এক চিলতে ইতিহাস জেনে নেই। এবার থাকছে, তখনকার অনেক হিন্দু নেতাদের চোখে শেখ মুজিব।
*******
দেশ ভাগের সময় কালিদাস ছিলেন ছাত্র, অন্যদের সঙ্গে কোলকাতায় চলেও এসেছিলেন। কিন্তু ১৯৫০ সালেই তিনি ফিরে গিয়েছিলেন ঢাকায়, পাকিস্তানকে ভেঙে দেওয়ার ব্রত নিয়ে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে তিনি এম.বি.বি.এস পাশ করেন, ঢাকাতেই ডাক্তারি প্রাকটিস শুরু করে ভালো পসার জমিয়ে ফেলেন। কিন্তু তিনি মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র থাকার সময় ছাত্র রাজনীতি সংগঠিত করতে শুরু করেছিলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা নিয়েছিলেন। শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় গড়ে ওঠে তখন থেকেই।
মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষনা প্রসঙ্গে কালিদাস বৈদ্য লিখেছেন, “ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা না করে মুজিবের স্বেচ্ছায় গ্রেফতার বরণ ও যুদ্ধকালে বাংলাদেশ সরকারসহ নেতাদের আচরণ দেখে আমরা বুঝেছিলাম, আমাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ।
তাই যুদ্ধ শেষ হবার আগেই আমরা চোদ্দো জন হিন্দু নেতা একত্রে বসে নতুন করে স্বাধীনতা সংগ্রামের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। পরে Law Continuation order of 1971 জারি করে মুজিব বুঝিয়ে দিলেন যে তার সরকার পাকিস্তানের Successor সরকার। তাতে সেখানে ইসলামিক জাতীয়তাবাদ স্বীকৃতি পেল। মুছে গেল বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস”।
শেখ মুজিবের গ্রাম, বেঁড়ে ওঠা ও কলকাতার কলেজ জীবন নিয়ে এবং ১৯৪৬ সালে কলকাতায় সংগঠিত কুখ্যাত দাঙ্গায় (যেখানে প্রায় ৫০০০ মানুষ খুন যার ৭৫% ছিল মুসলমান) শেখ মুজিবের ভূমিকা সম্পর্কে লেখক কালিদাস বৈদ্য লিখেন-
‘‘গোপালগঞ্জ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতায় ইসলামিয়া (বর্তমান মৌলানা আজাদ) কলেজে ভর্তি হন। …এইভাবে কলেজ শিক্ষার সাথে মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী সুরাবর্দির কাছে রাজনৈতিক শিক্ষা পেয়ে মুজিব গড়ে উঠলেন ইসলামের এক নির্ভীক সেনাপতি রূপে। এভাবে ইসলামের সেনাপতি রূপেই তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে নামলেন এবং ১৯৪৬ সালের ১৬ ই আগষ্টের নৃশংস কলকাতার দাঙ্গায় নেতৃত্ব দিলেন। পাকিস্তান সংগ্রামের তিনিই হলেন পূর্বাঞ্চলের প্রধান সৈনিক। সুরাবর্দির প্রধান সেনাপতি ও ডান হাত শেখ মুজিব। সেই সঙ্গে মুসলিম ছাত্র লিগের একজন অন্যতম নেতা। যখন স্বাধীনতা আন্দোলনে হাজার হাজার হিন্দু যুবক হাসিমুখে প্রাণ দিচ্ছিল,হাজার হাজার হিন্দু দেশপ্রেমিক কারা অন্তরালে কাঁদছিল এবং হাজার হাজার আহত পঙ্গু যুবক মৃতুর দিন গুনছিল, তখন যুবক শেখ মুজিব স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ না দিয়ে হিন্দুর বিরুদ্ধে জেহাদের পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন। এভাবে জেহাদের ডাক দিয়ে হিন্দুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। আর ব্রিটিশের সঙ্গে সেই ঘৃণ্য দেশভাগ চক্রান্তে লিপ্ত ছিলেন। ’’
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্সের জনসভা প্রসঙ্গে বাবু কালিদাস বৈদ্য লেখেন, “ বাড়িতে বসেই তিনি খবর পান যে, সেখানে স্বাধীনতা ঘোষণার পরিবেশ ও পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে তৈরি। সেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা না করলে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া অবশ্যম্ভাবী সেটা বুঝতে তাঁর বাকি থাকল না। কাজেই পরিস্থিতি তাঁকে ভীষণ এক চাপের মুখে ঠেলে দিল। তিনি বিশেষ একটি খবরের অপেক্ষায় ছিলেন এবং খবরটি পেতে দেরি হচ্ছিল। খবরটি তার কাছে ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। সভায় যাত্রা করার নির্দিষ্ট সময়ের কিছু পরে সেই খবরটিও তিনি পেয়ে যান। এই বিশেষ খবরটি কি তা আমার জানা থাকলেও এখন তা বলা সম্ভব নয়। এই বিশেষ কারণটি ছিল বাস্তব, অন্যগুলি অনুমান” (পৃষ্ঠা-১২৯)।
শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে কালিদাস বৈদ্য লেখেন,
“বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এত দিন মুজিব ৬ দফা দাবি করে ও স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতা না করে যে জনসমর্থন ও জাগরণ গড়ে তুলেছিলেন তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খা পূরণ করা। স্বাধীন বাংলাদেশ গড়া নয়। তার মাথায় পূর্বের চিন্তা স্বাধীনতা থাকলেও নির্বাচনের পরে পাকিস্তানকে অটুট রেখে তিনি তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন নতুন করে দেখতে শুরু করেছিলেন। তিনি খুব ভালো করে বুঝছিলেন যে, বর্তমান আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই তাঁর মতো নিজ হাতে পাকিস্তান গড়েনি বা পাকিস্তান গড়ার জন্য জেহাদে অংশগ্রহণ করেনি। তাই পাকিস্তানের প্রতি যে প্রাণের টান তাঁর মধ্যে আছে, তাদের মধ্যে তা থাকতে পারে না। তাই তাদের পক্ষে পাকিস্তান তথা ইসলামি জাতীয়তাবাদকে পরিত্যাগ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদে গা ভাসিয়ে দেওয়া খুবই সহজ। তাই অখণ্ড পাকিস্তানের অস্তিত্ব মূল্যবান নয় তাদের কাছে। কিন্তু মুজিব তা করেত পারেন না। পাকিস্তান সৃষ্টির এক নেতা মুস্তাক আহম্মদের সঙ্গে তিনি লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান বলে আন্দোলন করেছেন। পাকিস্তান আদায় করেছেন। সেই সব স্মৃতি আজও তাঁর মনে দৃঢ়মূল ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। তাকে কিভাবে তিনি পরিত্যাগ করবেন”
(পৃষ্ঠা-১৩৩)
সুত্র: বাঙালির মুক্তিযুদ্ধেঃ অন্তরালের শেখ মুজিব / ডা. কালিদাস বৈদ্য
*******
আপনাদের কারও কি বইটা পড়ার ইচ্ছা আছে? তাহলে এখানে
*******
দেশ ভাগের সময় কালিদাস ছিলেন ছাত্র, অন্যদের সঙ্গে কোলকাতায় চলেও এসেছিলেন। কিন্তু ১৯৫০ সালেই তিনি ফিরে গিয়েছিলেন ঢাকায়, পাকিস্তানকে ভেঙে দেওয়ার ব্রত নিয়ে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে তিনি এম.বি.বি.এস পাশ করেন, ঢাকাতেই ডাক্তারি প্রাকটিস শুরু করে ভালো পসার জমিয়ে ফেলেন। কিন্তু তিনি মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র থাকার সময় ছাত্র রাজনীতি সংগঠিত করতে শুরু করেছিলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা নিয়েছিলেন। শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় গড়ে ওঠে তখন থেকেই।
মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষনা প্রসঙ্গে কালিদাস বৈদ্য লিখেছেন, “ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা না করে মুজিবের স্বেচ্ছায় গ্রেফতার বরণ ও যুদ্ধকালে বাংলাদেশ সরকারসহ নেতাদের আচরণ দেখে আমরা বুঝেছিলাম, আমাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ।
তাই যুদ্ধ শেষ হবার আগেই আমরা চোদ্দো জন হিন্দু নেতা একত্রে বসে নতুন করে স্বাধীনতা সংগ্রামের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। পরে Law Continuation order of 1971 জারি করে মুজিব বুঝিয়ে দিলেন যে তার সরকার পাকিস্তানের Successor সরকার। তাতে সেখানে ইসলামিক জাতীয়তাবাদ স্বীকৃতি পেল। মুছে গেল বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস”।
শেখ মুজিবের গ্রাম, বেঁড়ে ওঠা ও কলকাতার কলেজ জীবন নিয়ে এবং ১৯৪৬ সালে কলকাতায় সংগঠিত কুখ্যাত দাঙ্গায় (যেখানে প্রায় ৫০০০ মানুষ খুন যার ৭৫% ছিল মুসলমান) শেখ মুজিবের ভূমিকা সম্পর্কে লেখক কালিদাস বৈদ্য লিখেন-
‘‘গোপালগঞ্জ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতায় ইসলামিয়া (বর্তমান মৌলানা আজাদ) কলেজে ভর্তি হন। …এইভাবে কলেজ শিক্ষার সাথে মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী সুরাবর্দির কাছে রাজনৈতিক শিক্ষা পেয়ে মুজিব গড়ে উঠলেন ইসলামের এক নির্ভীক সেনাপতি রূপে। এভাবে ইসলামের সেনাপতি রূপেই তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে নামলেন এবং ১৯৪৬ সালের ১৬ ই আগষ্টের নৃশংস কলকাতার দাঙ্গায় নেতৃত্ব দিলেন। পাকিস্তান সংগ্রামের তিনিই হলেন পূর্বাঞ্চলের প্রধান সৈনিক। সুরাবর্দির প্রধান সেনাপতি ও ডান হাত শেখ মুজিব। সেই সঙ্গে মুসলিম ছাত্র লিগের একজন অন্যতম নেতা। যখন স্বাধীনতা আন্দোলনে হাজার হাজার হিন্দু যুবক হাসিমুখে প্রাণ দিচ্ছিল,হাজার হাজার হিন্দু দেশপ্রেমিক কারা অন্তরালে কাঁদছিল এবং হাজার হাজার আহত পঙ্গু যুবক মৃতুর দিন গুনছিল, তখন যুবক শেখ মুজিব স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ না দিয়ে হিন্দুর বিরুদ্ধে জেহাদের পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন। এভাবে জেহাদের ডাক দিয়ে হিন্দুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। আর ব্রিটিশের সঙ্গে সেই ঘৃণ্য দেশভাগ চক্রান্তে লিপ্ত ছিলেন। ’’
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্সের জনসভা প্রসঙ্গে বাবু কালিদাস বৈদ্য লেখেন, “ বাড়িতে বসেই তিনি খবর পান যে, সেখানে স্বাধীনতা ঘোষণার পরিবেশ ও পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে তৈরি। সেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা না করলে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া অবশ্যম্ভাবী সেটা বুঝতে তাঁর বাকি থাকল না। কাজেই পরিস্থিতি তাঁকে ভীষণ এক চাপের মুখে ঠেলে দিল। তিনি বিশেষ একটি খবরের অপেক্ষায় ছিলেন এবং খবরটি পেতে দেরি হচ্ছিল। খবরটি তার কাছে ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। সভায় যাত্রা করার নির্দিষ্ট সময়ের কিছু পরে সেই খবরটিও তিনি পেয়ে যান। এই বিশেষ খবরটি কি তা আমার জানা থাকলেও এখন তা বলা সম্ভব নয়। এই বিশেষ কারণটি ছিল বাস্তব, অন্যগুলি অনুমান” (পৃষ্ঠা-১২৯)।
শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে কালিদাস বৈদ্য লেখেন,
“বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এত দিন মুজিব ৬ দফা দাবি করে ও স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতা না করে যে জনসমর্থন ও জাগরণ গড়ে তুলেছিলেন তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খা পূরণ করা। স্বাধীন বাংলাদেশ গড়া নয়। তার মাথায় পূর্বের চিন্তা স্বাধীনতা থাকলেও নির্বাচনের পরে পাকিস্তানকে অটুট রেখে তিনি তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন নতুন করে দেখতে শুরু করেছিলেন। তিনি খুব ভালো করে বুঝছিলেন যে, বর্তমান আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই তাঁর মতো নিজ হাতে পাকিস্তান গড়েনি বা পাকিস্তান গড়ার জন্য জেহাদে অংশগ্রহণ করেনি। তাই পাকিস্তানের প্রতি যে প্রাণের টান তাঁর মধ্যে আছে, তাদের মধ্যে তা থাকতে পারে না। তাই তাদের পক্ষে পাকিস্তান তথা ইসলামি জাতীয়তাবাদকে পরিত্যাগ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদে গা ভাসিয়ে দেওয়া খুবই সহজ। তাই অখণ্ড পাকিস্তানের অস্তিত্ব মূল্যবান নয় তাদের কাছে। কিন্তু মুজিব তা করেত পারেন না। পাকিস্তান সৃষ্টির এক নেতা মুস্তাক আহম্মদের সঙ্গে তিনি লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান বলে আন্দোলন করেছেন। পাকিস্তান আদায় করেছেন। সেই সব স্মৃতি আজও তাঁর মনে দৃঢ়মূল ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। তাকে কিভাবে তিনি পরিত্যাগ করবেন”
(পৃষ্ঠা-১৩৩)
সুত্র: বাঙালির মুক্তিযুদ্ধেঃ অন্তরালের শেখ মুজিব / ডা. কালিদাস বৈদ্য
*******
আপনাদের কারও কি বইটা পড়ার ইচ্ছা আছে? তাহলে এখানে
https://drive.google.com/file/d/0B4wDsget9PQuV1dRZHVDcmNlQ00/view
No comments:
Post a Comment