Tuesday, 30 August 2022
জিয়াউর রহমান কাউকে গুম খুন করেন নাই।
জিয়াউর রহমান কাউকে গুম খুন করেন নাই। মিলিটারি ট্রাইবুনাল মিলিটারি ক্যু এর শাস্তি হিসেবে, অভিযুক্তদের কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছে। এবং মিলিটারি ল অনুসারে মিউটিনি এবং ইন্সাবোরডিনেশানের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
জিয়াউর রহমান নিজে একটি মিলিটারি ক্যু তে নিহত হওয়াতে প্রমান হয়েছে, তার শাসন আমলের ক্যু গুলো কোন পুতুল খেলা ছিল না। আর্মিকে ডিসসিপ্লিন করতে মিলিটারি ক্যু এর শাস্তি হিসেবে এই মৃত্যুদণ্ড গুলো অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়ও ছিল।
কোন কোন শাস্তির ক্ষেত্রে জিয়ার আমলের ট্রাইবুনাল ফেয়ার ট্রায়াল নিশ্চিত করে নাই সেইটা গবেষকেরা নিশ্চয়ই বলতে পারবেন। আমি নিশ্চিত অনেক অভিযুক্ত ফেয়ার ট্রায়াল পায় নাই। কর্নেল তাহেরও আমার মতে ফেয়ার ট্রায়াল পায় নাই।
কিন্তু , আমি যেইটা হাইলাইট করতে চাই তা হল, বাংলাদেশ যে আজকে মিলিটারি শাসনের বশীভূত পাকিস্তান বা মিয়ানমার হয় নাই তার অন্যতম কারন জিয়াউর রহমান তার শাসনামলের পাঁচ বছরে অত্যন্ত এম্বিশাস একটা আর্মিকে খুব শক্ত ভাবে ক্যারট ও স্টিকের মাধ্যমে ডিসিপ্লিন্ড করেছেন।
বাংলাদেশ আর্মি মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জন্ম হয়েছে। এই মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের মধ্যেই অনেক অফিসারই মনে করতো, তারা দেশ স্বাধীন করেছে তাই তাদের দেশ শাসনের একটা ন্যাচারাল রাইট আছে। একেক একটা ইউনিটের সিইও কর্নেলর সাহেবরা মনে করতো , তারা দেশের প্রেসিডেন্টকে হত্যা করে, নিজেরাই দেশের পেসিডেন্ট হওয়ার অধিকার রাখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যা তাদের সেই চিন্তা পদ্ধতির একটা উদাহরন এবং মুজিবহত্যার পরে তাদের সেই চিন্তা মোটেও মিইয়ে যায় নাই বরং আরো ভ্যালিডেটেড হয়েছে যে, তারা প্রেসিডেন্টকে হত্যা করে দেশ শাসনের অধিকার রাখে।শুধু মাত্র ইউনিটের সিইও না, সাধারণ সৈনিক ও ওয়ারেন্ট অফিসাররাও এই ধারনা রাখতো।
জিয়াউর রহমানের আমলে (১৯৭৫-৮১) দেশে ২৬টি ক্যু হয়। এই ক্যু গুলোতে এবং তাদের দমনে শত শত সৈনিক, জনতা অফিসার মারা গ্যাছে। এই ক্যু গুলো কোন পুতুল খেলা ছিলনা। প্রতিটা কু প্রনেতার এম্বিশান ছিল, তারা প্রেসিডেন্টকে হত্যা করে, নিজে প্রসিডেন্ট হবে।ক্যু গুলোর শাস্তি সব সময়ে ফেয়ার হয় নাই, জিয়াউর রহমান রুথলেসলি ক্যু গুলো দমন করে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রে মিলিটারির মধ্যে এই বিভিন্ন প্রচন্ড এম্বিশাস ইউনিটদেরকে ডিসিপ্লিন করাতে জিয়ার চারটা এপ্রোচ ছিল।
১। বিভিন্ন ধরনের ট্রেইনিং , সুযোগ সুবিধা ও মোটিভেশান দিয়ে প্রফেশনালিজম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীতে চেইন অফ কমান্ড ফিরিয়ে আনা।
২। পুলিশ, আনসার ও বিডিআর সহ বিভিন্ন বাহিনীকে শক্তিশালী করা।
৩। শক্ত হাতে ক্যু গুলো দমন করা। জিয়া বেশ কিছু ইউনিট কে ডিসব্যান্ড ও করেছিলেন।
৪। সাধারণ মানুষকে ক্ষমতার পারটিসিপেশানে এম্পাওয়ার করা।
আর্মির অধিকাংশ সিনিয়ার অফিসার এই প্রক্রিয়াতে খুশি ছিলনা। তারা দেখতে পাচ্ছিলো যে, মিলিটারি তার ক্ষমতা হারাচ্ছে।
জিয়ার মৃত্যুর কয়েক দিন আগে, সেনা সদরে একটা মিটিং এ জিয়ার বিরুদ্ধে জেনারেল মঞ্জুর সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করে যে, জিয়া পলিটিক্সে অতিরিক্ত পিপলস পারটিসিপেশান ঘটাচ্ছে। সেই মিটিং এ মঞ্জুরের খুব স্পেসিফিক কিছু উক্তি আছে, যেইটা আমার এই মুহূর্তে মনে নাই। (কেউ সোর্সটা পেলে কমেন্টে দিয়েন)
সেই সময়ে অন্য সকল অফিসার চুপ করেছিল, যার কারণে জেনারেল মঞ্জুর ধরে নেয় যে, অন্য অফিসাররাও তার মতের সাথে এক মত। জিয়া হত্যার এইটা ছিল অন্যতম মুল কারন।
কিন্তু জেনারেল মঞ্জুর বুঝে নাই, যে জিয়া মানুষকে এমন ভাবে এম্পাওয়ার করে গ্যাছে , মিলিটারি আর সেই সক্ষমতা নাই যে, প্রেসিডেন্টকে যে হত্যা করেছে সেই প্রেসিডেনট হয়ে যাবে।
এই কারণে জনতা মঞ্জুরকে ধাওয়া দিয়ে গ্রেপ্তার করে, পুলিশের হাতে দেয়।
বাংলাদেশের এলিট বুদ্ধিজীবীরা কখনোই বুঝতে পারে নাই, বাংলাদেশের মিলিটারির হাত থেকে জনতার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় জনতার ধাওয়া খেয়ে গ্রেপ্তার হয়ে জেনারেল মঞ্জুরের পুলিশের হাতে হস্তান্তরের তাৎপর্য। অর্থাৎ এর মধ্যে পুলিশ দাড়িয়ে গ্যাছে, মানুষেরো শিরদাঁরা দাড়িয়ে গ্যাছে। তারা আর মিলিটারি দ্বারা শাসিত হতে প্রস্তুত নয়।
চিন্তা করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যার পরে পুলিশের কি অবস্থা ছিল ?
এই পরিবর্তন গুলোই বাংলাদেশকে ডিমিলিটারাইজ করেছে, পাকিস্তান ও বার্মার মত বাংলাদেশের আর্মি আর শাসন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে নাই।
এমন কি জিয়ার মৃত্যুর পরে, জেনারেল এরশাদ সাত্তারের সাথে মুল নেগোসিয়েশেনে গ্যাছে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্যে। সাত্তার রাজি হয় নাই বলে, এরশাদ ক্যু করে ক্ষমতা দখল করে।
কিন্তু, এরশাদ যেটা বুঝে নাই তা হচ্ছে, জিয়াঊর রহমান মানুষকে এমন ভাবে এম্পাওয়ার করে গ্যাছে মিলিটারির ক্ষমতা দখল করে রাখার আর কোন লেজেটিমিসি নাই।
এই কারণে, এরশাদ যখন ক্যু করে তার কোন লেজেটিমিসি ছিলনা। কারন বাংলাদেশে বিবিধ ইন্সটিটিউশান , পিপল পাওয়ার ও সামাজিক শক্তিকে জিয়া বিল্ড করে গ্যাছে।
ফলে এরশাদ টিকতে পারে নাই, এরশাদকে ক্ষমতা দখলের পর পরই গন আন্দোলনের মুখোমুখী হতে হয়।
এই পুরো প্রসেস টা, জিয়া সত্তরের দশকে কমপ্লিট করেছে, যে প্রসেস মিয়ানমার ও পাকিস্তান এখনো পারে নাই।
উই ক্যান জাজ জিয়া যে, জিয়া ব্রুটালি এই ক্যু গুলো দমন করেছে। এবং আমি সিউর আপনি এই প্রসেসে অনেক ইন্টটিউশানাল এনামলি পাবেন।
কিন্তু জিয়ার এই কঠোরতার এডভান্টেজ বাংলাদেশ রাষ্ট্র পেয়েছে। নইলে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র এই মুহূর্তে মিলিটারির অধীনে পাকিস্তান বা মিয়ানমার মডেলের একটা রাষ্ট্র থাকতো। বেস্ট কেস সিনারিও হচ্ছে। মিলিটারির সাথে পাওয়ার শেয়ারিং করে একটা হাইব্রিড ডেমোক্রেসি হইতো হয়তো কোন গন আন্দোলনের পরে।
বাংলাদেশের সকল এলিমেন্ট ছিল এই পরিণতি হওয়ার। এইটা যে হয় নাই, তার মুল কারন জিয়া এই ক্যু গুলোকে রুথলেসলি দমন করেছিল।
আরো একটা বিষয় বলে শেষ করি, ডেভেলপমেন্ট ইকন্মিক্সের ফাউন্ডশানাল একটা থিয়োরি হচ্ছে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডগলাস নর্থের লিমিটেড এক্সেস অর্ডার। এই থিয়োরির মুল ইস্যু হচ্ছে, একটা নবগঠিত রাষ্ট্রের ইন্সটিটুশাল বিল্ডিং একটা লিনিয়ার প্রসেসে আগায়। যার প্রথমে থাকে ফ্রেজাইল যে সময়ে রাজাকে যে হত্যা করে সে রাজা হয় যায়। এই সময়টাকে বলে ফ্রেজাইল। ফ্রেজাইলের পরে আসে উইক, যে সময়ে কিছু ইন্সটিটিউশান বিল্ডিং হয়েছে, কিছু ডেমোক্রাটাইজেশান হয়েছে কিন্তু তবুও এলিটদের ইচ্ছাতেই ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয়, এরপরে স্টেট একটু ম্যাচিউর হয়েছে ইন্সটিটিউশান গুলো আরো শক্ত হয়েছে। ইলেকশান প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার পালাবদল হয়। এইটাকে বলে ম্যাচুর।
একটা স্টেট ফ্রেজাইল থেকে বেসিক বেসিক থেকে ম্যাচুওর এবং ম্যাচুর থেকে ওপেন এক্সেস অর্ডার হয়। এই প্রগেশনটা লিনিয়ার। কোন রাষ্ট্র সামনে আগায় কোন রাষ্ট্র পেছায়।
ডগলাস নর্থ তার মুল গবেষণায় বাংলাদেশের উদাহরন দিয়েছেন এবং প্রফেসর মুস্তাক খান বাংলাদেশের লিমিটেড এক্সেস অর্ডার ফ্রেম ওয়ার্ক নিয়ে অথরেটিভ গবেষণা করেছেন যার একটা পাতা আমি এটাচ করলাম।
প্রফেসর মুস্তাক খান দেখিয়েছেন যে, ১৯৭৫ সাল থেকে জিয়ার আমলে বাংলাদেশ ফ্রেজাইল থেকে বেসিকে প্রবেশ করে এবং ম্যাচুরিটির দিকে পা বাড়ায়।
প্রফেসর মুস্তাক খানের বিশ্লেষণ অনুসারে শেখ হাসিনা ২০০৮ এ যখন ক্ষমতা দখল করে তখন বাংলাদেশ ইন্সটিটিশান বিল্ডিং প্রসেসে ম্যাচুরিটিতে পৌঁছেছে কিন্তু তার মধ্যে ফ্রাজিলিটির লক্ষন রয়েছে যে সে যে কোন মুহূর্তে পেছাতে পারে।
সো ২০১৪ এর পর শেখ হাসিনার শাসন আমলে এলএও ফ্রেম ওয়ার্কে মোটামুটি কিছু ইন্সটিটিশান দাড়িয়ে গ্যাছে এই অবস্থায় , গুম খুনের মাধ্যমে স্টেটকে পুনরায় ফ্রেজাইল অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে গুন খুন আর তার ৩০ বছর পূর্বের নব্য গঠিত রাষ্ট্রে রাজাকে খুন করলে রাজা হওয়া যায় এই সময় কালে ক্ষমতা দখলের যে খুনাখুনি তার পার্থক্য রয়েছে।
ফলে এলএও ফ্রেম ওয়ার্কে ফ্রেজাইল জিয়ার আমলের মিলিটারি ক্যু এর শাস্তিতে সামরিক বাহিনীর সদস্যের মৃত্যুদণ্ডের সাথে চল্লিশ বছরের পথ পরিক্রমায় ম্যাচিউর হয়ে আসার পর ক্ষমতা ধরে রাখতে হাসিনার আমলের গুম খুন একই নয়। এই দুইটাকে মিলিয়ে ফেলা- ইমেচিউর টু সে দা লিস্ট।
আমি এই পোস্টের কোন জবাব দিবো না, কোন ডিবেটে পারটিসিপেট করবো না, এক জন বন্ধু মতামত চাইলেন, তার হনারে এইটা লিখলাম, কিন্তু আমি কোন ডিবেটে ঢুকবো না । আমি অন্য একটা কাজে ব্যস্ত, কালকের থেকে আবার দোকান বন্ধ থাকবে।
ধন্যবাদ।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment