Tuesday, 2 December 2025
আপনি মুসলমান, কিন্তু কোন মুসলমান ?
দেশ যদি একশভাগ মুসলমানের দেশও হয়ে যায়, তবু দেশে পারস্পরিক বিশ্বাসের মধ্যে সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার দরকার হবে। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহাবস্থান শুধু বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে না, আন্তঃধর্মেও অনিবার্য বিষয়। তাছাড়া দেশের সবাই মুসলমান হয়ে গেলেও ধর্মীয় শান্তি প্রতিষ্ঠা পাবে না। কারণ তখন আবার যে প্রশ্নগুলো ঘাতক হয়ে উঠবে সেগুলো হলো:
(ধর্মীয় রাজনৈতিক চিন্তা বিবেচনায়)? সুন্নি (শরিয়তপন্থী), নাকি শিয়া (আলীপন্থী)? না খারিজি (আলীপন্থী বিরোধী)? নাকি আসহাব (মুহাজির+আনছার) কিংবা উমাইয়া (ওসমানপন্থী)?
(ধর্মতাত্ত্বিক বিবেচনায়) আপনি কি জাবারিয়া (মানুষের ইচ্ছা ও কর্মের স্বাধীনতা নেই মতাদর্শিক) নাকি কাদারিয়া (মানুষের চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা মতাদর্শিক), অথবা মুরজিরা নাকি সিফাতিয়া?
(দর্শনগত দিক বিবেচনায়) আপনি কি মুতাজিলা/ ফালাসিফা (প্রজ্ঞা জ্ঞানের উৎস মতাদর্শিক), আশারিয়া (সামাজিক আচার জ্ঞানের উৎস মতাদর্শিক), নাকি সূফি (স্বজ্ঞা জ্ঞানের উৎস মতাদর্শিক)?
আপনি যদি সুন্নি হোন, তাহলে কোন সুন্নী: হানাফি, মালিকি, শাফিঈ নাকি হাম্বলি?
শিয়া হলে কোন শিয়া: ইসনা আশারিয়া (১২ জন ইমামের শিক্ষায় বিশ্বাসী), ইসমাইলি (সম্প্রদায়টি আবার নিজারি ইসমাইলি, ইসমাইলি সপ্তস্থম্ভ, মুসতালি, দাউদি বোহরা, হেবতিয়া বোহরা, সুলেমানি বোহরা ও আলাভি বোহরাতে বিভক্ত)?
আপনি রেজভি/বেরলভি, দেওবন্দি, সালাফি, ওয়াহাবি নাকি আহলে হাদিস? নাকি জামাতুল মুসলিমিন?
আপনি সুফি বা তরিকাপন্থি বা মাজারপন্থি হলে ভারতবর্ষে তিন শতাধিক তরিকা আছে। আপনি কাদেরিয়া, চিশতিয়া বা নকশবন্দিয়া? নাকি মোজাদ্দেদিয়া, ওয়াইসিয়া, মাসুমিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া? নাকি মাদারিয়া, মুহম্মদিয়া, মাইজভাণ্ডারীয়া, উম্মিয়া, বেকতাশিয়া?
আপনি চন্দ্রপুরী, আটরশি, দেওয়ানবাগি, কুতুববাগি, নাকি খিজিরিয়ান বা সুরেশ্বরী?
আপনি হিজবুত তাহরিত (খিলাফত প্রতিষ্ঠাকারী) নাকি হিজবুত হওহিদ (সংস্কারপন্থী)?
সবাই তো মুসলমান, সবাই তো রাসুলুল্লাহ সাঃ-কে অন্তর দিয়ে ভালোবাসে, সবাই তো আল্লাহর একাত্ববাদকে অনিবার্য সত্য বলে মানে কিন্তু ওহাবিরা মাজার ভাঙছে কেন? আহলে হাদিসের অনুসারীরা কেন হানাফি মসজিদে নামাজ পড়তে চান না? তার মানে সবাই মুসলমান হলেও তরিকা এক হবে না। সম্ভব হবে। নবি (সা)-এর চার খলিফার অনুসারীরাই এক হতে পারেনি। তার মানে আলাদা হওয়াটা ইসলামের আদি বাস্তবতা। এটা মেনে নিয়ে সহাবস্থান করাও বাস্তবতার অংশ। দুজনই আল্লাহর কাছে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করে, আল্লাহর গুণকীর্তন করে, কিন্তু তরিকা ভিন্ন হওয়ার কারণে এক পক্ষ আরেক পক্ষের প্রার্থনালয় (ধরুন মাজার) গুড়িয়ে দিতে পারেন না। গুড়িয়ে দিলে আপনি হয়তো একশো দলের একদল, বাকি নিরানব্বই দলকে গুড়িয়ে দিতে হবে। প্রতিউত্তরে সেই নিরানব্বই দলের কোনো দল আপনাকে গুড়িয়ে দিতে আসবে। আল্লাহ পৃথিবী ধ্বংস করার জন্য আপনাকে পাঠাননি। শান্তি প্রতিষ্ঠা না করতে পারেন, শান্তি নষ্ট কইরেন না। মানুষ হয়ে যখন জন্মেছেন সহাবস্থান করা আপনার অনিবার্য নিয়তি। পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীও সেটা করে। আপনি ব্যতিক্রম না।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)

No comments:
Post a Comment