Saturday 12 October 2024

কেন হাসিনা আমলে, হাসিনা ভারতের সাথে চুক্তিগুলো সংসদে আলোচনা করত না তার কারন

কেন হাসিনা আমলে, হাসিনা ভারতের সাথে চুক্তিগুলো সংসদে আলোচনা করত না তার কারন খুজতেছিলাম। যে কারন গুলো পেলাম, এক বাক্যে বললে, " চুক্তি ভারতের দ্বারা নির্ধারিত ও লিখিত হত তাই তা নিয়ে হাসিনার সংসদে আলোচনার কিছুই ছিল না। যেমন, উপকূলে ভারতীয় রাডার চুক্তির মত স্পর্শকাতর বিষয়ে পুরটা স্বার্থই ভারতের তাই এই চুক্তির কন্টেক্স কি হবে তা শুধুই ভারত ঠিক করেছে। ফেনী নদীর পানির চুক্তিটি এক পাক্ষিক ছিল, যেখানে বাংলাদেশের পক্ষ হতে কোন শর্তারোপ ছাড়াই চুক্তি সম্পাদন হয়। উপরের দুটি চুক্তি হাসিনা যখন ভারতে গিয়ে করল, চুক্তি সম্পাদনের এক সপ্তাহ পার হলেও বাংলাদেশের গণমাধ্যম গুলো জানতে পারে নাই কি আছে চুক্তির ভিতর, সে সময় সাংবাদিকরা আওয়ামীলীগ নেতাদের জিজ্ঞাসা করেছিল, তারাও অবগত নয় বলে জানান। আদানী চুক্তির ভয়ংকর তথ্য গুলো চুক্তির আগে কেউ জানত না, এমনকি আদানী কর ছাড় পেলেও করের নামে বাংলাদেশ থেকে অর্থ নিবে এটাও এই চুক্তির নোংরা দিক ছিল, যা চুক্তির আগে হাসিনা কাউকেই জানাই নাই। ভারতকে দেয়া চট্রগ্রাম বন্দরের একসেস এমন ভাবে দিল হাসিনা, যে বাংলাদেশের কন্টেইনার গুলো হতে ভারতের কন্টেইনার অগ্রাধিকার পাবে। অথচ সদ্য যুদ্ধাহত বাংলাদেশকে সে সময় বন্দর ব্যাবহার করতে দেয় নাই। হাসিনার আর এক নোংরা চুক্তি মংলা বন্দর সম্প্রসারণে ভারতকে সম্পৃক্তকরণ, এটার বিশদ এখনো দেশবাসী জানে না। রেল করিডর কোন দেশ অন্য দেশকে দেয় না, কারন রেল করিডর দেশকে দুইভাগে ভাগ করে ফেলে। আখাউড়া সড়ক অবকাঠামোর কাজটাও এভাবেই জাতির কলংক হাসিনা ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সকল কাজ ভারতের হাতে তুলে দেয়, আর ভারতের তাদের দেশ থেকে দিনমজুর পর্যায়ের কর্মীদের পর্যন্ত বাংলাদেশে আনে। যে সকল হাসিনার পোষা কুকুর ২৬ লাখ ভারতীয় নাগরিকের সন্ধান চাচ্ছে, তাদের রেফারেন্স ভারতীয় আইনজীবী অরুনাভ ঘোষ, সেই ২৬ লাখ ভারতীয় কোন কোন সেক্টরে কাজ করে তা দলিল দিয়েছিল। বাংলাদেশে এই দলিলাদি আমিই অনুসন্ধান করে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলাম আগ্রাসন বিরোধী নানা কর্মসূচিতে, এখন আসিফ নজরুল সাহেব সেই অনুসন্ধানের ভিতরে না ঢুকে আমার বক্তব্য শুনে বলে দিলেন ২৬ লাখ। যার ফলে উনাকে জিজ্ঞাস করলে ভাল কোন উত্তর দিতে পারেন নাই। আজ বলে দিলাম সেই আইনজীবীর নাম অরুনাভ ঘোষ। কতজন ভারতীয় বাংলাদেশে অবস্থান করছে, বাংলাদেশের কাছে সেই তথ্য না থাকলেও ভারতের কাছে সঠিক সংখ্যাটা আছে। হাসিনার এই সকল চুক্তি যেন ক্ষমতায় থাকতে মোদীর কাছে সতীত্ব বিক্রি, এছাড়া ভাল ভবে বলার কোন ভাষা নাই আমার।

Monday 30 September 2024

ঢাকা শহরের আবাসন এর অর্থনীতি।

ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় বাড়ির ভাড়া অত্যাধিক সস্তা। সস্তা বলছি বাড়ি বানানোর খরচ আর আনুপাতিক দ্রব্যমূল্যের নিরিখে। সিটি সেন্টারের বাইরের জায়গাগুলোত (যেটা নগরীর প্রায় ৮০% জায়গা) একটা জমি কিনে বাড়ি বানাতে প্রায় ১.৬ কোটি টাকা খরচ হয়। দেড় কাঠা জমির উপর, গলির ভেতর একদম সাদামাটা পাঁচতলা বাড়ি। তার একটাতে গৃহস্বামী বাস করেন, বাকি চার তলা ভাড়া দেন। ভাড়া এসব ক্ষেত্রে ১৫-১৬ হাজারের বেশি হয় না। পুরো বিল্ডিং থেকে আয় সর্বসাকুল্যে ৬০ হাজার টাকা (খাজনা বাদ দিয়ে)। এই হিসেবে কেবল আপনার দেড় কোটি টাকা উদ্ধার করতেই লেগে যায় ২২ বছর ৩ মাস। আর যদি ১০০% মুনাফা করতে চান তবে সাড়ে চুয়াল্লিশ বছর অপেক্ষা করতে হবে। এর মাঝে মেরামত খরচ আর চাঁদাবাজির সাথে মুদ্রাস্ফীতি কাটাকুটি করে দিলাম। যাইহোক, ১.৬ কোটি টাকাকে বাড়ি বানানোর মাধ্যমে দ্বিগুণ করতে গৃহস্বামীর ৪৪.৫ বছর সময় লাগে। বাংলাদেশের সবচেয়ে খারাপ ব্যাংকে, সবচেয়ে কম সুদে ফিক্সড ডিপোজিট করলেও এই টাকা দ্বিগুণ হতে ১২ বছর লাগে। এর মানে বাড়ি না বানিয়ে টাকাটা ব্যাংকে ফেলে রাখা ৪ গুণ বেশি লাভজনক। ফ্ল্যাট কেনার কথা তো বাদই দিলাম। ফ্ল্যাটের ইউটিলিটি চার্জ হিসাব করলে, এটা ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়েও ৮ গুণ খারাপ কাজ। কিন্তু অন্যদিকে, আমি নিজে যখন ভাড়াটিয়া হিসেবে ভাড়া শোধ করতে যাই তখন আবার গায়ে লাগে। মনে হয় ভাড়াটা বেশি। তখন আর সস্তা মনে হয় না। এই শহরের ৯৬% মানুষের আয়ের সবচেয়ে বড় অংশটা ব্যয় হয় বাড়ি ভাড়ায় (২০২০ সালের হিসাব যদিও)। বাড়িওয়ালা মরছে, ভাড়াটিয়াও মরছে। তাহলে সমস্যাটা ঠিক কোথায়? সমস্যা নির্মাণ সামগ্রীতে। একটা ইট বানাতে গড়ে খরচ হয় ৫ টাকা। সেটা ঢাকায় বিক্রি হয় ১৫ টাকায়, চট্টগ্রামে ১৬-১৭ টাকায়। অন্তত ৩০০% মুনাফা। এ কারণেই সাধারণ মানুষ বা ভালো মানুষ ইট ভাটার ব্যবসায় ঢুকতে পারে না। মহা লাভজনক এই ব্যবসায় গুণ্ডা না হলে টেকা সম্ভব না। আমরা জানি ইট ভাটার মালিকরা কেমন। আর শ্রমিকদের তারা কী ট্রিটমেন্ট দেয়। বালু মহলগুলোর অবস্থা আরও পৈশাচিক। ৫০০ ডব্লিউ টিমটি রডের টনপ্রতি উৎপাদন খরচ ৭০-৮০ হাজার টাকার মধ্যে। এটা বিক্রি হয় ১.১ লাখ টাকায়। সোনার ভরি আর রডের টন এখন প্রায় কাছাকাছি। এই রড উৎপাদকরা ইটের ভাটার মালিকের মত ২০০% মুনাফা না করলেও তাদের সার্বিক মুনাফা ইটের ভাটার মালিকের চেয়ে কয়েক হাজারগুণ বেশি। কারণ ২০০% মুনাফা খায় প্রায় কয়েজ হাজার ইট ভাটা মালিক। আর রড বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ আর কার্টেল করে ৮-১০ টা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। এ কারণে তাদের থাবার গ্রাস অনেক বড়। একই ইন্ডাস্ট্রির মালিকই ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলে। ফলে শুধু রড না; সিমেন্ট, রঙ, কাঁচ, বৈদ্যুতিক তারসহ প্রতিটা ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষ ২০টি পরিবারের কাছ থেকে আমি আপনি সবাই নির্মাণসামগ্রী কিনি। এই মুনাফার পরিমাণ আমেরিকাতেও প্রায় একই। তাহলে আমেরিকাতে আমাদের মত সমস্যা হয় না কেন? কারণ আমেরিকান ট্যাক্সেশন খুব কড়া, টাকা পাচার করা কঠিন, শ্রমিকের নায্য মজুরি আছে। ফলে ট্যাক্স আর মজুরির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের খেয়ে ফেলা সামাজিক পুঁজির একটা বড় অংশ আবার সমাজেই ফিরে আসে। এটা বাংলাদেশের বেলায় ফিরে আসে না। ঢাকা শহরের বাড়ির ভাড়া বাড়িওয়ালাদের দিক থেকে খুব কম, আবার ভাড়াটিয়ার জায়গা থেকে খুব বেশি। কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কম। ৮০% এলাকার তুলনায় বাকি যে ২০% এলাকা আছে, যেগুলো বড় রাস্তা বা মেট্রোরেলের কাছে বা ঢাকার অভিজাত - এসব এলাকাও প্রায় পুরোপুরি হাউজিং কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ঘুরে ফিরে আবারও সেই শীর্ষ ২০ ধনী পরিবার। ঢাকায় আপনার করা বাড়ি বা ফ্ল্যাট যদি একটা একশো টাকার নোট হয়, তবে সেই নোটের ৫ পয়সার সুবিধাভোগী ভাড়াটিয়া, ৩০ টাকার সুবিধাভোগী বাড়িওয়ালা। ৪.৯৫ টাকার সুবিধাভোগী স্থানীয় এমপি, সিটি কর্পোরেশন, রাজস্ব বিভাগ ইত্যাদির অসাধু কর্মচারীরা। আর কেকের বড় অংশটা, প্রায় ৬৫ শতাংশ সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী কার্টেলগুলো। এই গেলো ঢাকা শহরের আবাসন এর অর্থনীতি। চাহিদা থাকলে পরে ঢাকার আবাসন মনস্তত্ত্ব আর নৃতত্ত্ব নিয়ে লিখবো নে।

Thursday 26 September 2024

হাসিনার পতন হয়েছে তাহলে দেশে ফিরে যেতে ভয় কি ?

হাসিনার পতন হয়েছে তাহলে দেশে ফিরে যেতে ভয় কি ? ০৫ আগস্ট ২০২৪ হাসিনার পতনের আগে যারা ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় বা এসাইলাম আবেদন করেছেন তাদের অনেকে দ্বিধাদ্বন্ধে আছেন। আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনার সরকার দ্বারা নির্যাতিত হয়ে অনেকে দেশ ছেড়েছেন এবং এজাইল/ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জেনেছি, OFPRA/CNDA তে জিজ্ঞেস করা হয়েছে ''হাসিনার পতন হয়েছে তাহলে দেশে ফিরে যেতে ভয় কি ? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই দিতে পারেননি !!! অনেকে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে উত্তর দিয়েছেন কিন্তু যৌক্তিক উত্তর দিতে পারেননি। ০৫ আগস্ট ২০২৪'য়ের পর থেকে অনেককেই এই প্রশ্ন করা হচ্ছে। জেনেভা কনভেনশনের আওতায় আশ্রয় পাওয়ার অন্যতম দুটি শর্ত হচ্ছে মৃত্যু ভয় এবং মিথ্যা মামলায় হয়য়রানির হুমকি থাকা। বাস্তবতা হচ্ছে হাসিনার পতন হওয়ার পর এই হুমকিগুলো দুর্বল হয়ে গেছে এবং প্রমান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর দিতে না পারলে আসলেই সমস্যা। আওয়ামীগ সরকারের নির্যাতনে যারা দেশ ছেড়ে আশ্রয় আবেদন করেছেন এবং কেস চলমান তাদের জন্য এটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও যৌক্তিক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। কেস পাওয়া/রিফুজি স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য অবশ্যই প্রমান করতে হবে বিশ্বাসযোগ্য হুমকি রয়েছে। ধন্যবাদ

Friday 23 August 2024

বাংলাদেশে বন্যায় ঘরে ঘরে একটি করে রাবারের তৈরি ইনফ্লেটেবল বোট/ নৌকা রাখতে।

সম্ভবতঃ গত বছর বাংলাদেশে বন্যা চলাকালে আমি এক ফেইসবুক পোস্টে বলেছিলাম, ঘরে ঘরে একটি করে রাবারের তৈরি ইনফ্লেটেবল বোট (বাতাস দিয়ে ফোলানো যায় এমন নৌকা) রাখতে। উদ্ধার তৎপরতায় বিলম্ব হলে বেশী সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়, খাদ্যের ওভাবে নয়। চলমান বন্যায় এই নৌকার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী অনুভূত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বে আকস্মিক বন্যা সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে গেছে। লন্ডনের মতো আধুনিক ও প্রাচুর্যময় নগরীকেও আকস্মিক বন্যা সহ নতুন নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম বড় আক্রান্ত দেশ বাংলাদেশের জন্য এই চ্যালেঞ্জ আরও অনেক বড়। ইনফ্লেটেবল বোট ঘরের স্টোর রুমে রেখে দেয়া যায়; এজন্য বড় জায়গার প্রয়োজন হয়না। সরকারি খরচে কিংবা বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে এ ধরনের নৌকা বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেইলে উৎপাদন করে বাড়ি বাড়ি বিতরণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি লাইফ জ্যাকেট উৎপাদন করে ত্রাণ হিসেবে বিতরণের চিন্তা করতে পারে সরকার। না খেয়ে কয়েক দিন বেঁচে থাকা যায় কিন্তু বন্যার পানিতে ডুবে গেলে মৃত্যু অনেকটা নিশ্চিত। তাই আমাদেরকে আগে প্রাণ বাঁচানোর বাস্তব পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এই বন্যাই শেষ বন্যা নয়। এখনই পরবর্তী সম্ভাব্য বন্যার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আব্দুল হাই সঞ্জু ২৩ অগাস্ট ২০২৪ লন্ডন

Monday 19 August 2024

কাজগুলা না করে, তাইলে এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে

১. অন গভমেন্ট এই গভমেন্ট কোনো ‘বিপ্লবী’ গভমেন্ট হয় নাই। সংবিধান মাইনা রাষ্ট্রপতির আন্ডারে শপথ নিছে এই গভমেন্ট। ১/১১-র কুশীলবরা আবার সেইখানে মেজরিটিপ্রায়। কোন প্রক্রিয়ায়, কার চাওয়া বা না চাওয়ার ভিত্তিতে উপদেষ্টারা নিয়োগ পাচ্ছেন, তাও ক্লিয়ার না। তবু জাতির সামগ্রিক স্বার্থ বিবেচনায় ছাত্রজনতা এই গভমেন্টের বিরুদ্ধে কিছু বলতেছে না। কিন্তু অতি দ্রুত এই গভমেন্ট যদি নিচের কাজগুলা না করে, তাইলে এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে: ১. রাষ্ট্রপতি ও আর্মি চিফের অপসারণ ২. সংবিধান পুনর্গঠন ৩. জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস, দলিলপত্র ও স্মৃতি সংরক্ষণ ৪. শহিদদের তালিকা তৈরি ও শহিদ পরিবারকে প্রয়োজনমাফিক সহায়তা। আহতদের তালিকা তৈরি করে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। ৫. জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ ফ্যাশিস্ট রেজিমের সকল অপরাধের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের সূচনা করা। এক্ষেত্রে বিতর্কিত আইসিটিকে পুনর্গঠন করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। নতুবা এই বিচারপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ৬. নির্দলীয় ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠন এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ফ্যাশিস্ট ব্যবস্থার মূলোৎপাটন। ৭. বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ কর্মকৌশল গ্রহণ। ৮. ছাত্রজনতার কাছে জবাবদিহিতার কালচার তৈরি করা। ৯. বিচার বিভাগ ও ইসিকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নির্দলীয়করণ। ১০. আ. লীগকে দল হিশেবে নিষিদ্ধ করাটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। বরং আপাতত তাদের নিবন্ধন বাতিল করা যেতে পারে। ১১. একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা। ২. অন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ছাত্রজনতার আন্দোলনের এই ব্যানারটা কোনো একক দল, মত বা গোষ্ঠীর সমন্বয়ে করা হয় নাই। বরং নানা দল ও মতের মানুশ এখানে ছিল। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নানা কারণে এই ব্যানারটি বিতর্কিত হয়ে উঠছে। অনেকেই নিজ নিজ রাজনৈতিক বা অন্য কোনো স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই ব্যানার ব্যবহার করতেছেন। ক্যাম্পাসগুলোতে এই ব্যানারের ছত্রছায়ায় এক ধরনের ছায়া অথরিটিও গড়ে উঠছে। এই ছায়া অথরিটির কর্মকাণ্ড কিংবা মোটিভ নিয়াও জনমনে এক ধরনের অস্বস্তি বা আশঙ্কা তৈরি হইছে। ব্যানারটির সকল সিদ্ধান্ত কোত্থেকে আসতেছে বা কারা দিতেছে— এ ব্যাপারেও অস্পষ্টতা প্রকট। সমন্বয়কদের নিজেদের মধ্যেই এ ব্যাপারে নানারকম ক্ষোভ ও উষ্মা দেখা যাইতেছে। সমন্বয়কদের নিজস্ব কোনো এজেন্সি আছে কি নাই— তা বোঝা যাচ্ছে না। তারা কেবল টকশোর শোভা বাড়াইতেছেন। বাস্তব কার্যক্ষেত্রে তাদের অধিকাংশেরই সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে কোনো সংযোগ নাই। ফলত, তারা এক ধরনের মিডিয়া সেলিব্রেটি ও ছোটোখাটো ভাবমূর্তিতে পরিণত হওয়ার অধিক কিছু করতে পারতেছেন না। দেশের নানা মানুশ নানা প্রান্ত থেকে নানা আইডিয়া নিয়া তাদের কাছে আসতেছেন বটে, কিন্তু সেগুলা নিয়া ছাত্রদের বৃহত্তর ফোরামে কোনো ইনক্লুসিভ আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। ফলত, ব্যানারটি ক্রমশ বিতর্কিত হয়ে পড়তেছে। আন্দোলনকারী ছাত্রদের সমন্বিত শক্তিকে অটুট রাখার জন্য দ্রুত একটা বৃহত্তর ছাত্র কাউন্সিল কিংবা প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদের উদ্যোগ নেয়া হোক। এবং এই ব্যানার যত দ্রুত সম্ভব বিলুপ্ত করা হোক। এতেই মঙ্গল। ৩. অন পার্টি ফর্মেশন আজ হোক বা কাল, অভ্যুত্থানকারী ছাত্রদের অন্তত নেতৃস্থানীয় লোকেরা একটা পার্টি খুলবেন— এটা নিশ্চিত। এমনকি একাধিক পার্টিও হইতে পারে। এ ব্যাপারে আপাতত বিশদ মন্তব্য করতে চাই না। জনতার খেয়াল রাখা লাগবে, এই পার্টি যেন অন্য কোনো পলিটিকাল পার্টির পুনর্বাসনকেন্দ্রে পরিণত না হয়। সেটা ঘটনা হিশাবে খুব বিপদজনক ও ডিজাপয়েন্টিং হবে। ৪. অন ইন্টেলেকচুয়াল অ্যান্ড কালচারাল ফাইট আমাদের এখন ইন্টেলেকচুয়াল ও কালচারাল ফাইটগুলারে নতুনভাবে শুরু করা লাগবে। যেসব ভুয়া ও ফাঁপা ন্যারেটিভের উপর এই ফ্যাশিবাদের ভিত্তি দাঁড়ায়ে ছিল, সেগুলারে কাউন্টার করা লাগবে। ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিল্প— সবক্ষেত্রেই ফ্যাশিবাদের ভিত নির্মাণকারী বয়ানগুলারে প্রশ্ন করা লাগবে। কবি, সাহিত্যিক, অ্যাকাডেমিশিয়ান ও ইন্টেলেকচুয়ালদের কান্ধে এখন গুরুদায়িত্ব। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখা জরুরি যে, এসব ক্ষেত্রে আমাদের চর্চা হইতে হবে অব্জেক্টিভ ও নির্মোহ। আমরা যেমন নতুন রাজনৈতিক পরিসর নির্মাণের আলাপ করতেছি, তেমনি নতুন সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরও নির্মাণ করা লাগবে। যেখানে জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে অবজেক্টিভিটি হবে মানদণ্ড। সৃজনশীলতাই হবে সাহিত্য, প্রোপাগাণ্ডা না। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে হইতে হবে সর্বোচ্চ ইনক্লুসিভ। ফ্যাশিস্টের কাউন্টার দেওয়ার জন্য যদি আমরা একপেশে ইতিহাসচর্চা, সাহিত্যিক প্রোপাগাণ্ডা কিংবা অপরায়নের সংস্কৃতির চর্চা করি, তাইলে আমাদের অভ্যুত্থান বৃথা যাবে। ৫. অন মিলিটারি অ্যান্ড সিভিল ব্যুরোক্রেসি মিলিটারি ও সিভিল ব্যুরোক্রেসি নিয়া জনমনে নানা অসন্তোষ, শঙ্কা, সন্দেহ ও অস্বস্তি এখনও বিদ্যমান। এই মিলিটারি ও সিভিল ব্যুরোক্রেসিই কার্যত দেশ চালাইতেছে কিনা, কিংবা গভমেন্টের অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেছে কিনা— এ নিয়া নানা ধরনের প্রশ্ন আছে। গভমেন্টরে এইটা দেখতে হবে। সিভিল ও মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির মধ্যে ঘাপটি মাইরা থাকা ফ্যাশিস্ট ব্যক্তি ও ব্যবস্থাগুলারে উৎখাত করা লাগবে। আরেকটা ১/১১ হওয়ার সমস্ত পথ রোধ করা লাগবে। ৬. অন বিএনপি বিএনপির বোঝা লাগবে যে, খালি দখলের রাজনীতি দিয়া সে বেশিদূর আগাইতে পারবে না। আওয়ামি ফ্যাশিস্টরে কাউন্টার করার জন্য তার শক্তিশালী বয়ান ও ন্যারেটিভ লাগবে। এবং জুলাই রেভ্যুলুশনের স্পিরিটের সাথে মিল রাইখা নিজেদের রাজনীতি সংস্কার করা লাগবে। বুদ্ধিবৃত্তিক ও কালচারাল অঙ্গনের সাথে নতুন ধরনের বন্দোবস্ত তার তৈরি করা লাগবে। এক্ষেত্রে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ‘সমন্বিত জাতিবাদ’ বা ‘কল্যাণ রাষ্ট্রবাদ’ হইতে পারে তাদের আদর্শ। পাশাপাশি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়া গইড়া ওঠা নতুন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বাসনাগুলারে ধারণ করতে হবে। দল হিশাবে তারা ফেইল করলে কিংবা ফ্যাশিস্ট হয়া উঠলে বাঙলাদেশ একটা নতুন ক্রাইসিসের মধ্যে পড়বে। ৭. অন জামায়াত-শিবির আ. লীগ ও তার কালচারাল ফোর্সগুলা জামায়াত-শিবিররে আনঅফিশিয়ালি নিষিদ্ধ কইরা রাখার মাধ্যমে, ট্যাবু কইরা রাখার মাধ্যমে, এক ধরনের ভাবাদর্শে পরিণত করছিল। এতে দুইটা ক্ষতি হইছে বাঙলাদেশের: ১. ইসলামি চিহ্নধারী যেকোনো কিছুরেই ‘জামায়াত-শিবির’ ট্যাগ দিয়া ডিহিউম্যানাইজ করার রাস্তা খুইলা গেছে। ওয়র অন টেররের রাজনীতি শক্তিশালী হইছে। ২. জামায়াত-শিবিররে রাজনৈতিকভাবে গ্রহণ বা বর্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলের বাইরে সে একটা ভাবাদর্শ হয়ে উঠছে। নতুন বাঙলাদেশে এই অস্বস্তিকর অবস্থাটির অবসান ঘটা দরকার। জামায়াত-শিবির না কইরাও মুসলিম চিহ্ন ধারণ করে দেশের কোটি কোটি মানুশ। তাদের সেইটা স্বচ্ছন্দে করতে পারা প্রয়োজন। পাশাপাশি ভাবাদর্শ না, জামায়াত-শিবিররে পলিটিকাল পার্টি হিশাবে গ্রহণ, বর্জন বা পর্যালোচনার রাস্তা খোলা থাকা উচিত। পাশাপাশি দেশের রাজনীতিতে তাদের পুনর্বাসনপ্রক্রিয়াটি ঠিক কেমন হবে, সেইটাও এই সরকারের ভাবা উচিত। জামায়াত-শিবিরের উদ্দেশ্যে আমার বেশিকিছু বলার নাই। কারণ উনাদের এত শক্তি যে, আমার মত দুর্বল লোকের কথা উনারা আদৌ শুনবেন কিনা সন্দেহ। কিন্তু তবু ঝুঁকি নিয়া কিছু কথা বলতে চাই। নয়া বাঙলাদেশে রাজনীতি করতে হইলে উনাদের অবশ্যই জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটরে ধারণ করতে হবে। পার্টিসিপেটরি ডেমোক্রেসি ও ইনক্লুসিভ বাঙলাদেশে বিশ্বাসী হইতে হবে। একাত্তর প্রশ্নে উনাদের যে বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান, তা বিগত বছরগুলাতে কতটুকু চেঞ্জ হইছে আমি জানি না। কিন্তু একাত্তর একটা ইস্যু তো বটেই। সেইটা ওনাদের সলভ করা লাগবে। ওনাদের বোঝা লাগবে যে, ষাট ও সত্তর দশকের ক্লাসিকাল ইসলামিজমের জামানা শেষ। আরব বসন্তের পর এখন পোস্ট-ইসলামিজমের জামানা শুরু হয়ে গেছে। ফলে সেই মোতাবেক দলের নীতি ও আদর্শরে রিভিজিট করা লাগবে। পশ্চিমের চাপায়ে দেওয়া সেক্যুলারিজম না, বাঙলাদেশের মাটিজলে সিঞ্চিত যে অর্গানিক ইনক্লুসিভিটি, তারে ধারণ করতে পারতে হবে। সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ঢাকার মিডল ক্লাশরে শত্রু বানানো উচিত হবে না। দলীয় সাংস্কৃতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক বলয়ের বাইরে বৃহত্তর বাঙলাদেশের সাথে একাত্ম হইতে শেখা লাগবে। সেক্যুলার কবি-সাহিত্যিক বা বুদ্ধিজীবীদের ‘নাস্তিক’ হিশাবে মোকাবেলার যে পলিটিকাল থিওলজি, তা পরিত্যাগ করতে হবে। বোঝা লাগবে যে, ওনাদের কেন্দ্র কইরাই আ. লীগের বাজে রাজনীতিটা বারবার ব্যাক করে এই দেশে। সেই পথটা কীভাবে বন্ধ করা যায়, কীভাবে একটা সম্প্রীতির বাঙলাদেশ নির্মাণ করা যায়, তা উনাদেরই ভাবতে হবে। ৮. অন লেফট উইং লেফটরা রাজনীতির নামে এখনও কেবল কালচার করতেছেন। আর কতদিন করবেন জানি না। শক্ত জনসমর্থন না থাকলে অবশ্য এছাড়া উপায়ও নাই। কেন বাম রাজনীতি এদেশে ব্যর্থ হইল? এর পর্যালোচনা শুরু করার এইটাই বোধহয় শ্রেষ্ঠ সময়। জুলাই রেভ্যুলুশনের স্পিরিটরে ধারণ কইরা নতুন বাঙলাদেশে নতুন ধরনের রাজনৈতিক চিন্তা নিয়া আগাইতে হবে বামদের। উনিশ শতকের বাঙালি জাতিবাদ, নাইন-ইলেভেনজাত ইসলামফোবিক পরিভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গি, অতিমাত্রায় কালচারাল পলিটিক্স ও এনজিওবাদ, জড় ও পুরানা আমলের নেতৃত্ব ইত্যাদি বাদ দেওয়া লাগবে। নিও মার্ক্সিস্ট ধারায় নয়া লিটারেচার, নতুন পরিভাষা, নতুন আইকন ও প্রগতিশীল পলিটিকাল বন্দোবস্ত গড়ে তোলা লাগবে। রাজনীতিটাই করা লাগবে, কালচার না। দেশের বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাথে একাত্ম হইতে পারার মত ভাষা ও পরিভাষা তৈরি করা লাগবে। ন্যায়, ইনসাফ ও ইনক্লুসিভিটিরে মনেপ্রাণে ধারণ করা লাগবে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিরে ট্যাবু বানায়ে রাখলে তাদের কোনো লাভ নাই, বরং লসই বেশি— এটা মাথায় ভালোভাবে নেওয়া লাগবে। ইডিওলজিরে রাজনীতিতে পরিণত করলে হবে না, বরং বাস্তব রাজনীতির আলোকে ইডিওলজিরে নির্মাণ করা লাগবে। তা না হইলে বাম রাজনীতি চিরকাল ক্যাম্পাসগুলাতেই সীমিত হইয়া থাকবে কেবল; গণমানুশের রাজনীতি হইতে পারবে না। একটা সুন্দর, সমৃদ্ধ, ইনক্লুসিভ ও ইনসাফপূর্ণ বাঙলাদেশের স্বপ্ন আমরা এখনও দেখি। আমাদের এই স্বপ্ন ব্যর্থ হইতে দেওয়া যাবে না। ইনকেলাব জিন্দাবাদ।

Thursday 8 August 2024

হাসিনার পদত্যাগের আগের ৪৮ ঘণ্টা

হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার আগের রাতে সেনাপ্রধান তার জেনারেলদের সাথে বৈঠক করেন৷ বৈঠকে বিক্ষুব্ধ জনতার উপর সেনাদের তরফ থেকে গুলি না ছোঁড়ার সিদ্ধান্ত হয়৷ এই আলোচনা সম্পর্কে জানেন এমন দুইজন সেনা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন৷ এই ঘটনার পর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান হাসিনার কার্যালয়ে গিয়ে তার সাথে দেখা করেন৷ এই বিষয়ে অবগত আছেন এমন একজন ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সেনাপ্রধান জানান সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী সেনারা লকডাউন বাস্তবায়ন করতে অপরাগতা প্রকাশ করেছে৷ হাসিনার প্রতি সেনাবাহিনীর আর কোনো সমর্থন নেই, এটি তখন পরিষ্কার হয়ে যায় বলে জানান ঐ কমর্কর্তা৷ রয়টার্স জানিয়েছে, মোট দশজনের সাথে কথা বলে তারা হাসিনার পদত্যাগের আগের ৪৮ ঘণ্টার তথ্য নেয়ার চেষ্টা করেছে৷ এরমধ্যে চারজন বর্তমান সেনা কর্মকর্তা, ঘটনা সম্পর্কে জানেন এমন দুইজন রয়েছেন৷ এই ব্যক্তিরা তাদের নিরাপত্তার জন্য নাম প্রকাশ করতে চাননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স৷ রয়টার্স বলছে, বৈবাহিকসূত্রে ওয়াকার-উজ-জামান হাসিনার আত্মীয় হলেও শনিবারই তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপর থেকে তার সমর্থন তুলে নেয়ার আভাস দেন৷ সেদিন কয়েকশ সেনা কর্মকর্তার উদ্দেশে ওয়াকার-উজ-জামান বক্তব্য রাখেন৷ মানুষের জীবন রক্ষার নির্দেশ দিয়ে কর্মকর্তাদের ধৈর্য্য বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি৷ সেনাবাহিনী সহিংস বিক্ষোভকে জোরপূর্বক দমন করবে না, প্রথমবারের মতো এই আভাস মেলে৷ সেনাপ্রধান হাসিনার উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়ার বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করেননি৷ তবে বিক্ষোভে অন্তত ২৪১ জনের মৃত্যুর পর তার পক্ষে হাসিনাকে সমর্থন দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে বলে রয়টার্সকে সাবেক তিনজন সেনা কর্মকর্তা মত দেন৷ অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারফিউ জারির পর সোমবার হাসিনা ছিলেন গণভবনে৷ এক পর্যায়ে ঢাকার রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের জনস্রোত নামে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ৭৬ বছর বয়সি আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে৷ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার আলোচনার পর একসাথে ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মঙ্গলবার ভারতের পার্লামেন্টে জানান, বাংলাদেশের এই সমস্য আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে জুলাই থেকেই বলে আসছিল দিল্লি৷ তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের পর হাসিনা সোমবার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন৷'' তিনি জানান, ‘‘খুব অল্প সময়ের মধ্যে তখন ভারতে আসার অনুমোদনের জন্য অনুরোধ জানান৷'' ভারতের আরেকজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, কূটনৈতিকভাবে হাসিনাকে জানানো হয়েছিল, তার এই অবস্থান হতে হবে স্বল্প সময়ের জন্য, যাতে দিল্লির সাথে ঢাকার পরবর্তী সরকারের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে৷ এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ জানানো হলে রয়টার্সকে সাড়া দেয়নি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে যাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ‘‘ভালো সম্পর্ক ভুল লোকজনের সাথে৷ দয়া করে আপনাদের বৈদেশিক নীতি পুনর্বিবেচনা করুন৷'' সোমবার দুপুর নাগাদ ঢাকায় বাংলাদেশ বিমানের সি১৩০ উড়োজাহাজ হাসিনাকে নিয়ে দিল্লির বাইরে হিন্ডন বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করে৷ সেখানে তিনি ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সাথে সাক্ষাৎ করেন৷ গত ৩০ বছরের মধ্যে ২০ বছরই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা৷ গত দেড় দশকের টানা শাসনামলে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী মত দমন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুমসহ নানা অভিযোগ রয়েছে৷ বিরোধীদের বয়কট ও কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জানুয়ারিতে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসে তার আওয়ামী লীগ সরকার৷ এফএস/জেডএইচ (রয়টার্স)