একটা করিডোর চায়। তার ধারাবাহিকতায় ফেনী থেকে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন করে জুমল্যান্ড নামক দেশ গঠনে ইন্ধন যোগাচ্ছে ভারত। ভারতের তৈরি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো ইতিমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে ফেলেছে। তার পাশাপাশি বিদ্যানন্দ, ইসকনের মাধ্যমে পার্বত্য এরিয়ায় বিপুল পরিমাণ জমি কিনে ভারতীয় করিডর তৈরির পথ সুগম করছে। যাহোক, ভারত পল্টি মারার পর আম্রিকা সরাসরি হাসিনাকে চাপ দেয়া শুরু করে৷ যদিও ভারতীয় আদেশের বাহিরে যাওয়ার ক্ষমতা হাসিনার ছিলোনা। ফলে মার্কিন চাপে পিষ্ট হয়ে হাসিনা শেষপর্যন্ত স্বীকার করেই ফেলে -'আম্রিকা সেন্টমার্টিন চাচ্ছে'। মুলত মার্কিন রোষানলের ভয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্রের বিষয়টি কেউ প্রকাশ করেনা, তার যায়গায় সেন্টমার্টিনের কথা বলে এই অঞ্চলের উপর মার্কিন আধিপত্যবাদের ইংগিত দেয়। ▶️ আমেরিকার প্লান বি: ভারত পল্টিবাজি করতে পারে আম্রিকা তা আগে থেকেই জানতো। ফলে ব্যাকআপ প্ল্যান হিসেবে ডক্টর ইউনুসকে নোবেল পুরষ্কার এবং প্রেসিডেন্ট মেডেল দিয়ে দেশে-বিদেশে পরিচিত ও প্রভাবশালী করে তোলে। হাসিনাকে দিয়ে কাজ না হলে ইউনুসকে ক্ষমতায় এনে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করাই ছিলো আম্রিকার প্লান বি। একটা জিনিস খেয়াল করেছেন? প্রধান উপদেষ্টা বানানোর ক্ষেত্রে সমন্বয়করা ইউনুস ছাড়া ২য় কোনো নাম মুখেও আনেনি। হাসিনার পতনের আগেই ইউনুসের ক্ষমতায়ন ফিক্সড ছিলো। আম্রিকার প্ল্যান বি নষ্ট করতে ভারত হাসিনাকে দিয়ে ডক্টর ইউনুসকে দেশছাড়া করে। ফলে আম্রিকা বাধ্য হয়ে নতুন উপায় খুঁজতে শুরু করে। ▶️ চিনের আগমন: বাংলাদেশে যখন ক্ষমতা নিয়ে ভারত-আম্রীকার দড়ি টানাটানি চলছে। তখন মঞ্চে আবির্ভুত হয় নতুন খেলোয়াড় চীন। মার্কিন পরিকল্পনা বানচাল করতে চীন সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে সমঝোতা ও সহায়তার অফার করে। তবে ভারতের পরামর্শে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় বাংলাদেশ। কারন চীন-আমেরিকা একে অপরের কাউন্টারে এঙ্গেজ থাকলেই ভারতের লাভ। সমস্যা সমাধান না করে "সমস্যা জিয়িয়ে রেখে ফায়দা নেয়া" একধরনের রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি। বাংলাদেশের কাছে সাড়া না পেয়ে চীন মিয়ানমারের সাথে সমঝোতা করে। চীনের পরিকল্পনা অনুযায়ী আরাকানে ভারত-মার্কিন সমর্থিত প্রক্সি গ্রুপ গুলোকে তাড়িয়ে একটা ইকোনমিক জোন তৈরি করা হবে। এতে এক ঢিলে ৩ পাখি মরবে। চিন-মিয়ানমার আর্থিকভাবে লাভবান হবে, আরাকানে চীনা নৌঘাঁটি হবে, আমেরিকার খ্রিষ্ঠান রাষ্ট্র গড়াও ভেস্তে যাবে। সেই অনুযায়ী ২০১৬ সালে চিন মিয়ানমারকে যুদ্ধবিমান সহ আরো বিভিন্ন অস্ত্র দেয়। সেই শক্তিতে ২০১৭ সালে মিয়ানমার আরাকান মিশনে নামে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উচ্ছেদের পাশাপাশি আরাকানের স্থানীয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর ভয়াবহ গনহ'ত্যা, গনউচ্ছেদ শুরু করে। ফলস্বরূপ লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা পঙ্গপালের মত বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। এটা কেবল একটি জাতিগত নিধন নয়, বরং বিরাট এক রাজনৈতিক চাল। আর এই চালের মুল টার্গেট রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশ নয়। মুল টার্গেট ছিল আমেরিকা। রোহিঙ্গাদের আগমনে আম্রিকার প্ল্যান আবারো হোঁচট খায় । এই অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্বমঞ্চে দৃষ্টি আকর্শন করে। ঘাড়ের উপর ১০ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা নিয়ে বাংলাদেশ এদিকে ব্যাস্ত হয়ে পরে৷ চীনের এই চালে আম্রীকা বেকায়দায় পরে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না করে খ্রিষ্ঠান রাষ্ট্র প্রজেক্টে সামনে আগানোর কোনো সুযোগ ছিলোনা। ফলে আম্রীকার খ্রিস্টান রাষ্ট্রের কার্যক্রম আবারও ধাক্কা খায় ▶️ ২০২৪ এর নির্বাচন: পরিস্থিতি স্টেবল হবার পর আম্রীকা আবার মাঠে নামে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে আম্রিকা হাসিনাকে ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তার আওতায় সেনাবাহিনী ও RAB এর বিভিন্ন কুকীর্তি, গুম/খুন ফাঁশ করে, RAB এর উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এবং সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ মিশন থেকে বাদ দেবার হুমকি দিয়ে হাসিনাকে দুর্বল করে। পিটার হাসের দৌড়াদৌড়ির কথা মনে আছে নিশ্চয়। এসব ভারতের জন্যও ছিল এক প্রচ্ছন্ন হুমকি। এরপর ক্ষমতায় বসানোর আশ্বাস দিয়ে বিএনপিকে মাঠে নামানো হয়। মরা বিএনপি যেন হঠাৎ করে প্রান ফিরে পেয়ে দেশব্যাপী সিরিজ জন সমাবেশ শুরু করে। লাগাতার কর্মসুচিতে দেশ গরম করে তোলে। পরিকল্পনা ছিলো- ঢাকায় মহাসমাবেশে সারাদেশ থেকে মানুষ এনে ঢাকা অবরোধ করা হবে। নগর ভবন, সংসদ ভবন, সুপ্রিমকোর্ট অবরোধ করে সরকারকে অচল করবে। এরপর বাহির থেকে জাতিসংঘ আর আম্রীকার চাপে হাসিনাকে ফালায় দেয়া হবে। কিন্তু শেষ মুহুর্তে আবারো ভারত আম্রিকাকে ম্যানেজ করে ফেলতে সক্ষম হয়। হাসিনা টিকে থাকবে। বিএনপির উপর আন্দোলন থামানোর অর্ডার এসে পড়ে। হুট করেই আন্দোলনে ভাটা পরে। এতো ব্যাপক আয়োজনে শুরু হওয়া বিএনপির দেশব্যাপী সিরিজ সমাবেশ, গোলাপ বাগের এক ম্যারমেরে সীদ্ধান্তহীন সভা আর রুমিন ফারহানার পকপকের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায়। জাতি আবার চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়। ▶️চিন-মার্কিন জোট: নির্বাচনের পর মার্কিন-ভারত সমঝোতা আবার ভেস্তে যায়। আম্রীকা আবার হাসিনাকে ফালানোর সুযোগ খুঁজতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে আম্রিকা চীন উভয়ই বুঝতে পারে তাদের নিজ নিজ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের উপর ভারতীয় প্রভাব কমানোর বিকল্প নেই। তখন চীন-আম্রিকা মিলে হাসিনাকে ফেলতে সাময়িক সময়ের জন্য জোটবদ্ধ হয়। তবে বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে চিন-আম্রিকার বাহ্যিক প্রভাব ব্যাপক হলেও বিপ্লব কেন্দ্রিক পুর্নাঙ্গ ফিল্ডওয়ার্কের এক্সেস তাদের ছিলোনা, যা আছে চিনের মিত্রদেশ পাকিস্তানের কাছে। ফলে চিনের থ্রো পাকিস্তানও এখানে ইনভল্ব হয়। CIA ভারতীয় উপমহাদেশে কখনোই ডিপ কোনো গ্রাউন্ড তৈরি করেনি, প্রতিবারই তারা কাজ করেছে RAW বা ISI এর সাহায্যে। ফলে জুলাই বিপ্লব অর্গানাইজ এবং RAW এক্টিভিটি কাউন্টারে ISI এর সহায়তা CIA এর জন্য হয়ে উঠে মরুভূমির বৃষ্টি। ▶️ জুলাই বিপ্লব: মজার বিষয় হলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডক্টর ইউনুস আমেরিকার একমাত্র প্লান্টেড এজেন্ট ছিলোনা, আরো অনেক আছে। আমাদের সমন্বয়ক নাহিদ এবং আসিফ তারই অংশ, সাথে আমাদের মাস্টারমাইন্ড গদা মাহফুজ, নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারীও আছে। আর ডা. তাসনিম জারা কাদের প্রোডাক্ট তা নিশ্চয় বলার প্রয়োজন নাই। তাহলে হাসনাত, সারজিস? এরা হলো - "বরযাত্রীর সাথে ঢুকে গিয়ে বিয়ে খেয়ে ফেলা পাবলিক"। মানে আন্দোলনের গতিপ্রবাহে হাসনাত সারজিস ফ্রন্টলাইনে এসে সমন্বয়ক হয়ে যায়। এই কারনে নাহিদ, আসিফরা খুব গুছিয়ে কাজ করে, কারন তাদের স্ক্রিপ্ট আসে আম্রিকা থেকে। মাফফুজ, নাসিরুদ্দিনও নির্দিষ্ঠ এইমের উপর কাজ করছে। কিন্তু হাসনাত, সারজিসের পরিস্থিতি ভিন্ন, এদের স্ক্রিপ্ট রাইটার নাই বলে মাঝেমধ্যে বেফাঁস মন্তব্য বা কাজকর্ম করে, দলীয় স্বার্থের বাহিরে গিয়ে জনগণের স্বার্থে কথা বলে। ৫ই আগস্ট বিকেলে হাসনাত, সারজিস যখন কাওরান বাজারে আর্মীর APC তে চড়ে জনগণের সাথে আনন্দ মিছিল করছিলো, নাহিদ, আসিফ তখন চ্যানেল ২৪ এর অফিসে বসে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্ল্যানিং করছিলো। বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা, মার্কিন প্লান্টেড রিসোর্সের পাশাপাশি কিছু এম্বাসি সরাসরি আন্দোলনে সহায়তা করেছে। আমেরিকা, পাকিস্তান, চীন, কানাডা এম্বাসি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। বিএনপি শতশত ট্রাক দিয়ে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে ব্লক তৈরি করে পুলিশ, RAB, বিজিবির মুভমেন্ট স্লো করে দেয়। শিবির পুরো দেশজুড়ে এক অল্টারনেটিভ কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে, যা ছিলো আন্দোলন পরিচালনার লাইফলাইন। যাহোক। চীন, আম্রীকা, পাকিস্তান, রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ জনগনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভারত মারা খায়। বাংলাদেশে তাদের সর্ববৃহত এ্যাসেট হারায়। ▶️ ৫ই আগস্ট পরবর্তী কার্যক্রম: নিজের A টিম হারিয়ে ভারত কিছুদিন হাহুতাশ করে। কিন্তু এরপরই তার প্ল্যান বি লঞ্চ করে। বিএনপি। নাহ, বরং বলা উচিত বিএনপিতে থাকা তাদের এজেন্টদেরকে এক্টিভ করে। তো কারা সেই এজেন্ট? কে আবার? আমাদের সালাহউদ্দিন সাহেব। যাকে ৯ বছর শিলংয়ের বিলাসবহুল রিসোর্টে রেখে ট্রেইন্ড করে ভারত। দির্ঘ্য ৯ বছরের গ্রুমিংয়ের পর সে এখন খুব নিখুঁত ভাবে ভারতীয় প্ল্যানের বাস্তবায়ন করছে, এস আলমের ব্যাবসা সামলাচ্ছে, সরকারের ভারত বিরোধী কাজকর্মে বাধা দিচ্ছে। বিএনপিতে ভারতীয় ব্লকে আরো আছে,- আমির খসরু, নিপুণ রায়, রুমিন ফারখানা সহ আরো কয়েকজন। ৯ বছর পর উড়ে এসে জুড়ে বসা সালাহউদ্দিন এখন বিএনপির মাস্টারমাইন্ড। ইউনুসের সাথে ন্যাগোসিয়েশন সহ সব ধরনের লিডিং কার্যক্রম হ্যান্ডেল করছে৷ ইভেন তারেক রহমান দেশে এলেও আদৌও বিএনপি প্রকৃত অর্থে তারেকের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, নাকি তারেরকের পেছনে বসে সালাহউদ্দিন দলকে নিয়ন্ত্রণ করবে তাতে যথেষ্ট সন্দেহ বিদ্যমান। এদিকে আম্রীকা আগেই তারেক রহমানের সাথে বন্দবস্ত করেছে ক্ষমতায় এসে কি কি করা হবে। ফলে বিএনপির ভেতর ২টি ধারা সৃষ্টি হয়ে যায়। তারেকের নেতৃত্বে মার্কীন পন্থি গ্রুপ, সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে ভারতপন্থী গ্রুপ। খেয়াল করে দেখবেন তারেক ও সালাহউদ্দিন একে অপরকে এড়িয়ে চলে৷ সালাহউদ্দিন এই মুহূর্তে পুরো বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, অথচ তারেক জিয়া সাধারণত সালাহউদ্দিনের বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করেনা। সালাহউদ্দিনও তারেকের দেশে আসার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না। এদিকে ৫ই আগস্টের পর অন্তবর্তিকালীন সরকার গঠন করে ড. ইউনুস, নাহিদ, আসিফরা মার্কিন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্লট সাজানো শুরু করে। কিন্তু এখানে এসে বাঁধে নতুন বিপত্তি। তারা বুঝতে পারে, বাংলাদেশের রাজনীতি, প্রশাসন, রাষ্ট্র কাঠামোতে ভারতীয় সেটআপ এখনো ভয়ংকর শক্তিশালী। হাসিনা ও নেতারা পালালেও বাকি সেটআপ প্রায় অক্ষত আছে। এছাড়া শুরুতে যে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়, তাদের সিলেকশন হয়েছিলো ভারতের ইশারায় জেনারেল ওয়াকারের পরামর্শে। ফলে এরা পরক্ষোভাবে ভারতের এজেন্ডাতেই কাজ করেছে। এই ভারতীয় সেটআপ ড. ইউনুসের মার্কিন পন্থি কার্যক্রমে প্রতি পদে পদে বাধা দেয়। ভারত কোনোভাবেই চায়নি বাংলাদেশ তার হাত থেকে বেরিয়ে আম্রিকার নিয়ন্ত্রণে চলে যাক। বাঁধার মুখে আসিফ বলেছিলো সচিবরা কথা শুনছেনা, মাহফুজ বলেছিলো রাজনৈতিক দলগুলো বাঁধা দিচ্ছে। তখন ড. ইউনুস নতুন চাল দেয়। নতুন করে আবার উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়, যাদের সবাই ছিলো মার্কিন পন্থি। আমাদের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও সেই মার্কিন মালগুলোর একটা। এছাড়া আয়না ঘর ভিজিট, ভারত পন্থি আমলাদের অপসারণ, গ্রেফতারের মাধ্যমে ভারতীয় সেটআপকে দুর্বল করে ফেলে। অর্থাৎ, অন্তবর্তিকালীন সরকার লীগ/ভারতের বিরুদ্ধে যেসব কাজ করেছে, তা করেছে মুলত ভারতীয় প্রভাব কমিয়ে মার্কিন প্রভাব বিস্তারের স্বার্থে। জনগণের স্বার্থে নয়। ড. ইউনুস ততটাই সংস্কার করেছে, যতটা আম্রিকার প্রয়োজন। এর বাহিরে কিছু করার ইচ্ছা বা পরিকল্পনা তাদের নেই। কিছুদিন আগে ২৬ জন সেনা অফিসারের নামে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারিও ছিলো ভারত-আম্রিকা যুদ্ধেরই অংশ। সেনাবাহিনীতে হাসিনার কথায় গুম/খুন করা অফিসার এবং সেনাপ্রধান ওয়াকার ভারতের দালাল। তারা চাইছিলো ক্যু করে ইউনুসকে ফেলে দিয়ে সেনা শাসন জারি করতে। এরপর ভারতপন্থী রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে। এতে আবারও আম্রিকা ধরা খেতো। কিছুদিন আগে সালাহউদ্দিনের সাথে ওয়াকারের গোপন বৈঠকের কথা ইতিমধ্যে শুনেছেন হয়তো। তবে ইউনুস সেটা বুঝে ভারত পন্থি আর্মীদের একটা অংশ গ্রেফতার করে ওয়াকার গ্রুপকে দুর্বল করে দিয়েছে৷ ওয়াকার এখন আর ক্যু করতে পারবে না। তবে ভারতকেও বোকা ভাববেন না। উপদেষ্টা পরিষদে তারাও এক রাঘোব বোয়াল রেখেছে ৷ যে জানেন? আমাদের ষাঁড় আসিফ নজরুল। উনি কিন্তু ভারতীয় দালাল নয়। কিন্তু নারী ঘটিত হানি ট্রাপের ফাঁদে পরে বেচারা এখন বাধ্য হয়ে ভারতের গোলামি করছে। ওনাকে দিয়ে ভারত তার এস্যাট গুলোকে রক্ষা করেছে, লীগ নেতাদের বাঁচিয়েছে, ১৭ বছরের সমস্ত অপকর্ম ও ভারতীয় ইনভল্বমেন্টের প্রমান নষ্ট করেছে। ▶️ আগামী নির্বাচনে কে কাকে সমর্থন করছে? স্পষ্টত বাংলাদেশ রাজনীতিতে এখন ২টি দেশের প্রভাব সর্বোচ্চ। ভারত এবং আম্রিকা। আগামী নির্বাচনে কে কোন দলকে ক্ষমতায় আনতে চাইছে তা অতি গুরুত্বপূর্ন। দুটো দেশই চাইলে নির্বাচনের ফলাফল ঘুরিয়ে দিতে পারে। ইতিমধ্যে 'নগদ' এ্যাপের স্পাইওয়্যার কেলেঙ্কারি জেনেছেন নিশ্চই। আপনার ফোনের ডেটা এখন ভারতের হাতে আছে। সাথে আছে বাংলাদেশের NID কার্ডের তথ্য। ফলে আগামী নির্বাচনে আপনি কোন কেন্দ্র থেকে কাকে ভোট দিবেন, কোন কেন্দ্রে কে কত ভোট পাবে তার খসড়া এখনই ভারত জানে। ২০০৯ সালে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করা এম শাখাওয়াত হোসেন এখনো উপদেষ্টা পরিষদে আছে। ভারত চাইলে আবারো ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করতে পারে। একই কাজ আম্রিকাও করতে পারে। ➧ ভারত : ভারত স্বভাবতই বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে চায়। কারন বিএনপির উপর তাদের যথেষ্ট কন্ট্রোল আছে। তাছাড়া স্যেকুলারিজম, দুর্নীতির মত বিভিন্ন ইস্যু বিএনপি থাকা অবস্থায় বাস্তবায়ন সহজ। জামায়াতের ক্ষেত্রে ভারত মোটেও আগ্রহী নয়। এমন নয় যে জামায়াত ক্ষমতায় গেলেই দেশে ভারতীয় আধিপত্য বিলুপ্ত হবে বা দেশ একেবারে ইসলামিক স্টেট হয়ে যাবে। কিন্তু জামায়াত আসলে ইসলামপন্থীরা সামাজিক ভাবে শক্তিশালী হবে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী ডিপস্টেট এটা কোনোভাবেই চায়না। ➧ আমেরিকা: NCP আম্রিকার A টিম। কিন্তু সমস্যা হলো NCP সরকার গঠনে সক্ষম হবেনা। তাই আম্রিকাকে বিএনপি বা জামায়াত যেকোনো একটা দলের সাথে সমঝোতায় আসতে হবে। এক্ষেত্রে আম্রিকারও ফাস্ট চয়েজ বিএনপি। এজন্যই শুরু থেকে NCPর সাথে BNPর জোট গঠনের কার্যক্রম চলছিলো। কিন্তু বিএনপিতে ক্রমাগত ভারতীয় আধিপত্য বৃদ্ধি পাওয়া আম্রীকাকে দ্বিধায় ফেলে দিয়েছে। তারা এখন চিন্তিত বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আদৌও তাদের কন্ট্রোলে থাকবে? নাকি হাসিনার মত পুরোপুরি ভারতের কন্ট্রোলে চলে যাবে। ফলে এই মুহূর্তে BNPর সাথে জোট বাঁধার ক্ষেত্রে NCP কিছুটা পিছিয়ে এসেছে। আম্রিকা এখন সেকেন্ড অপশন হিসেবে জামায়াতকেও যাচাই করে দেখতে পারে৷ যদিও সম্ভাবনা কম। তবে একটা ক্লিয়ার লক্ষন বলে দিচ্ছি। যদি NCP কারো সাথে জোট করে, তাহলে বুঝে নিবেন আম্রিকা তাকেই ক্ষমতায় আনতে চাইছে। এছাড়া আম্রিকার আরো একটা প্ল্যান আছে, সব দলের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার আনা। এজন্যই তারা সব দলের সাথে সম্পর্ক রাখছে। ইদানীং দেখবেন NCP নেতারা জামায়েত নিয়েও পজেটিভ ভাইব দেখাচ্ছে। ➧ চিন, পাকিস্তান: এখন কথা হলো, চীন-পাকিস্তান কি করলো? ভারত-আম্রীকা যেহেতু বিএনপিকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছে, ফলে চীন-পাকিস্তান বিএনপিকে ফাস্ট চয়েজে রাখবে না। আবার জামায়েতের সাথেও তাদের সম্পর্ক আছে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। ফলে আগামী নির্বাচনে চিন-পাকিস্তান ব্লকের ভুমিকা এখনো রহস্যময়। তবে, একটা প্রমান স্পষ্ট। আপনি কি খেয়াল করেছেন? জুলাই বিপ্লবের পর থেকে এপর্যন্ত কোন দেশের সাথে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সামরিক, বানিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে আলোচনা, সমঝোতা করেছে? পাকিস্তানের সাথে। পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের যে পরিমান বৈঠক কয়েছে, তার অর্ধেকও চিন, আম্রিকা বা ভারতের সাথে করেনি। সামরিক বাহিনী এখন পুরোদস্তুর পাকিস্তানের সাথে জয়েন্ট কোলাবোরেশানে কাজ করছে। এটা প্রমান করে সসস্ত্র বাহিনী সহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চীন, পাকিস্তান পন্থি একটা পোল সৃষ্টি হয়েছে। আর সেটা আগামী নির্বাচন বা তার পরবর্তী সময়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। আপনি হয়তো একটা নির্বাচনের অপেক্ষায় বসে আছেন। অথচ বাংলাদেশ এই মুহূর্তে একাধিক সুপারপাওয়ারের সংঘাত কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। আপনি ভাবছেন, আপনার ভোটে আগামী সরকার নির্ধারিত হবে। কিন্তু নির্ধারনটা দিল্লি, ওয়াশিংটন বা বেইজিং থেকেও হতে পারে। ভারত আমাদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। তারা আমাদের ভুমি, সম্পদ, স্বার্বোভৌমত্ব এমনকি ঈমান ও জীবনটাও কেড়ে নিতে চায়। আমেরিকা চায় আমাদের ভুখন্ড। পাশাপাশি আমাদেরকে বানাতে চায় তার হাতের পুতুল। বাংলাদেশ ইস্যুতে চীনের পরিকল্পনা তুলনামূলক কম আগ্রাসী। তারা বাংলাদেশের ভুমি বা দাসত্ব চায়না, তবে বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতি ও বিপুল জনশক্তির উপর চীনের লোভ আছে। চীন এখন নিজ দেশে পন্য উৎপাদনের কারখানা কমিয়ে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তারাও এখন পশ্চিমাদের মত পন্য ম্যানুফেক্চার বাদ দিয়ে উদ্দোক্তা ভিত্তিক দেশ হবার পরিকল্পনায় এগুচ্ছে। চীনা উদ্যোক্তাদের পন্য উৎপাদনের হাব হিসেবে বাংলাদেশের উপরও নজর আছে তাদের। নতুন এই অর্থনৈতিক বিপ্লবকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশও লাভবান হতে পারে। এই মুহূর্তে ভারত, মার্কীন আগ্রাসন থেকে বাঁচতে চীনের সাথে সমঝোতায় যাবার কোনো বিকল্প নেই। © #অনির্বাণ যুদ্ধ ও সমরাস্ত্র সম্পর্কিত আপডেট সব তথ্য পেতে আমাদের গ্রুপে যুক্ত থাকুন https://www.facebook.com/share/g/177P5GFde1/

No comments:

Post a Comment