Sunday, 12 January 2025
বাড়ি বা ডিভাইসের চেয়ে সন্তান বড়
বাড়ি বা ডিভাইসের চেয়ে সন্তান বড়
জসিম মল্লিক
১
বিদেশে যারা থাকেন বিশেষকরে উত্তর আমেরিকায় তাদের প্রায় সবারই ধ্যানজ্ঞান একটা বাড়ির মালিক হওয়া। মনে হয় তারা বিদেশে আসেন একটা বাড়ি কেনার জন্য। ভাবখানা এমন যেনো তারা কোনোদনি বাড়িতে থাকেন নি। তাদের স্বপ্নে, কল্পনায়, ধ্যানে, জ্ঞানে, বৰ্তমানে, ভবিষ্যতে বাড়ি ছাড়া আর কিছু নাই। রাস্তায় হাঁটতে বাড়ি, গাড়ি ড্রাইভ করতে বাড়ি, বাসে ট্রেনে বাড়ি, শপিং মলে বাড়ি, কফি শপে বাড়ি, ওয়াশরুমে বাড়ি, আড্ডায় বাড়ি, দাওয়াতে বাড়ি। দেখেছি কোথাও দাওয়াতে গেলে যাদের বাড়ি আছে তারা আলাদা বসে এবং বাড়ি নিয়ে সুদীৰ্ঘ আলোচনায় লিপ্ত হয়। যার যত সমস্যা আছে বাড়িতে সেই সব নিয়ে কথা চলতে থাকে। তারা খেতে বসেও একই আলোচনা করে। আলোচনার অন্যতম দিক হচ্ছে বেজমেন্ট ভাড়া নিয়ে, ভাড়াটিয়ারা কেমন, ৱিয়েলটাৱ কেমন সেসব নিয়ে। অনেকে আছে বাড়ি কিনে বিরাট দায় দেনায় পড়ে যায়। মৰ্টগেজ শোধ করতে গিয়ে জীবন দিয়ে দেয়। তখন না পারে কোথাও যেতে না পারে জীবনকে উপভোগ করতে। একবার টরন্টোতে এক বাসায় গিয়েছিলাম পাত্র দেখতে, পাত্রের বাবা মায়ের সাথে আলোচনা করতে। ওমা সেই বাড়িতে যতক্ষন ছিলাম শুধু বাড়ির গল্পই করলেন। এমনকি জোর করে প্রতিটা বাথরুম পৰ্যন্ত দেখতে বাধ্য করলেন। শেষ পৰ্যন্ত পাত্র নিয়ে আর কোনো কথাই হলো না। এমন অনেক গল্প আছে। পরে কখনো বলা যাবে।
২
বাড়ি যে কেনা যাবে না তা না। অবশ্যই যাবে। একশবার যাবে, হাজারবার যাবে। একটা না দশটা বাড়ি কিনলেও কোনো সমস্যা নাই। বাড়ি নিয়ে গল্প হোক, আড্ডা হোক, শয়নে স্বপনে বাড়ি থাক তাতেও সমস্যা নাই। বাড়ির স্বপ্ন কে না দেখে। সবাই দেখে। আমিও দেখি। নিজস্ব একটা আশ্রয় থাকা কত দরকার। বাড়ি একটি ভাল ইনভেস্টমেন্টও বটে। নিরাপদ ইনভেস্টেমেন্ট। ভবিষ্যতের আশ্রয়। এজন্যতো বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশের টাকা পাচারকারীরা বাড়ি কেনে। কালো টাকা সাদা করার অন্যতম উপায়। এটা দেশেও আছে। পঁচিশ কোটি, তিরিশ কোটি টাকা দামের ফ্লাটও আছে। এগুলো নগদে কেনা। কারো কারো পনোরো বিশটা ফ্লাটও আছে ঢাকায়। বিদেশে টাকা পাচারকারীরা ব্যাংকেৱ দ্বারস্থ হয় না। সোজা ক্যাশ টাকা দিয়ে কিনে ফেলে। পাঁচ, দশ, পনেরো, বিশ, পঁচিশ মিলিয়ন ডলার দামের বাড়ি ডাল ভাত ওদেৱ কাছে। মধ্যবিত্ত যেখানে একটা বাড়ির জন্য এক/দেড় মিলিয়ন জোগাড় করতেই হিমসিম খায় সেখানে তাদের কাছে বাড়ি একটা ছেলে খেলা মাত্র। এজন্যই ট্রুডোর এই পরিণতি। ইমিগ্রেশন আর আবাসন নিয়ে যে সংকট তৈরী হয়েছে সেটার জন্য একজন নায়কের পতন। নারীদের ক্রাশের পতন!
৩
বাড়ি কিনুন, গাড়ি কিনুন, সম্পত্তি বাড়ান, গল্প আড্ডা কৱেন, বেড়ান যত পারেন, অনুষ্ঠান করেন, গান করেন, কবিতা পড়েন, গল্প উপন্যাস লেখেন, সমিতি করেন, সেমিনাৱ কৱেন, রাজনীতি করেন, দলাদলি করেন, গ্রুপিং করেন, পকিনিক করেন, পিঠা পাৰ্টি করেন, ফ্যাশন শো করেন, ব্যবসা বাণিজ্য করেন, সেলফি করেন, যতখুশী ছবি পোষ্ট করেন, লাইভ করেন, রীলস করেন, ইউটিউব করেন। কোথাও কোনো সমস্যা নাই। শুধু একটাই অনুরোধ সন্তানদের সময় দিন। তাদের পাশে থাকেন, তাদের মন বোঝার চেষ্টা করেন, তাদের বন্ধু হন। সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। কেমন বন্ধুৱ সাথে মেশে জানার চেষ্টা করেন। জোর করে কিছু চাপিয়ে দিয়েন না। একটা ঘটনা বলে শেষ করছি। বেশ অনেক বছর আগে আমি যে এলাকায় থাকি সেখানে একজন বাঙালি ফ্যামিলির ছোট্ট মেয়েটিকে একদিন পুলিশ নিয়ে যায়। মেয়েটি সম্ভবত কোনো অভিযোগ করেছিল বাবা মায়ের বিরুদ্ধে। বহুবছর সে তাদের জিম্মায় ছিল। আঠারো বছর হলে মেয়েটি মুক্ত হয়। কিন্তু বাবা মায়ের কাছে আর ফেরেনি। একদিন শুনলাম মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এই প্রবনতা বাড়ছে। যার যায় সেই জানে কি হারিয়েছে! অতএব সাধু সাবধান! মনে রাইখেন ডিভাইস আৱ বাড়িৱ চেয়েও আপনাৱ সন্তান বড়!
ঢাকা ১২ জানুয়ারী ২০২৫
canada
Subscribe to:
Posts (Atom)