Friday, 1 November 2024

ভারতীয় হাইক‌মিশ‌নের জাতীয় পার্টি

ভারতীয় হাইক‌মিশ‌নের জাতীয় পার্টি ১ ডিসেম্বর ২০১৩। দুপুরে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রেস সচিব সুনীল শুভরায় ফোনে জানালেন, এরশাদ সাহেব ডেকেছেন। বিকেলে বারিধারায় গিয়ে দেখি শুধু আমাকে নয় প্রথম আলোর সেলিম জাহিদ ভাই, ইত্তেফাকের শামসুদ্দিন ভাই, বাংলাদেশ প্রতিদিনের শফিকুল ইসলাম সোহাগকে ডেকেছেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে 'অফ দ্য রেকর্ড' আলাপে এরশাদ সাহেব বললেন, বিএনপি জামায়াতের অবরোধে চারদিকে আগুন। নির্বাচনের পরিবেশ নেই। সব সাংবাদিক সব নেমে আসার পর আমি আবার যাই এরশাদ সাহেবের কাছে। জিজ্ঞাসা করলাম, নির্বাচনে যাবেন? তিনি জোরের সঙ্গে বললেন, নির্বাচনই হবে না। ফিরে লিখেছিলাম, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবার পথ খুঁজছেন এরশাদ। দু'দিন পর এরশাদ সাহেব সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিলেন, নির্বাচনে যাচ্ছেন না। এরপর গায়েব হয়ে গেলেন। প্রয়াত সম্পাদক সারওয়ার ভাই আমাকে অস্যাইনমেন্ট দিলেন যেভাবেই হোক এরশাদ সাহেবকে খুঁজে বের করতে হবে। শীতের সন্ধ্যায় গুলশানে গেলাম জাপার এক জ্যেষ্ঠ নেতারা বাসায়। পুলিশ ঢুকতে দেয় না। সেই নেতাকে দুলাভাই পরিচয় দিয়ে ঢুকে গেলাম। দোতলায় গিয়ে দেখি নেতা বসে আছেন। আমাকে দেখে চমকে বললেন, 'কেনো এসেছিস?' এর মধ্যেই এলেন, আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং আরও দুই অপরিচিত ভদ্রলোক। পরে জানালাম তাঁদের একজন ডিজি ডিজিএফআই জেনারেল আকবর এবং অপরজন ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা (যতদূর মনে পড়ে নাম তাঁর সুব্রত কুমার রায়)। তিনি আঙ্গুল উঁচিয়ে পরিস্কার বাংলায় জাতীয় পার্টির নেতাকে বললেন, 'উনাকে (এরশাদ) নাটক বন্ধ করতে বলুন। সামনে আসতে বলুন। নয়ত রাজনীতিতে মাটিতে মিশিয়ে দেবো।' আমি দরজায় দাঁড়িয়ে চুপচাপ শুনছিলাম। এ সময় জাপার নেতা জিয়াউদ্দিন বাবলু প্রবেশ করলেন। তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, 'কেমন আছ?' হুট করে তোফায়েল সাহেবকে বললেন, 'এটা আমার ছোট ভাই রাজীব। ভালো সাংবাদিক।' শুনেই তোফায়েল সাহেবে হুঙ্কার , ' সাংবাদিক হয়ে থাকতে পারো রাজনৈতিক বৈঠকে?' শুনে আমার কলিজায় পানি না। বাঁচালেন সেই জাপা নেতা। বললেন, 'লিডার ও আমার আত্মীয়। এমনি এসেছে।' আমি পড়িমড়ি করে বের হয়ে, মোটরসাইকেলে একটানে চলে এলাম অফিসে। পরের ঘটনা সবার জানা। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংহ ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় এলেন। এরশাদ সাহেবও অজ্ঞাত স্থান থেকে ২৭ ঘন্টা পর ফিরলেন। সুজাতা সিংহের সঙ্গে বৈঠক করলেন। জানালেন, নিবার্চনে অংশ নিতে ভারতীয় চাপ রয়েছে। তারপর রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার সবাই নির্বাচনে অংশ নিলেন। শুধুমাত্র এরশাদ, জি এম কাদের, লালমনিরহাটারের মুজিবুল হক, মানিকগঞ্জের সৈয়দ মান্নান, রংপুরের আনিসুল ইসলাম মন্ডল নির্বাচন বর্জন করেন। ১৩ কিংবা ১৪ ডিসেম্বর রাতে সোনারগাঁও হোটেলের পাঁচতলায় বসে কীভাবে টিক দিয়ে এমপি বানানো হয়েছে, আমি এর সাক্ষী। সেখানে ছিলেন জাপার সোলায়মান আলম শেঠ। তিনি সে সময়ে সোনারগাঁও হোটেলের পরিচালক ছিলেন। আরও দুইজন ছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাঁদের তিনজনের কেউ এমপি হতে পারেননি। ৫ জানুয়ারির এক তরফা নির্বাচনে জাপার জন ২২ বিনা ভোটে এমপি হয়েছিলেন। যা‌দের অ‌নে‌কে মেম্বার হবার উপযুক্ত ছি‌লেন না। পরবর্তী‌তে এরশাদও উ‌ল্টে গি‌য়ে ৫ জানুয়া‌রির নির্বাচন মেনে নেন। দলটির আজকের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রতিমন্ত্রী হন। এ‌কেই স‌ঙ্গে বি‌রোধীদল আবার সরকা‌রে! নজির‌বিহীন এ কা‌ন্ডের অথচ তারা এখন প্রশ্ন করছেন, আমাদের কী অপরাধ? ২০১৮ সালের নির্বাচন আরেক ইতিহাস। জাপাকে ২৬ আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। বগুড়া-৬ ও ৭, সিলেট-২ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ বাদে বাকি সব আসনে 'জয়ী হয়'। বিএনপির ঘাটিঁ ফেনী-৩ আসনে জাপার জেনারেল মাসুদ ৯৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন! সেবার জাপার ২২ এমপির ১৮ জন ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পান! যার অধিকাংশ আগের রাতে পাওয়া। গত ১১ বছরে জাপা শুধুমাত্র ২০১৮ সালে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার উপনির্বাচনে এবং ২০২৩ সালে ঠাঁকুরগাওয়ের উপনির্বাচনে মোটামুটি স্বচ্ছ ভোটে জয়ী হয়েছে। বাকি সব জালজালিয়াতি কিংবা আওয়ামী লীগের দয়ায় পাওয়া। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আসলেই সরকারের নানা কাজের সমালোচনায় মুখর ছিলেন জি এম কাদের। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে জাপা প্রকাশ্যে বলছিল, অংশগ্রহণমূলক না হলে ভোটে যাবে না। ত‌বে তা মু‌খের কথা ছিল, ম‌নের নয়। ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর রাতে ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেন জি এম কাদের। দলটির এক নেতা হালকা নেশার ঘোরে আমাকে বলে দেন, বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে। তিনিই জানান, জি এম কাদের সাহেব হাইকমিশনারকে নিশ্চিয়তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে তাঁর দল। এ ছাড়া পথ নেই। যাই হোক, আমি নিউজ করে দিলাম। পরেরদিন শুরু হলো, জাপার প্রতিবাদ, আইনী ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি। তবে সমকাল অনড় রইল। ১৬ নভেম্বর সূত্র এবং সবপক্ষের বরাতে সমকালে আবার লিখলাম, যতই হম্মিতম্বি করুক নির্বাচনে যাবে জাপা। আর এসব হম্বিতম্বির কারণ, বিএনপিবিহীন নির্বাচনে বাড়তি কিছু আসন আদায় করা এবং বিরোধীদল হওয়া। ২০২৪ সালে জাতীয় পার্টি ছিল আওয়ামী লীগ প্ল্যান বি। প্রথমে চেষ্টা হয়েছিল, বিএনপিকে ভাঙ্গার। বিএনপি থেকে শ দুইয়েক এমপি হওয়ার মতো নেতাকে ভাগিয়ে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আওয়ামী লীগের টার্গেট ছিল, এই দুই দলের জোটকে পরবর্তী সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসানো। শমসের মবিন চৌধুরীকে বিরোধীদলীয় নেতা বানানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। ডিজিএফআই, এনএসআই বিএনপি নেতাদের তৃণমূল বা বিএনএমে নিতে চাপ লোভ ভয় সবই দেখিয়েছিল, কাজ হয়নি। শাহজাহান ওমরসহ সাত আটজন নির্বাচ‌নে নানা ব‌্যানা‌রে। বিএনপির সব‌চে‌য়ে বড় সফলতা, দল কো‌নো‌দিন ক্ষমতায় আস‌বে কী না এ অ‌নিশ্চয়তার ম‌ধ্যেও নেতারা আনুগত‌্য এবং আদ‌র্শের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বিএনপিকে ভাঙা যাবে আশায়, সেই সময়ে জাপা, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জেপি, তরিকতের মতো দলগুলোকে পাত্তা দেওয়া বন্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ। সমকালে সে সময়ে এসব ঘটনার খবর বিস্তারিত লিখেছি। চেষ্টা হয়েছিল, নিবন্ধনহীন জামায়াতের নেতাদের অন্য দলের ব্যানারে নির্বাচনে নিতে। এ জন্যই ২৮ অক্টোবর বিনাবাধায় সমাবেশ করতে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই চেষ্টার মূল ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু বিএনপির মতো জামায়াতকেও ভাঙতে ব্যর্থ হয় আওয়ামী লীগ। উপায়অন্ত না পেয়ে শেষ পর্যন্ত জাপার দিকে হাত বাড়ায় আওয়ামী লীগ সরকার। তবে এর আগেই জাপা ভারতীয় হাইকমিশনকে দিয়ে চেষ্টা করছিল, আওয়ামী লীগের কাছ থে‌কে বে‌শি সংখ‌্যক আসন আদায়ের। নভেম্বরের ২২ অথবা ২৩ তারিখ রা‌তে রওশনের বাসায় জি এম কাদেরের বৈঠকে দূতাবাসের কর্মকর্তা রাজেশ অগ্নিহোত্রিও ছিলেন। ছিলেন সেই সময়কার ডিজি এনএসআই। ভারতের মাধ্যমে জি এম কাদের আওয়ামী লীগকে রাজি করান, রওশন নয়, তাঁর সঙ্গে ডিল করতে হবে। তাঁকে বিরোধীদলীয় নেতা বানাতে হবে। নিশ্চয়তার পাওয়ার পর জাপা প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম দেওয়া শুরু করে। ৩০ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। সেদিনই নিশ্চিত হয়ে যায়, রওশন এবং তাঁর অনুসারীরা নির্বাচন থেকে ছিটকে গেছেন। কারণ, তাঁরা কেউ দলীয় মনোনয়ন পাননি। তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও রওশনের খেলা শেষ। সে কারণেই ২২ নভেম্বর থেকে বারবার চেষ্টা করেও শেখ হাসিনার দেখা পাননি রওশন। তাঁ‌কে ২০১৪ সা‌লে ব‌্যবহার কর‌লেও, ভার‌তের মাধ‌্যমে সম‌ঝোতার কার‌ণে ২০২৪ সা‌লে টিস‌্যুর ম‌তো ছু‌ড়ে ফে‌লেন হা‌সিনা। রওশন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দেখা পান ২ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্রের জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার পর। জি এম কাদের বারবার দাবি করছেন, ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে জাপাকে জোর করে নেওয়া হয়েছে। তিনি অংশ না নিলে, ২০১৪ সালের মতো রওশনের নেতৃত্বে জাপাকে নির্বাচনে নেওয়া হতো। এ দাবি মিথ্যা। কারণ, ৩০ নভেম্বরেই কনফার্ম হয়ে গিয়েছিল রওশনরা নির্বাচনে নেই। তা জি এম কাদেরের সঙ্গে সমঝোতায় আওয়ামী লীগ করেছিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১৭ ডিসেম্বর। জি এম কাদের চাইলে, সেদিন এক স্বাক্ষরে আর এক চিঠিতে সব প্রার্থী প্রত্যাহার করতে পারতেন। তা করেননি। সুতরাং জোর করে নির্বাচনে নেওয়ার দাবি সত্য নয়। প্রায় এক সপ্তাহ দফায় দফায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বাটোয়ার বৈঠকের পর, ১৬ ডিসেম্বর রাতে গুলশানে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বাসায় জাপার জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠক হয়। সেখানে আমি এবং ইত্তেফাকের শামসুদ্দিন ভাই ছিলাম। রাত ১০টার দিকে খবর আসে, আওয়ামী লীগ ২৬টির বেশি আসন ছাড়বে না। ঢাকায় আসন দেবে না। অর্থাৎ জি এম কাদেরের স্ত্রী ঢাকায় আসন পাচ্ছেন না। সেই রাতে গুলশান থেকে বারিধারায় ভারতীয় দূতাবাসে গিয়েছিলেন জি এম কাদের। পরের দিনও জাপার বনানী কার্যালয়ে ছিলাম আমি। জি এম কাদেরের এ দাবি সত্য, সেদিন তাঁকে ঘিরে ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। তবে তাদের দেনদরবার হচ্ছিল শেরিফা কাদেরের আসনের জন্য। বিকেল তিনটার দিকে হঠাৎ জাপা কার্যালয়ের সামনে স্লোগান উঠে, 'শেরিফা কাদের, ঢাকা-১৮'। এর দুই তিন মিনিট পর ভেতর থেকে ঘোষণা আসে, জাপা নির্বাচনে থাকছে। বাদ পড়ে যান সিলেটের আতিক। সুতরাং জাপাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে, এ দাবি সত্য নয়। জাপা ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে ২৬ আসনে ছাড় পেয়েও ১১ আসন পেয়েছিল। ১৮ ডিসেম্বর থেকে সমকালে লিখেছিলাম জাপাকে ১২ আসন দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো নিজ যোগ্যতায় জিততে হবে। জাপা তা পারেনি। অবশ্য, পারার কারণও নেই। আসলে জাতীয় পার্টির কোনো আসনেই এককভাবে জেতার ক্ষমতা নেই। সংগঠন ভোট কিছুই নেই। রংপু‌রেও দল এখন পঞ্চম শ‌ক্তি। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে জি এম কাদেরের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে স্নেহ করেন সন্দেহ নেই। তেমনি সন্দেহ নেই, অভ্যুত্থানের সফলতার জন্য উদগ্রিব ছিলেন তিনি। কথাবার্তায় আমি নিশ্চিত ছিলাম, কাদের ভাই আওয়ামী লীগের পতন চান। ব্যক্তিগত পর্যায়ের অপমানের কারণে তিনি শেখ হাসিনার উপর তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিলেন। ২০১৪ সাল থে‌কে জাপা রাজ‌নৈ‌তিক দ‌লের প‌রিব‌র্তে এম‌পি বানা‌নোর মে‌শি‌নে প‌রিণত হ‌য়ে‌ছিল। আওয়ামী লী‌গে প্রতি‌যো‌গিতা বে‌শি, আবার টাকাও লা‌গে বে‌শি, তাই সু‌যোগসন্ধানীরা ভর করত জাপা‌তে। কম টাকায় জাপার কোটায় এম‌পি হওয়া ছিল মূল ধান্ধা। এ কায়দায় রওশন আরা, সেলিম ওসমান, জেনা‌রেল মাসুদ, ফজলুসহ আওয়ামী লী‌গের ক‌য়েকজন এম‌পি ব‌নে যান। ২০২৪ সা‌লে আওয়ামী লী‌গের ময়মন‌সিং‌হের এক নেতা নৌকা না পে‌য়ে জাপার কোটায় ভারতীয় দূতবা‌সের মাধ‌্যমের এম‌পি হওয়ার চেষ্টা ক‌রেন। ৩০ কো‌টি টাকা লাগ‌বে শু‌নে কে‌টে প‌ড়েন। জাপা নেতারা নি‌শ্চিত ছি‌লেন, আওয়ামী লীগ সরকার আজীবন থাক‌বে। তাই জাপার এম‌পি হয়েও দালা‌লি করত শেখ হা‌সিনার। তারা ভাব‌তেও পারত না, কখ‌নো অভ‌্যুত্থান হ‌তে পা‌রে। তাই জি এম কা‌দে‌রের চে‌য়ে হা‌সিনার প্রতি বে‌শি অনুগত ছিল। সংস‌দে যে‌তে হ‌লে, আওয়ামী লীগ ছাড়া পথ নেই, এ সমীকরণ থে‌কে জাপা যখন যেভা‌বে পে‌রে‌ছেন দূতাবাস‌কে ব‌্যবহার ক‌রে আওয়ামী লী‌গের উচ্ছি‌ষ্টে ভাগ ব‌সি‌য়ে‌ছে।একজন তো গত বছ‌রের নভেম্ব‌রে ব‌লে‌ছি‌লেন, ভোট সংগঠন না থাকার পরও জাপা টি‌কে আ‌ছে ক‌য়েকজন এম‌পি থাকায়। সংস‌দে না থাক‌লে জাপা ম‌রে যা‌বে। জাপাই বাংলা‌দে‌শে সব‌চে‌য়ে বিশুদ্ধ ভারতপ‌ন্থি দল।যা ছিল শেখ হা‌সিনার অস্বস্তির কারণ । তাই যতভা‌বে সম্ভব জি এম কা‌দের‌কে অপদস্ত না‌জেহাল ক‌রে‌ছেন। হয়ত এই এক‌টি মাত্র কার‌ণেই জি এম কাদের মনে প্রাণে শেখ হাসিনার পতন চেয়েছিলেন এটা যেমন সত্য, আবার জাপা আওয়ামী লীগের দোসর ছিল এটাও সত্য। তবে এর জন্য দলটির কার্যালয়ে হামলা গ্রহণযোগ্য নয়।

একনজরে জুলাই বিপ্লব'২০২৪

একনজরে জুলাই বিপ্লব'২০২৪ একনজরে জুলাই বিপ্লব ২০২৪: ঘটনার পালাক্রমে সাজানো। সংগ্রহে রাখার মত একটি জিনিস। কোনো বিষয় বাদ পড়লো? মতামত জানাবেন। 𝟓 𝐉𝐔𝐍𝐄 - মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে হাইকোর্ট। 𝟔 𝐉𝐔𝐍𝐄 - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ-এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ঢাবি ছাত্ররা। 𝟗 𝐉𝐔𝐍𝐄 - কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আবারও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। - দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন ঢাবি ছাত্ররা। - বিক্ষোভ শেষে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদল সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর স্মারকলিপি দেয়। - কোটা বাতিল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়। 𝟏 𝐉𝐔𝐋𝐘 - বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বাতিলের দাবিতে ছাত্রসমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। - ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহার আহ্বান জানানো হয়। - আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। 𝟐 𝐉𝐔𝐋𝐘 - ঢাবির ছাত্ররা মিছিল নিয়ে এক ঘন্টা শাহবাগ অবরোধ করে। - জাবির ছাত্ররা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ২০ মিনিটের জন্য অবরোধ করেন। 𝟑 𝐉𝐔𝐋𝐘 - ঢাবির ছাত্ররা শাহবাগ মোড় দেড় ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখেন। - ময়মনসিংহে রেললাইনে ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বাঃ কৃঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। - জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। - চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক অবরোধ করেন। - বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। - জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন। 𝟒 𝐉𝐔𝐋𝐘 - প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ 'নট টুডে' বলে আদেশ দেন। - পরের সপ্তাহে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে জানানো হয়। - ছাত্ররা ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে ৫ ঘণ্টা 𝟓 𝐉𝐔𝐋𝐘 - এই দিন শুক্রবারেও চট্টগ্রাম, খুলনা ও গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারী ছাত্ররা। 𝟔 𝐉𝐔𝐋𝐘 - দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের দিনের মতোই বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। - আন্দোলনকারীরা সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ছাত্র ধর্মঘট এবং সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ডাক দেন। এর নাম দেওয়া হয় ‘বাংলা ব্লকেড’। 𝟕 𝐉𝐔𝐋𝐘 - বাংলা ব্লকেডে স্থবির রাজধানী। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা। 𝟖 𝐉𝐔𝐋𝐘 - ঢাকার ১১টি স্থানে অবরোধ, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ৩টি স্থানে রেলপথ অবরোধ এবং ৬টি মহাসড়ক অবরোধ। - সারাদেশের ছাত্রদের নিয়ে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' নামে ৫৭ সদস্যের সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়। 𝟗 𝐉𝐔𝐋𝐘 - হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী আবেদন করে। - ঢাকার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪ ঘন্টা অবরোধ কর্মসূচি 'বাংলা ব্লকেড' পালন করা হয়। - পরদিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা 'বাংলা ব্লকেড'-এর ঘোষণা দেওয়া হয়। 𝟏𝟎 𝐉𝐔𝐋𝐘 - কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের। শুনানির জন্য ৭ আগস্ট দিন রাখা হয়। - ছাত্ররা ভুল করেছে মর্মে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি। তিনি আরো বলেন, 'রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন করা যায় না। এটি সঠিক পদক্ষেপ না'। 𝟏𝟏 𝐉𝐔𝐋𝐘 - পুলিশের বাধার মুখেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ পালন করেন আন্দোলনকারীরা। - ওবায়দুল কাদের বলে, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছে। এটি অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণ বেআইনি। - স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলে, শিক্ষার্থীরা 'লিমিট ক্রস' করে যাচ্ছে। 𝟏𝟐 𝐉𝐔𝐋𝐘 - শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। - রেলপথ অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 𝟏𝟑 𝐉𝐔𝐋𝐘 - তথ্য মন্ত্রী আরাফাত বলে, বিচারাধীন বিষয়ে সরকারের এখন কিছু করার নেই। 𝟏𝟒 𝐉𝐔𝐋𝐘 - রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনকারীরা সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন ছাত্ররা। - শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ব্যঙ্গ করে "রাজাকারের নাতি-পুতি" বলে বসেন। - এর প্রতিবাদে রাত নয়টার দিকে ঢাবির বিভিন্ন হলে শ্লোগান ওঠে, “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার! কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার! স্বৈরাচার!” - এই শ্লোগান এতোই জনপ্রিয় হয় যে, মুহূর্তেই দেশের সকল পাবলিক ভার্সিটিতে ছোঁয়া লাগে। সকল ভার্সিটিতেই এই শ্লোগান চলে রাতভর। - রাতে চবিতে ছাত্রদের মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। 𝟏𝟓 𝐉𝐔𝐋𝐘 - ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলে, আন্দোলনকারীদের 'রাজাকার' স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে। - ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম বলে, যাঁরা ‘আমি রাজাকার’ স্লোগান দিচ্ছেন, তাঁদের শেষ দেখে ছাড়বো। - কাদের ও সাদ্দামের মন্তব্যের পর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হানাদার বাহিনী ঢাবির আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করে। ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি করে। - ভয়াবহ আক্রমণে ২৯৭ জন ছাত্র আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন। - হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনকারী ও হামলাকারী ছাত্রলীগ উভয়ে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। 𝟏𝟔 𝐉𝐔𝐋𝐘 - পুলিশের গুলিতে রংপুরে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ওয়াসিম, শান্ত, ফারুক ও ঢাকায় সবুজ আলী ও শাহজাহান শাহদাতবরণ করেন। - সাদ্দাম আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলে, "আমরা দেখে নেব, কত ধানে কত চাল"। 𝟏𝟕 𝐉𝐔𝐋𝐘 - ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিতাড়ন করে 'রাজনীতিমুক্ত' ঘোষণা করে সাধারণ ছাত্ররা। - পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের মুখে ঢাকা বিশ্বঃ শিক্ষার্থীদের কফিন মিছিল পণ্ড হয়ে যায় - সারা দেশে ছাত্র বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা। - রাত সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী, ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন ও ছাত্র আন্দোলনকারীদের পরোক্ষ হুমকী দেন। - বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে অনেক শিক্ষার্থী সন্ধ্যা নাগাদ ক্যাম্পাস ছেড়ে যান। তবে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও অনেক ছাত্রছাত্রী হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। - মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। 𝟏𝟖 𝐉𝐔𝐋𝐘 - ছাত্রদের ঘোষণা অনুসারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হয়। - সারাদেশের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিলে হানাদার আওয়ামী পুলিশ বাহিনীর হামলা। - প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা এদিন আন্দোলনের মূল হাল ধরে। - মুগ্ধ, ফাইয়াজ সহ মোট ৪৮ জন শাহদাতবরণ করেন। - নরসিংদীতে নবম শ্রেণির তামিমের মৃত লাশকেও পুলিশ গুলি করে। - সংঘর্ষ বেশি হয় ঢাকায়। - সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন। - রাত ৯ টা থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অফ করার মাধ্যমে দেশকে সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করা হয়। 𝟏𝟗 𝐉𝐔𝐋𝐘 - শিক্ষার্থীদের 'কমপ্লিট শাটডাউন' বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। - দেশের বিভিন্ন জেলাতেও ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতা হয়। - পুলিশ ও বিজিবির নৃশংস গুলিতে ১১৯ জন শাহদাতবরণ করেন। এদিন আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়। প্রকৃতপক্ষে এইদিন গণহত্যা চালানো হয় তাই প্রকৃত নিহত ধারণা করা হয় ৬ শতাধিক। এদিন রাস্তায় ছাত্রদের চাইতেও বেশি ছিল নানান শ্রেণি পেশার মানুষ। - ঢাকার যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, রামপুরা-বাড্ডা, সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর ১ ও ১০, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, সাভার ছিল আন্দোলনের মূল হটস্পট। - হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে ৪ বছরের শিশু, ৬ বছরের রিয়া গোপ সহ বাসার মধ্যেও অনেকে শহীদ হয়। - 𝐌𝐈𝐒𝐓 -র ছাত্র ইয়ামিনের নিথর দেহ নির্মমভাবে পুলিশের এপিসি থেকে টেনে ফেলে দেওয়া হয়। - রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি, সেনা মোতায়েন। 𝟐𝟎 𝐉𝐔𝐋𝐘 - দেশজুড়ে কারফিউ, সেনা মোতায়েন। সাধারণ ছুটি ঘোষণা। - রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ধাওয়া ও গুলি। উল্লেখযোগ্য স্থান হচ্ছে, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বাড্ডা, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর। - পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে মোট ৭১ জন শাহদাতবরণ করেন। ছাদে আত্মরক্ষায় ঝুলে থাকা একজনকে পর পর ৬টি গুলি করে পুলিশ। - প্রধান সমন্বয়ক নাহিদকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। - আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক তিন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আট দফা দাবি পেশ। - সমন্বয়কদের আরেকটি অংশ ৯ দফা দাবি পেশ করে। 𝟐𝟏 𝐉𝐔𝐋𝐘 - শুনানী এগিয়ে কোটা সংস্কার করে ৭% কোটা রেখে রায় প্রদান করে আদালত। - এদিনও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন অব্যাহত থাকে। - হানাদার পুলিশ ও বিজিবির নির্মম গুলিতে ৩১ জন শাহদাতবরণ করেন। - চার দফা দাবি পূরণের জন্য বৈষম্যবারোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দেয়। চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা, শিক্ষার্থীদের আসার ব্যবস্থা করে দিয়ে হল খুলে দেওয়া, আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কারফিউ তুলে দেওয়া। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁরা। - নাহিদকে ব্যাপক নির্যাতন করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায় পুলিশ। 𝟐𝟐 𝐉𝐔𝐋𝐘 - কোটা সংস্কার করে প্রকাশিত রায়ের প্রজ্ঞাপনের প্রস্তুতি চলে। - প্রতিদিন মানুষ হত্যার প্রতিবাদে সাধারণ ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। তবে আন্দোলন স্তিমিত হতে থাকে। - এদিনও ১০ জন শাহদাতবরণ করেন। এর মধ্যে কয়েকজন ছিলেন আগের আহত হওয়া। 𝟐𝟑 𝐉𝐔𝐋𝐘 - কোটাপ্রথা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি। - সরকার কয়েক হাজার মামলা দিয়ে গণগ্রেপ্তার শুরু করে। 𝟐𝟒 𝐉𝐔𝐋𝐘 - কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়। - নিখোঁজ থাকার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দুজনই জানান। - আর রিফাত আত্মগোপনে থাকেন। - ব্লক রেইড দিয়ে গণগ্রেপ্তার চলতে থাকে। 𝟐𝟓 𝐉𝐔𝐋𝐘 - আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কোটা সংস্কারের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটিকে তাঁরা চূড়ান্ত সমাধান মনে করছেন না। যথাযথ সংলাপের পরিবেশ তৈরি করে নীতিনির্ধারণী জায়গায় সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন দেয়ার শর্ত দেন। - শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের ভাঙ্গা অংশ দেখে চোখের পানি ফেলতে শুরু করে। 𝟐𝟔 𝐉𝐔𝐋𝐘 - এলাকা ভাগ করে চলে 'ব্লক রেইড'। সারা দেশে অভিযান। সারা দেশে অন্তত ৫৫৫টি মামলা। গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৬ হাজার ২৬৪। ঢাকা শহরে ছাত্রদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। - সাদা পোষাকে ডিবি হারুনের সন্ত্রাসীরা হাসপাতাল থেকে ছাত্রনেতাদের তুলে নিয়ে যায়। 𝟐𝟕 𝐉𝐔𝐋𝐘 - ১১ দিনে গ্রেপ্তার ৯ হাজার ১২১ জন। আতঙ্কে মানুষ ঘরছাড়া। - ছাত্রনেতাদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করতে থাকে ডিবি হারুন গং। 𝟐𝟖 𝐉𝐔𝐋𝐘 - মোবাইল ইন্টারনেট ১০ দিন পর সচল। - কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে হেফাজতে নেয় ডিবি হারুন। - ডিবি হারুন জোর করে গান পয়েন্টে ছাত্রনেতাদের দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতি আদায় করে। - আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক মাহিন সরকার, আব্দুল কাদের ও আব্দুল হান্নান মাসুদ অজ্ঞাত স্থান থেকে আগের বিবৃতি প্রত্যাহার ও ৯ দফা দাবী নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। - রংপুরে আবু সাইদ হত্যা মামলায় ১৬ বছরের কিশোরকে আসামী করে গ্রেপ্তার করা হয়। - সদ্য এসএসসি পাশ করা কিশোরকে কোমরে দড়ি বেধে রিমান্ডে নেওয়া হয়। 𝟐𝟗 𝐉𝐔𝐋𝐘 - ছাত্র আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য খুনী হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের মিটিং-এ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। - একইসাথে ছাত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে খুনসহ অন্যান্য মামলা দিয়ে কঠোর শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গণহত্যাকারী ১৪ দল। - ডিবি হারুন কর্তৃক জোর করে বিবৃতি আদায়ের ঘটনায় ছাত্ররা আবার বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। - চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, জাবি ও রাবিতে পুলিশ ছাত্রদের ওপর হামলা করে। - অনেক ক্যাম্পাসে ছাত্রদের সাথে শিক্ষকরাও বিক্ষোভ করে। 𝟑𝟎 𝐉𝐔𝐋𝐘 - হত্যার বিচার চেয়ে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মিছিল করে ছাত্র ও শিক্ষকরা - জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতি, স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান। - ফেসবুকের প্রোফাইল লাল রঙের ফ্রেমে রাঙায় সারাদেশের মানুষ। গণহত্যাকারী ও তাদের পক্ষীয়রা কালো ফ্রেম দেয়। - নাটক ও সিনেমা সংশ্লিষ্ট মানুষরা খুনী হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেন। 𝟑𝟏 𝐉𝐔𝐋𝐘 - ছাত্ররা 'রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস' কর্মসূচি পালন করে। - ৯ দফার পক্ষে জনমত গঠন করতে থাকে ছাত্ররা। - সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউয়া কাদের। - ঢাবির শিক্ষকরা সমন্বয়কদের ছাড়াতে ডিবি অফিসে গেলে পুলিশ তাদের হেনস্তা করে। পরিবারের সাথেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি। 𝟏 𝐀𝐔𝐆𝐔𝐒𝐓 - ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। - ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেয় ডিবি। 𝟐 𝐀𝐔𝐆𝐔𝐒𝐓 - ৯ দফা আদায়ের দাবিতে সারাদেশে গণমিছিল করে ছাত্র জনতা। - রাজধানীসহ বিভিন স্থানে পুলিশের সাথে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ হয়। - পুলিশের গুলিতে ৩ জন শাহদাতবরণ করেন। পরিস্থিতি আবারো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। - ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ১৫ হাজার মানুষ। - ৯ দফা না মেনে গণগ্রেপ্তার ও গণহত্যা চালু রাখার প্রতিবাদে শহীদ মিনারে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্র জনতা। - কয়েক লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে নয় দফা বাদ দিয়ে ১ দফার (খুনী হাসিনার পদত্যাগ) ঘোষণা দেয় ছাত্রনেতারা। 𝟑 𝐀𝐔𝐆𝐔𝐒𝐓 - সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান তার অফিসারদের নিয়ে মিটিং করেন। সেখানে তিনি এই বার্তা পান যে, সেনাবাহিনী আর গুলি করতে প্রস্তুত নয়। - হাসিনা ছাত্রদের আলোচনা করার প্রস্তাব দেয়। প্রয়োজনে মন্ত্রীদের কয়েকজন পদত্যাগ করার ঘোষণাও দেন। ছাত্ররা সব আলোচনা নাকচ করে দেন। - আবারো মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। - শহীদ আবু সাইদের খুনী দুইজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত ও প্রেপ্তার করে পুলিশ। - ছাত্রজনতাকে রাস্তায় প্রতিহত করতে কড়া নির্দেশ দেয় খুনী হাসিনা। 𝟒 𝐀𝐔𝐆𝐔𝐒𝐓 - রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসী। এদিন পুলিশের সাথে আওয়ামী সন্ত্রাসীরাও ছাত্রদের গুলি করে। কিন্তু হাজার হাজার ছাত্র ইট পাটকেল দিয়ে সন্ত্রাসী পুলিশ-বিজিবিকে প্রতিরোধ করে। - কয়েকটি স্থানে সেনাবাহিনী ছাত্রদের পক্ষ নেয়। - সারাদেশে ১৩০ জন খুন হন। এর মধ্যে ছাত্রলীগ, পুলিশ ও যুবলীগেরও কিছু সদস্য রয়েছে। লাখো ছাত্ররা সন্ত্রাসীদের অনেককে ভালোভাবে উত্তম-মাধ্যম দেয়। - ৬ আগস্টের স্থলে পরদিনই (৫ আগস্ট) ঢাকামুখী লং-মার্চের কর্মসূচি এগিয়ে আনে ছাত্র জনতা। - অনেক আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অফিস ও বাড়িতে আগুন দেয় ছাত্র-জনতা। 𝟓 𝐀𝐔𝐆𝐔𝐒𝐓 - সকাল থেকেই ব্যাপক মারমুখী অবস্থান নেয় পুলিশ-বিজিবি-আনসার। - সারা ঢাকা শহরে খন্ড খন্ড যুদ্ধ শুরু হয় ছাত্র জনতার সাথে। - সকাল সাড়ে দশটার পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অফ করা হয়, আবারো দেশ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। - হাসিনার মূলত প্ল্যান ছিল সেনাবাহিনীকে দিয়ে লংমার্চে ছাত্র জনতার উপর গণহত্যা চালানো। - সেনাবাহিনী গুলি চালানো হতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং হাসিনাকে ৪৫ মিনিট সময় বেধে দেয় পালানোর জন্য। - হাসিনা দুপুর একটায় বঙ্গভবন এসে পদত্যাগ করে। এরপর সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে (টেইল নাম্বার ৭২১০) এয়ারপোর্টে এসে বিমানবাহিনীর একটি কার্গো বিমানে ভারতে পালিয়ে যায়। - কর্মরত পুলিশরা এই খবর না জানায় তারা জনতার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অনেক মানুষকে তারা খুন করতে থাকে। - সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান দুইটায় ভাষণ দিবেন বলে ঘোষণা দেন। - ১:৩০ এর পর পুলিশ ও সেনাবাহিনী শাহবাগের রাস্তা ছেড়ে দেয়। - ২ টার কিছু আগে মানুষ জেনে যায়, হাসিনা পালিয়ে গেছে। - সারাদেশের বিশেষভাবে ঢাকার মানুষ সব রাস্তায় নেমে উদযাপন করতে থাকে। - গলিতে গলিতে মিস্টি বিতরণ ও ঈদ মোবারক বলে কোলাকুলি করতে থাকে মানুষ। - রাস্তায় রাস্তায় মানুষ সিজদা দিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে থাকে। - বিকাল চারটায় সেনাপ্রধান জেনাঃ ওয়াকারুজ্জামান আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট ফর্মের ঘোষণা দেন। Collected from Masud Kaium brother

Thursday, 31 October 2024

আপোষ করলে খালেদা জিয়া আজ পর্যন্ত যা যা হারিয়েছেন, কিছুই হারাতে হতো না।

আপোষ করলে খালেদা জিয়া আজ পর্যন্ত যা যা হারিয়েছেন, কিছুই হারাতে হতো না। কিচ্ছু না। সেই এরশাদের সময় থেকে শুরু। মাত্র ২০ কোটি টাকার কাছে বিক্রি হয়ে হাসিনা পাতানো ইলেকশনে গেল। খালেদা গেলেন না। বাংলাদেশের মানুষ অবাক হয়ে দেখলো, সাধারণ একজন গৃহবধূ কোন ফাঁকে যেন হয়ে উঠেছেন অসাধারণ এক রাজনীতিবিদ। যাকে ভাঙা যায়, মচকানো যায় না। ১/১১ তে হাসিনা দেশ ছাড়লেন। খালেদা ছাড়েননি। তারেক রহমানের উপর অকথ্য নির্যাতন চললো। মা হিসেবে খালেদা যদি ১/১১ র সরকারের সাথে আপোষ করেও বসতেন, আমি একটুও দোষ দিতাম না। হাজার হলেও তিনি একজন মা। নিজের সন্তানকে বাঁচানোর অধিকার তাঁর আছে। খালেদা সেটাও করলেন না। তারেককে ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের মা। জেদ ধরে বসে থাকলেন, মাইনাস টু ব্যর্থ হয়ে গেল। এরশাদের মতো ১/১১ র সকল কুশীলব আবারও জানলো এই মহিলার জেদ আছে। প্রণব মুখার্জির সাথে বৈঠকটা ছিলো ভারতের সাথে খালেদার শেষ রাজনৈতিক সমঝোতার সুযোগ। সম্ভবত জামায়াতে ইসলামির হরতাল ছিলো ঐ দিন। যেতেই পারতেন। গেলেন না। খালেদা নিজেও জানতেন, প্রণবের বৈঠক প্রত্যাখ্যান করার ফলাফল কী হতে পারে। তাও করলেন। সাফ জানিয়ে দিলেন, হরতালের প্রোগ্রাম আছে। তিনি বের হবেন না। শাহবাগের বিরোধিতা খালেদা শুরু থেকেই করেছেন।শাপলার পক্ষে ছিলেন। ৪ মেতে খালেদা চেয়েছিলেন অবস্থান কর্মসূচ দেবেন। ঢাকার কয়েকজন প্রভাবশালী বিএনপি নেতার কারণে খালেদা ঐদিন কর্মসূচি থেকে সরে আসেন। অথচ সরকারের পতন ৫ মেতেই হতে পারতো। ২০১৪ ইলেকশনে বিএনপি গেলে খালেদাকে জেলে যেতে হতো না। হাসিনা নার্ভাস ছিলেন। সালমান এফ রহমানসহ বহু নেতা বিদেশ চলে গেছিলেন। হাসিনা ইভেন খালেদাকে ৫ টা মন্ত্রনালয়ের ভাগ দিতেও চেয়েছিলেন। অফারটা নিলে বিএনপি সরকারে না আসলেও অন্তত ১০০ টা সিট নিয়ে বিরোধী দলে বসতে পারতো। খালেদার জেলে যেতে হতো না। বাট মানুষের ভোটে যে নেত্রী আজ পর্যন্ত একবারও হারেননি, তিনি সাজানো ভোটে কেন যাবেন? গেলেন না। বললেন, কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট দাও। বালুর ট্রাক দিয়ে বন্দি করা হলো খালেদা জিয়াকে। সেই বালুর ট্রাক সরাতে কেউ আসলো না। বোঝা গেল, খালেদার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির সিনিয়র নেতারা নাখোল ছিলেন। তারা সিট চেয়েছিলেন। খালেদা জিয়া চাননি। মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ব্যর্থ হলো। নেতাদের কিছুই হলো না। শুধু জনি ১৯ টা গুলি খেয়ে মরে গেলেন, খালেদা জিয়া শুধু জেলে চলে গেলেন। হাসিনার নোংরামি সমন্ধে খালেদার অজানা ছিলো না। নিজের দলকেও কি খালেদা কম জানতেন? যে দলের বুড়ো নেতারা তাঁর বাসার সামনের বালুর ট্রাক সরাতে পারে নাই, সেই নেতারা তাকে যে জেল থেকেও বের করবে না, খালেদা জিয়া ভালো করেই জানতেন। জানতেন, জেলে তাকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হবে না, বরং বিষ দিয়ে মেরেও ফেলা হতে পারে। সবকিছু জেনে বুঝেই খালেদা জেলে গিয়েছিলেন। কেন? যাতে নিজের যা হয় হোক, দলের রাজনীতিটা তবুও বাচুক। খালেদা চাইলেই লন্ডন চলে যেতে পারতেন,। তখন নিজে বাঁচতেন, তবে দলের রাজনীতি শেষ হয়ে যাইতো। হাসিনা বলতো, দেখেছো? বিচারের ভয়ে পালিয়েছে। খালেদা নিজেকে কুরবানি করে দলটাকে বাঁচানোর ডিসিশন নিলেন। আওয়ামীলীগ নিয়ে মির্জা ফখরুল, রুমিন ফারহানা বা আমির খসরুরা যখন আওয়ামীলীগের ভাষায় কথা বলে, আমার অবাক লাগে না। এরাই তো তারা, যারা খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে সরকারের কাছে প্লট চেয়েছে। এরা তো তারা, যাদের পরিবার ছিলো, ব্যবসা ছিলো, মাঝেমধ্যে জেল ছাড়া যাদের আর কোন ক্ষতি হাসিনা করেনি। ক্ষতি হয়েছিলো খালেদা জিয়ার। স্বামী হারিয়েছেন কম বয়সে, শেষ পর্যন্ত ছেলে নাতি কাউকেই তো পেলেন না। আর ক্ষতি হয়েছে নুর বা জনির মতো তৃণমূলের নেতা কর্মীদের। আজ যারা আওয়ামীলীগের পক্ষে কথা বলতেছে, ফখরুল বা রুমিন, এরা কৃতজ্ঞতা বশেই বলছে। আওয়ামীলীগ তাদের কম তো দেয় নাই। আমার দুঃখ একটাই। সম্ভবত একটুও দেরিই হয়ে গেল। খালেদা জিয়া যদি একটু সুস্থ থাকতেন। একটাবার যদি রাজনীতি করার একটুখানি সুযোগ এই মানুষটা এখন পেতেন, সংবিধান, রাষ্ট্রপতি বা আওয়ামীলীগ নিয়ে বিএনপির এই মাতলামি আর দেখতে হতো না। বরং খালেদা জিয়া একেবারে রাইট ডিসিশনটাই নিতেন। আমরা শুধু জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দূরদুর্শিতার কথাই বলি। অথচ খালেদা জিয়াও কি দূরদর্শী ছিলেন? আজ থেকে দশ বছর আগেই এই মহিলা বলেছিলেন, আওয়ামীলীগ পচে গেছে। এই আওয়ামীলীগ একদিন দুর্গন্ধ ছড়াবে। এরচে একুরেট কোন প্রোফেসি গত ১০ বছরে কোন রাজনীতিবিদ করতে পেরেছিলেন? আওয়ামীলীগ আর বিএনপির মধ্যে পার্থক্য করতে গিয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ওদের হাতে আছে গোলামির জিঞ্জির, আমাদের আছে স্বাধীনতার পতাকা। সারাটাজীবন লড়াই করে খালেদা জিয়া বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, ঢাকা আর দিল্লির প্রশ্নে হাসিনা যতবার দিল্লির কাছে দাসত্বের দস্তখত দিয়েছেন, খালেদা তত শক্ত করে ঢাকাকে আকড়ে ধরেছেন। ভারতও জানতো, এই মহিলাকে জেলে ঢোকানো যায়, কিন্তু একে কেনা যায় না। শেষদিকে খালেদা জিয়ার কিছুই ছিলো না। পদ ছিলো না, দলের অতো সাংগঠনিক শক্তি ছিলো না, সন্তানরা কাছে ছিলো না, সকল ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করা ছিলো, এমনকি ঢাকার বাড়িটাও ছিলো না। খালি ছিলো ঐ পতাকাটা। এমনকি চরম শত্রুও বলতে পারবে না, খালেদা জিয়া একবারের জন্যও কারো কাছে দেশ বিক্রি করেছেন। আজকালকার প্রজন্ম যখন বলে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে কোন মহিলাকে চাই না। তখন কষ্ট হয়।ওদের দোষ দিই না। ওরা মহিলা প্রধানমন্ত্রী বলতে চেনে হাসিনাকে। দেশ বেঁচে খাওয়া ছাড়া যার আর কোন কাজ ছিলো না। মুখের ভাষা ছিলো তৃতীয় শ্রেণীর। নোংরা কথার মানুষ ছিলেন। এই প্রজন্ম একটাবারের জন্য যদি খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে পেত!! বুঝতো, সমস্যাটা ছেলেতে বা মেয়েতে না। সমস্যাটা শিরদাড়ায়। বহু পুরুষ নেতা, এরশাদের মতো তথাকথিত শক্তাশালী জেনারেল যখন দিল্লির তাবেদারি করেছে, খালেদা জিয়া তখন দিল্লির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বাইরে নেওয়া হচ্ছে চিকিৎসার জন্য। মহান আল্লাহ তাআলা তাকে সুস্থতা দান করে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিক। রাজনীতি থেকে খালেদার আর পাওয়ার কিছু নাই। বাট খালেদা জিয়ার থেকে এখনও আমাদের পাওয়ার অনেক কিছুই আছে। এখনও যদি চোখ বন্ধ করে কারো উপর ভরসা করা যায়, বিশ্বাস করা যায়, স্বাধীনতার পতাকার জিম্মাদারি দেওয়া যায়, সেটা একমাত্র খালেদা জিয়াকেই করা যায়। আর কাউকে না।

Wednesday, 30 October 2024

আমাদের পূর্বপুরুষরা....

আমাদের পূর্বপুরুষরা কৃষক ছিলেন, শ্রমিক ছিলেন। থাকতেন মাটির কাঁচা ঘরে। অর্থাভাবে-অন্নাভাবে কখনও-সখনও উপোসও করতেন। পরতেন মলিন পোশাকপরিচ্ছদ। আমাদের বাবারা চাইলেন আমরাও যেন পূর্বসূরিদের মতো শ্রমিক না হই, আমাদেরকেও যেন মাটির ঘরে থাকতে না হয়, আমরা যেন পাকা ঘরে থাকি, যেন পেট পুরে তিনবেলা খেতে পাই। বাবারা আমাদেরকে নিয়ে বাসে-ট্রেনে-লঞ্চে করে গ্রাম ছাড়লেন, মফস্বলে এনে পড়াশোনা করালেন, টিনশেড ঘরে রাখলেন। আমরা পড়াশোনা করলাম, মফস্বল ছাড়লাম, উচ্চশিক্ষার্থে মহানগরে এলাম, স্নাতক হলাম, স্নাতকোত্তর হলাম; পূর্বপুরুষদের বিশাল বাড়ি ছেড়ে অ্যাপার্টমেন্ট নামক কংক্রিটের বস্তিতে উঠলাম, কায়িক পরিশ্রম থেকে মুক্ত হলাম, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজকর্ম (আসলে কেরানিগিরি) করে জীবিকা নির্বাহ করা শুরু করলাম, পোশাকে-আশাকে ফিরিঙ্গিদের মতো ফিটফাট হলাম, শরীরে-মনে আভিজাত্য এল। আমাদের পা আক্ষরিক অর্থেই আর মাটিতে পড়ল না, গা আর বৃষ্টিতে ভিজল না। আমরা মাটির ঊর্ধ্বে উঠে গেলাম, বৃষ্টির ঊর্ধ্বে চলে গেলাম। সর্বোচ্চ স্মৃতিশক্তি প্রয়োগ করেও আমরা মনে করতে পারি না— আমরা সর্বশেষ কবে মাটিতে হেঁটেছিলাম, বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম বা ঘাসের ছোঁয়া পেয়েছিলাম। এমনকি, নিজের কেনা অ্যাপার্টমেন্টের ছাদের চাবিও আমাদের কাছে থাকছে না, আমাদের মিলছে না নিজের মালিকানাধীন ভবনেরও ছাদে যাওয়ার অবাধ সুযোগ। মানুষ চাঁদে যাচ্ছে, আমরা পারছি না ছাদেও যেতে। আমাদের দাদারা ছিলেন সুন্দর খাঁ, সুরুজ আলি কিংবা ময়েজুদ্দিন। আমরা হলাম ফাহাদ ফারাজ অনন্য, ইফতেখার ইশমাম ইশতি কিংবা আহনাফ মুনতাসির উচ্ছ্বাস। আমাদের দাদিরা ছিলেন সূর্য ভানু, করিমন বেওয়া কিংবা জরিতন নেছা। আমরা হয়েছি আনিকা আজিজ অর্নি, মালিহা তাবাসসুম অবন্তী কিংবা সেগুফতা শেহরিন আনিলা। আমাদের কারো-কারো নামের আগে-পিছে-মাঝে যুক্ত হতে লাগল এসএম, কেএম, এবিএম, আ ক ম, আ ন ম, আ আ ম স। আমাদের নাম ক্রমশ শক্ত হতে লাগল, কাটখোট্টা হতে লাগল, দুর্বোধ্য হতে লাগল। অথচ আমাদের পূর্বপুরুষরা সোজাসাপটা নাম ধারণ করেই একটা জীবন কাটিয়ে দিয়ে গেছেন, তাতে তাদের বেঁচে থাকতে সবিশেষ অসুবিধে হয়নি। আমরা আলুভর্তার নাম দিয়েছি ম্যাশড পটেটো উইথ গ্রিন চিলি, পুদিনা পাতা দেওয়া লেবুর শরবতের নাম দিয়েছি মিন্ট লেমনেড, ভাতের মাড়ের নাম দিয়েছি চিকেন থাই সুপ। নতুন নামের খাদ্যের দাম শতগুণ হলেও পুরোনো সেই স্বাদ আমরা আর পাচ্ছি না। আমরা গায়েহলুদকে বানিয়েছি মাহেন্দি নাইট, কনে নাওয়ানোর নাম দিয়েছি ব্রাইডাল শাওয়ার, বউভাতকে বিদায় করে আমদানি করেছি রিসিপশন। আমাদের নামাজ, রোজা, রমজান, সেহরি, জিলাপি হয়ে গেছে যথাক্রমে সালাত, সাওম, রামাদান, সুহুর, জালেবি; কিন্তু হারিয়ে গেছে আমাদের ভাবগাম্ভীর্য, হারিয়েছে আধ্যাত্মিকতা, হারিয়েছে সহজিয়া জীবনবোধ; বিনিময়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে জেঁকে বসেছে উত্তুঙ্গ উগ্রবাদ আর পৌনঃপুনিক প্রদর্শনবাদ। কায়িক পরিশ্রম না-করতে না-করতে আমাদের দেহে পুরু চর্বি জমল, সার্বক্ষণিক রোগবালাই বাসা বাঁধল, ডায়াবেটিস হানা দিলো। চিকিৎসকরা আমাদের খাবারের পরিমাণ বেঁধে দিলেন— দিনে ছয় কাপ ভাত, চারটা রুটি, এক কাপ শবজি, একটা শশা, দেড়টা গাজর, আড়াইটা আঙুর। চিকিৎসকরা আমাদেরকে প্রতিদিন দৌড়াতে বলে দিলেন। আমরা স্টপওয়াচ চালু করে হাফপ্যান্ট পরে ভুঁড়ি নাচিয়ে রাজপথে দৌড়াতে লাগলাম, জিমনেশিয়ামে গিয়ে বাঁদরের মতো এ-ডাল ও-ডাল ঝুলতে লাগলাম, বুকডনের নামে নাকে খত দিতে লাগলাম; আমরা সেসবের গালভরা নাম দিলাম— 'ওয়ার্ক আউট', 'ক্যালরি বার্ন'। শহরে থাকতে-থাকতে ক্লান্ত হয়ে আমরা দু-তিন মাস পরপর ছুটতে লাগলাম রিসোর্টে। একটু গাছপালা আছে, ডোবার মতো একটা হাজামজা পুকুর বা পচা-গলা সুইমিংপুল আছে, ছাদ বা বেড়া খড়কুটোর, সন্ধ্যার পর গোটা দশেক জোনাকির দেখা পাওয়া যায়, বৃষ্টি হলে চার-পাঁচটা ব্যাঙ ডাকে— বেছে-বেছে আমরা এমন রিসোর্টে যাওয়া শুরু করলাম, ভাড়া গুনতে লাগলাম রাতপ্রতি দশ হাজার। রিসোর্টে লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক দিয়ে ভাত খেয়ে বিল দেওয়া শুরু করলাম বেলাপ্রতি মাথাপিছু একহাজার; বারবিকিউ নামক মাংসপোড়ার পেছনে ঢালতে লাগলাম আরো হাজার-হাজার। বারবিকিউর সাথে আমরা খাই তেল-ছাড়া পরোটা, অথচ আমাদের পূর্বপুরুষদের স্বপ্ন ছিল বড়লোক হয়ে একদিন তারা তরকারিতে ইচ্ছেমতো তেল খাবেন। আমরা— উত্তরসূরিরা তরকারিতে তেল খাওয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা অর্জন করেছি, কিন্তু আমাদের পাকস্থলী তেল সইছে না। খাওয়ার জন্য আমরা বড়লোক হলাম; বড়লোক হওয়ার পর আমাদের কারো-কারো ক্ষুধাই লাগছে না, ক্ষুধা লাগানোর জন্য চিকিৎসকদের পেছনে আমরা ঢালছি কাঁড়ি-কাঁড়ি টাকা। যে-পেট পুরে খাওয়ার জন্য আমরা শহরে এসেছিলাম বা বড়লোক হয়েছিলাম; আমাদের সেই পেটে এখন আর খাবারই সয় না, প্রকৃতি আমাদের জিহ্বা কেড়ে নিয়েছে, মুখ থেকে খাবার কেড়ে নিয়েছে, এখন খাবার আমাদের খেতে হয় কাপ মেপে। আমাদের বাবা-মায়েদের পাতে মাংস জুটত না, মাসে একবার বাজার থেকে একজোড়া কবুতর বা এক পোয়া গোমাংস কিনে এনে এক কেজি আলু মিশিয়ে রেঁধে পাঁচ সদস্যের পুরো পরিবার একবেলা মেতে উঠতাম মাংস-উৎসবে। এখন আমরা মাংস খেতে পারি না হার্ট অ্যাটাকের আতঙ্কে। মাংস এখন রেফ্রিজারেটরে পচে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা খেতে পারছি না। মাংস আমাদেরকে ছেড়ে গেছে। আমরা শারীরিক পরিশ্রম থেকে বাঁচার জন্য পড়াশোনা করেছিলাম; কিন্তু প্রকৃতি আমাদেরকে বাধ্য করছে কুকুরের মতো জিভ বের করে নোংরা রাস্তায় দৌড়াতে, জিমনেশিয়ামে ঝুলতে, বাটখারা তুলতে, বস্তা কিলাতে। কুলিরা চাউলের আড়তে যা যা করেন; জিমনেশিয়ামে আমরা তা-ই করছি, করে গর্বের সঙ্গে সেসবের ভিডিও দিয়ে রিল বানাচ্ছি, বানিয়ে দেখাচ্ছি— আমরা কে কত স্বাস্থ্যসচেতন, কে কত অভিজাত, কে কত আলাদা। যার জিমের মাসিক চাঁদা যত বেশি, সে তত বেশি অভিজাত। শ্রমিকদের মতো দৌড়াব না বলে আমরা সুট-বুট পরে দালানে ঢুকেছিলাম, আমরা এখন ট্রেডমিল কিনে সেই একই দালানের ভেতরই দৌড়াচ্ছি। আমরা দৌড় ছাড়তে চেয়েছিলাম, দৌড় আমাদেরকে ছাড়েনি, দৌড় আমাদেরকে দৌড়ানি দিচ্ছে। কুঁড়েঘরে থাকব না বিধায় আমরা গ্রাম ছেড়েছিলাম, এখন আমরা কিছুদিন পরপরই পর্যটনকেন্দ্রের গলা-কাটা কৃত্রিম কুঁড়েঘরে যাই স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে। কাচঘেরা বায়ুরোধী ভবন বানিয়ে শ্বাসকষ্ট বাঁধিয়ে বুকভরা বাতাস নিতে লাখ টাকা খরচ করে আমরা সমুদ্রসৈকতে ছুটছি। গায়ে মাটি লাগাব না বলে আমরা গ্রাম ছেড়েছিলাম, একটু মাটির স্পর্শের আশায় এখন আমরা পার্কে-পার্কে ছুটছি কিংবা ছাদবাগান করছি। 'চাষাভুষা' শব্দটাকে আমরা গালি বানিয়েছিলাম, এখন ছাদবাগানে এক ডজন টমেটো ফলাতে পারলে গর্বিত 'নগরচাষি' হিশেবে বুক ফুলিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রচার করছি। মাছধরা মানুষদের জাইল্লা বলে তাচ্ছিল্য করা আমরাই লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে বড়শি পেতে বসে থাকছি সরকারি দিঘিতে সেই মাছই ধরার জন্য। শবজি খাব না বলে আমরা বড়লোক হয়েছিলাম; এখন বাজারে শবজির দামই বেশি, রেস্টুরেন্টে শবজিজাত খাবারের দামই বেশি, শবজি এখন বড়লোকদেরই খাবার। পূর্বপুরুষরা যে শবজি খেতেনই না, যে শবজি বেড়ে উঠত বাড়ির পেছনের ঝোপঝাড়ে অনাদরে-অবহেলায়; শহরে আমরা এখন সেই অনাহুত শবজিই কিনে খাচ্ছি কেজিপ্রতি শত-শত টাকা খরচ করে। আমাদের পূর্বপুরুষরা ছেঁড়া কাপড় পরতেন অর্থাভাবে, এখন আমরা চড়া দামে ছেঁড়া-খোঁড়া জিন্স কিনে পরি। তারা পান্তাভাত খেতেন তিনবেলা রান্নার মতো জ্বালানি ছিল না বলে; আমরা পহেলা বৈশাখে ঐ পান্তাভাতই খাই গরম ভাতে জোরপূর্বক পানি দিয়ে, হাজার-হাজার টাকার শ্রাদ্ধ করে; খেয়ে ডায়রিয়া বাধাই, বাধিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। মহানগরের সেসব রেস্টুরেন্টের খাবারের দামই এখন সবচেয়ে বেশি; যেসব রেস্টুরেন্টের সাজগোজ গ্রামের মতো, যেসব রেস্টুরেন্টে মেঝেতে বিছানো জাজিমে বসে খেতে হয়, যেসব রেস্টুরেন্টের আবহসংগীত হিশেবে বাজে গাঁও-গেরামের গান। আমরা বাসায় রাঁধি না সময় বাঁচানোর জন্য, অনলাইনে অর্ডার করে রেস্টুরেন্টের খাবার বাসায় আনিয়ে খেয়ে দিনাতিপাত করি, সেই বেঁচে যাওয়া সময়ে আমরা পয়সা উপার্জন করি; এর পর আমরা লিভার সিরোরিস বাঁধাই, শেষে সেই পয়সা খরচ করি লিভার সিরোসিসের চিকিৎসায়। আমরা পরিবারের সবাই মিলে চাকরি নিয়েছিলাম স্বাবলম্বী হব বলে; স্বাবলম্বী আমরা হয়েছি, স্বাবলম্বী হতে-হতে কেউ বা ধনকুবেরও হয়েছি, কিন্তু আমাদের সন্তানরা বড় হচ্ছে গৃহকর্মীদের হাতে। আমরা এতটাই স্বাবলম্বী হয়েছি যে, আমাদের সন্তানরা জাগ্রত অবস্থায় দেখছে আমরা ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছি, ঘুম থেকে জেগে দেখছে আমরা অফিসে চলে গেছি। স্বাবলম্বনের দাপটে আমাদের মা-বাবারা বার্ধক্য কাটাচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে, সন্তানরা শৈশব কাটাচ্ছে চাইল্ড কেয়ারে, আমরা যৌবন কাটাচ্ছি ডেস্কটপে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিয়ে করব না ভেবে আমরা কেউ-কেউ ত্রিশেও বিয়ে করছি না, পঁয়ত্রিশেও বিয়ে করছি না; করছি চল্লিশের পরে অথবা করছিই না। অথচ পূর্বপুরুষরা চল্লিশে দিব্বি নাতি-নাতনির মুখ দেখতেন। কিসের জন্য যেন অপেক্ষা করতে-করতে আমরা যৌবনেই বুড়িয়ে যাচ্ছি, বুড়ো বয়সে যুবকের ভূমিকায় অভিনয় করছি, শুগার ড্যাডি বা শুগার মম হচ্ছি; কোনোকিছুই শুরু বা শেষ করছি না যথাসময়ে। সূর্যের আলো গায়ে লাগিয়ে ক্ষেতখামারে কাজ করব না বলে আমরা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রাজপ্রাসাদে ঢুকেছিলাম। ঢুকে দেখলাম— শরীরে সূর্যের আলোর অভাবে আমাদের ঘুম আসে না। রাতের ঘুম ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা ওষুধ খাওয়া শুরু করলাম, তাতেও কাজ না হওয়ায় সূর্যের আলো গায়ে লাগানোর জন্য আমরা 'মর্নিং ওয়াক' শুরু করলাম। শীতাতপনিয়ন্ত্রক যন্ত্র ওদিকে আমাদের শরীরে ডেকে আনল নিউমোনিয়া-অ্যাজমা-হুপিংকাশি। প্রযুক্তি আমাদের চোখ খেল, কান খেল, নাক খেল; আমাদের চোখে ধরিয়ে দিল চশমা, কানে বসিয়ে দিল হিয়ারিং এইড, নাকে নেবুলাইজার। পূর্বপুরুষদের যা যা আমরা করতে চাইনি, আমরা— উত্তরপুরুষরা এর সবকিছু করতে বাধ্য হচ্ছি। বড়লোক হতে-হতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। টাকা খেয়ে আমরা কুলাতে পারছি না। টাকা রাখারও জায়গা হচ্ছে না আমাদের। টাকা ব্যাংকে রাখলে ক'দিন পরে ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে শেয়ারবাজার লুট হয়ে যায়। এখন আমাদের গরিব হতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পারি না। গরিবরা বড়লোক হতে পারে, কিন্তু বড়লোকরা একবার বড়লোক হয়ে যাওয়ার পর আর গরিব হতে পারে না। আমরা পাঠ্যবহির্ভূত বই পড়তাম। খবরের কাগজ পড়তাম। প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে চলচ্চিত্র দেখতাম। শুক্রবার বিকেল তিনটা কুড়ি মিনিটে দেখতাম পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি। এর মধ্যে খবরের কাগজ বাদে বাকি সবগুলোকেই আমাদের পূর্বসূরিরা অন্যায় বলে মনে করতেন। পাঠ্যবইয়ের ভাঁজে কমিকের বই পেলে প্রহার করতেন, প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার খবর পেলে প্রহার করতেন, প্রহার করতেন এমনকি প্রতিবেশীদের বাড়িতে শুক্রবারের ছায়াছবিটিও দেখতে গেলে। আমরা ভাবতাম বড় হয়ে বড়লোক হলে আমাদেরকে কেউ ঠেকাতে পারবে না— আমরা ইচ্ছেমতো বই পড়ব, চলচ্চিত্র দেখব, গান শুনব। আমরা বড় হলাম, বড়লোকও হলাম। ততদিনে দেশ থেকে প্রেক্ষাগৃহ উধাও হয়ে গেছে, চলচ্চিত্রজগৎই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে, চলে গেছে আমাদের পাঠাভ্যাস। আমাদের ফোনে এখন হাজার-হাজার বইয়ের পিডিএফ, ওটিটি-ইউটিউবে অগণিত চলচ্চিত্র। বই পড়ার জন্য এখন গ্রন্থাগারে যেতে হয় না, চলচ্চিত্র দেখার জন্য প্রেক্ষাগৃহে যেতে হয় না, গান শোনার জন্য কিনতে বা ভাড়া করতে হয় না ক্যাসেট-সিডি-ডিভিডি। কিন্তু আমাদের এখন কিছুই দেখা হয় না, কিছুই শোনা হয় না, কিছুই পড়া হয় না। আমাদের সবকিছু জমা হয়ে আছে, আমাদের সবকিছু জমে গেছে— উত্তর মেরুর বরফের মতো। সবকিছু হাতের মুঠোয় চলে আসায় আমরা এখন আর কিছুই দেখি না, শুনি না, পড়ি না। আমাদের ভেতরকার পাঠকের মৃত্যু হয়েছে, শ্রোতার মৃত্যু হয়েছে, দর্শকের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের পূর্বসূরিরা ভ্রমণকাহিনী পড়তেন, পড়ে কল্পনায় ওসব জায়গা দেখে নিতেন, পরে পয়সা জমলে সেসব জায়গায় ভ্রমণে যেতেন। এখন আমরা ভিডিওতেই সব দেখে ফেলছি, আমাদের আর কল্পনা করতে হচ্ছে না, ফলে আমাদের কল্পনাশক্তিও নেই হয়ে গেছে। আমরা এখন আর কল্পনা করি না। কোথাও বেড়াতে গেলে সেই জায়গাটা দেখি না, শুধু ভিডিও করি, জায়গাটাকে ব্যাকগ্রাউন্ড বানিয়ে সহস্র ছবি তুলি; পরবর্তীকালে সেসব ছবি আমরা আর একবারও খুলে দেখি না। ফলে মরে গেছে আমাদের দর্শনেন্দ্রিয়ও। আমাদের সর্বাঙ্গে মরিচা ধরেছে, সব ইন্দ্রিয়ে জং ধরেছে। যখন সবকিছু দুর্লভ ছিল, তখন ঠিকই আমরা মূল্যবান বস্তুর মূল্য দিতাম। সময় বাঁচানোর জন্য আমরা ফোন কিনেছিলাম। পরে, দেখলাম— ফোনই আমাদের জীবনের সিংহভাগ সময় খেয়ে ফেলেছে। যখন দু-টাকার খামে করে চিঠি লিখে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হতো এক মাস, তখনও আমরা নিঃসঙ্গ ছিলাম না। কিন্তু এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের অযুত-নিযুত অনুসারী, মেসেঞ্জারে কড়া নাড়লে এখন উত্তর পাওয়া যায় সেকেন্ডের মধ্যে, কথা বলার জন্য এখন সবুজ বাতি জ্বালিয়ে রাখে শত-সহস্র অনুরাগী; কিন্তু মন খুলে কথা বলার মতো এখন আমরা কাউকেই খুঁজে পাই না, মানুষ খুঁজে পেলেও কথা খুঁজে পাই না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা আমাদের প্রাত্যহিক গল্প এত বেশি বলে ফেলি এবং দৈনন্দিন জীবনের ছবি-ভিডিও এত বেশি দেখিয়ে ফেলি যে, এখন আমরা সবার সবকিছু জানি, মুখোমুখি সাক্ষাতে বলার মতো কোনো গল্পই এখন আর আমাদের অবশিষ্ট থাকে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলতে-বলতে আমরা আমাদের সব গল্প শেষ করে ফেলেছি, দেখিয়ে শেষ করে ফেলেছি সমস্ত ছবি। দু-টাকার হলুদ খামের যুগেও আমরা নিঃসঙ্গ ছিলাম না, কিন্তু দু-সেকেন্ডের সবুজ মেসেঞ্জারের যুগে আমরা নিঃসঙ্গ। এখন আমরা নিঃস্ব, নিঃসঙ্গ এবং গল্পশূন্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত গল্পগুলো আমরা এমন ব্যক্তিদেরকে বলে ফেলেছি, ব্যক্তিগত ছবিগুলো এমন ব্যক্তিদেরকে দেখিয়ে ফেলেছি; যারা আমাদের ব্যক্তিজীবনের অংশই না, যাদের সাথে কখনোই দেখা বা কথা হবে না। ভূগর্ভস্থ পানি বেশি তুলে ফেললে নলকূপ আর পানি দেয় না, জীবনের গল্প বেশি বলে ফেললে জীবনও নলকূপের মতো আচরণ করে। আমরা এখন একেকজন পরিত্যক্ত নলকূপ। আমাদের পূর্বপুরুষদের বাড়িতে ছিল বিশাল পুকুর, সারি-সারি ফলগাছ, শবজির ক্ষেত, গোয়ালঘর। বড়লোক হয়ে আমরা পুকুরের পরিবর্তে দেড় হাত চওড়া বাথটাব বানিয়েছি, ছাদে গাছ নাম নামক কিছু প্রহসন লাগিয়েছি, খাঁচায় পালছি কুকুর-বেড়াল-খরগোশ। গাঁয়ের বিঘা-বিঘা জমি বেচে শহরে এসে আমরা ফ্ল্যাট নামক সাড়ে সাতশো বর্গফুটের খোপ কিনছি। খোপের ড্রয়িংরুমে সাজিয়ে রাখছি বনসাই। একেকটা বনসাইয়ের দাম মূল গাছের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। আমরা স্বপ্ন দেখি— শহরে কামানো টাকা দিয়ে শেষ বয়সে গ্রামে গিয়ে বাগানবাড়ি করব। অথচ আমাদের পূর্বপুরুষরা বাগানবাড়িতেই জন্মেছেন, বাগানবাড়িতেই দিনাতিপাত করেছেন, বাগানবাড়িতেই মরেছেন। অর্থাৎ শেষ বয়সে যে জীবন যাপন করব বলে শহরে বসে আমরা খেটে মরছি বা স্বপ্ন দেখছি, প্রাচীন আমলের অশিক্ষিত লোকজন বিনা পড়াশোনায়ই সেই জীবন আজীবন যাপন করে গিয়েছেন। শিক্ষিত বড়লোক হয়ে শহরে বসে আমরা যা যা করছি বা করার চেষ্টা করছি, আমাদের অশিক্ষিত গরিব পূর্বপুরুষরা ওগুলোই করতেন। কিন্তু রাত আটটার মধ্যে তারা ঘুমিয়ে পড়তে পারতেন, তাদের চোখে ঘুম ছিল। আর এদিকে ঘুমের ওষুধ খেয়ে সকাল আটটায়ও আমাদের ঘুম আসে না। পূর্বপুরুষদের যা যা আমরা এড়াতে চেয়েছিলাম, এর সবকিছু আমরা উচ্চমূল্যে করতে বাধ্য হচ্ছি। বরং তাদের বাড়ি ছিল আমাদের ফ্ল্যাটের চেয়ে বহুগুণ বড়, তাদের খাবার ছিল বিশুদ্ধ, তাদের শরীর ছিল সুঠাম। অথচ আমরা ভেবে বসে আছি শিক্ষিত ও বড়লোক হয়ে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের চেয়ে ভালো আছি। তা হলে? আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের চেয়ে কতটুকু এগোলাম? তাদের চেয়ে আমরা কতটা ভালো আছি? প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আমরা কি বিজয়ী হয়েছি? নাকি গো-হারা হেরে বসে আছি? আমরা কি আমাদের পরাজয় টের পাচ্ছি? #Collected#

Saturday, 12 October 2024

কেন হাসিনা আমলে, হাসিনা ভারতের সাথে চুক্তিগুলো সংসদে আলোচনা করত না তার কারন

কেন হাসিনা আমলে, হাসিনা ভারতের সাথে চুক্তিগুলো সংসদে আলোচনা করত না তার কারন খুজতেছিলাম। যে কারন গুলো পেলাম, এক বাক্যে বললে, " চুক্তি ভারতের দ্বারা নির্ধারিত ও লিখিত হত তাই তা নিয়ে হাসিনার সংসদে আলোচনার কিছুই ছিল না। যেমন, উপকূলে ভারতীয় রাডার চুক্তির মত স্পর্শকাতর বিষয়ে পুরটা স্বার্থই ভারতের তাই এই চুক্তির কন্টেক্স কি হবে তা শুধুই ভারত ঠিক করেছে। ফেনী নদীর পানির চুক্তিটি এক পাক্ষিক ছিল, যেখানে বাংলাদেশের পক্ষ হতে কোন শর্তারোপ ছাড়াই চুক্তি সম্পাদন হয়। উপরের দুটি চুক্তি হাসিনা যখন ভারতে গিয়ে করল, চুক্তি সম্পাদনের এক সপ্তাহ পার হলেও বাংলাদেশের গণমাধ্যম গুলো জানতে পারে নাই কি আছে চুক্তির ভিতর, সে সময় সাংবাদিকরা আওয়ামীলীগ নেতাদের জিজ্ঞাসা করেছিল, তারাও অবগত নয় বলে জানান। আদানী চুক্তির ভয়ংকর তথ্য গুলো চুক্তির আগে কেউ জানত না, এমনকি আদানী কর ছাড় পেলেও করের নামে বাংলাদেশ থেকে অর্থ নিবে এটাও এই চুক্তির নোংরা দিক ছিল, যা চুক্তির আগে হাসিনা কাউকেই জানাই নাই। ভারতকে দেয়া চট্রগ্রাম বন্দরের একসেস এমন ভাবে দিল হাসিনা, যে বাংলাদেশের কন্টেইনার গুলো হতে ভারতের কন্টেইনার অগ্রাধিকার পাবে। অথচ সদ্য যুদ্ধাহত বাংলাদেশকে সে সময় বন্দর ব্যাবহার করতে দেয় নাই। হাসিনার আর এক নোংরা চুক্তি মংলা বন্দর সম্প্রসারণে ভারতকে সম্পৃক্তকরণ, এটার বিশদ এখনো দেশবাসী জানে না। রেল করিডর কোন দেশ অন্য দেশকে দেয় না, কারন রেল করিডর দেশকে দুইভাগে ভাগ করে ফেলে। আখাউড়া সড়ক অবকাঠামোর কাজটাও এভাবেই জাতির কলংক হাসিনা ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সকল কাজ ভারতের হাতে তুলে দেয়, আর ভারতের তাদের দেশ থেকে দিনমজুর পর্যায়ের কর্মীদের পর্যন্ত বাংলাদেশে আনে। যে সকল হাসিনার পোষা কুকুর ২৬ লাখ ভারতীয় নাগরিকের সন্ধান চাচ্ছে, তাদের রেফারেন্স ভারতীয় আইনজীবী অরুনাভ ঘোষ, সেই ২৬ লাখ ভারতীয় কোন কোন সেক্টরে কাজ করে তা দলিল দিয়েছিল। বাংলাদেশে এই দলিলাদি আমিই অনুসন্ধান করে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলাম আগ্রাসন বিরোধী নানা কর্মসূচিতে, এখন আসিফ নজরুল সাহেব সেই অনুসন্ধানের ভিতরে না ঢুকে আমার বক্তব্য শুনে বলে দিলেন ২৬ লাখ। যার ফলে উনাকে জিজ্ঞাস করলে ভাল কোন উত্তর দিতে পারেন নাই। আজ বলে দিলাম সেই আইনজীবীর নাম অরুনাভ ঘোষ। কতজন ভারতীয় বাংলাদেশে অবস্থান করছে, বাংলাদেশের কাছে সেই তথ্য না থাকলেও ভারতের কাছে সঠিক সংখ্যাটা আছে। হাসিনার এই সকল চুক্তি যেন ক্ষমতায় থাকতে মোদীর কাছে সতীত্ব বিক্রি, এছাড়া ভাল ভবে বলার কোন ভাষা নাই আমার।

Monday, 30 September 2024

ঢাকা শহরের আবাসন এর অর্থনীতি।

ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় বাড়ির ভাড়া অত্যাধিক সস্তা। সস্তা বলছি বাড়ি বানানোর খরচ আর আনুপাতিক দ্রব্যমূল্যের নিরিখে। সিটি সেন্টারের বাইরের জায়গাগুলোত (যেটা নগরীর প্রায় ৮০% জায়গা) একটা জমি কিনে বাড়ি বানাতে প্রায় ১.৬ কোটি টাকা খরচ হয়। দেড় কাঠা জমির উপর, গলির ভেতর একদম সাদামাটা পাঁচতলা বাড়ি। তার একটাতে গৃহস্বামী বাস করেন, বাকি চার তলা ভাড়া দেন। ভাড়া এসব ক্ষেত্রে ১৫-১৬ হাজারের বেশি হয় না। পুরো বিল্ডিং থেকে আয় সর্বসাকুল্যে ৬০ হাজার টাকা (খাজনা বাদ দিয়ে)। এই হিসেবে কেবল আপনার দেড় কোটি টাকা উদ্ধার করতেই লেগে যায় ২২ বছর ৩ মাস। আর যদি ১০০% মুনাফা করতে চান তবে সাড়ে চুয়াল্লিশ বছর অপেক্ষা করতে হবে। এর মাঝে মেরামত খরচ আর চাঁদাবাজির সাথে মুদ্রাস্ফীতি কাটাকুটি করে দিলাম। যাইহোক, ১.৬ কোটি টাকাকে বাড়ি বানানোর মাধ্যমে দ্বিগুণ করতে গৃহস্বামীর ৪৪.৫ বছর সময় লাগে। বাংলাদেশের সবচেয়ে খারাপ ব্যাংকে, সবচেয়ে কম সুদে ফিক্সড ডিপোজিট করলেও এই টাকা দ্বিগুণ হতে ১২ বছর লাগে। এর মানে বাড়ি না বানিয়ে টাকাটা ব্যাংকে ফেলে রাখা ৪ গুণ বেশি লাভজনক। ফ্ল্যাট কেনার কথা তো বাদই দিলাম। ফ্ল্যাটের ইউটিলিটি চার্জ হিসাব করলে, এটা ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়েও ৮ গুণ খারাপ কাজ। কিন্তু অন্যদিকে, আমি নিজে যখন ভাড়াটিয়া হিসেবে ভাড়া শোধ করতে যাই তখন আবার গায়ে লাগে। মনে হয় ভাড়াটা বেশি। তখন আর সস্তা মনে হয় না। এই শহরের ৯৬% মানুষের আয়ের সবচেয়ে বড় অংশটা ব্যয় হয় বাড়ি ভাড়ায় (২০২০ সালের হিসাব যদিও)। বাড়িওয়ালা মরছে, ভাড়াটিয়াও মরছে। তাহলে সমস্যাটা ঠিক কোথায়? সমস্যা নির্মাণ সামগ্রীতে। একটা ইট বানাতে গড়ে খরচ হয় ৫ টাকা। সেটা ঢাকায় বিক্রি হয় ১৫ টাকায়, চট্টগ্রামে ১৬-১৭ টাকায়। অন্তত ৩০০% মুনাফা। এ কারণেই সাধারণ মানুষ বা ভালো মানুষ ইট ভাটার ব্যবসায় ঢুকতে পারে না। মহা লাভজনক এই ব্যবসায় গুণ্ডা না হলে টেকা সম্ভব না। আমরা জানি ইট ভাটার মালিকরা কেমন। আর শ্রমিকদের তারা কী ট্রিটমেন্ট দেয়। বালু মহলগুলোর অবস্থা আরও পৈশাচিক। ৫০০ ডব্লিউ টিমটি রডের টনপ্রতি উৎপাদন খরচ ৭০-৮০ হাজার টাকার মধ্যে। এটা বিক্রি হয় ১.১ লাখ টাকায়। সোনার ভরি আর রডের টন এখন প্রায় কাছাকাছি। এই রড উৎপাদকরা ইটের ভাটার মালিকের মত ২০০% মুনাফা না করলেও তাদের সার্বিক মুনাফা ইটের ভাটার মালিকের চেয়ে কয়েক হাজারগুণ বেশি। কারণ ২০০% মুনাফা খায় প্রায় কয়েজ হাজার ইট ভাটা মালিক। আর রড বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ আর কার্টেল করে ৮-১০ টা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। এ কারণে তাদের থাবার গ্রাস অনেক বড়। একই ইন্ডাস্ট্রির মালিকই ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলে। ফলে শুধু রড না; সিমেন্ট, রঙ, কাঁচ, বৈদ্যুতিক তারসহ প্রতিটা ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষ ২০টি পরিবারের কাছ থেকে আমি আপনি সবাই নির্মাণসামগ্রী কিনি। এই মুনাফার পরিমাণ আমেরিকাতেও প্রায় একই। তাহলে আমেরিকাতে আমাদের মত সমস্যা হয় না কেন? কারণ আমেরিকান ট্যাক্সেশন খুব কড়া, টাকা পাচার করা কঠিন, শ্রমিকের নায্য মজুরি আছে। ফলে ট্যাক্স আর মজুরির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের খেয়ে ফেলা সামাজিক পুঁজির একটা বড় অংশ আবার সমাজেই ফিরে আসে। এটা বাংলাদেশের বেলায় ফিরে আসে না। ঢাকা শহরের বাড়ির ভাড়া বাড়িওয়ালাদের দিক থেকে খুব কম, আবার ভাড়াটিয়ার জায়গা থেকে খুব বেশি। কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কম। ৮০% এলাকার তুলনায় বাকি যে ২০% এলাকা আছে, যেগুলো বড় রাস্তা বা মেট্রোরেলের কাছে বা ঢাকার অভিজাত - এসব এলাকাও প্রায় পুরোপুরি হাউজিং কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ঘুরে ফিরে আবারও সেই শীর্ষ ২০ ধনী পরিবার। ঢাকায় আপনার করা বাড়ি বা ফ্ল্যাট যদি একটা একশো টাকার নোট হয়, তবে সেই নোটের ৫ পয়সার সুবিধাভোগী ভাড়াটিয়া, ৩০ টাকার সুবিধাভোগী বাড়িওয়ালা। ৪.৯৫ টাকার সুবিধাভোগী স্থানীয় এমপি, সিটি কর্পোরেশন, রাজস্ব বিভাগ ইত্যাদির অসাধু কর্মচারীরা। আর কেকের বড় অংশটা, প্রায় ৬৫ শতাংশ সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী কার্টেলগুলো। এই গেলো ঢাকা শহরের আবাসন এর অর্থনীতি। চাহিদা থাকলে পরে ঢাকার আবাসন মনস্তত্ত্ব আর নৃতত্ত্ব নিয়ে লিখবো নে।

Thursday, 26 September 2024

হাসিনার পতন হয়েছে তাহলে দেশে ফিরে যেতে ভয় কি ?

হাসিনার পতন হয়েছে তাহলে দেশে ফিরে যেতে ভয় কি ? ০৫ আগস্ট ২০২৪ হাসিনার পতনের আগে যারা ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় বা এসাইলাম আবেদন করেছেন তাদের অনেকে দ্বিধাদ্বন্ধে আছেন। আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনার সরকার দ্বারা নির্যাতিত হয়ে অনেকে দেশ ছেড়েছেন এবং এজাইল/ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জেনেছি, OFPRA/CNDA তে জিজ্ঞেস করা হয়েছে ''হাসিনার পতন হয়েছে তাহলে দেশে ফিরে যেতে ভয় কি ? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই দিতে পারেননি !!! অনেকে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে উত্তর দিয়েছেন কিন্তু যৌক্তিক উত্তর দিতে পারেননি। ০৫ আগস্ট ২০২৪'য়ের পর থেকে অনেককেই এই প্রশ্ন করা হচ্ছে। জেনেভা কনভেনশনের আওতায় আশ্রয় পাওয়ার অন্যতম দুটি শর্ত হচ্ছে মৃত্যু ভয় এবং মিথ্যা মামলায় হয়য়রানির হুমকি থাকা। বাস্তবতা হচ্ছে হাসিনার পতন হওয়ার পর এই হুমকিগুলো দুর্বল হয়ে গেছে এবং প্রমান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর দিতে না পারলে আসলেই সমস্যা। আওয়ামীগ সরকারের নির্যাতনে যারা দেশ ছেড়ে আশ্রয় আবেদন করেছেন এবং কেস চলমান তাদের জন্য এটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও যৌক্তিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। কেস পাওয়া/রিফুজি স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য অবশ্যই প্রমান করতে হবে বিশ্বাসযোগ্য হুমকি রয়েছে। ধন্যবাদ

Friday, 23 August 2024

বাংলাদেশে বন্যায় ঘরে ঘরে একটি করে রাবারের তৈরি ইনফ্লেটেবল বোট/ নৌকা রাখতে।

সম্ভবতঃ গত বছর বাংলাদেশে বন্যা চলাকালে আমি এক ফেইসবুক পোস্টে বলেছিলাম, ঘরে ঘরে একটি করে রাবারের তৈরি ইনফ্লেটেবল বোট (বাতাস দিয়ে ফোলানো যায় এমন নৌকা) রাখতে। উদ্ধার তৎপরতায় বিলম্ব হলে বেশী সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়, খাদ্যের ওভাবে নয়। চলমান বন্যায় এই নৌকার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী অনুভূত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বে আকস্মিক বন্যা সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে গেছে। লন্ডনের মতো আধুনিক ও প্রাচুর্যময় নগরীকেও আকস্মিক বন্যা সহ নতুন নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম বড় আক্রান্ত দেশ বাংলাদেশের জন্য এই চ্যালেঞ্জ আরও অনেক বড়। ইনফ্লেটেবল বোট ঘরের স্টোর রুমে রেখে দেয়া যায়; এজন্য বড় জায়গার প্রয়োজন হয়না। সরকারি খরচে কিংবা বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে এ ধরনের নৌকা বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেইলে উৎপাদন করে বাড়ি বাড়ি বিতরণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি লাইফ জ্যাকেট উৎপাদন করে ত্রাণ হিসেবে বিতরণের চিন্তা করতে পারে সরকার। না খেয়ে কয়েক দিন বেঁচে থাকা যায় কিন্তু বন্যার পানিতে ডুবে গেলে মৃত্যু অনেকটা নিশ্চিত। তাই আমাদেরকে আগে প্রাণ বাঁচানোর বাস্তব পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এই বন্যাই শেষ বন্যা নয়। এখনই পরবর্তী সম্ভাব্য বন্যার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আব্দুল হাই সঞ্জু ২৩ অগাস্ট ২০২৪ লন্ডন

Monday, 19 August 2024

কাজগুলা না করে, তাইলে এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে

১. অন গভমেন্ট এই গভমেন্ট কোনো ‘বিপ্লবী’ গভমেন্ট হয় নাই। সংবিধান মাইনা রাষ্ট্রপতির আন্ডারে শপথ নিছে এই গভমেন্ট। ১/১১-র কুশীলবরা আবার সেইখানে মেজরিটিপ্রায়। কোন প্রক্রিয়ায়, কার চাওয়া বা না চাওয়ার ভিত্তিতে উপদেষ্টারা নিয়োগ পাচ্ছেন, তাও ক্লিয়ার না। তবু জাতির সামগ্রিক স্বার্থ বিবেচনায় ছাত্রজনতা এই গভমেন্টের বিরুদ্ধে কিছু বলতেছে না। কিন্তু অতি দ্রুত এই গভমেন্ট যদি নিচের কাজগুলা না করে, তাইলে এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে: ১. রাষ্ট্রপতি ও আর্মি চিফের অপসারণ ২. সংবিধান পুনর্গঠন ৩. জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস, দলিলপত্র ও স্মৃতি সংরক্ষণ ৪. শহিদদের তালিকা তৈরি ও শহিদ পরিবারকে প্রয়োজনমাফিক সহায়তা। আহতদের তালিকা তৈরি করে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। ৫. জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ ফ্যাশিস্ট রেজিমের সকল অপরাধের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের সূচনা করা। এক্ষেত্রে বিতর্কিত আইসিটিকে পুনর্গঠন করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। নতুবা এই বিচারপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ৬. নির্দলীয় ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠন এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ফ্যাশিস্ট ব্যবস্থার মূলোৎপাটন। ৭. বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ কর্মকৌশল গ্রহণ। ৮. ছাত্রজনতার কাছে জবাবদিহিতার কালচার তৈরি করা। ৯. বিচার বিভাগ ও ইসিকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নির্দলীয়করণ। ১০. আ. লীগকে দল হিশেবে নিষিদ্ধ করাটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। বরং আপাতত তাদের নিবন্ধন বাতিল করা যেতে পারে। ১১. একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা। ২. অন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ছাত্রজনতার আন্দোলনের এই ব্যানারটা কোনো একক দল, মত বা গোষ্ঠীর সমন্বয়ে করা হয় নাই। বরং নানা দল ও মতের মানুশ এখানে ছিল। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নানা কারণে এই ব্যানারটি বিতর্কিত হয়ে উঠছে। অনেকেই নিজ নিজ রাজনৈতিক বা অন্য কোনো স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই ব্যানার ব্যবহার করতেছেন। ক্যাম্পাসগুলোতে এই ব্যানারের ছত্রছায়ায় এক ধরনের ছায়া অথরিটিও গড়ে উঠছে। এই ছায়া অথরিটির কর্মকাণ্ড কিংবা মোটিভ নিয়াও জনমনে এক ধরনের অস্বস্তি বা আশঙ্কা তৈরি হইছে। ব্যানারটির সকল সিদ্ধান্ত কোত্থেকে আসতেছে বা কারা দিতেছে— এ ব্যাপারেও অস্পষ্টতা প্রকট। সমন্বয়কদের নিজেদের মধ্যেই এ ব্যাপারে নানারকম ক্ষোভ ও উষ্মা দেখা যাইতেছে। সমন্বয়কদের নিজস্ব কোনো এজেন্সি আছে কি নাই— তা বোঝা যাচ্ছে না। তারা কেবল টকশোর শোভা বাড়াইতেছেন। বাস্তব কার্যক্ষেত্রে তাদের অধিকাংশেরই সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে কোনো সংযোগ নাই। ফলত, তারা এক ধরনের মিডিয়া সেলিব্রেটি ও ছোটোখাটো ভাবমূর্তিতে পরিণত হওয়ার অধিক কিছু করতে পারতেছেন না। দেশের নানা মানুশ নানা প্রান্ত থেকে নানা আইডিয়া নিয়া তাদের কাছে আসতেছেন বটে, কিন্তু সেগুলা নিয়া ছাত্রদের বৃহত্তর ফোরামে কোনো ইনক্লুসিভ আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। ফলত, ব্যানারটি ক্রমশ বিতর্কিত হয়ে পড়তেছে। আন্দোলনকারী ছাত্রদের সমন্বিত শক্তিকে অটুট রাখার জন্য দ্রুত একটা বৃহত্তর ছাত্র কাউন্সিল কিংবা প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদের উদ্যোগ নেয়া হোক। এবং এই ব্যানার যত দ্রুত সম্ভব বিলুপ্ত করা হোক। এতেই মঙ্গল। ৩. অন পার্টি ফর্মেশন আজ হোক বা কাল, অভ্যুত্থানকারী ছাত্রদের অন্তত নেতৃস্থানীয় লোকেরা একটা পার্টি খুলবেন— এটা নিশ্চিত। এমনকি একাধিক পার্টিও হইতে পারে। এ ব্যাপারে আপাতত বিশদ মন্তব্য করতে চাই না। জনতার খেয়াল রাখা লাগবে, এই পার্টি যেন অন্য কোনো পলিটিকাল পার্টির পুনর্বাসনকেন্দ্রে পরিণত না হয়। সেটা ঘটনা হিশাবে খুব বিপদজনক ও ডিজাপয়েন্টিং হবে। ৪. অন ইন্টেলেকচুয়াল অ্যান্ড কালচারাল ফাইট আমাদের এখন ইন্টেলেকচুয়াল ও কালচারাল ফাইটগুলারে নতুনভাবে শুরু করা লাগবে। যেসব ভুয়া ও ফাঁপা ন্যারেটিভের উপর এই ফ্যাশিবাদের ভিত্তি দাঁড়ায়ে ছিল, সেগুলারে কাউন্টার করা লাগবে। ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিল্প— সবক্ষেত্রেই ফ্যাশিবাদের ভিত নির্মাণকারী বয়ানগুলারে প্রশ্ন করা লাগবে। কবি, সাহিত্যিক, অ্যাকাডেমিশিয়ান ও ইন্টেলেকচুয়ালদের কান্ধে এখন গুরুদায়িত্ব। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখা জরুরি যে, এসব ক্ষেত্রে আমাদের চর্চা হইতে হবে অব্জেক্টিভ ও নির্মোহ। আমরা যেমন নতুন রাজনৈতিক পরিসর নির্মাণের আলাপ করতেছি, তেমনি নতুন সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরও নির্মাণ করা লাগবে। যেখানে জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে অবজেক্টিভিটি হবে মানদণ্ড। সৃজনশীলতাই হবে সাহিত্য, প্রোপাগাণ্ডা না। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে হইতে হবে সর্বোচ্চ ইনক্লুসিভ। ফ্যাশিস্টের কাউন্টার দেওয়ার জন্য যদি আমরা একপেশে ইতিহাসচর্চা, সাহিত্যিক প্রোপাগাণ্ডা কিংবা অপরায়নের সংস্কৃতির চর্চা করি, তাইলে আমাদের অভ্যুত্থান বৃথা যাবে। ৫. অন মিলিটারি অ্যান্ড সিভিল ব্যুরোক্রেসি মিলিটারি ও সিভিল ব্যুরোক্রেসি নিয়া জনমনে নানা অসন্তোষ, শঙ্কা, সন্দেহ ও অস্বস্তি এখনও বিদ্যমান। এই মিলিটারি ও সিভিল ব্যুরোক্রেসিই কার্যত দেশ চালাইতেছে কিনা, কিংবা গভমেন্টের অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেছে কিনা— এ নিয়া নানা ধরনের প্রশ্ন আছে। গভমেন্টরে এইটা দেখতে হবে। সিভিল ও মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির মধ্যে ঘাপটি মাইরা থাকা ফ্যাশিস্ট ব্যক্তি ও ব্যবস্থাগুলারে উৎখাত করা লাগবে। আরেকটা ১/১১ হওয়ার সমস্ত পথ রোধ করা লাগবে। ৬. অন বিএনপি বিএনপির বোঝা লাগবে যে, খালি দখলের রাজনীতি দিয়া সে বেশিদূর আগাইতে পারবে না। আওয়ামি ফ্যাশিস্টরে কাউন্টার করার জন্য তার শক্তিশালী বয়ান ও ন্যারেটিভ লাগবে। এবং জুলাই রেভ্যুলুশনের স্পিরিটের সাথে মিল রাইখা নিজেদের রাজনীতি সংস্কার করা লাগবে। বুদ্ধিবৃত্তিক ও কালচারাল অঙ্গনের সাথে নতুন ধরনের বন্দোবস্ত তার তৈরি করা লাগবে। এক্ষেত্রে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ‘সমন্বিত জাতিবাদ’ বা ‘কল্যাণ রাষ্ট্রবাদ’ হইতে পারে তাদের আদর্শ। পাশাপাশি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়া গইড়া ওঠা নতুন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বাসনাগুলারে ধারণ করতে হবে। দল হিশাবে তারা ফেইল করলে কিংবা ফ্যাশিস্ট হয়া উঠলে বাঙলাদেশ একটা নতুন ক্রাইসিসের মধ্যে পড়বে। ৭. অন জামায়াত-শিবির আ. লীগ ও তার কালচারাল ফোর্সগুলা জামায়াত-শিবিররে আনঅফিশিয়ালি নিষিদ্ধ কইরা রাখার মাধ্যমে, ট্যাবু কইরা রাখার মাধ্যমে, এক ধরনের ভাবাদর্শে পরিণত করছিল। এতে দুইটা ক্ষতি হইছে বাঙলাদেশের: ১. ইসলামি চিহ্নধারী যেকোনো কিছুরেই ‘জামায়াত-শিবির’ ট্যাগ দিয়া ডিহিউম্যানাইজ করার রাস্তা খুইলা গেছে। ওয়র অন টেররের রাজনীতি শক্তিশালী হইছে। ২. জামায়াত-শিবিররে রাজনৈতিকভাবে গ্রহণ বা বর্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলের বাইরে সে একটা ভাবাদর্শ হয়ে উঠছে। নতুন বাঙলাদেশে এই অস্বস্তিকর অবস্থাটির অবসান ঘটা দরকার। জামায়াত-শিবির না কইরাও মুসলিম চিহ্ন ধারণ করে দেশের কোটি কোটি মানুশ। তাদের সেইটা স্বচ্ছন্দে করতে পারা প্রয়োজন। পাশাপাশি ভাবাদর্শ না, জামায়াত-শিবিররে পলিটিকাল পার্টি হিশাবে গ্রহণ, বর্জন বা পর্যালোচনার রাস্তা খোলা থাকা উচিত। পাশাপাশি দেশের রাজনীতিতে তাদের পুনর্বাসনপ্রক্রিয়াটি ঠিক কেমন হবে, সেইটাও এই সরকারের ভাবা উচিত। জামায়াত-শিবিরের উদ্দেশ্যে আমার বেশিকিছু বলার নাই। কারণ উনাদের এত শক্তি যে, আমার মত দুর্বল লোকের কথা উনারা আদৌ শুনবেন কিনা সন্দেহ। কিন্তু তবু ঝুঁকি নিয়া কিছু কথা বলতে চাই। নয়া বাঙলাদেশে রাজনীতি করতে হইলে উনাদের অবশ্যই জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটরে ধারণ করতে হবে। পার্টিসিপেটরি ডেমোক্রেসি ও ইনক্লুসিভ বাঙলাদেশে বিশ্বাসী হইতে হবে। একাত্তর প্রশ্নে উনাদের যে বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান, তা বিগত বছরগুলাতে কতটুকু চেঞ্জ হইছে আমি জানি না। কিন্তু একাত্তর একটা ইস্যু তো বটেই। সেইটা ওনাদের সলভ করা লাগবে। ওনাদের বোঝা লাগবে যে, ষাট ও সত্তর দশকের ক্লাসিকাল ইসলামিজমের জামানা শেষ। আরব বসন্তের পর এখন পোস্ট-ইসলামিজমের জামানা শুরু হয়ে গেছে। ফলে সেই মোতাবেক দলের নীতি ও আদর্শরে রিভিজিট করা লাগবে। পশ্চিমের চাপায়ে দেওয়া সেক্যুলারিজম না, বাঙলাদেশের মাটিজলে সিঞ্চিত যে অর্গানিক ইনক্লুসিভিটি, তারে ধারণ করতে পারতে হবে। সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ঢাকার মিডল ক্লাশরে শত্রু বানানো উচিত হবে না। দলীয় সাংস্কৃতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক বলয়ের বাইরে বৃহত্তর বাঙলাদেশের সাথে একাত্ম হইতে শেখা লাগবে। সেক্যুলার কবি-সাহিত্যিক বা বুদ্ধিজীবীদের ‘নাস্তিক’ হিশাবে মোকাবেলার যে পলিটিকাল থিওলজি, তা পরিত্যাগ করতে হবে। বোঝা লাগবে যে, ওনাদের কেন্দ্র কইরাই আ. লীগের বাজে রাজনীতিটা বারবার ব্যাক করে এই দেশে। সেই পথটা কীভাবে বন্ধ করা যায়, কীভাবে একটা সম্প্রীতির বাঙলাদেশ নির্মাণ করা যায়, তা উনাদেরই ভাবতে হবে। ৮. অন লেফট উইং লেফটরা রাজনীতির নামে এখনও কেবল কালচার করতেছেন। আর কতদিন করবেন জানি না। শক্ত জনসমর্থন না থাকলে অবশ্য এছাড়া উপায়ও নাই। কেন বাম রাজনীতি এদেশে ব্যর্থ হইল? এর পর্যালোচনা শুরু করার এইটাই বোধহয় শ্রেষ্ঠ সময়। জুলাই রেভ্যুলুশনের স্পিরিটরে ধারণ কইরা নতুন বাঙলাদেশে নতুন ধরনের রাজনৈতিক চিন্তা নিয়া আগাইতে হবে বামদের। উনিশ শতকের বাঙালি জাতিবাদ, নাইন-ইলেভেনজাত ইসলামফোবিক পরিভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গি, অতিমাত্রায় কালচারাল পলিটিক্স ও এনজিওবাদ, জড় ও পুরানা আমলের নেতৃত্ব ইত্যাদি বাদ দেওয়া লাগবে। নিও মার্ক্সিস্ট ধারায় নয়া লিটারেচার, নতুন পরিভাষা, নতুন আইকন ও প্রগতিশীল পলিটিকাল বন্দোবস্ত গড়ে তোলা লাগবে। রাজনীতিটাই করা লাগবে, কালচার না। দেশের বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাথে একাত্ম হইতে পারার মত ভাষা ও পরিভাষা তৈরি করা লাগবে। ন্যায়, ইনসাফ ও ইনক্লুসিভিটিরে মনেপ্রাণে ধারণ করা লাগবে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিরে ট্যাবু বানায়ে রাখলে তাদের কোনো লাভ নাই, বরং লসই বেশি— এটা মাথায় ভালোভাবে নেওয়া লাগবে। ইডিওলজিরে রাজনীতিতে পরিণত করলে হবে না, বরং বাস্তব রাজনীতির আলোকে ইডিওলজিরে নির্মাণ করা লাগবে। তা না হইলে বাম রাজনীতি চিরকাল ক্যাম্পাসগুলাতেই সীমিত হইয়া থাকবে কেবল; গণমানুশের রাজনীতি হইতে পারবে না। একটা সুন্দর, সমৃদ্ধ, ইনক্লুসিভ ও ইনসাফপূর্ণ বাঙলাদেশের স্বপ্ন আমরা এখনও দেখি। আমাদের এই স্বপ্ন ব্যর্থ হইতে দেওয়া যাবে না। ইনকেলাব জিন্দাবাদ।

Thursday, 8 August 2024

হাসিনার পদত্যাগের আগের ৪৮ ঘণ্টা

হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার আগের রাতে সেনাপ্রধান তার জেনারেলদের সাথে বৈঠক করেন৷ বৈঠকে বিক্ষুব্ধ জনতার উপর সেনাদের তরফ থেকে গুলি না ছোঁড়ার সিদ্ধান্ত হয়৷ এই আলোচনা সম্পর্কে জানেন এমন দুইজন সেনা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন৷ এই ঘটনার পর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান হাসিনার কার্যালয়ে গিয়ে তার সাথে দেখা করেন৷ এই বিষয়ে অবগত আছেন এমন একজন ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সেনাপ্রধান জানান সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী সেনারা লকডাউন বাস্তবায়ন করতে অপরাগতা প্রকাশ করেছে৷ হাসিনার প্রতি সেনাবাহিনীর আর কোনো সমর্থন নেই, এটি তখন পরিষ্কার হয়ে যায় বলে জানান ঐ কমর্কর্তা৷ রয়টার্স জানিয়েছে, মোট দশজনের সাথে কথা বলে তারা হাসিনার পদত্যাগের আগের ৪৮ ঘণ্টার তথ্য নেয়ার চেষ্টা করেছে৷ এরমধ্যে চারজন বর্তমান সেনা কর্মকর্তা, ঘটনা সম্পর্কে জানেন এমন দুইজন রয়েছেন৷ এই ব্যক্তিরা তাদের নিরাপত্তার জন্য নাম প্রকাশ করতে চাননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স৷ রয়টার্স বলছে, বৈবাহিকসূত্রে ওয়াকার-উজ-জামান হাসিনার আত্মীয় হলেও শনিবারই তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপর থেকে তার সমর্থন তুলে নেয়ার আভাস দেন৷ সেদিন কয়েকশ সেনা কর্মকর্তার উদ্দেশে ওয়াকার-উজ-জামান বক্তব্য রাখেন৷ মানুষের জীবন রক্ষার নির্দেশ দিয়ে কর্মকর্তাদের ধৈর্য্য বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি৷ সেনাবাহিনী সহিংস বিক্ষোভকে জোরপূর্বক দমন করবে না, প্রথমবারের মতো এই আভাস মেলে৷ সেনাপ্রধান হাসিনার উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়ার বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করেননি৷ তবে বিক্ষোভে অন্তত ২৪১ জনের মৃত্যুর পর তার পক্ষে হাসিনাকে সমর্থন দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে বলে রয়টার্সকে সাবেক তিনজন সেনা কর্মকর্তা মত দেন৷ অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারফিউ জারির পর সোমবার হাসিনা ছিলেন গণভবনে৷ এক পর্যায়ে ঢাকার রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের জনস্রোত নামে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ৭৬ বছর বয়সি আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে৷ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার আলোচনার পর একসাথে ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মঙ্গলবার ভারতের পার্লামেন্টে জানান, বাংলাদেশের এই সমস্য আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে জুলাই থেকেই বলে আসছিল দিল্লি৷ তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের পর হাসিনা সোমবার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন৷'' তিনি জানান, ‘‘খুব অল্প সময়ের মধ্যে তখন ভারতে আসার অনুমোদনের জন্য অনুরোধ জানান৷'' ভারতের আরেকজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, কূটনৈতিকভাবে হাসিনাকে জানানো হয়েছিল, তার এই অবস্থান হতে হবে স্বল্প সময়ের জন্য, যাতে দিল্লির সাথে ঢাকার পরবর্তী সরকারের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে৷ এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ জানানো হলে রয়টার্সকে সাড়া দেয়নি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে যাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ‘‘ভালো সম্পর্ক ভুল লোকজনের সাথে৷ দয়া করে আপনাদের বৈদেশিক নীতি পুনর্বিবেচনা করুন৷'' সোমবার দুপুর নাগাদ ঢাকায় বাংলাদেশ বিমানের সি১৩০ উড়োজাহাজ হাসিনাকে নিয়ে দিল্লির বাইরে হিন্ডন বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করে৷ সেখানে তিনি ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সাথে সাক্ষাৎ করেন৷ গত ৩০ বছরের মধ্যে ২০ বছরই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা৷ গত দেড় দশকের টানা শাসনামলে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী মত দমন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুমসহ নানা অভিযোগ রয়েছে৷ বিরোধীদের বয়কট ও কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জানুয়ারিতে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসে তার আওয়ামী লীগ সরকার৷ এফএস/জেডএইচ (রয়টার্স)