এদেশের মধ্যবিত্ত সমাজটা পঁচে গেছে। একটা সময় এই মধ্যবিত্ত সমাজটাই এদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতির মেরুদন্ড হিসেবে কাজ করতো। এই মধ্যবিত্ত সমাজই বায়ান্ন এ ভাষার অধিকারের দাবীতে রাস্তায় নেমেছিল, ৬৯ এ স্বৈরাচার আয়ুবের বিরুদ্ধে লড়েছিল, একাত্তুরে এই মধ্যবিত্তরাই যুদ্ধে গিয়েছিল…৯০ তে এই মধ্যবিত্তরাই সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে নেমেছিল। সেই মধ্যবিত্ত শ্রেনিটি এই সময়ে এসে ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়েছে, একসময় মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা রাজনীতি চর্চা করতো। তারাশঙ্কর, শরত চন্দ্র, হুমায়ুন আহমেদ কিংবা জীবনানন্দ দাশ পড়তো। আর এখনকার মধ্যবিত্ত নারীদের ভোর হয় পার্লারে গিয়ে মেডিকিউর, পেডিকিউর আর ভ্রু প্লাগ করা চিন্তায়, সন্ধ্যে কাটে হিন্দি সিরিয়ালে বুঁদ হয়ে…!! আগের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পুরুষরা ভাবতো রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে, প্রযুক্তির আকালেও তারা বিবিসি বাংলা খবর শুনতে জড়ো হতো পাড়ার মাতবরের দেউরী তে। চা এর টেবিলে, অফিসের ক্যান্টিনে চলতো শ্রেণিবাদ, মৌলিক অধিকার, রাজনীতির বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, কনজিউমারিজম আর গণতন্ত্র ও সমাজ তন্ত্রের মধ্যকার পক্ষে বিপক্ষের কথার লড়াই, মধ্যবিত্ত পরিবারের যুবকেরা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ক্যাম্পাসে শুধু পড়তে যেতনা, তারা লড়তেও যেত…তারা লড়তো নিজের ব্যক্তিগত জীবনের চাওয়া পাওয়ার সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় নাগরিক চাহিদার দাবীতেও। তারা প্রেম, কবিতা, প্রকৃতির পাশাপাশি সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, রাজনীতি আর শাসিত ও শোষিতদের নিয়ে ভাবিত হত। বায়ান্ন'এর রফিক জব্বার কিংবা সালামরা কেউ সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্মায়নি, কিংবা মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধ করাদের ৯৮ভাগের একে আজাদের মত তত্কালে শত ডলারে এলভিস প্রিসলি গানের এ্যালবাম কেনার সামর্থ ছিলনা।কীংবা নব্বই এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে নামা যুবকদের কারো তত্কালে টয়োটা, প্রাডো কেনার সামর্থ ছিলনা কিন্তু ছিল গণতন্ত্র লাভের অধীর আগ্রহ। এরা সবাই ছিল সাধারণ মধ্যবিত্ত বা নিন্ম মধ্যবীত্ত ঘরের সন্তান। কিন্তু হায়! সে মধ্যবিত্ত শ্রেণিটি ঢুবে গেছে এই একুশ শতকে। প্রযুক্তির বাহুল্য এখন তাদের রাষ্ট্রচিন্তার দিকে ধাবিত করেনা। এদেশের মধ্যবিত্তরা এখন উত্সব বুঝে, ভোগ বুঝে, শ্রেণি বুঝে, লাভ-ক্ষতি বুঝে…তারা সবই বুঝে, সবই জানে বুঝেনা শুধু রাষ্ট্রীয় লাভ-ক্ষতি টা, জানেনা ব্যক্তিগত ত্যাগ কী…তাই এক সময়কার স্বাধীণচেতা, রাজনীতি ভাবাপন্ন মধ্যবিত্ত সমাজটি মহান স্বৈরাচারী আমলটাকেও ভীষণ উপভোগ করছেন। আগামীতেও করতে থাকবেন…
21Feb, 2016
21Feb, 2016
No comments:
Post a Comment