Wednesday, 26 July 2023

কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী সেই দিনগুলো

৯০ দর্শকের শৈশব : "রাজা" (বেলুন)ক*ন*ড*ম আর "হিরো" (বেলুন) ক*ন*ড*ম ছিলো বেশি প্রচলিত, সেগুলোকে আমরা বেলুন হিসেবেই চিনতাম, তখনকার দিনে এত রঙ বেরঙের বেলুন ছিল না, চায়ের দোকান থেকেও কিনতাম। প্রায় কোল বালিশ সাইযের বানিয়ে ফেলতাম ফুলিয়ে। বড়রা এগুলা পঁচা জিনিস,বাজে তেল দিয়ে বানায় এই সেই নানা কথা বলতো। কিন্তু এই ক*ন*ড*ম*কে বেলুন বানিয়ে খেলার কারণেই চায়ের দোকানীরা বিক্রি করতো খেলনা হিসাবে। তখনকার সময়ে প্রতিটি বাড়িতে টিভি ছিল না, ১০-১২ বাড়ি পর- পর দেখা গেছে একজনের বাড়িতে টিভি আছে, আমরা সেই বাড়ির সমবয়সীদের সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিতাম, কোন কারণে ঝগড়া হলেও বৃহস্পতিবারের দিন মিটমাট করে নিতাম, কারণ শুক্রবারটা ছিলো একটা ঈদের দিনের মতোন। শুক্রবার কি সিনেমা হবে আর কে নায়ক নায়িকা থাকবে সেটা জানার জন্যই সকাল 10 টা অথবা দুপুর 12 টায় সূচিপত্র দেখার জন্য টিভি অন করে বসে থাকতাম, যতক্ষণ না চ্যানেল খুলতো ততক্ষণ টিভির মধ্যে শুধু নুড়ি পাথরের কত ঝিলমিল ঝিলমিল করতো, কি যে বিরক্ত লাগতো তারপরও ধৈর্য ধরে বসে থাকতাম। সিনেমা হতো দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল পর্যন্ত, আলিফ লায়লা রাত 9 টায়, তারপরে ছায়া ছন্দ, বাবারা তো রাতে চোখে চোখে রাখতো পড়ার সময় টিভি দেখায় একদমই পছন্দ করতো না, যেই এশারের নামাজ পড়তে বের হতো অমনি আমরা সাথে সাথেই টিভির সামনে এসে হাজির হয়ে যেতাম, 1 মিনিটো দেরি করতাম না, ছায়া ছন্দ শেষ হতে না হতে আবার রাত 10:30 মিনিটে ভারতীয় ন্যাশনাল চ্যানেল শুরু হতো ইন্টারন্যাশনাল লাক্স সাবান নিবেদিত হিন্দি সিনেমা, আর মাসের শেষে শুক্রবার তো ইত্যাদি কোন মতেই মিস দিতাম না না না না। পরের দিন শনিবার দুপুর 12:30 মিনিটে স্কুলের সময় শুরু হতো 'পারলে-জি' বিস্কুট নিবেদিত "শক্তিমান" 😇 শনিবারের দিন শক্তিমান দেখা বাদ দিয়ে স্কুল যেতে কলিজা ফেটে যেত😅😅😅 নিজে শক্তিমান হবার জন্য শক্তিমানের মত করে একহাত মাজায় রেখে আরেক হাত মাথার উপরে দিয়ে পাক ঘুরতে ঘুরতে কত যে আছাড় খেয়েছি তা গুনে শেষ করা যাবে না। # রবিনহুড, হারকিউলিস, রোবোকাপের কথা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে করিয়ে দিতে হবে না। একসাথে সিনেমা দেখার আলাদা মজা ছিলো। বড়রা খাটে বা সোফায় বসতো আমরা নিচে বসতাম। আঙুল দিয়ে বিজ্ঞাপণ গুনতাম। প্রায় বারোটা বিজ্ঞাপণ দেখানোর পরই সিনেমা শুরু হতো, এসবের ভিতর থেকে জায়গার দখল হারানোর ভয়ে বাইরে না গিয়েই কেউ কেউ আবার চুপিসারে বায়ু দূষণ করে দিত, সহ্য হতো না, নাক চিপে দম আটকে রেখে দম বন্ধ হয়ে যেত তারপরও জায়গা থেকে উঠতাম না, উঠলে ওই জায়গার আর দখল পাবো না এই ভয়ে, তারপরে সবাই শুরু করতো দর্শকের উদ্দেশ্যে আঙ্গুল দেখিয়ে ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন : উবু ১০ ২০ ৩০ ৪০ ৫০ ৬০ ৭০ ৮০ ৯০ ১০০ যার কাছে গিয়ে ১০০ পূরণ হতো সে বায়ু দূষণকারী 🤪🤪🤪 তাকে শাস্তি স্বরূপ 5 মিনিটের জন্য বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হতো টিভি ঝিলমিল ঝিলমিল করলে তাকে গিয়ে প্রত্যেকবার "এন্টিনিয়ার" ঘুরিয়ে ঠিক করতে হবে, সিনেমা চলাকালীন এন্টিনিয়ার ঠিক করাটা খুব যন্ত্রণাদায়ক একটা কাজ ছিল, টিভির এন্টিনিয়ারের কথা আপনাদের মনে আছে তো? রুবেল, ইলিয়াস কাঞ্চন, দিথী, জসীম, সাবানা, ববিতা, ওমর সানি, সালমান শাহ, মৌসুমি, রাজ্জাক ছিল নায়ক নায়িকা। এদের কেউ নেই মানে সিনেমা পানসে। রাজীব, রানি, শরীফ, মিশা, জাম্বু, এটিএম শামসুজ্জামান ও হুমায়ুন ফরিদী ভিলেন থাকার কারণে কতো গালিই যে খেত তার হিসেব নেই। নায়ক মার খেলে আমাদের আফসোস হত, অসহায় জসিম, রাজ্জাক, সাবানা আর ববিতার কান্নায় চোখে পানি চলে আসতো। যেইদিন রুবেলের ক্যেরাতের একশন সিনেমা হতো সেদিন সিনেমা দেখা শেষ করে মনের মধ্যে অ্যাকশন ফিলিং নিয়ে বন্ধুদের বলতাম : আয় আমরা নায়কদের মতন মারপিট খেলি, রাজি হলে নিজের নায়ক হওয়ার চান্সটা মিস দিতাম না, বলতাম :- আমি নায়ক তোরা গুন্ডা, তোরা সবাই মিলে আমাকে চেপে ধরবে আর আমি তোদের সবকটাকে মারবো, তোরা মার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকবি, অনেক সময় বন্ধুরা রাজি হতো না, তখন বলতাম একবার আমি নায়ক একবার তোরা নায়ক, সমান- সমান ঠিক আছে, তারপরও যদি রাজি না হতো তখন শেষ চেষ্টা করে দেখতাম :- বলতাম আগামীকাল আমার আব্বা পাইনাপেল বিস্কুট নিয়ে আসবে তখন ওখান থেকে তোকে দুইটা দিব 🤪🤪🤪 তারপরে শুরু হতে আমাদের নায়ক আর গুন্ডার খেলা, মুখ দিয়ে ঢিসুম- ঢিসুম করতাম আর উড়ে উড়ে মার দিতাম, কিযে ভয়ংকর অ্যাকশন তা লিখে বুঝানো যাবে না 🤪🤪🤪 ও পাইনাপেল বিস্কুটে কোথায় তো আর একটা কথা মনে পড়ে গেলো,পাইনাপেল বিস্কুটের কথা তো ভুলার মতন না, তখনকার পাইনাপেল দুই বিস্কুটের জয়েন্টে ক্রিমে ছিল ভরপুর, আমরা বিস্কুট হাতে নিয়ে দুই বিস্কুটের জয়েন্ট ছুটিয়ে তারপরে ক্রিমটা আগে চেটে চেটে খেয়ে নিতাম 🤪🤪🤪🤪🤪🫣 কি যে অনুভূতি তা বলে বোঝানো সম্ভব না 😇 এবার আসি মেয়েদের কথায়: যদি শাবনূর, মৌসুমী, দিথি, চম্পার সিনেমা হতো তাহলে মেয়েরা সিনেমা দেখা শেষ করে ঘরের ভিতরে অথবা আড়ালে লুকিয়ে সিনেমার নায়িকাদের স্টাইলে গুনগুন করে গান গাইতো আর নাচ প্যাকটিস করতো, আর আমরা তাদেরকে জ্বালাতন করার জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম, শেষের দিকে বলতাম এ-হে নাচ দেখে ফেলেছি - দেখে ফেলেছি, তখন তারা ভীষণ লজ্জা পেতো 🫣🫣🫣🫣 বিকেলটা ছিল অনেক লম্বা,শেষ হইতো না। তখন খেলতাম চোর- পুলিশ, লুকা-চুরি, ইচিং বিচিং, কুতকুত, বউছি, ফুলের টোকা, বরফ পানি, ছোঁয়াছুঁয়ি, সাতচারা, ডাংগুলি, মাংশ চোর, সিগারেটের আর ম্যাচের বক্স দিয়ে তাস খেল, লাটিম সহ আরও কতো কী, মনেও নেই। খুব ছোটরা খেলার বায়না ধরলে তাদেরকে "দুধভাত" হিসেবে খেলায় নিতাম, তবুও ছোট বলে তাকে বঞ্চিত করতাম না। ঝগড়া হলে তাহলে কাইন আঙুলে আড়ি নিতাম, দু দিন কথা বলতাম না। তারপর আবার আনুষ্ঠানিক ভাবে দুই আঙুলে " ভাব" নিতাম। তখন আবার রক্তের বান্ধবীর প্রচলন ছিল। কারও হাত কাটলে ছুটে যেতাম রক্তের সই পাতাতে। আমার কাটা আঙুলের সাথে ভাল আঙুল মিলিয়ে হতাম "রক্তের বান্ধবী, কোনদিন এই বন্ধুত্ব যাবেনা"। কই গেল আমার সেই বান্ধবী গুলা। মারবেল দিয়ে বিড়িং খেলা হত। দামি খেলনা ছিলো রবারকোপ আর পিস্তল। টাকাওয়ালা বাবার মেয়েরা খেলত ব্যাটারির পুতুল দিয়ে। পুতুলের সুইচ অন করলেই বাজত ‘চল ছাইয়া ছাইয়া’ গান। বেশিরভাগ মেয়েদের হাড়িপাতিল থাকতো অনেকগুলা। সকাল হলে ভাত রান্না করতো আবার। সন্ধ্যা হলেই শুরু হত যন্ত্রণা। বই খাতা খুলে পড়তে বসা লাগবে। সবার আগে পড়তাম সমাজ। চার্জার লাইটগুলা চার্জ দেয়া লাগতো,কখন কারেন্ট যাবে বলা যায় না,বাড়ির কাজও হবে না। অংক করতে বিরক্তি থেকে মুক্তি পেতে দোয়া করতাম, "আল্লাহ, কারেন্ট যা"। যেই কারেন্ট যেত অমনি সবাই একসাথে চিৎকার করে বেড়িয়ে আসতাম ঘর থেকে। শুরু হয় নতুন খেলা, 'চোখ পলান্তিস' নাইলে 'বরফ পানি'। বড়রা বিরক্ত হয়ে। তখন পাড়ায় পাড়ায় এত মসজিদ ছিল না এবং মসজিদে মাইকো ছিল না, ছিলোনা রমজান মাসের ইফতারের ও সেহরির সময়সূচীর কোন ক্যালেন্ডার, তখন সেহেরী ইফতারির সময় আযানের মাধ্যমে এবং পাড়ার কোন মুরুব্বির ঢং ঢং বেলের শব্দ জানতে পারতাম, ইফতারীর পূর্বে অনেক সময় আযান আথবা ঢং ঢং বেলের শব্দ কোনটাই ক্লিয়ার বোঝা যেত না বলে আমাদের মায়েরা বাড়ির ছোট ছেলে মেয়েদের আযান দিচ্ছে কিনা বাইরে থেকে শুনে আসতে বলতো, তখন আমরা তাড়াতাড়ি খাওয়ার লোভে বাইরে গিয়ে নিজেই আজান দিয়ে বাড়িতে এসে বলতাম আম্মা আযান দিয়েছে 🫣 আমি খাই তোমরা পরে খেয়ে খাও🤪🤪🤪 ( ছোট বলে নিজে তো আর রোজা করতাম না তো🤪🤪🤪 🫣) ঈদের চাঁদ উঠলে সেই আনন্দর কথা লিখে বোঝাতে পারবো না, পুরো মহল্লায় মিছিল করতাম। তখন সম্ভবত ক্লাস টুতে একটা পড়া ছিল : আজ ঈদ, ঈদগাহে যাবো, ফিরনী সেমাই খাবো, কোলাকুলি করবো, কত মজা হবে। কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী সেই দিন 😯🤔🤔🤔

No comments:

Post a Comment