বাঙলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সব জায়গাতেই এক বিশ্রী অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। এই রঙের পাসপোর্ট দেখলেই কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাবে। তাদের দোষ দিই না, সৌদি বা পাকিস্তানের পাসপোর্ট ভেবে তারা ভুল করতেই পারে। পাকিস্তান সৌদি এসব দেশের মুমিন মুসলমানগণ বিশ্বে অনেক সুনাম অর্জন করেছে তো, সেই কারণে! কিন্তু বাঙলাদেশের পাসপোর্টের রঙ পাকিস্তানের মত সবুজ কেন? কোন বলদে এই আকামটা করেছিল?
পাসপোর্টের নকশা এবং রঙ কেমন হবে তা নির্ধারণ করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অরগানাইজেশন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে তাদের পাসপোর্টের রঙ এবং নকশা বেছে নিতে বলে, সেই সাথে কেন এমন নকশা এবং রঙ তাও জানাতে বলে।
সাধারণত কমিউনিস্ট বা সোশ্যালিস্ট দেশগুলো কিছুটা লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর পাসপোর্টের রং কিছুটা লালচে খয়েরি। স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের দাবীদার কিছু দেশের পাসপোর্টের রঙ নীল। আর হাদিসের বর্ণনা অনুসারে মহানবীর প্রিয় রঙ সবুজ বলে কথিত থাকায় সৌদি, পাকিস্তান সহ মুসলিম দেশগুলো সবুজ পাসপোর্ট নেয় বলে জানা যায়।
১৯৭৩ সালে বাঙলাদশের সরকার প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বাঙলাদেশকে আরেকটি মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য জোর লবিং শুরু করেন। সৌদি বাদশাদের কাছে নিয়মিত ধর্ণা দিতেন, হজ্বের অনুমতি এবং অশিক্ষিত শ্রমিকদের যেন সৌদি আরব কামলা হিসেবে নেয় তার জন্য অনেক চেষ্টাই করেছেন শেখ মুজিব। সেই সাথে একাত্তরের গণহত্যাকারী ভুট্টোকে ঢাকায় এনে চুম্মাচাট্টি করে আদিখ্যেতাও কম দেখান নি। সবই ছিল নিজেদের মুসলমান প্রমাণের চেষ্টা। রাজাকারদের অনেককেই পরিবারের সদস্য হওয়ায় ছেড়েছেন নিজেই। অনেক বড় বড় কুখ্যাত রাজাকারের সাথেই ছিল শেখ মুজিবের গলায় গলায় বন্ধুত্ব। কিন্তু সৌদি আর পাকিস্তান যেখ মুজিবকে দুই পয়সারও দাম দেয় নি। সবসময় গোলামের জাতই ভেবে গেছে। মেরুদণ্ডহীন মুজিব সাহস করে নি সৌদি লবিকে ক্ষেপাতে। ওআইসিতে যুক্ত হওয়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন করা, অনেক কিছু করেই সৌদি বাপদের মন ভোলাতে চেয়েছেন। কিন্তু মুজিবের সৌদি ইসলামী আব্বারা মুজিবকে বন্ধু ভাবে নি। গোপনে শেখ মুজিবের হত্যাকারীদেরই সাহায্য করে গেছে।
সেই সময়ে সৌদি এবং পাকিস্তানের কাছে ভাল মুসলমান হিসেবে নিজেকে প্রমাণের চেষ্টার একটা অংশই ছিল সবুজ পাসপোর্ট। এবং সেখানে ইসরাইলকে নিষিদ্ধ করা। বুঝতে সমস্যা হয় না, সাম্প্রদায়িক চরিত্রের শেখ মুজিব বাঙলাদেশকে আরেকটি মিনি পাকিস্তান বানিয়ে রাখার পরিকল্পনাই করেছিলেন। যার প্রমাণ অসংখ্য। আহমদ শরীফ যথার্থই বলেছিলেন,
... মুজিববাদী আঁতেলরা এমন বেহায়া চাটুকার যে কোন মিথ্যাভাষণে তাদের কোন লজ্জা-শরম নেই। তারা জানেন মুজিবের পাকিস্তান ভাঙার কোন স্বপ্ন বা সাধ ছিল না, তিনি ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর চেলা এবং মুসলিম লীগার ও হিন্দুবিদ্বেষী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছিল তাকে ১৯৭০ সনের নির্বাচন। কেননা আগরতলা মামলা তাকে অপমানিত ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ বাঙালীর হিরো বানিয়ে দিয়েছিল। শেখ মুজিব ১৯৭১ সনের ২৫ মার্চ অবধি প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্যে দরকষাকষি করছিলেন, যদিও সে লক্ষ্যে ছাত্রনেতাদের পরামর্শে তিনি ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ও মুক্তির সংগ্রামের কথা উচ্চারণ করেছিলেন তার প্রধানমন্ত্রীত্বপ্রাপ্তি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যেই। প্রমাণ তিনি ঐ সভার পরেই দ্রোহী হননি, ছাত্ররাও ধরেনি অস্ত্র।
২৫শে মার্চে পাকিস্তান সরকারই বাঙালীকে প্রতারিত করে হত্যাকান্ড চালাতে থাকে। বিপন্ন ও অস্ত্রচ্যুত সেনানিরা, পুলিশেরা এবং ক্ষুব্ধ-ক্রুদ্ধ তরুণেরা অনন্যোপায় হয়ে অস্ত্র ধারণ করে, তাদের সঙ্গে জুটে যায় আওয়ামীলীগারেরা এবং ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ স্বাধীনতাকামী জনগণ গাঁ-গঞ্জ থেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে। শেখ মুজিব যে মুক্তি বা স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেরনা-প্রণোদনাপ্রবর্তনা দাতা তা কেউ অস্বীকার করে না। যদিও সবটা তাৎক্ষণিক এবং অবস্থার ও অবস্থানের পরিণাম, পরিকল্পিত নয়, উদ্দিষ্ট ছিল না বলেই।
কিন্তু ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সনের আগস্ট অবধি মুজিব শাসন হচ্ছে ত্রাসের, হuত্যার, কাড়ার, মারার, জোর-জুলুমের, স্বৈরাচারের, দুর্ভিক্ষের, পীড়নের, শোষনের, জবরদখলের ও জবরদস্তির হৃৎকাঁপানো বীভৎস রূপের। তাই তার সপরিবার হত্যায়ও কেউ দু:খশোক পায়নি। তাই মুজিব নন্দিত নন, নিন্দিত॥" - ১৬/১২/১৯৯৭
সূত্রঃ আহমদ শরীফ / আহমদ শরীফের ডায়েরি : ভাব-বুদ্বুদ ॥ [ জাগৃতি প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ । পৃ: ১৭৩ ]
পাসপোর্টের নকশা এবং রঙ কেমন হবে তা নির্ধারণ করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অরগানাইজেশন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে তাদের পাসপোর্টের রঙ এবং নকশা বেছে নিতে বলে, সেই সাথে কেন এমন নকশা এবং রঙ তাও জানাতে বলে।
সাধারণত কমিউনিস্ট বা সোশ্যালিস্ট দেশগুলো কিছুটা লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর পাসপোর্টের রং কিছুটা লালচে খয়েরি। স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের দাবীদার কিছু দেশের পাসপোর্টের রঙ নীল। আর হাদিসের বর্ণনা অনুসারে মহানবীর প্রিয় রঙ সবুজ বলে কথিত থাকায় সৌদি, পাকিস্তান সহ মুসলিম দেশগুলো সবুজ পাসপোর্ট নেয় বলে জানা যায়।
১৯৭৩ সালে বাঙলাদশের সরকার প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বাঙলাদেশকে আরেকটি মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য জোর লবিং শুরু করেন। সৌদি বাদশাদের কাছে নিয়মিত ধর্ণা দিতেন, হজ্বের অনুমতি এবং অশিক্ষিত শ্রমিকদের যেন সৌদি আরব কামলা হিসেবে নেয় তার জন্য অনেক চেষ্টাই করেছেন শেখ মুজিব। সেই সাথে একাত্তরের গণহত্যাকারী ভুট্টোকে ঢাকায় এনে চুম্মাচাট্টি করে আদিখ্যেতাও কম দেখান নি। সবই ছিল নিজেদের মুসলমান প্রমাণের চেষ্টা। রাজাকারদের অনেককেই পরিবারের সদস্য হওয়ায় ছেড়েছেন নিজেই। অনেক বড় বড় কুখ্যাত রাজাকারের সাথেই ছিল শেখ মুজিবের গলায় গলায় বন্ধুত্ব। কিন্তু সৌদি আর পাকিস্তান যেখ মুজিবকে দুই পয়সারও দাম দেয় নি। সবসময় গোলামের জাতই ভেবে গেছে। মেরুদণ্ডহীন মুজিব সাহস করে নি সৌদি লবিকে ক্ষেপাতে। ওআইসিতে যুক্ত হওয়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন করা, অনেক কিছু করেই সৌদি বাপদের মন ভোলাতে চেয়েছেন। কিন্তু মুজিবের সৌদি ইসলামী আব্বারা মুজিবকে বন্ধু ভাবে নি। গোপনে শেখ মুজিবের হত্যাকারীদেরই সাহায্য করে গেছে।
সেই সময়ে সৌদি এবং পাকিস্তানের কাছে ভাল মুসলমান হিসেবে নিজেকে প্রমাণের চেষ্টার একটা অংশই ছিল সবুজ পাসপোর্ট। এবং সেখানে ইসরাইলকে নিষিদ্ধ করা। বুঝতে সমস্যা হয় না, সাম্প্রদায়িক চরিত্রের শেখ মুজিব বাঙলাদেশকে আরেকটি মিনি পাকিস্তান বানিয়ে রাখার পরিকল্পনাই করেছিলেন। যার প্রমাণ অসংখ্য। আহমদ শরীফ যথার্থই বলেছিলেন,
... মুজিববাদী আঁতেলরা এমন বেহায়া চাটুকার যে কোন মিথ্যাভাষণে তাদের কোন লজ্জা-শরম নেই। তারা জানেন মুজিবের পাকিস্তান ভাঙার কোন স্বপ্ন বা সাধ ছিল না, তিনি ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর চেলা এবং মুসলিম লীগার ও হিন্দুবিদ্বেষী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছিল তাকে ১৯৭০ সনের নির্বাচন। কেননা আগরতলা মামলা তাকে অপমানিত ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ বাঙালীর হিরো বানিয়ে দিয়েছিল। শেখ মুজিব ১৯৭১ সনের ২৫ মার্চ অবধি প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্যে দরকষাকষি করছিলেন, যদিও সে লক্ষ্যে ছাত্রনেতাদের পরামর্শে তিনি ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ও মুক্তির সংগ্রামের কথা উচ্চারণ করেছিলেন তার প্রধানমন্ত্রীত্বপ্রাপ্তি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যেই। প্রমাণ তিনি ঐ সভার পরেই দ্রোহী হননি, ছাত্ররাও ধরেনি অস্ত্র।
২৫শে মার্চে পাকিস্তান সরকারই বাঙালীকে প্রতারিত করে হত্যাকান্ড চালাতে থাকে। বিপন্ন ও অস্ত্রচ্যুত সেনানিরা, পুলিশেরা এবং ক্ষুব্ধ-ক্রুদ্ধ তরুণেরা অনন্যোপায় হয়ে অস্ত্র ধারণ করে, তাদের সঙ্গে জুটে যায় আওয়ামীলীগারেরা এবং ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ স্বাধীনতাকামী জনগণ গাঁ-গঞ্জ থেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে। শেখ মুজিব যে মুক্তি বা স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেরনা-প্রণোদনাপ্রবর্তনা দাতা তা কেউ অস্বীকার করে না। যদিও সবটা তাৎক্ষণিক এবং অবস্থার ও অবস্থানের পরিণাম, পরিকল্পিত নয়, উদ্দিষ্ট ছিল না বলেই।
কিন্তু ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সনের আগস্ট অবধি মুজিব শাসন হচ্ছে ত্রাসের, হuত্যার, কাড়ার, মারার, জোর-জুলুমের, স্বৈরাচারের, দুর্ভিক্ষের, পীড়নের, শোষনের, জবরদখলের ও জবরদস্তির হৃৎকাঁপানো বীভৎস রূপের। তাই তার সপরিবার হত্যায়ও কেউ দু:খশোক পায়নি। তাই মুজিব নন্দিত নন, নিন্দিত॥" - ১৬/১২/১৯৯৭
সূত্রঃ আহমদ শরীফ / আহমদ শরীফের ডায়েরি : ভাব-বুদ্বুদ ॥ [ জাগৃতি প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ । পৃ: ১৭৩ ]
No comments:
Post a Comment