ফ্রান্স একটি "উদ্ভট এবং অযৌক্তিক" সমাজ ব্যবস্থার দেশ। যেখানে মানুষ "অপদার্থ" "অযৌক্তিক" কিংবা "কান্ডজ্ঞানহীন" হতে ভালোবাসে। কয়েকটি ইউরোপিয়ান দেশ ভ্রমণ করার পর আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম। ফ্রান্সের মানুষের কান্ডজ্ঞান কম। ইংরেজিতে কথা বলার পরও জিজ্ঞেস করবে " You speak Aungley ?"। সরকারী অফিস গুলোতে নিয়ম নীতির বালাই নাই বললেই চলে। একই অফিসের এক অফিসার বললো এক কথা আরেক অফিসার আরেক কথা। উদাহরণস্বরূপ এর কথাই বলা যায়, Bobigny Prefecture এক রকম নিয়ম Nanterre Prefecture আরেক নিয়ম। আমার প্রশ্ন হল কেনো এমন হবে ? জাতীয়ভাবে নিয়মগুলো একরকম হওয়ার কথা।
Prefecture, OFII, Social Security এই অফিস গুলোতে বহু ভাষাভাষী মানুষ যায়, কিন্তু অফিসের কর্মকর্তারা এক লাইন ইংরেজি বলতে পারেনা। একটা মানুষ ১ মাস বা ২ মাসের মধ্যে ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলবে এটা কিভাবে তারা আশা করে ? বিশেষকরে OFIIএবং Prefecture জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক অফিসের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। যেহেতু বহু দেশ থেকে মানুষ এখানে আসে অন্ততঃপক্ষে বেসিক ইংরেজি জানা কর্মকর্তা নিয়োগ করা উচিত। এসব অফিস গুলোতে গেলে বলে ফরাসি ভাষা জানা কাউকে নিয়ে যেতে।
মানুষের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয় ফ্রান্সের মানুষ জানেনা। ফরাসিদের নাক উঁচু, ভাষা এবং জাতীয়তা নিয়ে এমন হাস্যকর গৌরব কেউ করেছে কিনা আমি জানিনা। ডাক্তার, ব্যাংক কিংবা আইনজীবীর কাছে যাবেন ? এদের মধ্যে ২/১ জন ছাড়া বাকিরা ইংরেজি জানেনা। আপনার মনে হবে দুনিয়া বিচ্ছিন্ন এক জনপদে আপনি এসে পড়েছেন। তারা বলে বেড়ায় ফ্রান্স মানবাধিকারের দেশ। বিশ্বাস করুন, মানবাধিকারের ছিটে ফোঁটাও নেই এখানে। মানবাধিকার শুধু কাগজে কলমে, বাস্তবে কোনো প্রয়োগ নাই। সামাজিক বৈষম্যের তীর্থস্থান বললে ভুল হবেনা ফ্রান্সকে।
অনেক বাঙালি বলে " ফরাসিরা ইংরেজি জানে কিন্তু বলেনা" ? কেন বলেনা ? ভারতীয়রা কি ইংরেজি বলেনা ? ভারতীয়দের দেশ প্রেম কি কম ?
আরেকটা সমস্যা হলো, পণ্যের গায়ে ইংরেজি কোনো তথ্য নেই, যার দরুন হালাল/হারাম, পুষ্টি কিংবা এলাৰ্জী সম্পর্কিত বিষয় জানা যায়না। পাবলিক প্লেস এবং ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবস্থায় ইংরেজিতে তথ্য খুবই অপ্রতুল।
বাংলাদেশ থেকে আমরা জেনে আসছি প্যারিস একটি রোমান্টিক শহর। আসলে কি তাই ? না মোটেওনা, বরং এটি একটি হিপোক্রেটদের শহর। জরুরি মুহূর্তে টয়লেট ব্যবহার করতে একটি রেস্তোরা বা কফি শপে ঢুকলেন, দোকানিকে বললেন টয়লেট ব্যবহার করতে চান, জিজ্ঞেস করবে কিছু কিনেছেন কিনা। মুখের উপর না বলে দিবে যদি কিছু না কেনেন। ফলাফল যত্রতত্র মূত্রের এবং মনুষ্য বিষ্ঠার গন্ধ পাবেন। যে যেখানে পারছে অবাধে ত্যাগ করছে।
মনুষ্য বিষ্ঠা যতটা দূষিত করেছে প্যারিসকে তারচেয়েও বেশি দূষিত করেছে আলজেরিয়ান, মরোক্কান এবং তিউনিসিয়ান মানুষরা। চুরি, ডাকাতি, বোমাবাজি, মাদক পাচার এমন কোনো কাজ নেই তারা করেনা। আলজেরিয়ান, মরোক্কান এবং তুনিসিয়ানরা মেট্রো ট্রেনে মারামারি থেকে শুরু করে নারীদের যৌন হয়রানি, স্বর্ণালংকার এমনকি মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। পুলিশ নির্বিকার এসব বিষয়ে। এমনকি আলজেরিয়ান এবং তিউনিসিয়ানদের দিকে তাকালেও তারা মারতে আসে। আলজেরিয়ান, মরোক্কান এবং তিউনিসিয়ান, মুসলিম এ তিন দেশের বংশোদ্ভুত নাগরিকরা প্যারিসকে নরকে পরিণত করেছে। এদেরকে প্যারিসের লজ্জা বললে কোনোক্রমেই অত্যুক্তি হবেনা।
ফ্রান্সের পুলিশের মতো এমন Idiot Police আছে কিনা সন্দেহ। আমি বহুবার দেখেছি অপরাধীকে না ধরে তারা ভিকটিম কে হয়রানি করে। "পুলিশিং" বলতে যে একটা বিষয় আছে সেটা তারা জানেনা। সেন্ট্রাল প্যারিসের গার্দু নোডে দেখেছি, সিগারেট বিক্রি নিয়ে আলজেরিয়ান এক ছেলে কালো এক ছেলেকে চুরি দিয়ে কুপিয়ে সবার সামনে দৌড়ে পালাচ্ছে। পুলিশের সামনে দিয়ে অপরাধী দৌড়ে পালাচ্ছে কিন্তু পুলিশ এসে রক্তাক্ত কালো ছেলেটাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো। এরকম হাজারো ঘটনা ঘটেই চলছে। চুরি ছিনতাই রাহাজানির কোনো বিচার নাই। কিছুদিন আগে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী আক্রমণের শিকার হয় কাজ শেষ করে ফেরার সময়। এমন নৃশংস এবং বর্বর আক্রমণ বাঙালিদের উপর আর হয়নি। পুলিশের কাছে অভিযোগ করে কোনো লাভ হয়নি। পুলিশের সামনে অবৈধ সিগারেট এবং মাদক বিক্রি করে কিন্তু পুলিশ নির্বিকার।
ফ্রান্সের একটা পাসপোর্ট এবং রেস্টুরেন্টে কাজ করে ২০০০ ইউরো ইনকাম করা মানেই নয় আপনি ফ্রান্সের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক। আপনার গায়ের রং যদি তামাটে এবং কালো হয় তাহলে আপনি তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক। সর্বক্ষেত্রে আপনি বৈষম্যের শিকার হবেন। ফরাসিরা চায় অফিস আদালতে গিয়ে আপনি নত এবং কুর্নিশ করে কথা বলবেন। নাহলে বিনাকারণে আপনার কাজ বিলম্বিত করা হবে। অফিস কিংবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা যায়না। অফিসের কর্মকর্তার মর্জির উপর নির্ভর করবে আপনার কাজ কখন শেষ হবে। কোনো দায়িত্ব, জবাবদিহিতা নাই।
সবচেয়ে অমানবিক বিষয় হলো কাজ করিয়ে বেতন না দেয়া। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের দিয়ে কাজ করিয়ে বেতন না দেয়ার অভিযোগ প্রচুর। অনেক লম্বা শিফটে কাজ করিয়ে নেয় এবং নামে মাত্র টাকা দিয়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৭ দিন কাজ করতে হয়। মাসের পর মাস বেতন আটকে রাখে। বৈধতা থাকলে সময়মত বেতন পাওয়া যায়। আলজেরিয়ান, মরোক্কান কিছু রেস্টুরেন্টের মালিক শ্রমিকদের বেতন না দিয়েই বিদায় করে দিয়েছে। এমন কয়েকজন বাংলাদেশীর সাথে কথা হলো আমার। একজনের ৫ মাসের বেতন না দিয়ে তাকে কাজ থেকে বাদ দিয়েছে। আরেকজনকে ২ মাসের বেতন না দিয়ে উল্টো মারধর করেছে তিউনিসিয়ান মালিক। আইনের শাসন কোথায় ? কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নিরাপত্তার বিষয়টি একেবারেই উদাসীন। ৩ জন কর্মীর জায়গায় ১ জনকে দিয়েই সব কাজ করানো হয়, সেটা হোক বাংলাদেশী মালিক কিংবা আলজেরিয়ান মালিক।
ইউরোপিয়ান দেশ কিংবা পরাশক্তি হিসেবে ফ্রান্সের আবাসন ব্যাবস্থা চরম নিম্নমানের। অধিকাংশ বাড়িঘর সেকেলে। উচু দালান থেকে মনে হবে খুপড়ি ঘর। ৫ ডেসিমেলের একটা জায়গায় ৫ জন ৫ টা খুপড়ি ঘর উঠিয়ে বসবাস করছে। খুপড়ির উপরে আবার আরেকতলা বানিয়েছে সিঁড়ি দিয়ে ! ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কথা না বলাই ভালো। কিচেন গুলো এত ছোট ২ জন মানুষ দাড়ানো যায়না একসাথে এবং কোনো ফ্যান নেই ধোঁয়া নির্গত করার। আর টয়লেট !!! সবচেয়ে ছোট হলো টয়লেট। ৩ পাশে গ্লাস এক পাশে প্লাস্টিকের পর্দা দিয়ে বানানো হয় শাওয়ার রুম। এটা এতই ছোট যে, হাত নড়াচড়া করা যায়না। জায়গা স্বল্পতার কারণে কমোড এমন ভাবে বসানো হয় ওয়ালের সাথে, বাধ্য হয়ে আপনাকে বেঁকে বসতে হবে। অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশের তুলনায় ফ্রান্সের আবাসন মান অত্যন্ত জগন্য। ৫ এমনকি ৬ তলা বাড়িতে লিফট নেই। সিঁড়ি দিয়ে উঠলে মনে হবে, অন্ধকার কোন গুহায় ঢুকছেন।
এবার আসা যাক পণ্যের মূল্যের কথায়। ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে সেবা এবং পণ্যের মূল্যে যৌক্তিক। ইংল্যান্ড, জার্মান, নেদারল্যান্ড কিংবা ইতালি সব দেশে সর্বত্র মোটামুটি একদাম অর্থাৎ শহরে গ্রামে পণ্যের মূল্য এক। কেবল ব্যতিক্রম ফ্রান্সে। একটা
কফি এক শপে ১.২০ পয়সা ঠিক তার পাশের শপেই ৪.২০ পয়সা !!! হালাল মাংস কিনতে গিয়েও আপনি প্রতারণার শিকার হবেন। আলজেরিয়ান শপে আমাকে খাসির মাংস বলে গরুর মাংস দিলো। রান্না করার পর আমি নিজেই বেকুব বনে গেলাম। এক বৃটিশ সেদিন বললো ফ্রান্স "ব্যয়বহুল হওয়ার জন্যই" ব্যয়বহুল। কোন কারণে ফ্রান্স এতো ব্যয়বহুল ? এই প্রশ্নের উত্তর নাই।
ফ্রান্সের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। সীমান্তে কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই, যখন তখন যেকেউ ঢুকতে পারে। সন্ত্রাসবাদী হামলার পরও অবাধে মানুষ ঢুকছে, বের হচ্ছে। সেদিন আতশবাজি দেখতে গেলাম। পুলিশের ৪/৫ গাড়ী দিয়ে ব্যারিকেড তৈরী করে গেট বানিয়েছে। কোনো মেটাল ডিটেক্টর নেই, নেই কোনো আর্চওয়ে গেট। পুলিশ নামে মাত্র চেক করছে। সন্ত্রাসবাদী হামলার কথা চিন্তা করে আমি ভয়ই পেলাম।
ফ্রান্সে সোশ্যাল বেনিফিট অনেক দেশের চেয়ে ভালো, এতে সন্দেহ নাই। কিছু টাকা বেশি পাওয়াই কি সব ?
ফ্রান্সে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় তুমি ছোট আমি বড় !! অন্য ইউরোপিয়ান দেশে এবং আমেরিকাতে এমন বৈষম্য নেই।
বি.দ্রঃ সেল ফোনে লিখিত বাংলা বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কাউকে ছোট করে কিংবা আঘাত দেয়ার জন্য এই লেখা নয়। ধন্যবাদ
Prefecture, OFII, Social Security এই অফিস গুলোতে বহু ভাষাভাষী মানুষ যায়, কিন্তু অফিসের কর্মকর্তারা এক লাইন ইংরেজি বলতে পারেনা। একটা মানুষ ১ মাস বা ২ মাসের মধ্যে ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলবে এটা কিভাবে তারা আশা করে ? বিশেষকরে OFIIএবং Prefecture জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক অফিসের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। যেহেতু বহু দেশ থেকে মানুষ এখানে আসে অন্ততঃপক্ষে বেসিক ইংরেজি জানা কর্মকর্তা নিয়োগ করা উচিত। এসব অফিস গুলোতে গেলে বলে ফরাসি ভাষা জানা কাউকে নিয়ে যেতে।
মানুষের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয় ফ্রান্সের মানুষ জানেনা। ফরাসিদের নাক উঁচু, ভাষা এবং জাতীয়তা নিয়ে এমন হাস্যকর গৌরব কেউ করেছে কিনা আমি জানিনা। ডাক্তার, ব্যাংক কিংবা আইনজীবীর কাছে যাবেন ? এদের মধ্যে ২/১ জন ছাড়া বাকিরা ইংরেজি জানেনা। আপনার মনে হবে দুনিয়া বিচ্ছিন্ন এক জনপদে আপনি এসে পড়েছেন। তারা বলে বেড়ায় ফ্রান্স মানবাধিকারের দেশ। বিশ্বাস করুন, মানবাধিকারের ছিটে ফোঁটাও নেই এখানে। মানবাধিকার শুধু কাগজে কলমে, বাস্তবে কোনো প্রয়োগ নাই। সামাজিক বৈষম্যের তীর্থস্থান বললে ভুল হবেনা ফ্রান্সকে।
অনেক বাঙালি বলে " ফরাসিরা ইংরেজি জানে কিন্তু বলেনা" ? কেন বলেনা ? ভারতীয়রা কি ইংরেজি বলেনা ? ভারতীয়দের দেশ প্রেম কি কম ?
আরেকটা সমস্যা হলো, পণ্যের গায়ে ইংরেজি কোনো তথ্য নেই, যার দরুন হালাল/হারাম, পুষ্টি কিংবা এলাৰ্জী সম্পর্কিত বিষয় জানা যায়না। পাবলিক প্লেস এবং ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবস্থায় ইংরেজিতে তথ্য খুবই অপ্রতুল।
বাংলাদেশ থেকে আমরা জেনে আসছি প্যারিস একটি রোমান্টিক শহর। আসলে কি তাই ? না মোটেওনা, বরং এটি একটি হিপোক্রেটদের শহর। জরুরি মুহূর্তে টয়লেট ব্যবহার করতে একটি রেস্তোরা বা কফি শপে ঢুকলেন, দোকানিকে বললেন টয়লেট ব্যবহার করতে চান, জিজ্ঞেস করবে কিছু কিনেছেন কিনা। মুখের উপর না বলে দিবে যদি কিছু না কেনেন। ফলাফল যত্রতত্র মূত্রের এবং মনুষ্য বিষ্ঠার গন্ধ পাবেন। যে যেখানে পারছে অবাধে ত্যাগ করছে।
মনুষ্য বিষ্ঠা যতটা দূষিত করেছে প্যারিসকে তারচেয়েও বেশি দূষিত করেছে আলজেরিয়ান, মরোক্কান এবং তিউনিসিয়ান মানুষরা। চুরি, ডাকাতি, বোমাবাজি, মাদক পাচার এমন কোনো কাজ নেই তারা করেনা। আলজেরিয়ান, মরোক্কান এবং তুনিসিয়ানরা মেট্রো ট্রেনে মারামারি থেকে শুরু করে নারীদের যৌন হয়রানি, স্বর্ণালংকার এমনকি মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। পুলিশ নির্বিকার এসব বিষয়ে। এমনকি আলজেরিয়ান এবং তিউনিসিয়ানদের দিকে তাকালেও তারা মারতে আসে। আলজেরিয়ান, মরোক্কান এবং তিউনিসিয়ান, মুসলিম এ তিন দেশের বংশোদ্ভুত নাগরিকরা প্যারিসকে নরকে পরিণত করেছে। এদেরকে প্যারিসের লজ্জা বললে কোনোক্রমেই অত্যুক্তি হবেনা।
ফ্রান্সের পুলিশের মতো এমন Idiot Police আছে কিনা সন্দেহ। আমি বহুবার দেখেছি অপরাধীকে না ধরে তারা ভিকটিম কে হয়রানি করে। "পুলিশিং" বলতে যে একটা বিষয় আছে সেটা তারা জানেনা। সেন্ট্রাল প্যারিসের গার্দু নোডে দেখেছি, সিগারেট বিক্রি নিয়ে আলজেরিয়ান এক ছেলে কালো এক ছেলেকে চুরি দিয়ে কুপিয়ে সবার সামনে দৌড়ে পালাচ্ছে। পুলিশের সামনে দিয়ে অপরাধী দৌড়ে পালাচ্ছে কিন্তু পুলিশ এসে রক্তাক্ত কালো ছেলেটাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো। এরকম হাজারো ঘটনা ঘটেই চলছে। চুরি ছিনতাই রাহাজানির কোনো বিচার নাই। কিছুদিন আগে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী আক্রমণের শিকার হয় কাজ শেষ করে ফেরার সময়। এমন নৃশংস এবং বর্বর আক্রমণ বাঙালিদের উপর আর হয়নি। পুলিশের কাছে অভিযোগ করে কোনো লাভ হয়নি। পুলিশের সামনে অবৈধ সিগারেট এবং মাদক বিক্রি করে কিন্তু পুলিশ নির্বিকার।
ফ্রান্সের একটা পাসপোর্ট এবং রেস্টুরেন্টে কাজ করে ২০০০ ইউরো ইনকাম করা মানেই নয় আপনি ফ্রান্সের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক। আপনার গায়ের রং যদি তামাটে এবং কালো হয় তাহলে আপনি তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক। সর্বক্ষেত্রে আপনি বৈষম্যের শিকার হবেন। ফরাসিরা চায় অফিস আদালতে গিয়ে আপনি নত এবং কুর্নিশ করে কথা বলবেন। নাহলে বিনাকারণে আপনার কাজ বিলম্বিত করা হবে। অফিস কিংবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা যায়না। অফিসের কর্মকর্তার মর্জির উপর নির্ভর করবে আপনার কাজ কখন শেষ হবে। কোনো দায়িত্ব, জবাবদিহিতা নাই।
সবচেয়ে অমানবিক বিষয় হলো কাজ করিয়ে বেতন না দেয়া। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের দিয়ে কাজ করিয়ে বেতন না দেয়ার অভিযোগ প্রচুর। অনেক লম্বা শিফটে কাজ করিয়ে নেয় এবং নামে মাত্র টাকা দিয়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৭ দিন কাজ করতে হয়। মাসের পর মাস বেতন আটকে রাখে। বৈধতা থাকলে সময়মত বেতন পাওয়া যায়। আলজেরিয়ান, মরোক্কান কিছু রেস্টুরেন্টের মালিক শ্রমিকদের বেতন না দিয়েই বিদায় করে দিয়েছে। এমন কয়েকজন বাংলাদেশীর সাথে কথা হলো আমার। একজনের ৫ মাসের বেতন না দিয়ে তাকে কাজ থেকে বাদ দিয়েছে। আরেকজনকে ২ মাসের বেতন না দিয়ে উল্টো মারধর করেছে তিউনিসিয়ান মালিক। আইনের শাসন কোথায় ? কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নিরাপত্তার বিষয়টি একেবারেই উদাসীন। ৩ জন কর্মীর জায়গায় ১ জনকে দিয়েই সব কাজ করানো হয়, সেটা হোক বাংলাদেশী মালিক কিংবা আলজেরিয়ান মালিক।
ইউরোপিয়ান দেশ কিংবা পরাশক্তি হিসেবে ফ্রান্সের আবাসন ব্যাবস্থা চরম নিম্নমানের। অধিকাংশ বাড়িঘর সেকেলে। উচু দালান থেকে মনে হবে খুপড়ি ঘর। ৫ ডেসিমেলের একটা জায়গায় ৫ জন ৫ টা খুপড়ি ঘর উঠিয়ে বসবাস করছে। খুপড়ির উপরে আবার আরেকতলা বানিয়েছে সিঁড়ি দিয়ে ! ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কথা না বলাই ভালো। কিচেন গুলো এত ছোট ২ জন মানুষ দাড়ানো যায়না একসাথে এবং কোনো ফ্যান নেই ধোঁয়া নির্গত করার। আর টয়লেট !!! সবচেয়ে ছোট হলো টয়লেট। ৩ পাশে গ্লাস এক পাশে প্লাস্টিকের পর্দা দিয়ে বানানো হয় শাওয়ার রুম। এটা এতই ছোট যে, হাত নড়াচড়া করা যায়না। জায়গা স্বল্পতার কারণে কমোড এমন ভাবে বসানো হয় ওয়ালের সাথে, বাধ্য হয়ে আপনাকে বেঁকে বসতে হবে। অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশের তুলনায় ফ্রান্সের আবাসন মান অত্যন্ত জগন্য। ৫ এমনকি ৬ তলা বাড়িতে লিফট নেই। সিঁড়ি দিয়ে উঠলে মনে হবে, অন্ধকার কোন গুহায় ঢুকছেন।
এবার আসা যাক পণ্যের মূল্যের কথায়। ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে সেবা এবং পণ্যের মূল্যে যৌক্তিক। ইংল্যান্ড, জার্মান, নেদারল্যান্ড কিংবা ইতালি সব দেশে সর্বত্র মোটামুটি একদাম অর্থাৎ শহরে গ্রামে পণ্যের মূল্য এক। কেবল ব্যতিক্রম ফ্রান্সে। একটা
কফি এক শপে ১.২০ পয়সা ঠিক তার পাশের শপেই ৪.২০ পয়সা !!! হালাল মাংস কিনতে গিয়েও আপনি প্রতারণার শিকার হবেন। আলজেরিয়ান শপে আমাকে খাসির মাংস বলে গরুর মাংস দিলো। রান্না করার পর আমি নিজেই বেকুব বনে গেলাম। এক বৃটিশ সেদিন বললো ফ্রান্স "ব্যয়বহুল হওয়ার জন্যই" ব্যয়বহুল। কোন কারণে ফ্রান্স এতো ব্যয়বহুল ? এই প্রশ্নের উত্তর নাই।
ফ্রান্সের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। সীমান্তে কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই, যখন তখন যেকেউ ঢুকতে পারে। সন্ত্রাসবাদী হামলার পরও অবাধে মানুষ ঢুকছে, বের হচ্ছে। সেদিন আতশবাজি দেখতে গেলাম। পুলিশের ৪/৫ গাড়ী দিয়ে ব্যারিকেড তৈরী করে গেট বানিয়েছে। কোনো মেটাল ডিটেক্টর নেই, নেই কোনো আর্চওয়ে গেট। পুলিশ নামে মাত্র চেক করছে। সন্ত্রাসবাদী হামলার কথা চিন্তা করে আমি ভয়ই পেলাম।
ফ্রান্সে সোশ্যাল বেনিফিট অনেক দেশের চেয়ে ভালো, এতে সন্দেহ নাই। কিছু টাকা বেশি পাওয়াই কি সব ?
ফ্রান্সে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় তুমি ছোট আমি বড় !! অন্য ইউরোপিয়ান দেশে এবং আমেরিকাতে এমন বৈষম্য নেই।
বি.দ্রঃ সেল ফোনে লিখিত বাংলা বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কাউকে ছোট করে কিংবা আঘাত দেয়ার জন্য এই লেখা নয়। ধন্যবাদ
No comments:
Post a Comment