Sunday, 28 December 2025

জামায়াত'কে এখন আর রাজাকার বলার কোনো সুযোগ আছে কী ??

বর্তমান জামায়াত'কে এখন আর রাজাকার বলার কোনো সুযোগ রইলো কী বা আছে কী ..??? "৭১- এবং "২৪ এর জামায়াত কিন্তু এক নয়-; জামায়াত'কে নিয়ে কিছু কথা....পড়ুন, আশা করছি ভালো লাগবে- তবে, তেতো সত্য কথন। প্রথমত বলতে চাই, জামায়াত তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে (যারা তাদের রাজাকার বলে, তাদের সবার গায়ে কালি লাগানোর কাজ)। আমরা ১৯৭১ এর কারণ থেকে জেনে আসতেছি জামায়াত খুব খারাপ দল- মনে করেন, জামায়াত খুব খারাপ- মানে বেইশ্যা। এই বেইশ্যার সাথে যারা রাত কাটায়- তাদের কী বলা উচিত- বলেন-!? ঝড়ের রাতে সেই বেইশ্যার ঘরে আশ্রয় নিয়ে- ঝড় থামার পর বের হয়ে যদি বলেন- ঝড়ের সময় বেইশ্যার ঘরে ছিলাম। একবার ভাবুন তো, এখানে কে সবচেয়ে বেশি খারাপ- বেইশ্যা নাকি- সেই আশ্রয়গ্রহনকারী- বলেন- কে-!? স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাদের মুরব্বিদের নেওয়া সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো না... ঈমানদার কখনও জালেম হতে পারে না--- উনারা যেটা করতে পারতেন- ১। পশ্চিম পাকিস্তান সরকারকে উনারা বোঝাতে পারতেন যুদ্ধ না জড়িয়ে- আপোষ মীমাংসা করার জন্য। কারণ, দুই ভাই যখন বিবাদে জড়ায়- তখন দুই ভাইয়ের প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষীর ঈমানদারী কাজ হলো- দু-পক্ষ'কে বুঝিয়ে আপোষ মীমাংসা করে দেওয়া। ২। দুই ভাইয়ের বিবাদে তৈল ঢেলে- কোনো একপক্ষের জন্য কাজ করে অন্যজনকে ধ্বংস করে দেওয়া। দূর্ভাগ্যক্রমে জামায়াতের তখনকার নেতৃত্ব ২য় কাজটি করে- বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো। যা-ই হোক, স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তারাও সেই ক্ষমা পাবার শর্তগুলো মেনে করে এইদেশে স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করতেছিলো। শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর, খন্দকার মোশতাক, সায়েম এবং জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর- জিয়াউর রহমান, শেখ মুজিবের নিষিদ্ধ করা রাজনীতি উন্মোচিত করে- সকল দল ও মত'কে রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি করে দেন। জিয়াউর রহমান ছিলেন দূরদর্শী নেতা এবং প্রশাসক। তিনি চিন্তা করলেন- যত বেশি মত- ততো বেশি পথ, সুতরাং, যারাই ক্ষমতায় থাকবে ভয়ে থাকবে, সতর্ক থাকবে- ভুল করলে- ধরার লোকের অভাব তো নেই। তার মানে, শাসক দল সবসময় সঠিক কাজটাই করার চেষ্টা করবে এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে। জিয়াউর রহমানের এই চিন্তা-চেতনার কারণে, আবার বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরে আসে এবং সেই সুযোগে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামি লিগ এবং পাকিস্তান জামায়াতও- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নাম নিয়ে আবার রাজনীতির ময়দানে ফিরে আসে। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর, এরশাদ ক্ষমতায় আসে এবং স্বৈরাচার হয়ে... পতন হয় ১৯৯০ সালে। সেই স্বৈরাচার এর পক্ষ নিয়ে- প্রথম সুযোগেই বেইমানি করে দেখায়- বহুদলীয় গণতন্ত্রের কারণে রাজনীতি করার সুযোগ পাওয়া আওয়ামি লিগ এবং জামায়াত। ১৯৮৬ সালে এই দুই দল আওয়ামি লিগ এবং জামায়াত আবারও এইদেশের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে এরশাদের সাজানো সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়- তার মানে এরশাদের হাতকে শক্তিশালী করে তোলে। শুনেছি সেই নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা- কোরান ছুঁয়ে বলেছিলেন- যারা (১৯৮৬) এই নির্বাচনে অংশ নিবে- তারা হবে এদেশের জাতীয় বেঈমান। পরে সে নিজেই জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছিলো। তাহলে, কী বোঝা গেলো- জামায়াত এবং আওয়ামি লিগ ১৯৭১ সালে মারামারি করলেও- আসলে তারা আপন মায়ের পেটের দুই ভাই...!! এই দুই দলের জন্মও হয়েছিলো বাংলাদেশ জন্ম হওয়ার আগে- পাকিস্তানে। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতন হওয়ার পর, ১৯৯১ সালে ইতিহাসের প্রথম স্বচ্ছ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বিএনপি ১৪০ আসন লাভ করে- বাকী ১০ আসনের জন্য এই জামায়াতের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় যায় বিএনপি। জামায়াত পেয়েছিলো ১৮ সিট। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে সেই জামায়াত এবার আওয়ামি লিগের সাথে জোট করে তুমুল আন্দোলন করে আওয়ামি লিগকে ক্ষমতায় বসতে সাহায্য করে। আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় পার্টিকে সুবিধা দিলেও, জামায়াত ৩টি সিট ছাড়া কিছুই পায় নাই। আবার ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জামায়াত বিএনপি এর সাথে জোট করে- ২টা মন্ত্রীর পদ সহ ক্ষমতার স্বাদ পায়। এই নির্বাচনে বিএনপি একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করলেও- আন্দোলনের সঙ্গী হিসেবে জামায়াতকে নিরাশ করে নাই। সারমর্ম হলো, এরই মধ্যে জামায়াত- জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং আওয়ামি লিগ'কে খাওয়া শেষ-!!! ২০০৬ এর পরের ইতিহাস তো আপনারা সকলেই জানেন। এতো কিছু জানার পর, এখন আমার প্রশ্ন হলো- একে একে সবাই তো জামায়াত'কে নিয়ে রাজনীতি করেছে- একসাথে খেয়েছে, ঘুমিয়েছে এবং ভোগ করেছে- তখন তো কারোর মুখে রাজাকার বলে বমি আসে নাই- এইটা একদম চরম সত্য কথা। জামায়াত নিজের ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, সকল দলের কাজে লেগেছে- সবার সাথে গেছে। সকল দল তাদের বিপদের সময় জামায়াতকে পেয়েছে বা ব্যবহার করেছে। বিপদ কেটে গেলে ছিটকে ফেলেও দিয়েছে। জামায়াতের একটা দূর্বলতা, কেউ যখন তাদের কানের কাছে গিয়ে জোর গলায় রাজাকার বলে ডাক দেয়- তখন তারা সঠিক উত্তরটা দিতে পারে না। জামায়াতের সবচেয়ে বড়ো বোকামি হলো- তারা মনে করে তারা বেশি বুঝে- অথচ, এটা বুঝে না সবাই তাদেরকে ব্যবহার করেই আজ এতো শক্তিশালী হয়েছে। দেশের কঠিন সময়ে জামায়াত সবসময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এবং সেটা লোভ করতে গিয়ে। জামায়াতের মধ্যে এই মুহূর্তে চিহ্নিত কোনো যুদ্ধাপরাধী নেতা নেই। সুতরাং, জামায়াতকে এখন আর রাজাকারের দলও বলা যাচ্ছে না। এনসিপি, এলডিপি, খেলাফত মজলিস এবং চরমোনাই (সারাজীবন জামায়াতকে মোনাফেক ফতুয়া দিতো)। সবাই তো জামায়াতের সঙ্গে জোট করতেছে- কতেক মুক্তিযোদ্ধাও জামায়াতে যোগ দিয়েছে এবং দিবেও... তারমানে জামায়াত এখন আর রাজাকারের দল নয়-!? ২০টা বছর এইদেশে সঠিক নির্বাচন হয় নাই। দীর্ঘ এই সময়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে কে কতোটুকু শক্তিশালী, সেই হিসেবটা করার জন্য হলেও- উচিত ছিলো সামনের নির্বাচনটা সবাই এককভাবে করা। তাহলে, সকলেই সকলের শক্তিমত্তা সম্পর্কে বুঝতে পারতো এবং পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে গবেষণা হতো। এভাবে, হুজুগে জোট করার কোনো মূল্য নেই- এতে দেশের জনগণের কোনো উপকার হবে না- উন্নয়ন হবে জোটের- অন্যায় করলেও জোটের বাহিরে কেউ কথা বলবার সুযোগ পাবে না। পরিশেষে: একটা কথাই শক্ত করে বলে রাখি- জামায়াত সাকসেস- তবে কিভাবে-!? শুনেন তাহলে- জামায়াতকে আপনারা যারা রাজাকার বা পায়খানা মনে করেন- জামায়াত সেই পায়খানা সবার গায়ে লাগিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে। এই লেখার পরে আর কখনও জামায়াতকে নিয়ে কিছু বলার আছে কিনা- তা ভবিষ্যৎ বলে দিবে। ভবিষ্যৎ জামায়াতের জন্য শুভকামনা কামনা রইলো। তবে, করজোড়ে জামায়াতের নিকট অনুরোধ করছি- দেশে আর প্যাচ লাগাইয়েন না- যেখানে সেখানে গিয়ে আগুনে ঘী ঢালিয়েন না। আপনারা সঠিক পথে থাকলে দেখবেন মানুষই ছুটে যাবে- কাউকে ডাকতে হবে না। কেবল ভারত বিরোধিতায় আমি জামায়াতের সাথে একমত- ভবিষ্যতে এরকম আরও কিছু মিলে যেতে পারে। শুধু দ্বিচারিতার দোকানটা বন্ধ রাখবেন। পিআর, স্থানীয় নির্বাচন, গণভোট- জামায়াত কতো পাগলামী করলো- কী লাভটা হলো- আপনাদের কর্মীরা কয়দিন লাফালাফি করলো- এখন তাদের জবান বন্ধ হয়ে গেছে লজ্জায়। প্রত্যেকটি মবের সাথে জামাতের ইন্ধন রয়েছে বা করিয়েছে। এসব করে মাঝখান দিয়ে অন্য দলগুলোর সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। দেশের এই বিশেষ সময়ে এসব পাগলামি না করলেও হতো। জামায়াত এসব কাজ করেছে, তার একটাই কারণ, তাদের মধ্যে দূরদর্শী নেতার অভাব। সবাই মিলে দেশ গড়ার কাজে একসাথে থাকুন। অপশক্তি যেন আর কোনোদিন ভারত থেকে এদেশে আসতে না পারে, সেই কাজটায় সবসময় একমত থাকতে হবে। জামায়াত এখন রাজাকার মুক্ত। মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজাকার- শব্দ ব্যবহার করে রাজনীতি করা- দেশের জনগণকে দুইভাগ করে- রাজনীতি করার কৌশল চিরোদিনের জন্য এদেশ থেকে কবর দিয়ে দিতে হবে। নেতৃত্বের গুণাবলি-ই হলো একতা।

No comments:

Post a Comment