বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ ধারায় সব নাগরিক সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী বলে উল্লেখ রয়েছে। রাষ্ট্র নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য রাখবে না। আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিক সমান অধিকারী। প্রতিটি রাষ্ট্রে তাদের নিজস্ব আইন রয়েছে। বাংলাদেশও নারী অধিকারে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এসব আইন থাকা সত্ত্বেও এখনো অনেক নারী বঞ্চিত ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অধিকার আদায়ে প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন নারীরা।
নারীর অধিকারে যত আইন
নারী নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়নের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আশির দশকের শুরুর দিকে বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় তা দমনে ১৯৮৩ সালে এ আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু নারী নির্যাতন বন্ধে এ আইন খুব বেশি কার্যকর হচ্ছিল না। ফলে আরো কঠোর আইন তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পরে ১৯৯৫ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন পাস করা হয়। এ আইন পাসের পর নারী নির্যাতন কিছুটা বন্ধ হয়। পরে আইনটি বাতিলক্রমে ২০০০ সালে নতুন করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনটিকে আরো শক্তিশালী করতে ২০০৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া এসিড-সন্ত্রাস দমন আইন ২০০২ ও যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইন ১৯৮০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ প্রভৃতি আইন রয়েছে।
এ ছাড়া নারীনীতিসহ কিছু নীতি ও আইন আছে, যেখানে পরোক্ষভাবে নারীর অধিকার ও স্বার্থকে রক্ষা করা হয়েছে। দেশে প্রথমবার নারীনীতি আইন প্রণয়ন করা হয় ১৯৯৭ সালে, এরপর ২০০৪ ও ২০০৮ সালে তা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে পুনরায় নারীনীতি প্রণয়ন করা হয়।
এ ছাড়া পুরুষকে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে আইন না থাকলেও মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ মোতাবেক নারীদের বিবাহবিচ্ছেদেরও অধিকার দেওয়া হয়। পারিবারিক আইনে নারীর অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। কিন্তু সামাজিকভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকায় নারী তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংবিধান এবং আইনে থাকলেও নারীর প্রতি বৈষম্য বিরাজ করছে সমাজের সর্বক্ষেত্রেই।
আইনের বাস্তবায়ন
নারীর অধিকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশে অনেক আইন ও নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু আইনগুলো বাস্তবায়নের হার কম থাকায় যৌতুক, পারিবারিক নির্যাতন, এসিড-সন্ত্রাসের শিকার, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, সম্পত্তিতে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন নারীরা। নারী ও শিশু নির্যাতন আদালত, পারিবারিক আদালত এবং ফৌজদারি আদালতে নারীসংক্রান্ত বিষয়ে কয়েক লক্ষাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বছরের পর বছর এসব মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় নারীরা তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তৃণমূল পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়েনি। শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে এলেও উচ্চপর্যায়ে কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রই প্রথমে নারীদের বঞ্চিত করছে। কেননা বাজেটে নারীদের জন্য কম বরাদ্দ ও অনগ্রসর গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করছে। রাষ্ট্র যদি নারীদের এমন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে, তাহলে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে কীভাবে? নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নে শুধু আইন করলেই হবে না, প্রয়োজন সেটির বাস্তবায়ন।’
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় করণীয়
অনেক দেশেই সংবিধানের ভিত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনে তারা সংবিধানকে সংশোধন করেছে। তাই নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ ও ইতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার।
নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় করণীয় প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ আক্তার উল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নারীর অধিকার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মানুষের মানসিকতা। পুরুষদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারলে সমাজে নারীদের অধিকার সহজেই প্রতিষ্ঠা পাবে।’
No comments:
Post a Comment