Thursday 31 October 2024

আপোষ করলে খালেদা জিয়া আজ পর্যন্ত যা যা হারিয়েছেন, কিছুই হারাতে হতো না।

আপোষ করলে খালেদা জিয়া আজ পর্যন্ত যা যা হারিয়েছেন, কিছুই হারাতে হতো না। কিচ্ছু না। সেই এরশাদের সময় থেকে শুরু। মাত্র ২০ কোটি টাকার কাছে বিক্রি হয়ে হাসিনা পাতানো ইলেকশনে গেল। খালেদা গেলেন না। বাংলাদেশের মানুষ অবাক হয়ে দেখলো, সাধারণ একজন গৃহবধূ কোন ফাঁকে যেন হয়ে উঠেছেন অসাধারণ এক রাজনীতিবিদ। যাকে ভাঙা যায়, মচকানো যায় না। ১/১১ তে হাসিনা দেশ ছাড়লেন। খালেদা ছাড়েননি। তারেক রহমানের উপর অকথ্য নির্যাতন চললো। মা হিসেবে খালেদা যদি ১/১১ র সরকারের সাথে আপোষ করেও বসতেন, আমি একটুও দোষ দিতাম না। হাজার হলেও তিনি একজন মা। নিজের সন্তানকে বাঁচানোর অধিকার তাঁর আছে। খালেদা সেটাও করলেন না। তারেককে ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের মা। জেদ ধরে বসে থাকলেন, মাইনাস টু ব্যর্থ হয়ে গেল। এরশাদের মতো ১/১১ র সকল কুশীলব আবারও জানলো এই মহিলার জেদ আছে। প্রণব মুখার্জির সাথে বৈঠকটা ছিলো ভারতের সাথে খালেদার শেষ রাজনৈতিক সমঝোতার সুযোগ। সম্ভবত জামায়াতে ইসলামির হরতাল ছিলো ঐ দিন। যেতেই পারতেন। গেলেন না। খালেদা নিজেও জানতেন, প্রণবের বৈঠক প্রত্যাখ্যান করার ফলাফল কী হতে পারে। তাও করলেন। সাফ জানিয়ে দিলেন, হরতালের প্রোগ্রাম আছে। তিনি বের হবেন না। শাহবাগের বিরোধিতা খালেদা শুরু থেকেই করেছেন।শাপলার পক্ষে ছিলেন। ৪ মেতে খালেদা চেয়েছিলেন অবস্থান কর্মসূচ দেবেন। ঢাকার কয়েকজন প্রভাবশালী বিএনপি নেতার কারণে খালেদা ঐদিন কর্মসূচি থেকে সরে আসেন। অথচ সরকারের পতন ৫ মেতেই হতে পারতো। ২০১৪ ইলেকশনে বিএনপি গেলে খালেদাকে জেলে যেতে হতো না। হাসিনা নার্ভাস ছিলেন। সালমান এফ রহমানসহ বহু নেতা বিদেশ চলে গেছিলেন। হাসিনা ইভেন খালেদাকে ৫ টা মন্ত্রনালয়ের ভাগ দিতেও চেয়েছিলেন। অফারটা নিলে বিএনপি সরকারে না আসলেও অন্তত ১০০ টা সিট নিয়ে বিরোধী দলে বসতে পারতো। খালেদার জেলে যেতে হতো না। বাট মানুষের ভোটে যে নেত্রী আজ পর্যন্ত একবারও হারেননি, তিনি সাজানো ভোটে কেন যাবেন? গেলেন না। বললেন, কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট দাও। বালুর ট্রাক দিয়ে বন্দি করা হলো খালেদা জিয়াকে। সেই বালুর ট্রাক সরাতে কেউ আসলো না। বোঝা গেল, খালেদার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির সিনিয়র নেতারা নাখোল ছিলেন। তারা সিট চেয়েছিলেন। খালেদা জিয়া চাননি। মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ব্যর্থ হলো। নেতাদের কিছুই হলো না। শুধু জনি ১৯ টা গুলি খেয়ে মরে গেলেন, খালেদা জিয়া শুধু জেলে চলে গেলেন। হাসিনার নোংরামি সমন্ধে খালেদার অজানা ছিলো না। নিজের দলকেও কি খালেদা কম জানতেন? যে দলের বুড়ো নেতারা তাঁর বাসার সামনের বালুর ট্রাক সরাতে পারে নাই, সেই নেতারা তাকে যে জেল থেকেও বের করবে না, খালেদা জিয়া ভালো করেই জানতেন। জানতেন, জেলে তাকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হবে না, বরং বিষ দিয়ে মেরেও ফেলা হতে পারে। সবকিছু জেনে বুঝেই খালেদা জেলে গিয়েছিলেন। কেন? যাতে নিজের যা হয় হোক, দলের রাজনীতিটা তবুও বাচুক। খালেদা চাইলেই লন্ডন চলে যেতে পারতেন,। তখন নিজে বাঁচতেন, তবে দলের রাজনীতি শেষ হয়ে যাইতো। হাসিনা বলতো, দেখেছো? বিচারের ভয়ে পালিয়েছে। খালেদা নিজেকে কুরবানি করে দলটাকে বাঁচানোর ডিসিশন নিলেন। আওয়ামীলীগ নিয়ে মির্জা ফখরুল, রুমিন ফারহানা বা আমির খসরুরা যখন আওয়ামীলীগের ভাষায় কথা বলে, আমার অবাক লাগে না। এরাই তো তারা, যারা খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে সরকারের কাছে প্লট চেয়েছে। এরা তো তারা, যাদের পরিবার ছিলো, ব্যবসা ছিলো, মাঝেমধ্যে জেল ছাড়া যাদের আর কোন ক্ষতি হাসিনা করেনি। ক্ষতি হয়েছিলো খালেদা জিয়ার। স্বামী হারিয়েছেন কম বয়সে, শেষ পর্যন্ত ছেলে নাতি কাউকেই তো পেলেন না। আর ক্ষতি হয়েছে নুর বা জনির মতো তৃণমূলের নেতা কর্মীদের। আজ যারা আওয়ামীলীগের পক্ষে কথা বলতেছে, ফখরুল বা রুমিন, এরা কৃতজ্ঞতা বশেই বলছে। আওয়ামীলীগ তাদের কম তো দেয় নাই। আমার দুঃখ একটাই। সম্ভবত একটুও দেরিই হয়ে গেল। খালেদা জিয়া যদি একটু সুস্থ থাকতেন। একটাবার যদি রাজনীতি করার একটুখানি সুযোগ এই মানুষটা এখন পেতেন, সংবিধান, রাষ্ট্রপতি বা আওয়ামীলীগ নিয়ে বিএনপির এই মাতলামি আর দেখতে হতো না। বরং খালেদা জিয়া একেবারে রাইট ডিসিশনটাই নিতেন। আমরা শুধু জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দূরদুর্শিতার কথাই বলি। অথচ খালেদা জিয়াও কি দূরদর্শী ছিলেন? আজ থেকে দশ বছর আগেই এই মহিলা বলেছিলেন, আওয়ামীলীগ পচে গেছে। এই আওয়ামীলীগ একদিন দুর্গন্ধ ছড়াবে। এরচে একুরেট কোন প্রোফেসি গত ১০ বছরে কোন রাজনীতিবিদ করতে পেরেছিলেন? আওয়ামীলীগ আর বিএনপির মধ্যে পার্থক্য করতে গিয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ওদের হাতে আছে গোলামির জিঞ্জির, আমাদের আছে স্বাধীনতার পতাকা। সারাটাজীবন লড়াই করে খালেদা জিয়া বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, ঢাকা আর দিল্লির প্রশ্নে হাসিনা যতবার দিল্লির কাছে দাসত্বের দস্তখত দিয়েছেন, খালেদা তত শক্ত করে ঢাকাকে আকড়ে ধরেছেন। ভারতও জানতো, এই মহিলাকে জেলে ঢোকানো যায়, কিন্তু একে কেনা যায় না। শেষদিকে খালেদা জিয়ার কিছুই ছিলো না। পদ ছিলো না, দলের অতো সাংগঠনিক শক্তি ছিলো না, সন্তানরা কাছে ছিলো না, সকল ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করা ছিলো, এমনকি ঢাকার বাড়িটাও ছিলো না। খালি ছিলো ঐ পতাকাটা। এমনকি চরম শত্রুও বলতে পারবে না, খালেদা জিয়া একবারের জন্যও কারো কাছে দেশ বিক্রি করেছেন। আজকালকার প্রজন্ম যখন বলে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে কোন মহিলাকে চাই না। তখন কষ্ট হয়।ওদের দোষ দিই না। ওরা মহিলা প্রধানমন্ত্রী বলতে চেনে হাসিনাকে। দেশ বেঁচে খাওয়া ছাড়া যার আর কোন কাজ ছিলো না। মুখের ভাষা ছিলো তৃতীয় শ্রেণীর। নোংরা কথার মানুষ ছিলেন। এই প্রজন্ম একটাবারের জন্য যদি খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে পেত!! বুঝতো, সমস্যাটা ছেলেতে বা মেয়েতে না। সমস্যাটা শিরদাড়ায়। বহু পুরুষ নেতা, এরশাদের মতো তথাকথিত শক্তাশালী জেনারেল যখন দিল্লির তাবেদারি করেছে, খালেদা জিয়া তখন দিল্লির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বাইরে নেওয়া হচ্ছে চিকিৎসার জন্য। মহান আল্লাহ তাআলা তাকে সুস্থতা দান করে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিক। রাজনীতি থেকে খালেদার আর পাওয়ার কিছু নাই। বাট খালেদা জিয়ার থেকে এখনও আমাদের পাওয়ার অনেক কিছুই আছে। এখনও যদি চোখ বন্ধ করে কারো উপর ভরসা করা যায়, বিশ্বাস করা যায়, স্বাধীনতার পতাকার জিম্মাদারি দেওয়া যায়, সেটা একমাত্র খালেদা জিয়াকেই করা যায়। আর কাউকে না।

No comments:

Post a Comment