Showing posts with label RELIGION. Show all posts
Showing posts with label RELIGION. Show all posts

Tuesday, 29 September 2009

বিজ্ঞান শিক্ষা বনাম বিজ্ঞান মনস্কতা

শিরোনামটি পড়ে অনেকের মধ্যেই বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।আমরা সমাজতন্ত্র বনাম পুজিবাদ বিতর্ক, শচীন বনাম ওয়ার্ন দ্বৈরথ,theism বনাম deism তত্ত্বালোচনা-এই ধরণের ক্ষেত্রে সাধারণত ‘বনাম’ শব্দটি ব্যবহার করে অভ্যস্ত। বিশেষত যখন বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞানমনস্কতার মধ্যে আপাত কোন বিরোধ থাকার কথা নয়,বা বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞান মনস্কতা আপাত দৃষ্টিতে মুখোমুখী দাঁড়ানোর কথা নয়,সেখানে এদের মাঝে ‘বনাম’ শব্দের অবির্ভাব ভুরু কুচকানোর মত ব্যাপার বৈকি। সত্যি কথা বলতে বিজ্ঞান শিক্ষার বিপরীতে বিজ্ঞান মনস্কতা এই বিতর্কের আবির্ভাবই স্বাভাবিক বিচারে বিষ্ময়কর হওয়ার কথা।কিন্তু আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একদিকে বিজ্ঞানের ছাত্রটি কুসংস্কারাচ্ছান্ন,অপরদিকে সাহিত্যের ছাত্রটি মুক্তমনা-এমন দৃশ্যপট মোটেও ব্যতিক্রম নয়। অর্থাৎ একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হলেই যে সে বিজ্ঞানমনস্ক হবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। বরং নিউটন-আইনস্টাইন পড়েও একজন বিলক্ষণ যুক্তিহীন হয়ে গড়ে ওঠে, প্রাণীবিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও একজন ‘বিশ্বাস’ করেন বিবর্তনবাদ একটি ভুয়া মতবাদ-এমনটাই আমাদের দেশের স্বাভাবিক দৃশ্য। কাজেই আমাদের প্রথাগত বিজ্ঞানশিক্ষা যে সুবিশাল একটি গলদ নিয়ে গঠিত এবং শুধুমাত্র বিজ্ঞানশিক্ষাই যে যুক্তিবাদিতা নিশ্চিত করে না সেটাই আমার এই লেখার মূল উপজীব্য।
বছরখানেক আগে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। লেখাটা অনেকটা এরকম ছিলঃ
‘আহমেদ শরীফ বা হুমায়ুন আজাদ,কেউই বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন না,দর্শন-সাহিত্যের ছাত্র হয়ে তারা বিজ্ঞানমনস্কতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের দেশের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল শিক্ষার ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে ততখানি বিজ্ঞানমনস্কতা,কিংবা বিজ্ঞানমনস্কতাকে প্রতিষ্ঠিত করার সাহস কোনটাই খুব একটা দেখা যায় না/নি (ব্যতিক্রম ব্যতীত)…কিংবা আরুজ আলী মাতব্বরের কথাই ধরা যাক,বরিশালের কোন এক গন্ডগ্রাম থেকে উঠে আসা একজন ‘স্ব’শিক্ষিত ব্যক্তি,যিনি নিজের চেষ্টায় বিজ্ঞানের আধুনিকতম তত্ত্বগুলো বোঝার চেষ্টা করলেন এবং শেষ পর্যন্ত এমন কিছু প্রশ্ন রাখলেন যা ঘুণে ধরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের মূলে কুঠারাঘাত হানল!আর আমরা ঢাকা শহরের থেকে,বিজ্ঞানের হাজারও সুযোগ সুবিধা চোখ বুজে গ্রহণ করে,ফিজিক্স কেমিস্ট্রি ম্যাথ একগাদা টিচারের কাছে প্রাইভেট পড়ে নামের আগে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বসিয়ে শেষ পর্যন্ত সেই গোড়া,অন্ধ আর কুসংস্কারাচ্ছন্নই থেকে যাচ্ছি।’
— লেখাটার একটু গভীরে যেতে হলে আমাদেরকে আমাদের মানসিক বৈকল্যের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। আমাদের প্রথম ও প্রধান মানসিক বৈকল্য হচ্ছে আমরা কোন কিছু জানার আগেই নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে ফেলি(বা ফেলানো হয়);এরপর যে যে বিষয় বস্তু ঐ ঐ বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক সেগুলোকে আমরা অস্বীকার করি কিংবা অবাস্তব/অসম্ভব দাবি করি। অথচ এই দাবিটি করছিই আমরা একটি অযৌক্তিক Assumption কে ভিত্তি করে। সমস্যাটা হচ্ছে,আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এই অযৌক্তিক assumption কে নির্মূল করা তো দূরে থাক,প্রকারান্তে এই অবাস্তব assumptionকেই প্রতিষ্ঠিত করে মুক্তচিন্তার পথকে বাধাগ্রস্ত করছে। এক কথায় বিজ্ঞানের মূল উৎস যেখানে, ‘কি কেন এবং কিভাবে’ এই প্রশ্ন করা কিংবা কার্যকারণ অনুসন্ধান করা-এই বেসিক বিষয়ে বিস্মৃত রেখে আমাদেরকে বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।ফলে নিউটনের সূত্র টপাটপ গলধঃকরণ করে কিংবা পাঠ্যবইয়ের বাইরেও জ্ঞান আহরণ করার পরও আমাদের মধ্যে যুক্তিবোধ জাগ্রত হচ্ছে না।কারণ আমাদেরকে চিন্তা করানো শিখানোই হয়েছে ভুল একটা পদ্ধতিতে। ভুলভাবে চিন্তা করার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে আমাদেরকে এই শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে।
বিজ্ঞান কি? আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি গুলে খাওয়া কিংবা ফ্লুইড মেকানিক্সের নেভিয়ার স্ট্রোক ইকুয়েশনে প্যাশনেট হওয়া কিংবা অয়লারের কঠিন গাণিতিক তত্ত্বে পারদর্শী হওয়াই কি বিজ্ঞান? আমি অনেক ফিজিক্স জানি,গণিতের পোকা-তাতেই কি আমার বিজ্ঞান শিক্ষা সার্থক হয়ে গেল? আমার উত্তর হচ্ছে না। বিজ্ঞান হচ্ছে একটা দর্শন,যে দর্শনের মূল ভিত্তিটাই হচ্ছে প্রশ্ন করা,কার্যকারণ অনুসন্ধান করা। সেই প্রশ্ন করা আর সত্যান্বেষণ করার চেতনা বা মানসিকতা যদি আমার মধ্যে তৈরি না হয় তবে হাজার হাজার বই পড়ে আমি হয়তো জ্ঞানী হতে পারবো কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক হতে পারবো না। আর বিজ্ঞান পড়ে যদি বিজ্ঞানমনস্কতাই তৈরি না হয় তবে এর চেয়ে হতাশাজনক আর কিছু হতে পারে না,কিন্তু এই চিত্রটাই আমাদের দেশে বর্তমানে সবচেয়ে common।সমস্যাটা এখানেই।
সমস্যাটার প্রকার দুই রকম।প্রথমত,আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখন Two M সিনড্রোমে ভুগছে- marks and money. লেখাপড়ার মূল উদ্দেশ্য ভাল নম্বর পাওয়া এবং শিক্ষাজীবন শেষে ভালো বেতনের চাকরি পেয়ে সুন্দরী বউ ঘরে তুলে সংসারী হওয়া-এটাই হচ্ছে ভেতো বাঙ্গালির কমন জীবন দর্শন,কিংবা আরেকটু বাড়িয়ে বলা যায়,এটিকেই বাঙ্গালি জীবনের সর্বোচ্চ সার্থকতা(মতান্তরে সাফল্য) হিসাবে বিশ্বাস করে। যেখানে ভালো মার্কস পেয়ে পাস করে ভালো চাকরি করে সংসারী হয়ে ‘দিন আনে দিন খায়’-এর আধুনিক শিক্ষিত ভার্সনে পরিণত হওয়াটাই জীবনের মূল উপজীব্য সেখানে মুক্তচিন্তার চর্চা করা কিংবা বিজ্ঞানমনস্ক হওয়াটা শুধুমাত্র অপ্রয়োজনীয়ই নয়,আজগুবি ধারণাও বটে। আর এই কারণেই প্রকৃতিতে সুজলা সুফলা কিংবা সংস্কৃতিতে রত্নভান্ডারি হওয়ার সত্ত্বেও বিজ্ঞানমনস্কতা ও বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রটিতে বাঙ্গালির পদচারণা হতাশাজনক এবং পশ্চাদপদ।
দ্বিতীয় সমস্যাটা আরও করুণ। শিক্ষাব্যবস্থার যন্ত্রণাদায়ক যন্ত্রণা আর শিকলের বলয় ভেঙ্গে কেউ কেউ একটু মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়ার পথে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত সেই Pre-assumption এর কারণে খাঁচা ভেঙ্গে মুক্ত বিহঙ্গ হওয়ার ক্ষেত্রে ট্র্যাজিক পরিণতি ঘটে। একারণে সে হয়তো বিজ্ঞানী হয়,কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক হয় না;প্রকৌশল বিদ্যার আধুনিক তত্ত্বে উচ্চশিক্ষা নেয় কিন্তু বিজ্ঞান দর্শনের সন্ধান পায় না; আধুনিক পদার্থবিদ্যার শিক্ষক হয়েও যুক্তিবাদী হয় না,স্টিফেন হকিং এর ভক্ত হয়েও মুক্তমনা হয় না। এই বৈপরিত্যগুলোই শুধু বিষ্ময়করই নয়, সবচেয়ে বেশি পীড়াদায়ক।
এই সমস্যাগুলোর উদ্ভব আমাদের সমাজের প্রচলিত কিছু সংস্কার থেকে।ছোট থেকে আমাদের শেখানো হয় গুড বয় হতে।গুড বয়ের সংজ্ঞা কি? যে বিনা বাক্যব্যয়ে সব মেনে নেয়,কথার বিপরীতে পালটা যুক্তি দেয় না, এমনকি প্রতিবাদও করে না। প্রতিবাদ করাটা এক অর্থে আমাদের গুরুজনদের কাছে অভদ্রতার প্রতীক,রীতিমত যেন এক ঝামেলা। গায়ে কাদা না লাগিয়ে সাক্ষী গোপাল হিসেবে একটা কুপমন্ডূক জীবন কাটিয়ে দিতে পারলেই বাঙালি মহাখুশি। রবীন্দ্রনাথ বোধহয় এজন্যই বলেছিলেন-‘ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন’!!! কিংবা নজরুলের শেষ ভাষণের এই বাক্যটির কথাই ধরা যাক-‘আমাকে বিদ্রোহী বলে খামোখা লোকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। এই নিরীহ জাত টাকে আচড়ে কামড়ে তেড়ে নিয়ে বেড়াবার ইচ্ছা আমার কোনদিনই নেই। আমি বিদ্রোহ করেছি, বিদ্রোহের গান গেয়েছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচার এর বিরুদ্ধে। যা মিথ্যা, কলুষিত, পুরাতন, পঁচা, সেই মিথ্যা সনাতনের বিরুদ্ধে, ধর্মের নামে ভন্ডামি ও কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে।’ এই নজরুল যখন তুরস্কের খিলাফত বিলুপ্তির পর লিখলেন ‘তুর্কি মহিলার ঘোমটা খোলা’ তখন তিনি আমাদের সমাজে ‘শয়তান’ আখ্যায়িত হলেন।কারণ তিনি শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন নি,প্রতিবাদ করেছিলেন এই সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে,প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন আমাদের ঘুনে ধরা প্রাচীন অর্বাচীন চিন্তা-ধারার বিরুদ্ধে।তাই তিনি হয়ে পড়লেন বেয়াদব,শয়তান, ‘শান্তি’ বিনষ্টকারী। এখন অবশ্য বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে যারা অতি সাম্প্রদায়িক এবং ধর্মান্ধ তাদের কাছে নজরুলই হচ্ছেন একমাত্র যক্ষের ধন রবীন্দ্রনাথ নামক মালাউনের বিপরীতে!!!! এক মালাউনের লেখা গান কেন আমাদের জাতীয় সংগীত তা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাকা চৌধুরী জাতীয় সংসদে বসেই ব্যাপক আহাজারি করেছিলেন।তখন কিন্তু নেহায়েৎই শিক্ষিত শ্রেণীর কিছু সাহসী মানুষ ব্যতীত আপামত জনগোষ্ঠীর মধ্যে আহামরি কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি,কারণ প্রতিক্রিয়া দেখানোটা আমাদের সমাজে অভদ্রতা,যদি সেটা হয়ে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তাহলে তো কথাই নেই।একারণে তথাকথিত নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীগণ আর টকশোএর বুদ্ধিজীবীগণ তাদের দেশ উদ্ধারের বক্তৃতায় এ বিষয়গুলোতে নীরব থাকেন।
প্রসঙ্গক্রমে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা বলতে ইচ্ছা করছে। আমাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে এটুকু জানতে পেরেছি উনি বাংলা সাহিত্যের একজন দিকপাল ছিলেন,বাংলার গদ্যরূপের জনক এবং উনি একজন সমাজ সংস্কারক। কিন্তু যে বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সচেতনভাবে কিন্তু অবশ্যই থাকা উচিত ছিল সেটি হচ্ছে,দিনান্তে বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন সমাজ বিদ্রোহী। তার বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল কিন্তু নির্দোষ প্রশ্নের মধ্য দিয়ে,যে প্রশ্নে রিচুয়াল অপেক্ষা নৈতিকতা-মানবিকতা বেশি প্রাধান্য পেয়েছিল।যেকোন বিদ্রোহ-বিপ্লবের সূচনা হয়েএক বা একাধিক প্রশ্নের ভিত্তিতে।প্রশ্ন ব্যতীত বিপ্লবের প্রয়োজন অনুভূত হয় না।প্রশ্ন ব্যতীয় বিদ্রোহ সূচিত হয় না। আমাদের সমাজ সেই প্রশ্ন করাকেই নিরুৎসাহিত করে,প্রশ্নকর্তাকে আঘাতে জর্জরিত করে,তাকে সমাজচ্যুত করতে উঠে পড়ে লাগে। ঈশ্বরচন্দ্র একজন প্রশ্নকর্তা,সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তিনি সমাজে বিপ্লবের জন্ম দিয়েছিলেন বলে তৎকালীন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গরা তাকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে মানুষের সাথে তাকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল। সেকালে কলকাতার বাবুরা সন্ধ্যায় বৈঠকখানায় মদ গাজার আসরে বাইজির সাথে ফস্টি নষ্টি করতেন উপরতলায় স্ত্রী সন্তানের উপস্থিতি সত্ত্বেও।তাতে জাত-পাতের কোন ক্ষতি হত না,ধর্ম অক্ষুণ্ণ থাকতো।কিন্তু বিধবার বিয়ে দিলে বা স্ত্রীলোক থিয়েটার করলে কিংবা লেখাপড়া শিখলে জাত নষ্ট হয়ে যেত,ধর্ম গেল ধর্ম গেল রব উঠতো। বাঙ্গালির এই দ্বিচারিতা এখনও বিদ্যমান।তবে ঈশ্বরচন্দ্র,রামমোহন,ডিরোজিওর মত কিন্তু বেয়াদব,নষ্ট মানুষ জন্মেছিল বলেই গত ২০০ বছরে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের জীবনাচরণে প্রভুত ‘সভ্যতা’-র উন্মেষ ঘটেছে। মূলত পশ্চাদপদ,অসভ্য ও বর্বর হিন্দুসমাজকে মোটামুটিভাবে একটি সহনশীল রূপে দাঁড় করানোই এই ক্ষণজন্মাদের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। কিন্তু আমাদের পাঠ্যপুস্তকে উনাদের এই ভূমিকার কথা লেখা আছে কোথায়? নেই!! থাকবে না তো,কারণ থাকলে আমরা প্রশ্ন করতে শিখবো,বিদ্রোহ করতে শিখবো,পরিবর্তনের ডাক দিতে শিখবো। আর প্রশ্ন,বিদ্রোহ আর পরিবর্তন-আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় জুজুর ভয় বুঝি এগুলোই!!!!
কিছুটা বিষয়চ্যুত হয়ে গেলাম লিখতে লিখতে। জোর করে তাহলে একটু প্রসঙ্গে আসি। বিদ্যাসাগর কিন্তু সমাজ সংস্কারক,সাহিত্যের মানুষ,বিজ্ঞানী নন। অথচ তিনি গ্রামে গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন শিশুদের।শিখিয়েছে আহ্নিক গতি বার্ষিক গতির ব্যাপার স্যাপার। অকপটে বলেছেন কোন রথের চাকায় ভর করে সূর্য যাতায়াত করে না,বলেছেন সূর্য পৃথিবীর নিচে কোথাও গিয়ে চোখ বুজে ঘুমায় না। এই হচ্ছে বিজ্ঞান শিক্ষা,এই হচ্ছে বিজ্ঞানমনস্কতার সূচনা। এই কাজটি তিনি করেছিলেন কারণ তিনি বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন,যে বিজ্ঞানমনস্কতার ধার ধারেন না আমাদের ফিজিক্স কেমিস্ট্রি জুলজি বা প্রকৌশলীর শিক্ষকগণ।(এখানে একটা বিষয় বলা অবশ্য কর্তব্য যে,বিদ্যাসাগর সরাসরি ধর্মাচরণের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছেন এমন নজির পাওয়া যায়নি,কিন্তু প্রথাগত চিন্তার বাইরে গিয়ে নতুন করে সমাজটিকে দেখার শিক্ষাটা তিনি দিয়ে গেছেন ভাল করেই।)
লেখাটা আরো দীর্ঘায়িত হয়ে যাওয়ার আগে যবনিকাপাতের দিকে চলে যাই! লেখার মূল বার্তাটি হচ্ছে,শুধু বিজ্ঞান পড়লেই হবে না,বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। আর সেটা হওয়ার জন্য বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হচ্ছে প্রশ্ন করার মানসিকতা,বিদ্রোহ করার বাসনা আর পরিবর্তনের ডাক দেয়ার সাহস! সত্যিকারের যুক্তিবাদিতা আসলে এগুলোর মধ্যেই নিহিত।