Sunday, 14 May 2023

রক্ষীবাহিনী কেমন ছিলো তা হুমায়ুন আহমেদ-এর মা আয়েশা ফয়েজের লেখা

আমরা বললেই দোষ? রক্ষীবাহিনী কেমন ছিলো তা হুমায়ুন আহমেদ-এর মা আয়েশা ফয়েজের লেখা পড়ে ইয়াং জেনারেশন জেনে নিও। ‘বাবর রোডের বাসায় ওঠার তিন দিন পর হঠাৎ একদিন রক্ষীবাহিনী এসে হাজির হলো। একজন সুবেদার মেজর জিজ্ঞাসা করল , এ বাড়ি আপনি কোথা থেকে পেলেন ? আমি বললাম সরকার আমাকে দিয়েছে। আমার স্বামী যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তাই। সুবেদার মেজর কিছু না বলে চলে গেল। . আমার মনের ভেতর হঠাৎ করে একটা খটকা লেগে গেল। হঠাৎ করে রক্ষীবাহিনী আসছে কেন? খাণিকক্ষণ পর আরেকজন সুবেদার মেজর এসে হাজির। সে একা নয় , তার সঙ্গে বোঝাই এক ট্রাক রক্ষীবাহিনী।
. সবার হাতে অস্ত্র। সুবেদার মেজরের নাম হাফিজ। ভেতরে ঢুকে বলল , এই বাড়ি আমার। শেখ সাহেব আমাকে দিয়েছেন। আমি বললাম , সে কি করে হয়? আমার সঙ্গে বাসার অ্যালটমেন্ট রয়েছে। . সে কোনো কথা না বলে টান দিয়ে ঘরের একটা পর্দা ছিঁড়ে ফেলল। সঙ্গে আসা রক্ষীবাহিনীর সদস্যদের বলল ছেলেমেয়েদের ঘাড় ধরে বের কর। আমি এত দিনে পোড় খাওয়া পাথর হয়ে গেছি। রুখে দাঁড়িয়ে বলেছি , দেখি তোমার কত সাহস ? সুবেদার মেজর একটু থমকে গিয়ে কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। . দেখতে দেখতে পুরো এলাকা রক্ষীবাহিনী দিয়ে বোঝাই হয়ে গেল। বাসা চারদিকে ঘেরাও হয়ে আছে। কাউকে বাসায় ঢুকতেও দেয় না, বের হতেও দেয় না। কাজল (হুমায়ূন আহমেদ) মহসিন হলে ছিল। খবর পেয়ে এসেছে। . তাকেও ঢুকতে দিল না। সারা রাত এভাবে কেটেছে। ভোর হতেই আমি বের হলাম। পুলিশের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলাম। পুলিশ বলল — আমরা গোলামির পোশাক পরে বসে আছি। . রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা কি করব? বঙ্গভবন, গণভবন এমন কোনো জায়গা আমি বাকি রাখলাম না সাহায্যের জন্য। কিন্তু লাভ হলো না। আমি তুচ্ছ মানুষ। আমার জন্য কার মাথা ব্যথা? রাতে ফিরে এসেছি। আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেবে না। . অনেক বলে ভেতরে ঢুকেছি। রাত আটটার দিকে রক্ষীবাহিনীর দল লাথি মেরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেল। ইকবাল আমাকে আড়াল করে দাঁড়াল। একজন বেয়োনেট উঁচিয়ে লাফিয়ে এলো। রাইফেল তুলে ট্রিগারে হাত দিয়েছে। চিৎকার করে কিছু একটা বলছে। গুলি করে মেরে ফেলবে আমাদের? . আমি ছেলেমেয়েদের হাত ধরে বের হয়ে এলাম। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাকে প্রথমবার গৃহহারা করেছিল। বাংলাদেশ সরকারের রক্ষীবাহিনী আমাকে দ্বিতীয়বার গৃহহারা করল।’ . জীবন যে রকম’ - আয়েশা ফয়েজ

No comments:

Post a Comment